Alapon

প্রাচ্যবিদদের দাঁতের দাগ (বই রিভিউ)

১। History of Arabs - P. K. Hitti
২। The Preaching of Islam - T. W Arnold
৩। Life of Mahomet - William Muir
৪। A History of Islamic Spain - W. Montgomery Watt
৫। The Legacy of Islam - T. W. Arnold


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দুটো ডিপার্টমেন্ট থেকে সবচেয়ে বেশি বিসিএস ক্যাডার হয়, তারমধ্যে ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ অন্যতম। 
ফার্স্ট ইয়ারের মাঝামাঝি সময়ে জানতে পারলাম, ইসলামের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি ডিপার্টমেন্টে পড়ে অনেকেই 'নাস্তিক' হয়ে যান। কথাটা আমি প্রথম প্রথম বিশ্বাস করতে পারিনি।


ইসলামের সোনালী ইতিহাস পড়ে মানুষ কেনই বা নাস্তিক হবে? পরে জানতে পারলাম, ইসলাম ইতিহাস শিক্ষা দেওয়া শিক্ষক অনেকেই নাকি নাস্তিক। কথাটা কতটুকু সত্য জানিনা, তবে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে শুনেছি।


মনের মধ্যে প্রশ্ন ঘুরপাক খেতো, যারা ইসলামের ইতিহাস পড়ান, তারা নিজেরাই কিনা যাদের ইতিহাস পড়াচ্ছেন, তাদের বিশ্বাস করেন না!


আস্তে আস্তে দেখতে পেলাম যে, ইসলামের ইতিহাস ডিপার্টমেন্টে যেসব লেখকদের বই পড়ানো হয়, তা বেশিরভাগই উপরিউল্লিখিত লেখকদের বইসহ আরো অনেক প্রাচ্যবিদদের বই।


বিষয়টা ভালোমতো বুঝতাম না। এমনকি নিজেও রেফারেন্স দেখার সময় দেখতাম, একই ইতিহাসের রেফারেন্স যখন একজন মুসলমান দিয়েছেন আর একজন প্রাচ্যবিদ (অমুসলিম, কিন্ত ইসলামের ইতিহাসের গবেষক) দিয়েছেন, তখন প্রাচ্যবিদদের রেফারেন্সটা আমার কাছে জোড়ালো মনে হতো। একজন অমুসলিম হয়েও তিনি ইসলামের ইতিহাসে মুগ্ধ হয়েছেন!


নিজেও অনেক সময় একই ইতিহাসে রেফারেন্স মুসলমান আর প্রাচ্যবিদদের দুজনের রেফারেন্স থাকলে, প্রাচ্যবিদদেরটা প্রাধান্য দিতাম।


এই বইটা পড়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের জবাব পেয়েছে।
প্রথম প্রশ্ন, ইসলামের ইতিহাস পড়েও মানুষ গণহারে নাস্তিক হচ্ছে কেন?
দ্বিতীয় প্রশ্ন, প্রাচ্যবিদরা কেনো এতো ইসলামের ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করে এইসব মূল্যবান (!) বই লিখলেন।


প্রথম প্রশ্নের উত্তরটা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রাহিমাতুল্লাহ) এর উক্তির দিয়ে বলি,
"প্রাচ্যবিদদের গ্রন্থাবলী ও প্রবন্ধরাজীতে এতো সন্দিগ্ধ তথ্য পাওয়া যায়, যা ইসলাম সম্পর্কে প্রশস্ত ও গভীর জ্ঞান থেকে বঞ্চিত যে কোন বুদ্ধিমান ও অনুভূতি সম্পন্ন মানুষকে ইসলাম থেকে একেবারে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য যথেষ্ট।"
(ইসলামী মামালিকউ মে মাগারিবিয়াত কা কাশমাকাশ)


দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর পেলাম, প্রাচ্যবিদদের লেখার মধ্যে কৌশলের মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা ঢুকিয়ে দেবার মাধ্যমে। তারা ইসলাম সম্পর্কে অনেক প্রশংসা বাণী করলেও কৌশলে এইসব প্রশংসা বাণীর মধ্যে বুনন করেছেন ভ্রান্ত আকীদার জাল।


যেমন, উইলিয়াম ম্যুর তার 'লাইফ অব মুহাম্মাদ' গ্রন্থে লিখেন, নবী সা: এর মোহরে নবুওয়াত আসলে খাদিজা রা. এর আঘাতের দাগ, রাসূল সা: এর মাঝে ছিলো সম্মোহন, যা দ্বারা তিনি মানুষকে আকৃষ্ট করতেন। 
অনেকেই আবার রাসূল সা: এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এমনভাবে বর্ণনা করেছেন, যার ফলে তার নবীত্ব অস্বীকার করেছেন।


এডওয়ার্ড ফ্রীমেন বলেছেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সংবিধান রচনাকারী আরবীয় এক মহান ব্যক্তি।


অথচ তিনি কিছুই লিখেন নি, তার উপর ওহী নাযিল হয়েছিলো।


এছাড়াও অসংখ্য ভ্রান্ত মতবাদ তারা (প্রাচ্যবিদরা) তাদের ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করেন, যা পড়ে অসচেতন পাঠক সমাজ বুঝতেই পারবেনা কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা।


ইসলামের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করে উদ্দেশপ্রণোদিতভাবে তারা মিথ্যের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন মুসলিম তথা অমুসলিমদের মধ্যে। যেমন ১১৪৩ সালে ইংরেজ পণ্ডিত রবার্ট অব কেটন ল্যাতিন ভাষায় কুরআন অনুবাদ করেন তখন এর নাম দেন 'Lex Mahumet the False Praphete' (যার ইংরেজি করা হয়, The Law of Mahumet the False Prophet)। 
নাম থেকেই বুঝা যায়, এইসব ইতিহাস চর্চার উদ্দেশ্য।

পঠিত : ১৪৫৭ বার

মন্তব্য: ০