Alapon

পরিচালকারা নিজ হাতে বাংলা নাটকের ইজ্জত খেয়ে দিয়েছে...



একটা সময় ছিলো, যখন আমরা সব ভাই-বোন মিলে টিভিতে নাটক দেখতে বসতাম। আমার এখনও মনে আছে, আমরা সবাই মিলে মাহফুজ আহমেদ অভিনীত ‘আমাদের নুরুল হুদা’ নাটকটা দেখতাম। আমাদের নুরুল হুদা শেষ হওয়ার পর হয়েছিল ‘অতঃপর নুরুল হুদা’। নাটক দুটি ছিলো দেখার মতো নাটক! আজও সময় পেলে ইউটিউবে ‘আমাদের নুরুল হুদা’ বা ‘অতঃপর নুরুল হুদা’ নাটকের দুই একটা পর্ব দেখি!

এর পরে ছোটবেলায় আমরা হুমায়ূন আহমেদের একটি নাটক দেখতাম, নাম ছিল ‘জোসনার ফুল’। বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ায় উৎসাহিত করতে সম্ভবত ইউনিসেফের অর্থায়নে নাটকটি বানানো হয়েছিল। যদিও নাটকটা ছিলো অনুদানের, কিন্তু মানের দিক থেকে ছিলো ফাটাফাটি! সেই নাটক দেখার জন্য আম্মাজি পর্যন্ত রান্না বন্ধ রাখতেন।

আর কিছুটা বড়ো হওয়ার পর দেখেছিলাম, সালাউদ্দিন লাভলু পরিচালিত ‘সাকিন সারিসুরি’ নাটকটি। ১০৫ পর্বের এই ধারাবাহিক নাটকটি দেখতে একটুও বিরক্ত লাগেনি। যদি সত্যি করে বলি, আজকের দিনে এসেও ‘সাকিন সারিসুরি’ নাটকটা দেখতে সামান্যতমও বিরক্ত লাগে না। বরং, জাপান ডাক্তার, রুইতন, শেফালিদের ডায়লগগুলো শুনলে এখনও শরীর কাপিয়ে হাসি আসে।

আর আমি জীবনে কেবলমাত্র একটা নাটক দেখেই কেঁদেছিলাম। সেই নাটকটির নাম ‘তোমার দোয়ায় ভালো আছি মা’ ! প্রবাসীদের জীবনের উপর নির্ভর করে নাটকটি বানানো হয়েছিল। সেই নাটক দেখে মন খারাপ হয়নি, বা কষ্ট পায়নি কিংবা আমার মতো যারা অতিআবেগি, তারা কান্না করেনি- এমন নজির পাওয়া কঠিন আছে।

তখনকার সময়ে ভালো নাটক ছিলো ভরি ভরি। সেই নাটকগুলো পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে উপভোগ করা যেতো।

আর আজকের সময়ে এসে পরিবারের কারোর সামনে ইউটিউবে থাকা নাটকগুলো চালু করতে ভয় লাগে! না জানি কেমন পোশাক পরে নায়িকারা স্ক্রিনে চলে আসে! না জানি হালের কাবিলা, পাশারা কোন খারাপ শব্দটা বলে ফেলে! ইউটিউবে থাকা নাটকগুলোতে নেই কোনো কাহিনি, তবে আছে উগ্র পোশাক পরা নায়িকাদের সরব ‍উপস্থিতি! ইউটিউবে থাকা নাটকগুলোর অভিনেতাদের অভিনয় আর মুগ্ধ করতে পারে না, তবে তাদের মুখের ভাষা আক্কেলগুড়ুম করে দেয়!

এসবের মাঝেও বহুদিন পর একটা ভালো ওয়েব সিরিজ দেখলাম। আফরান নিশো অভিনীত নয় পর্বের ডিটেক্টিভ ওয়েব সিরিজ ‘কাইজার’ দেখলাম। সমকালীণ ভাড়ামিপূর্ণ নাটকগুলোতে আফরান নিশোর ভাড়ামি দেখে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ‘কাইজার’ দেখে সেই বিরক্তিভাবটা চলে গেলো। আর দিনশেষে মনে হলো, আফরান নিশো আসলেই জাত অভিনেতা।

একটা সময় বাংলা নাটকের স্বর্ণযুগ ছিলো। কিন্তু ভিউ বাড়ানোর ধান্দায় পরিচালকারা নিজ হাতে বাংলা নাটকের ইজ্জত খেয়ে দিয়েছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো হয়তো সেই খেয়ে দেওয়া ইজ্জতটাই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

পঠিত : ৩৩৩ বার

মন্তব্য: ০