Alapon

হৃদয় হোক 'আরশ' যেমন...



সৃষ্টিজগত ও সৃষ্টিজগতের বাইরে যা কিছু আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র হচ্ছে আল্লাহর আরশ। এই আরশ একদিকে যেমন পবিত্র, অপর দিকে তেমনই সর্বোন্নত, আলোখচিত ও সর্বময় পরিব্যাপ্ত। এ কারণেই তা মহান আল্লাহর অধিষ্ঠানের উপযোগিতা লাভ করেছে।
যে ব্যক্তি বা বস্তু আরশের যতবেশি নিকটে, সে ততবেশি পবিত্র, আলোকিত ও সম্মানিত। এ কারণেই জান্নাতুল ফিরদাউস সবচেয়ে উৎকৃষ্ট, আলোকজ্জ্বল ও মহিমান্বিত। কেননা আরশ হবে তার ছাদ।

অপর দিকে, যা কিছু এই আরশ থেকে যতবেশি দূরে, তা ততবেশি পঙ্কিল, অন্ধকার ও সংকীর্ণ। এ কারণেই ‘আসফালু সাফিলীন’ বা জাহান্নামীদের সর্বনিম্ন স্থান সবচেয়ে নিকৃষ্ট, সীমাবদ্ধ ও সর্বপ্রকার কল্যাণ-বঞ্চিত।

মহান আল্লাহ নিজের জন্য আরশকে যতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন, ঠিক ততটুকু গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছেন মানুষের কাছে তার হৃদয়কে। শুধু তাই নয়; হৃদয়ের ক্ষুদ্র জমিনটুকু তিনি নির্ধারণ করে দিয়েছেন কেবল তাঁরই পরিচয় ও ভালোবাসায় নিষিক্ত করার জন্য। সর্বোপরি এটাকেই ঘোষণা করেছেন তাঁর অবস্থানক্ষেত্র হিসেবে--
‘যারা পরকালে বিশ্বাস রাখে না, তাদের অবস্থান সবচেয়ে নিকৃষ্ট। আর আল্লাহর অবস্থান সর্বোচ্চ। তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।’ সূরা নাহল: ৬০

‘তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেন, তারপর তিনি পুনরায় সৃষ্টি করবেন। এটা তার জন্য অধিকতর সহজ। আসমান ও জমিনে সর্বোচ্চ অবস্থান তারই। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।’ সূরা রূম: ২৭

একাধিক তাফসিরকারকের ভাষ্যমতে, মহান আল্লাহ এখানে ‘সর্বোচ্চ অবস্থান’ বলে রূপকার্থে মানুষের হৃদয় ও মহান আরশ নির্দেশ করেছেন। এ হিসেবে বলা যায়, মহান আল্লাহ মানুষের হৃদয়েও অবস্থান করেন। এটাও তার আরশ। কাজেই এই স্থানটি সবচেয়ে পবিত্র এবং সর্বপ্রকার কলুষ ও পঙ্কিলতামুক্ত না হলে, এর ওপর মহান আরশের ছায়াপাত হবে না। প্রভুর সঙ্গে আত্মিক পরিচয় ও প্রেম-ভালোবাসার সূত্রপাত ঘটবে না এবং এটি বিবেচিত হবে না তাঁর অবস্থানের উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে।

শুধু কি তাই? হৃদয়ে তখন বিক্রিয়া ঘটবে। চতুর্দিক থেকে সংকুচিত হয়ে আসবে হৃদয়ের সীমানা। জেঁকে বসবে তাতে দুনিয়ার মায়া-মোহ। প্রবণতা তৈরি হবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন অবস্থানের দিকে ধাবিত হওয়ার। সৌভাগ্য ও সফলতা বিদায় নিবে চিরতরে।

হৃদয়ের এই দ্বিচারিতার ভিত্তিতে হৃদয়কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়: এক. মহান আল্লাহর আরশ। এখানে সবসময় শান্তি, আলো, আনন্দ, কল্যাণ, প্রাণময়তা ও উৎসবমুখরতা বিরাজ করে। দুই. শয়তানের আখড়া। এখানে সবসময় দুঃখ, অশান্তি, অন্ধকার, সংকীর্ণতা ও নির্জীবতা ছেয়ে থাকে। এমন হৃদয় অতীত নিয়ে হাহাকার করে। ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশায় ভোগে। আর বর্তমান নিয়ে থাকে দুশ্চিন্তায়।

সুনান আত-তিরমিযীতে বর্ণিত একটি হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হৃদয়ের ব্যাপ্তির প্রকৃতি ব্যাখ্যা করে বলেন--
‘হৃদয়ে যখন আলোর সঞ্চরণ ঘটে, তখন হৃদয় আপনা-আপনি প্রসারিত ও পরিব্যাপ্ত হয়ে যায়।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসূল! এর লক্ষণ কী? তিনি বললেন, আখিরাতমুখিতা। দুনিয়াবিমুখতা এবং মৃত্যু আসার পূর্বেই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকা।’

পঠিত : ৩১৭ বার

মন্তব্য: ০