Alapon

ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ



আজকে যে বইটি রিভিউ করবো এর একটি ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। এই বইয়ের মাধ্যমে মাওলানা মওদূদী আর দেওবন্দীদের পথ দুইদিকে আলাদা হয়ে গিয়েছে। দেওবন্দীদের মিথ্যাচার ও তাকফিরের টার্গেট হয়েছেন মওদূদী ও তাঁর সমর্থকরা।

উপমহাদেশের সেরা ইসলামিক স্কলার যিনি ইসলামের স্বরূপ উপস্থাপন করে রাষ্ট্র ও জীবন পরিচালনার প্রায় সব দিক নিয়ে বই লিখেছেন সেই মাওলানা মওদূদীর উত্থান হয়েছে দেওবন্দীদের হাত ধরে। খুব কম বয়সে মাওলানা ইসলাম নিয়ে লেখালেখি শুরু করেছিলেন। তাঁর এই প্রতিভা দেখে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মুখপত্র 'মুসলিম' পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দেয় কর্তৃপক্ষ।

১৯২৩ সালে মাওলানার বয়স যখন মাত্র বিশ বছর, তখন তিনি 'মুসলিম' পত্রিকার সম্পাদক। ইংরেজ সরকার পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করলে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ 'আল জমিয়ত' নামে আরেকটি পত্রিকা স্টার্ট করে। মাওলানা এই পত্রিকারও সম্পাদক নিযুক্ত হন। এই পত্রিকার মাধ্যমে সারা উপমাহাদেশের মুসলিমরা মাওলানার লেখার সাথে পরিচিত হতে থাকে। ১৯২৭ সালে জমিয়ত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে মাওলানা 'আল জিহাদ ফিল ইসলাম' নামের বইটি লিখতে থাকেন। এতে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। ১৯৩০ সালে বইটি লেখা শেষ হয় ও বই আকারে পাবলিশ হয়।

এর মধ্যে পাকিস্তান আন্দোলন শুরু হয়। পাকিস্তান আন্দোলন হুট করে হিন্দুস্থানে নাজিল হয়নি। ধারাবাহিকভাবে এর একটি প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে। লর্ড কার্জন কর্তৃক শুধুমাত্র প্রশাসনিক কারণে ১৯০৫ সালে বাংলাকে ভেঙে আরেকটি প্রদেশ তৈরি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মুশরিকদের বঙ্গভঙ্গরদ আন্দোলন এবং ১৯১১ সালে তা রহিতকরণ থেকে শুরু। এরপর উপমহাদেশের যত্রতত্র এবং যখন তখন মুসলমাদের গায়ে পড়ে হিন্দুদের পক্ষ থেকে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ সৃষ্টি এবং মুসলমানদের জানমালের প্রভূত ক্ষতিসাধন করে মুশরিকরা। মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে বার বার সমঝোতা করার চেষ্টা করা হলেও কংগ্রেস তথা হিন্দুত্ববাদীদের হটকারিতায় সেটা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর সাতটি প্রদেশে আড়াই বছর কংগ্রেসের হিংস্র শাসন মুসলিমদের আলাদা রাষ্ট্রের কথা তীব্রভাবে ভাবতে শিখায়।

হিন্দুস্থানে মুশরিকরা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ ও শক্তিশালী হওয়ার কারণে মুসলিম জাতিকে হয় তাদের দাসানুদাস বানিয়ে রাখতে অথবা নির্মূল করতে চায়। এ লক্ষ্য হাসিলে জন্যেই কংগ্রেসের দাবী ছিল এই যে এ উপমহাদেশের অধিবাসীদের একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং ব্রিটিশ সরকারকে তার হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। হিন্দু সভ্যতা সংস্কৃতি ও হিন্দুধর্মের পুনর্জাগরণ এবং হিন্দুরামরাজ্য স্থাপনই ছিল কংগ্রেসের একমাত্র লক্ষ্য। কংগ্রেস ও তার কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন আচরণে এ বিশ্বাস মুসলমানদের হৃদয়ে বদ্ধমূল হয় এবং এ কারণেই মুসলমানগণ পাকিস্তান আন্দোলন করতে বাধ্য হন।

