Alapon

গর্ভপাত কি নারীর মৌলিক অধিকার...?



আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট গর্ভপাতকে নারীর সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিগত প্রায় তিরিশ বছর ধরেই এবোরশন ইস্যু আমেরিকার বেশিরভাগ ইলেকশনে একটা খুবই উত্তপ্ত ইস্যু ছিল।

বস্তুত, আধুনিক বিশ্বে জেন্ডার ইকোয়ালিটি-জেন্ডার ফ্লুইডিটি শক্তিশালী মতবাদ হয়ে ওঠার পেছনে এবোরশন ও বার্থ কনট্রোলের ভুমিকাই সবচেয়ে বেশি।

নারীরা ঐতিহাসিকভাবেই একটা ভালনারেবল অবস্থায় দাড়িয়েছিল গর্ভধারন ও সন্তান লালনে বাধ্য হওয়ায়। গর্ভধারন এড়ানোর যেহেতু উপায় ছিল না, অবাধ যৌনতা নারীর জন্য খুব একটা সুবিধাজনক কোন অপশন ছিল না, কেননা যৌনতা তার জন্য নিয়ে আসতো গর্ভধারনের মত কষ্টকর বিষয়।

বার্থ কন্ট্রোল পিলের উদ্ভাবন এবং সেইফ এবোর্শন নারীর কাছে যৌন স্বাধীনতাকে প্রথমে একটা লাক্সারি কমোডিটি এবং পরবর্তীতে একটা অধিকারে পরিনত করে। আমেরিকান নারীরা নিজেদের যৌনতাকে উপভোগের চাবিকাঠি মনে করতে থাকে এবোর্শনের সাংবিধানিক অধিকারকে।

কিন্তু এই স্বাধীনতার অপর পিঠ হচ্ছে একেকটা শিশুর জীবননাশ। ৮ সপ্তাহ বয়সের ভ্রুন ব্যথার সম্পুর্ন অনুভুতি টের পায় এবং ১৬ সপ্তাহ বয়সী ভ্রুনের অধিকাংশ বাহ্যিক অঙ্গই গঠন হয়ে যায়। ১৬ সপ্তাহের পর থেকে ভ্রুনকে একটা পুর্নাঙ্গ জীবনই বলা যায়, ২৩ সপ্তাহের পর ভ্রুনকে মায়ের পেট থেকে বের করলে সে সম্পুর্ন জীবিতই থাকে যদি এনআইসিইউ সাপোর্ট দেয়া সম্ভব হয়। ২৮ সপ্তাহ নাগাদ একটা ভ্রুন আইসিইউ ছাড়াই মায়ের পেটের বাইরে বেচে থাকতে পারে।

তো এখন, আমেরিকান নারী ও পুরুষেরা যৌন স্বাধীনতার জন্য গড়ে ফি বছর এমন অন্তত ছয় লাখ শিশুর প্রান কেড়ে নেয়, যাদের ছিল দুনিয়াতে বেচে থাকার সমস্ত অধিকার।
পাশাপাশি, ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকেও আমেরিকান কনজারভেটিভরা এবোরশনের শক্ত বিরোধিতা করে।

বস্তুত, নারীর প্রান রক্ষার্থে গর্ভপাতের সাথে ইচ্ছেমত গর্ভপাতের কোন সম্পর্কই নেই। একজন নারীর জীবন রক্ষার্থে বা বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুকি এড়াতে গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক নির্ধারন করতে পারেন।

কিন্তু শুধুমাত্র ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট বা সেক্সুয়াল ফ্রিডম এক্সপ্লোর করার জন্য গর্ভপাত করাকে স্রেফ একটা অধিকারে পরিনত করা যেন মাকে সন্তান হত্যার লাইসেন্স দেয়ারই নামান্তর। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখা যায়, লাইসেন্স পেলে বহু মা-ই এই সন্তান হত্যায় পিছপা হন না।

গর্ভপাতের পেছনে আরো অনেক কারন থাকলেও গর্ভপাতকে একটা মৌলিক অধিকারে পরিনত করার লিবারেল রাজনীতির একদম গোড়ার জায়গা হচ্ছে, সমাজে অবাধ যৌনতার ছড়াছড়ির মাধ্যমে কনজারভেটিভদের রাজনীতিকে দুর্বল করে দেয়া এবং বিশাল এবোরশন-ফার্টিলিটি কেয়ার ইন্ডাস্ট্রির জন্ম দেয়া।

গতকালের রায়ের ফলে লাইলা রোজ,নেট পিকোউইজ, ম্যাট ওয়ালশ, মেগিন কেলিদের সুদীর্ঘ লড়াই একটা ফল পেল।

বিপুল পরিমান প্ল্যানড প্যারেন্টহুড প্রাইভেট ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতির কথা টুইটারে পাওয়া যাচ্ছে, যার সত্য অসত্য পরে জানা যাবে।

আমেরিকার জন্মহার বাড়ানো এখন জরুরী। ইউরোপেরও তাই। আমেরিকা যদি পৃথিবীতে পরাশক্তি হিসেবে টিকে থাকতে চায়, তাদের ৩৫-৪০ কোটি জনসংখ্যা ভবিষ্যতে প্রয়োজন হবে। জাপান, রাশিয়া ও ইউরোপের ক্ষয়িষ্ণু জনসংখ্যার বিপরীতে একটা স্বাভাবিকভাবে বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যা আমেরিকাকে সামনের পঞ্চাশ বছর পরাশক্তি হিসেবে টিকে থাকার শক্তি যোগাবে।

কিন্তু ডেমোক্র‍্যাটদের কাজকর্ম দেখে মনে হচ্ছে, তাদের কাছে আমেরিকার শক্তিশালী হওয়ার চেয়ে তাদের লিবারেল ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ উন্মুক্ত যৌনতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
রাষ্ট্রের চেয়ে ধর্মই বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এটা লিবারেলদের দেখলে সবচেয়ে ভাল করে বোঝা যায়।

- মুহাম্মদ সজল

পঠিত : ৩২৭ বার

মন্তব্য: ০