Alapon

প্রসঙ্গ : জাইমা নূর ও শ্রদ্ধেয় সাইফুল্লাহ মানসুর !



আজ ইসলামি সাংস্কৃতিক জগতের অন্যতম কিংবদন্তী, মতিউর রহমান মল্লিক রহিমাহুল্লাহর হাতে গড়া সাংস্কৃত মুজাহিদ এবং তাঁর যোগ্য উত্তরসূরী শ্রদ্ধেয় Saifullah Mansur-ভাইয়ার একটা পোস্টে জানতে পারলাম ইসলামি গান-গজলের কালজয়ী ক্ষুদে শিল্পী-শিশুশিল্পী Jaima Noor - জাইমা নূর- এখন থেকে আর লাইভে বা মিডিয়ায় এসে ইসলামি গান করবেন না। লাইভ ইসলামি গানের জগত থেকে বিদায় নিচ্ছে সে। এই সিদ্ধান্তটা গ্রহণ করেছে সে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান "ফরজ ‘পর্দা’র জন্যই। রব্বুল আলামিনের বিধানের কাছে ছোট্ট জাইমা নিজেকে সঁপে দেওয়ার কারণেই সে আর লাইভে এসে গান গাইবে না। তবে সে মেয়ে শিশুদের নিয়ে সে কাজ করবে ইন শা আল্লাহ। আল্লাহ তাকে তার এমন তাকওয়াপূর্ণ জীবনধারা সারাটি জীবন অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। তাঁর এমন সাহসী আর তাকওয়াময় বর্ণীল সিদ্ধান্তকে কবুল করে নিন।

এখানে উল্লেখ্য যে, শ্রদ্ধেয় সাইফুল্লাহ মানসুর ভাইয়া নিজের সারাটি জীবন ঢেলে দিচ্ছেন সুস্থ ও ইসলামি সাংস্কৃতির খিদমত করে। ভাই নিজ হাতে তৈরি করেছেন অগণিত শিল্পী-গানরাজ! এমন খ্যাতিময়-জৌলুসপূর্ণ একটা সেক্টরে কাজ করার পরেও ভাই কোনোদিন কখনো ইসলামের মূলস্রোতধারা কিংবা ইসলামি আন্দোলনের কাঙ্ক্ষিত মেজাজ ও পরিবেশের বাহিরে অবস্থান গ্রহণ করেননি। বিচ্যুতির পথে যাননি।

কিছু কিছু লোক যখন আরো খ্যাতি, আরো যশের মোহে পড়ে হারাম বাদ্যযন্ত্রকে উসুল-মেথড-মাকাসিদে শারিয়ার দোহাই দিয়ে ইসলামি সংস্কৃতি এবং সাংস্কৃতিক উপাদান হিসেবে ব্যবহার করছে, এবং এরপক্ষে বিচ্ছিন্ন দুয়েকজন স্ক্লারের দলিল টেনে সে পথে হাঁটছে, ঠিক সেই স্থানে থেকেই মানসুর ভাই তাঁর উস্তায মল্লিকের মতো হারাম মিউজিকের বিষয়ে নিজের অবস্থান দৃঢ় রেখেছেন। আকিদা-বিশ্বাস রেখেছেন অটুট। আমল রেখেছেন স্পষ্ট। তিনি নিজের ছেলে মাহসিন সাইফুল্লাহকেও সেই চিন্তাধারায় তৈরি করেছেন এবং বড়ো করেছেন।

তিনি যেসমস্ত মেয়ে শিশু শিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছেন, তাদেরকেও পর্দার বিধান ফরজ হবার পর থেকেই আর বাহিরে আনেননি। তাদেরকে শিক্ষা-প্রশিক্ষণ যা দিয়েছেন, তা দিয়ে তাদের ছেড়ে দিয়েছেন মা-বোনেদের অঙ্গনে। মায়েরা-মেয়েরাই তো জাতি গঠনের মূল নিয়ামক শক্তি। তাই তিনি তাদেরকে গড়ার জন্যই দক্ষ আর যোগ্যতা সম্পন্ন বোনেদের তৈরি করে সে অঙ্গনে ছেড়ে দিয়েছেন। দিয়ে যাচ্ছেন।

যেমন জাইমার ব্যাপারে তিনি তাঁর সর্বশেষ পোস্টে উল্লেখ করেছেন- " ...মেয়ে বাবুদের নিয়ে কাজে বেশ সতর্ক থাকতে হয়। আবার এদের নিয়ে অনেক দূর যাওয়াও যায় না। ইসলামী বিধিবিধান অনুসরণ এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জাইমা নুরের আব্বু আম্মু এ বিষয়ে খুবই সচেতন। ওর লাইভ গানগুলো পরিবেশন করা থেকে সে এখন বিরত থাকবে......জাইমা ৫ম শ্রেনী ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে , নিজ ক্লাসেও ফাস্ট হয়। সামনের দিনগুলোতে লেখাপড়ার প্রতি সে আরো গুরুত্ব দিবে, মেয়েদের মাঝে জাইমা আরো ব্যাপক কাজ করবে ইনশাল্লাহ।"