যাই হোক পাকিস্তান আন্দোলনের শুরুর দিকে মাওলানার সাথে জমিয়ত পত্রিকার মালিক জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের নেতাদের সাথে দ্বিমত হয়। জমিয়ত নেতারা পাকিস্তান আন্দোলন ও দ্বিজাতিতত্ত্বের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে থাকেন। মাওলানা তাদের এই মুশরিকপ্রধান কংগ্রেসপন্থী কার্যক্রম পছন্দ করেননি। মাওলানা ১৯২৮ সালে জমিয়ত পত্রিকা থেকে সরে দাঁড়ান।

১৯৩৮ সালে দেওবন্দের প্রধান নেতা হুসাইন আহমদ মাদানী ‘মুত্তাহিদা কওমিয়াত আওর ইসলাম’ বা ‘যুক্ত জাতীয়তা ও ইসলাম’ শিরোনামে একটি বই লিখেন। ওনার এই বই প্রকাশিত হওয়ার পর মুসলিমদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। একদিকে তাদের মন সায় দিচ্ছে পাকিস্তানের প্রতি অন্যদিকে সর্বোচ্চ ধর্মীয় আলেম বলছেন হিন্দুদের সাথে থাকার কথা। তার এই বইয়ের বিপরীতে কিছু দেওবন্দী নেতা বক্তব্য দিলেও তার যুক্তি খণ্ডন করে কেউ কিছু করতে পারে নি।

অবশেষে তাত্ত্বিক দিক দিয়ে জাতীয়তাবাদের বিষয়ে আদ্যোপান্ত গবেষণানির্ভর বই 'মাসয়ালায়ে কওমিয়াত' লিখেন মওলানা মওদূদী রহ.। সেই বইটি বাংলায় “ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ” নামে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সেই বইতে হিন্দু-মুসলিম এক জাতি এই ধারণার সব যুক্ত খণ্ডন করে দেখিয়েছেন যে, সমগ্র পৃথিবীর গোটা মানব বসতিতে মাত্র দু’টি দলের অস্তিত্ব রয়েছে; একটি আল্লাহর দল অপরটি শয়তানের দল। তাই এই দুই দল মিলে কখন এক জাতি হতে পারে না, যেমন পারে না তেল ও পানি মিশে এক হয়ে যেতে। মওলানার এই বই তখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে।

দ্বি-জাতি তত্ত্ব হঠাৎ করে তৈরি হওয়া কোন তত্ত্ব নয়। এ তত্ত্ব মানুষের সৃষ্টি থেকে, বিশেষ করে ইসলামের আবির্ভাব থেকে সমাজে সুস্পষ্ট ছিল। রসুল সা. বলেছেন “আল কুফরু মিল্লাতুন ওয়াহেদা”- সমস্ত কুফর জাতি এক জাতি এবং “আল মুসলেমু আখুল মুসলিম” এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। এ এক চরম সত্য।

আমাদের আজকের বই 'মাসয়ালায়ে কওমিয়াত' বা 'ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ'। বইটি অনুবাদ করেছেন বাংলার বিখ্যাত পণ্ডিত মুমতাজুল মুহাদ্দিসিন মাওলানা আব্দুর রহীম রহ.। এই বইয়ের মাধ্যমে দেওবন্দের সাথে মাওলানার যে বিরোধ শুরু হয়েছে তা আজো চলমান। মাওলানাকে তাকফির করা শুরু হয়েছে এখান থেকেই। তখনো জামায়াত প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৪১ সালে জামায়াত প্রতিষ্ঠিত হলে জামায়াতে ইসলামও তাকফিরের মুখোমুখি হয়।

বইটিতে মোটাদাগে ৬ টি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
১. ইসলাম ও জাতীয়তা
২. জাতীয়তার মৌলিক উপাদান
৩. ইসলামের মিলনবাণী
৪. একজাতিত্ব ও ইসলাম
৫. জাতীয়তাবাদ কি মুক্তি দিতে পারে?
৬. ইসলামী জাতীয়তার তাৎপর্য

