Alapon

বন্যা : মানিবক হওয়ার বার্তা


নদীমাতৃক বাংলাদেশের মানুষ ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা, টর্নেডো ও সাইক্লোনের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেই জীবন তরী নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। গাঙ্গেয় উপদ্বীপের অতীত ইতিহাস খুব বেশি সুখকর না হলেও সাম্প্রতিক কয়েক বছরে সিডর এবং আইলার পর বড়ো আকারের কোনো দুর্যোগের কবলে এ দেশের মানুষকে পড়তে হয়নি। যদিও এখনো সিডরের দুঃসহ স্মৃতিগুলো দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে শিহরিত করে তোলে। আইলার ক্ষয়ক্ষতি এখনো বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের মানুষ পুষিয়ে উঠতে পারেনি। বিগত কয়েক বছরে বন্যার পানিতে সবকিছু ডুবে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। এবারে সিলেট অঞ্চলে তৃতীয় ধাপে বন্যার পানি মারাত্মক আকার ধারণ করে। সিলেটের সাথে যুক্ত হয়েছে কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, জামালপুর, নেত্রকোণাসহ আরও বেশ কয়েকটি জেলা। সিলেট অঞ্চলের বন্যা জনজীবনকে থামিয়ে দিয়েছে। চিরচেনা রাস্তাঘাট, বসবাসের প্রিয় জায়গাগুলো পানিতে ডুবে গেছে। স্রোতের পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বহু ঘর বাড়ি। প্রতিদিনের ব্যবহারের অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলো চোখের সামনেই পানিতে ভেসে গেছে। অতি শখের জিনিসগুলো বানের পানির সামনে বড়োই অপাঙতেয় মনে হয়েছে। জীবন এবং জমিনের পার্থক্যগুলো তাদের সামনে ধরা দিয়েছে নতুন অবয়বে। নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী আর তৈজসপত্রকে জীবনের চেয়ে বেশি প্রিয় ভাবার সুযোগ নেই, এ বার্তা তারা অনুধাবন করতে পেরেছে বন্যার্ত মানুষগুলো।

তীব্র পানির স্রোত হু হু করে বসতিতে প্রবেশ করার পর খুব কম মানুষই অতি সহজে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পেরেছে। বিপদাপন্ন মানুষগুলো বড়ো সড়ক ধরে যখন নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে তখন বড়ো সড়কগুলোতেও তীব্র পানির স্রোত শুরু হয়েছে। পানিতে ভেসে যাওয়া মানুষগুলোকে উদ্ধারে এগিয়ে এসেছে স্বেচ্ছাসেবীরা। সিলেটের ভয়াবহ বন্যা কারো কারো জীবনে প্রথম। তীব্র মানবিক সংকট শুরু হয়ে যায় হঠাৎ করে। নীড়হারা মানুষগুলোর আশ্রয় আর খাবারের সংকটে জীবনকে নতুন করে উপলব্ধি করে। এ সংকটে মানুষও বসে থাকেনি। মানুষ মানুষের জন্য-জীবন জীবনের জন্য এ অপ্ত বাক্য অপাঙতেয় হয়নি। সরকারি ত্রাণ সহায়তার অপ্রতুলতা আর তাদের উপলব্ধির দৈন্যতার মাঝে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা নিয়ে একদল মানুষ ঝাপিয়ে পড়ে সামর্থ্যরে সবটুকু নিয়ে।

ভারতের মেঘালয় থেকে আসা পাহাড়ি ঢল আর প্রবল বৃষ্টিতে সিলেট, সুনামগঞ্জে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হঠাৎ বড়ো বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট বিভাগের অধিকাংশ স্থান ইতোমধ্যেই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। নদ-নদী ও হাওরের পানিতে ডুবে গেছে একতলা বাড়িগুলো। পানির উচ্চতা বাড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সিলেট বিভাগের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মোবাইল টাওয়ারগুলো অনেকক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক সংযোগ রক্ষা করতে পারেনি। যাদের পরিবারের সদস্যরা অন্যান্য জেলায় কিংবা দেশের বাহিরে আছে তাদের অনেকেই পরিবারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেনি। এতে করে তাদের মানসিক অস্থিরতা আরও বেড়েছে।

