Alapon

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তাহলে অর্থনৈতিক দুর্দশা কাকে বলবেন...?



ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছি। দুদিন থেকে আব্বার বাইক নিয়ে এলাকায় ঘুরতেছি। বিকালবেলা ছোট ভাই বলল, ফিলিং স্টেশনগুলোতে বাইকের সিরিয়াল পড়ে গেছে। চাহিদামত তেল নাকি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই বাইকের ট্যাংকি ফুল করে রাখা দরকার।

তার কথার সত্য মিথ্যা আমি জানি না। তবে বাঙালি যেহেতু হুজুগে জাতি, তাই এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে তেল কেনার জন্য মানুষ বাইক নিয়ে ফিলিং স্টেশনগুলোতে ছুটতে শুরু করেছে। সবাই যেহেতু একসাথে তেল কিনতে চাচ্ছে, তাই তেলের সংকট হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সমগ্র দেশেই যদি তেলের সংকট হয়, তাহলে কী অবস্থা দাড়াবে?

খুব সম্ভবত দেশে তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। অথবা সংকট এখনও পরিপূর্ণভাবে শুরু না হলেও, রিজার্ভ তেলের পরিমাণ দিনকে দিন কমেই যাচ্ছে। তেলের পরিমাণ কমে যাওয়ার বিপরীতে তেল ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যকার যুদ্ধের অজুহাতে এখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম অনেক বেশি। অন্যদিকে, আমাদের দেশের সরকারের হাতে খুব বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভও নেই। তাই বৈদেশিক মুদ্রা হাতছাড়া করার ভয়ে সরকার আবার উচ্চ মূল্য দিয়ে তেলও ক্রয় করতে পারছে না। আবার উচ্চ মূল্য দিয়ে সরকারকে তেল কিনতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে, দেশিয় ব্যবসায়ীরা। কারণ, আমাদের দেশের সাথে তেল বিক্রয়কারী রাষ্ট্রগুলোর তেমন কোনো চুক্তি নেই। বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের খোলা বাজার থেকে দেশিয় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে তেল ক্রয় করে থাকে। এভাবে তৃতীয়পক্ষকে দিয়ে তেল ক্রয় করার কারণে বাড়তি টাকা বরাবরই গুনতে হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক এই মঙ্গার সময়ে সরকার আর সেই বাড়তি মুদ্রা খরচ করতে চাচ্ছে না। যার দরুণ, সারা দেশজুড়ে চলছে লোডশেডিং!

অথচ আমাদের সরকার বাহাদুর সর্বদাই বলে গেলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি এমন অনন্য উচ্চতা পৌঁছে গেছে যে, আমরা এখন তেল না কিনে লোডশেডিংয়ের পথে হাটছি। দেশে দৈনিক ৬-৮ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। আবার আমাদের সরকার বাহাদুরের মন্ত্রীরা লোডশেডিংয়ের পক্ষে সাফাইও গাইছে! অথচ, কিছুদিন পূর্বেও প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমরা বিদ্যুৎ রপ্তানি করার কথা ভাবছি!

বিদ্যুৎ রপ্তানি করা তো দূর কি বাত, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করাই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম, ব্যায় কমানোর জন্য সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি সরকারি গাড়ি কেনাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুসারে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে! এমন অর্থনৈতিক অবস্থা যদি হয় অনন্য উচ্চতা, তাহলে অর্থনৈতিক দুর্দশা কাকে বলবেন?

পঠিত : ৩৬৯ বার

মন্তব্য: ০