প্রথমত মাওলানা জাতির সংজ্ঞা, জাতীয়তা গঠনের উপকরণ ইত্যাদি আলোচনা করেন। এই জাতীয়তা মানবিকতা ধ্বংস করে বিপর্যের উৎস হিসেবে কাজ করে মাওলানা তা আলোচনা করেছেন একসাথে এটাও দেখিয়েছেন এটা জাহেলি বিদ্বেষ তৈরি করে। আর ইসলাম এর কোনোটাই সাপোর্ট করে না। বরং জাতীয়তাবাদের জাহেলিয়াতকে নির্মূল করা ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

দ্বিতীয়ত মাওলানা জাতীয়তাবাদের মোলিক উপকরণ নিয়ে আলোচনা করেন। গোত্রবাদ, স্বদেশিকতা, ভাষাগত জাতীয়তা, বর্ণবৈষম্য, অর্থনৈতিক জাতীয়তা, রাজনৈতিক জাতীয়তা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেন। একইসাথে মাওলানা বিদায় হজ্বের ভাষণ ও রাসূল সা. অন্যান্য বক্তব্য থেকে জাতীয়তা বিষয়ে ইসলামের অবস্থান তুলে ধরেন। এই গোত্রবাদের সাথে ইসলামের যে দ্বন্দ্ব তা তুলে ধরেন। আভিজাত্যের অহমিকা ও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ইসলামের বক্তব্য উপস্থানপন করেন।

মাওলানা বলেন, জাহেলী যুগের এ বর্বরতাকে নির্মূল করার পর ইসলাম বিজ্ঞানের ভিত্তিতে জাতীয়তার এক নতুন ধারণা উপস্থাপিত করেছে। ইসলামী জাতীয়তার মানুষে মানুষে পার্থক্য করা হয় বটে; কিন্তু তা জড়, বৈষয়িক ও বাহ্যিক কোনো কারণে নয়; তা করা হয় আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও মানবিকতার দিক দিয়ে। মানুষের সামনে এক স্বাভাবিক সত্যবিধান পেশ করা হয়েছে-তার নাম হচ্ছে ইসলাম। আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য, হৃদয় মনের পবিত্রতা ও বিশুদ্ধতা, কর্মের অনাবিলতা-সততা ও ধর্মানুসরণের দিকে গোটা মানবজাতিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে যে, যারা এ আমন্ত্রণ কবুল করবে তারা একজাতি হিসাবে গণ্য হবে। আর যারা তা অগ্রাহ্য করবে তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতির অন্তর্ভূক্ত হবে। অর্থাৎ মানুষের একটি হচ্ছে ঈমান ও ইসলামের জাতি এবং তার সমগ্র ব্যক্তি সমষ্টি মিলে একটি উম্মাত وَكَذَالِكَ جَعَلناكم اُمَّةً وَّسَطًا অন্যটি হচ্ছে কুফর ও ভ্রষ্টতার জাতি। তার অনুসারীরা নিজেদের পারস্পারিক মতদ্বৈততা ও বৈষম্য সত্ত্বেও একই দল একই জাতির মধ্যে গণ্য। وَاللهُ لاَ يَهْدىِ القَومَ الكافِرِيْنَ

তৃতীয়ত মাওলানা ইসলামে ঐক্যের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। সুদূর প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যের সীমান্ত পর্যন্ত মুসলমানদের যে অখণ্ড সংহতি বিদ্যমান, এটাও আলাহরই অপার অনুগ্রহের সুস্পষ্ট নিদর্শন সন্দেহ নেই। বিশ্বব্যাপী ঐক্য ও সংহতি স্থাপন একমাত্র চূড়ান্ত কথা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতেই সম্ভব। এছাড়া আর যত মত ও পথ রয়েছে, তা সবই ভুল-সবই বিচ্ছেদ ও বিভেদ সৃষ্টিকারী, এটা নিঃসন্দেহ। বস্তুত এ পাঁচটি বিষয়ের প্রতি সংশয়ের লেশহীন বিশ্বাস স্থাপনের নামই হচ্ছে মিলনবাণী।