শুকনো খাবার, সুপেয় পানি আর একটু আশ্রয়ের অভাবে সেখানকার মানুষ চরম বিপর্যয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সিলেট এবং সুনামগঞ্জের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ভীড় করেছে হাজার হাজার মানুষ। আশ্রয়প্রার্থীর তুলনায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা কম হওয়ায় সেখানেও থাকতে হচ্ছে মানবেতরভাবে। সুনামগঞ্জের বাসিন্দারা বলছেন, বহু বছরের মধ্যে তারা এতো মারাত্মক বন্যার মুখোমুখি হননি। সিলেট জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সাংবাদিকদের দেওয়া তথ্য মতে বন্যা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৫০ লাখের বেশি। সুনামগঞ্জের সঙ্গে গোটা দেশের বাকি অংশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। নেত্রকোণার অবস্থাও সুনামগঞ্জের মতো। এর পাশাপাশি রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারীসহ দেশের আরও অন্তত ১৭টি জেলা বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের বন্যার ইতিহাস এ দেশের মানুষের জীবনের ওঠা নামার সাথে জড়িত। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে অবস্থিত নদীবেষ্টিত বাংলাদেশে সংঘটিত বন্যা নানান সময় নানাভাবে এখানে আঘাত হেনেছে। প্রতি শতাব্দীতে এখানে প্রায় অর্ধডজন প্রলয়ংকরী বন্যা হয়েছে। ১৯২৬ সালে বগুড়ায় ভয়াবহ বন্যায় জীবন ও সম্পদের বিরাট ক্ষতি সাধিত হয়। ১৮৮৭ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত বগুড়া, পাবনা ও রংপুরের বড় বন্যার কারণেই ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ বদলে যায়। আঠারো শতকের প্রথম দিকে গড়াই-মধুমতির বন্যায় কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, যশোর এবং খুলনা জেলার মারাত্মক বাঁক পরিবর্তন হয়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে এ দেশে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। ১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৬, ১৯৬২, ১৯৬৩, ১৯৬৮, ১৯৭০, ১৯৭১, ১৯৭৪, ১৯৭৬, ১৯৮৭, ১৯৮৮ এবং ১৯৯৮ সালের প্রলয়ংকারী বন্যা তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ১৯৮৮ সালের মহাপ্লাবনে দেশের ৬০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যায়। রাজধানী ঢাকা শহরও ১৫ থেকে ২০ দিন ওই বন্যার পানিতে তলিয়ে ছিল। আর ১৯৯৮ সালের বন্যাটিও সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। (তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া)

দৈনিক প্রথম আলোর এক রিপোর্ট মতে ‘‘নদী গবেষকরা বলছেন, এবারের এইরকম আকস্মিক বন্যার পেছনে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের অতিবৃষ্টি একটি বড়ো কারণ। বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১৬ জুন বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা গত ১২২ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। সেখানে অতিবৃষ্টির কারণে এবারের ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের পরিচালক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, গত তিনদিন চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৪৮৭ মিলিমিটার এবং এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। এরকম ধারাবাহিক বৃষ্টি হয়েছে ১৯৯৫ সালে একবার, তিনদিনে ২৭৯৮ মিলিমিটার আর ১৯৭৪ সালে ২৭৬০ মিলিমিটার। তার মতে, এরকম খুব কম দেখা গেছে।

তবে এটাই কি মূল কারণ ? নাকি এর পেছনে আরও কারণ আছে? অতীতের বৃষ্টিপাতের প্রেক্ষাপট আর এখনকার নদীগুলোর অবস্থার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে বলে নদী গবেষকরা মনে করছেন। হঠাৎ বন্যার কারণ হিসেবে অনেকেই ভারতের মেঘালয়, চেরাপুঞ্জি এবং আসামে অতি বৃষ্টিপাতকে দায়ি করছে। কেউ কেউ মনে করছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি বদলে যাওয়া। নদীগুলোর নাব্যতা ঠিক না থাকা। অতি বৃষ্টির পানি ধরে রাখার মতো বড়ো বড়ো জলাধার না থাকা বন্যার অন্যতম কারণ। এর বাইরে আরো কিছু কারণ গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে। হাওড় এলকায় যে সকল নতুন সড়ক তৈরি করা হয়েছে এ সড়কগুলো বন্যার অসংখ্য কারণের একটি। হাওড় এলাকায় পানি নামে উত্তর-দক্ষিণমুখী হয়ে। হাওড় এলাকার বেশকিছু রাস্তা তৈরি করা হয়েছে পূর্ব-পশ্চিমমুখী করে। এতে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। অপরিকল্পিত সড়ক এবং ভৌত অবকাঠামোও বন্যার একটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। হাওড় এলাকাসহ নদী অঞ্চলে যেমন টেকসই বেড়িবাধ দরকার তা নির্মাণ করা হয়নি।

বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি জায়গায় বৃষ্টি হলে স্বাভাবিকভাবে তার পানি ভাটির দিকে প্রবাহিত হবে। পানি প্রবাহের এ ধারাবাহিকতা ঠিক থাকলে হঠাৎ এ বন্যার সৃষ্টি হতো না। বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীর উৎসমূল ভারতে অবস্থিত। ভারত প্রায় সবগুলো নদীর উৎসমুখে বাধ দিয়ে রেখেছে। সারা বছর এ বাধগুলোর গেট বন্ধ করে রাখা হয়। এর কারণে নদীর স্বাভাবিক স্রোতের গতিপথ পাল্টে গিয়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীতে পলি জমে তার নাব্যতা হারিয়েছে। ফারাক্কা বাধ বাংলাদেশের বাংলাদেশের জন্য এক মরণ ফাঁদ। বহু আন্দোলন-সংগ্রাম আর আলোচনা বৈঠকের পরও ফারাক্কা ইস্যুর কোনো সমাধান আজ পর্যন্ত হয়নি। এর পর আবার নতুন করে তারা টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করে। টিপাইমুখ বাধের কারণে দীর্ঘস্থায়ী যে ক্ষতির মুখে বাংলাদেশ পড়বে তার অন্যতম হলো উত্তরবঙ্গ মরুভূমিতে পরিণত হবে। সকল নদীর নাব্যতা নষ্ট হবে। আমাদের যখন পানি দরকার তখন নদীগুলো শুকনো থাকবে এর বিপরীতে যখন পানি দরকার হবে না, তখন ভারত সবগুলো গেট খুলে দিয়ে আমাদেরকে প্লাবিত করবে। টিপাইমুখ বাধের কুফল আমরা ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছি।

বরাক নদী দিয়ে আসাম থেকে আসা পানি সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারায় প্রবেশ করে। আর হিমালয় থেকে সৃষ্টি হওয়া ব্রহ্মপুত্রের পানি কুড়িগ্রাম দিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি করে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার মূল কারণ বরাক নদীর পানির স্রোত। এই স্রোত সারা বছর থাকে না। বরাক নদীতেই ভারত বাধ নির্মাণ করেছে। যাকে আমরা টিপাইমুখ বাধ হিসেবে জানি। একইভাবে আসামের উঁচু পাহাড় থেকে ঢল আকারে নেমে আসা পানি সিলেটের নদীগুলো দিয়ে আসে। বরাক নদীর বাধের কারণে সুরমা কুশিয়ারা নাব্যতা হারিয়েছে। হিমালয়ের নেমে আসা পানির স্রোত যখন তীব্র হয় তখন ওই পানি দ্রুত মেঘনা নদী হয়ে সাগরে চলে যায়। সিলেট অঞ্চলটি দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে উঁচু হওয়ায় ঐ অঞ্চলের মানুষের বন্যার অভিজ্ঞতা কম। যার কারণে সিলেটের অধিকাংশ মানুষ বলেছে তারা তাদের জীবনে এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি।

বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য নদীর নাব্যতা ঠিক রাখা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের ইস্যুগুলো দ্বিপাক্ষিক অথবা আন্তর্জাতিক টেবিলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা। হাওর অঞ্চলের সমস্যা সমাধান করা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ নির্মাণ করার পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অবন্ধুসুলভ আচরণগুলো পরিহারের জন্য তাদের প্রতি চাপ সৃষ্টি করা।

