Alapon

ইসলাম মানে কী...?



এক.
প্রায় দেড় যুগ আগের কথা। মেহেরপুর শহরে এক মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছি। সম্ভবত মাগরিবের নামাজ। কাতারের সামনে পিলারের গোড়ায় চামড়ার জুতাজোড়া রেখে বসতে যাব, এমন সময় মধ্যবয়স্ক শিক্ষিতগোছের এক ভদ্রলোক আমার দিকে তেড়ে আসলেন।
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম, কিছুই বুঝলাম না।

আমি তাঁর দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।

তিনি আরও রেগে যাচ্ছেন— মনে হলো ধাক্কা কিংবা ঘুসিটুসি মেরে বসবেন। তাঁর সাথে আরও কয়েকজন যোগ দিলেন।

আমি লজ্জায়, অপমানে কী করব বুঝতে পারছিলাম না। পরে বুঝলাম, সামনে জুতা রাখাটাই আমার অপরাধ।

কয়েকজন এসে তাঁকে থামালেন। বললেন, ছেলেটা মনে হয় ঢাকা থেকে এসেছে, সে হয়তো জানে না— এখানে মসজিদে জুতা চুরি হয় না।
আমি মাথা নিচু করে জুতাজোড়া বাইরে রেখে এলাম।
বড় হয়েছি সিলেট শহরে, তারপর ঢাকায়। আমার জানা ছিল না— মেহেরপুর শহরে মসজিদে জুতা চুরি হয় না।

জানি না মেহেরপুরের মসজিদগুলো এখনও জুতা-চোর থেকে নিরাপদ আছে কি না।
কারো জানা থাকলে জানাতে পারেন, খুশি হবো।

দুই.
বছর তিনেক আগের কথা।

কয়েক মাস পর আব্বা অবসরে যাবেন, সপরিবারে সিলেট ছেড়ে চলে আসবেন। এ উপলক্ষ্যে আমি স্ত্রী-পুত্রসহ সিলেট গেলাম। আমারও অনেক স্মৃতির শহর কি না।
আমার তিন বছরের ছেলে ফজরের নামাজের সময় উঠে বায়না ধরল— ওর বাপ-দাদার সাথে মসজিদে যাবে। সবাই অনেক বুঝালাম, এখন ঘুমাও; দিনের বেলা তোমাকে নিয়ে যাব মসজিদে।

সে কোনোভাবেই রাজি হলো না; যাবেই— বাধ্য হয়েই নিয়ে গেলাম।
ঢাকায় ও প্রায়ই আমার সাথে মসজিদে যায়। মসজিদে তেমন ডিসটার্ব করে না, তবে মাঝে মাঝে ইমাম সাহেবের সাথে শব্দ করে আল্লাহু আকবার বলে— তা-ও খুব জোরে না।
সিলেটেও সে একই কাজ করে বসল— দু-একবার জোরে আল্লাহু আকবার বলে ফেলল।
সালাম ফেরানোর পর এক সেকেন্ডও দেরি হয়নি— একজন মুরুব্বি আমাকে রীতিমতো ধমকানো শুরু করলেন, কেন বাচ্চাকে মসজিদে নিয়ে আসলাম।

ভদ্রভাবে দু-এক কথায় তাঁকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম, তিনি আরও বেশি হইচই শুরু করলেন। আজ আর কেউ আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এল না। দেখলাম তাঁর সাথে আরও প্রতিবাদকারী ইমানি জোশ নিয়ে যোগ দিচ্ছেন। আব্বা মসজিদের অপর প্রান্তে ছিলেন। তিনি আসার আগেই ছেলেকে নিয়ে মাথা নিচু করে দ্রুতপদে মসজিদ থেকে বের হয়ে এলাম।
পরে শুনলাম তিনি এই মসজিদের সেক্রেটারি। (মসজিদের নামটা চেপে গেলাম) এসব সেক্রেটারি দিয়েই চলছে দেশের মসজিদগুলো।

তিন.

কিছুদিন আগের কথা।

ময়মনসিংহ জিলাস্কুল জামে মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছি। সাথে আমার শ্যালক।
জায়নামাজ বিছিয়ে সুন্নত পড়ে সালাম ফেরানো শেষ করার আগেই পেছন থেকে এক ভদ্রলোক আমাকে একরকম বিশ্রীভাবেই ডাকলেন।

আমি পেছনে তাকালে বললেন, জায়নামাজ উল্টো বিছিয়েছি কেন, কাবা ঘরের উপর পা দিয়ে নামাজ পড়ছি। বলাবাহুল্য, খুবই অভদ্রভাবেই বললেন।

আমাকে আবাক করে দিয়ে জায়নামাজটি আমার কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন।
আসলে একরঙা জায়নামাজ, হঠাৎ তাকালে বুঝা যায় না— কোনটা সামনের দিক আর কোনটা পেছনের।

এমনিতেই এসব লোকের সাথে তর্কে জড়াই না, আবার মসজিদে মানুষ নামাজ পড়ছে।
জায়নামাজটি ঠিক করে বসে পড়লাম।

আমাদের সমাজের বেশির ভাগ মানুষের ব্যবহার এইরকমই। নামাজ-রোজাকেই শুধু ইসলাম মনে করে।
এর জন্য দায়ী কে?
আমাদের পরিবার?
আমাদের সমাজ?

পঠিত : ২৮০ বার

মন্তব্য: ০