চতুর্থত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানীর বইয়ের প্রসঙ্গ এনে সেই বইয়ের ভুল ও অবাস্তব কথাগুলো ধরিয়ে দেন। মাওলানা ‘মুত্তাহিদা কওমিয়াত আওর ইসলাম’ বই থেকে হুসাইন মাদানীর কথা, যুক্তি ও পয়েন্ট উল্লেখপূর্বক তাঁর লেখাকে খন্ডন করেছেন। তার এই যুক্তি খন্ডন শুধু উপমহাদেশের আলেম সমাজ নয়, দেওবন্দীদের ওপরও প্রভাব বিস্তার করেছে। দেওবন্দী ও জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের প্রতি মুসলিমদের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, এই বইয়ের প্রভাবে জমিয়তে উলামায় হিন্দ থেকে বের হয়ে আসেন মাওলানা শিব্বির আহমদ উসমানীর নেতৃত্বে একটি দল। তারা জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নামে নতুন দল করেন। মাওলানা আশরাফ আলী থানবিও এই নতুন দলের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন।

পঞ্চমত মাওলানা আলোচনা করেন, 'জাতীয়তাবাদ কী আসলে মুক্তি দিতে পারে?' এই প্রসঙ্গে। এই আলোচনার প্রেক্ষাপট মাওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধি। রেশমি রুমাল আন্দোলনের নেতা উবাইদুল্লাহ সিন্ধি দীর্ঘদিন নির্বাসিত জীবন যাপনের পর কলকাতায় একটা সভায় ভাষণ দেন। তাঁর ভাষণে তিনি মুসলিমদের জাতীয়তাবাদী হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। ইউরোপীয় স্টাইল অনুসরণের জন্য আহ্বান জানান। মাওলান তার এই ধারণার বিরোধীতা করে বক্তব্য রাখেন। সেই আলোচনায় মাওলানা ইসলাম ও জাতীয়তাবাদের মধ্যে পার্থক্য, ইউরোপের প্রকৃত অবস্থা, পশ্চিমা জাতীয়তাবাদের স্বরূপ ও পরিণতি এবং উবাইদুল্লাহ সিন্ধি প্রস্তাবিত বিদেশী পোষাক গ্রহনের বিরোধীতা করেন।

ষষ্ঠত এবং সবশেষে মাওলানা ইসলামী জাতীয়তার তাৎপর্য উল্লেখ করেন। তিনি এখানে ইসলামী জাতীয়তার ভিত্তি 'ঈমান' তা উল্লেখ করেন। ঈমানের কারনে আমাদের চিন্তা ভাবনা ও আচরণের পার্থক্য সূচিত হয় ও আমরা আলাদা জাতিতে পরিণত হই।

মাওলান বলেন, কুরআন মজীদ ভূ-পৃষ্ঠের এ বিপুল জনতার মধ্যে কেবল দুটি পার্টিরই অস্তিত্ব স্বীকার করেছে : একটি হচ্ছে আল্লাহর দল (حـــزب الله) আর অপরটি হচ্ছে শয়তানের দল (حـــزب الشيطان) শয়তানের দলের পরস্পরের মধ্যে নীতি ও আদর্শের দিক দিয়ে যতোই পার্থক্য ও বিরোধ হোক না কেন, কুরআনের দৃষ্টিতে তা সবই এক। কারণ, তাদের চিন্তা, পদ্ধতি ও কর্মনীতি কোনো দিক দিয়েই ইসলামী নয়। আর খুঁটিনাটি ও ক্ষুদ্র ব্যাপারে মতবিরোধ সত্ত্বেও তারা সকলেই এক শয়তানের পদাংক অনুসরণ করতে সম্পূর্ণরূপে একমত।

বইটি দারুণ একটি বই, যা আপনার চিন্তাজগতকে প্রবলভাবে আন্দোলিত করবে। বইটি পড়ুন, মুসলিমদের ঐতিহাসিক পটভূমি জানুন। যে বিষয়কে নিয়ে মওদূদী ও দেওবন্দের মধ্যে পার্থক্য সূচিত হয়েছে সে সম্পর্কেও জানা যাবে এই বই থেকে।

#বুক_রিভিউ
বই : ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ
লেখক : সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী
অনুবাদক : মুহাম্মদ আবদুর রহীম
প্রকাশনী : আধুনিক প্রকাশনী
পৃষ্ঠা : ১৩৩
মুদ্রিত মূল্য : ৬৫
জনরা : থিয়োলজি

পঠিত : ৪৫২ বার

মন্তব্য: ০