আর জাইমা নূর হলেন ইসলামি ছাত্রশিবিরের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর, মুহতারাম নুরুল ইসলাম বুলবুল ভাইয়ের মেয়ে।
অনেকদিন আগে জাইমা সাইফুল্লাহ মানসুর ভাইয়ের সাথে একটা লাইভ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। সেখানে সাইফুল্লাহ মানসুর ভাইয়া ছোট্ট জাইমা মনিকে জিজ্ঞেস করলেন যে, "জাইমা, তুমি তো এক সময় বড়ো হয়ে যাবে। এরকম ছোটো আর থাকবে না। তখন তুমি কী করবে? তখন কিন্তু ছোট্ট জাইমার উত্তর ছিলো ভীষণ চমৎকার। সে জবাবে বলেছিলো—আমি তো মুসলিম। আল্লাহর বিধান তো মানতেই হবে। আমি তখন এভাবে গান গাবো না। কিন্তু আপুদের এবং খালামনীদের মাঝে তো গাইতে পারবো। আমি তাদের মাঝেই কাজ করবো!"

তাঁর জবাবটা শুনে সেদিন আমার মাথাটা শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে গেছে! বুকটা খুশিতে ভরে ওঠেছে। তাঁর মতো ছোট্ট একটা মানুষের কথাটা শুনে আমি নিজেও আরো পরিণত মুমিন হবার অনুপ্রেরণা পেলাম। আমি চিন্তা করতে লাগলাম—ছোট্ট একটা মানুষ! অথচ কী ভীষণ সচেতন সে দ্বীনের বিধান নিয়ে। আল্লাহর হুকুমের প্রতি কী নিঃশর্ত আত্মসমর্পন তাঁর। কোনো যুক্তি-তর্ক ছাড়াই কী অবলীলায় আল্লাহর হুকুমের সামনে মাথা অবনত করে দেবার চিন্তা হৃদয়-কোণে কী দারুণভাবেই না পুষে রেখেছে সে! অথচ আমি আজতক এরকমভাবে আল্লাহর বিধান, দ্বীন-শরীয়তের সামনে নিজেকে সঁপে দিতে পারিনি।

আল্লাহ সাইফুল্লাহ মানসুর ভাইয়ার মতো অসংখ্য সচেতন সাংস্কৃতিক মুজাহিদ আমাদের মধ্যে প্রেরণ করুন। আল্লাহ রব্বুল আলামিন জাইমাকেও কবুল করুন। জাইমার মতো মহীয়সী কন্যা আমাদের সকলের ঘরে ঘরে দান করুন। যাঁরা রব্বুল আলামিন প্রদত্ত প্রতিভা রব্বুল আলামিনের বিধান-অনুযায়ী কাজে লাগাবে। আ-মী-ন!

এখানে নিঃসংকোচে একটা কথা বলাই যায় যে, এমন যোগ্যতা সম্পন্ন এবং দ্বীনের প্রতি সচেতন ও যত্নশীল এসব মানুষ তৈরির পেছেন ইসলামী ছাত্রশিবির-ছাত্রী সংস্থা এবং সর্বোপরি জামায়াতে ইসলামীর বিরাট রকম ভূমিকা রয়েছে।

যারা জামায়াতের প্রতি বিদ্বেষী, তারা তো শুধু একজন সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতির কন্যা ফামার মতো ইতর টাইপ ও মায়ের চোখের জল ঝরানো মেয়েদেরই দেখেন। জাইমার মতো বা আড়ালে থাকা অসংখ্য বোনেদের এমন দৃঢ় ঈমান আর তাকওয়ার পারদটা দেখেন না। জাইমার বাবাও জামায়াত নেতা। শিবিরের এই শতাব্দির প্রথম দিকের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।

যাইহোক, সবশেষে পুনরায় জাইমার সফল জীবন কামনা করি। আর সাইফুল্লাহ মানসুর ভাইয়েরও সুন্দর জীবন কামনা করি। তাঁরা উভয়েই যেন স্ব স্ব জায়গায় নিজেদের খেদমতকে আঞ্জাম দিয়ে যেতে পারেন, সেই দু'আ করি।

এখানে একটা বিষয়, যাঁরা জামায়াত-শিবির কিংবা ছাত্রী সংস্থার এমন সুন্দর ভারসাম্যপূর্ণ আর তাকওয়াপূর্ণ অবস্থান থেকে কথিত জ্ঞানের জাগরণ, সভ্যতার জাগরণ, উসুল-মাকাসিদ ইত্যাদির নাম দিয়ে বিচ্যুত করতেছেন বা করতে চাচ্ছেন—তাঁরা এ থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। আপনারা এসব না করেও জ্ঞানের জাগরণ, নারী জাগরণ, সভ্যতার জাগরণে ভূমিকা রাখতে পারেন। ইসলামি গানে মল্লিক ধারা সামি ইউসুফ ধারা নামে মিউজিককে বৈধ করা বা তাঁকে ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা করা কিংবা সংগঠনকে এসব কথিত জাগরণে সাড়া না দেওয়ার জন্য অবাঞ্চিত সমালোচনা করবেন না। মূলস্রোতে থেকে কাজ করুন। তাকওয়ার পথে আরো দৃঢ়ভাবে অগ্রসর করুন মানুষদেরকে। আমরা যারা এখনো মডারেট চিন্তাধারায় মাঝেমধ্যে চলাচল করি, আমরা যেনো আপনাদের মাধ্যমে আরো ভালো মুমিন হতে পারি, সেই রকম কাজ করুন।

পঠিত : ৯৫২ বার

মন্তব্য: ০