এবারের আকস্মিক বন্যায় বন্যা দুর্গত মানুষের জীবন কতটা কঠিন হয়েছে তা প্রায় প্রতিনিয়ত গণমাধ্যম এবং ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে মানুষ জানতে পেরেছে। আশ্রয় নেই, খাবার নেই, দোকান, বাজার ও রেস্তোরা সব বন্ধ। এমন কঠিন দিনে সরকারের যেভাবে এগিয়ে আসা দরকার ছিল সেভাবে সরকার কার্যকর ভূমিকা রেখেছে বলে কোনো তথ্য আমরা জানতে পারিনি। সরকার যতটুকু সাহায্য ঘোষণা করেছে তাতে বরং মানুষের কষ্ট এবং ভোগান্তি কয়েকগুণ বেড়েছে। এবারে দেশের বেশ কয়েকটি ইসলামী দল, সংস্থা এবং কয়েকজন ইসলামী ব্যক্তিত্বের ভূমিকা জনগণকে নতুনভাবে চিন্তার খোরাক দিয়েছে। যার কারণে অনেক সাধারণ মানুষও সামর্থ্যরে যতটুকু আছে তাই নিয়ে মানবতার সেবায় ঝাপিয়ে পড়েছে। গণমাধ্যম অনেক সংবাদ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। ক্ষমতাশীন দলের ছাত্র সংগঠনের সামান্য কিছু ত্রাণ বিতরণ যেভাবে গণমাধ্যমে হাইলাইট হয়েছে সে তুলনায় আলেম এবং ইসলামী ব্যক্তিত্বদের বিশাল অবদান তুলে ধরা হয়নি। যদিও তাঁরা লোক দেখানো কাজ করেননি। একজন অতি বৃদ্ধ ইসলামী নেতা বৃষ্টিতে ভিজে দিনের পর দিন নিজে ত্রাণ তৎপরতায় শামিল থেকেছেন সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জেলায় যার সচিত্র প্রতিবেদন আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। একজন তরুণ আলেম তার নিজের বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে যে পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন তা সম্ভবত সরকারি সাহায্যের বেশি বৈ কম নয়। এগুলো দেখে আমরা নতুন করে আশাবাদী হই। অনেক তরুণকেও দেখেছি ব্যক্তিগত উদ্যোগে লাখ লাখ টাকা সংগ্রহ করে ত্রাণ তৎপরতা চালিয়েছে। আশার দিকগুলোর পাশাপাশি হতাশার দিকগুলোও সামনে চলে এসেছে। বিপদের দিনে মানুষের যেভাবে মানবিক হওয়া দরকার ছিল তা অনেকেই হয়নি। নৌকা পারাপারে ৫০ টাকার ভাড়া কেউ ৫০০ টাকা পর্যন্ত দাবি করেছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। খালি বাসা বাড়িতে চুরি ডাকাতির সংবাদও এসেছে।

বড়ো বড়ো দুর্যোগ আর বিপদগুলো আসে আমাদেরকে সতর্ক করার জন্য। কাঙ্ক্ষিত মানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অর্জনের আহ্বান জানায় এ দুর্যোগগুলো। আমাদের কর্মতৎপরতা সংশোধন করতে বলে। রাজনৈতিক আর সামাজিক ভুলগুলো শোধরানোর সতর্ক বার্তা পেশ করে। আর্থিক দুর্নীতি আর দূরাচারগুলো হতে দূরে থাকার আহ্বান জানায়। সিলেটের বন্যায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতাগুলো চিহ্নিত করে তার আলোকে আমাদের কর্মপন্থাগুলো নির্ধারণ করা উচিত। প্রতিটি দুর্যোগে কারণ চিহ্নিত হয়, কিছু দিন হৈ চৈ হয় এরপর আবার আগের মতো সব চলতে থাকে। এ নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সিলেটের বন্যা আমাদেরকে মানবিক হওয়ার সতর্কবার্তা পেশ করেছে। এ কাজে আলেম এবং কয়েকটি ইসলামী দল সর্বাগ্রে ভূমিকা পালন করেছে। দেশের প্রতিটি নাগরিক এ থেকে শিক্ষা নিয়ে মানবিক হোক এটাই প্রত্যাশা।

পঠিত : ২৬১ বার

মন্তব্য: ০