Alapon

মহান আল্লাহ অনুশোচনা পছন্দ করেন...



আল্লাহ পাপ পছন্দ করেন না, কিন্তু পাপ করার পর ধার্মিকদের অন্তর থেকে যে অনুশোচনা আসে আল্লাহ তা পছন্দ করেন। তাই, পাপ করার ইচ্ছে করবেন না। কিন্তু, যখন পাপ হয়ে যায়, একবার যখন তা আপনার অতীত হয়ে যায়— এই পাপের অনুশোচনাকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দিকে প্রত্যাবর্তন করুন।

প্রিয় মুসলিম, আল্লাহ যদি আমাদের নিষ্পাপ করে সৃষ্টি করতে চাইতেন তবে আমরা মানুষ হতাম না, আমরা ফেরেশতা হতাম। কিন্তু, আমরা মানুষ। মোটের উপর, প্রকৃতিগত ভাবেই আমরা পাপ প্রবণ। তাই বলে পাপকে আলিঙ্গন করবেন না। সবসময় এর বিরুদ্ধে লড়াই করুন। সবসময় সেগুলো নিয়ে অনুতাপ অনুভব করুন। কিন্তু, কখনোই আল্লাহর দয়ার প্রতি আশা ছেড়ে দিবেন না। সর্বদা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দিকে ফিরে আসুন। জীবনে যাই করেন না কেন, যত বেশি বার করেন না কেন, এমন কি যদি আপনার অভ্যাসগত কোনো পাপও থেকে থাকে— নিজেকে মূল্যহীন এবং অপদার্থ মনে করার সুযোগ শয়তানকে কখনোই দিবেন না। এমনকি আপনার যদি অভ্যাসগত কোনো কবিরা গুনাহও থেকে থাকে, শয়তানকে কখনোই আপনার এবং আপনার প্রভুর মাঝে আসতে দিবেন না। কারণ, কোনো কিছুই আপনার এবং আপনার রবের মাঝে আসতে পারে না; যদি শুধু তাঁর দিকে ফিরে আসেন।

সবসময় ইস্তেগফার(আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা) করুন। নিজের পাপগুলোকে অন্য সৎ কাজে অনুপ্রাণিত হতে ব্যবহার করুন।

হ্যাঁ, আদর্শ অবস্থা হলো সকল কবিরা গুনাহ বর্জন করা। হ্যাঁ, আদর্শ অবস্থা হলো কোনো অভ্যাসগত পাপ না থাকা। আর সেটা হলো সৎকর্মশীলদের অবস্থা। সৎকর্মশীল, আওলিয়া, আম্বিয়া তারা কবিরা গুনাহ করেন না। এবং তাদের অভ্যাসগত কোনো পাপও নেই।

কিন্তু, আপনি যদি সে অবস্থায় পৌঁছতে সক্ষম না হোন, আপনার অভ্যাসগত পাপ আছে, আপনার যদি কবিরা গুনাহ করার অভ্যাস থাকে— সকল ধর্ম কর্ম বাদ দিয়ে নিজেকে ব্যর্থ হিসেবে মেনে নিবেন না। তথাপি, চেষ্টা করুন; ভালো হতে চেষ্টা চালিয়ে যান। অনুতপ্ত মন নিয়ে আল্লাহর সাথে কথা বলুন। আল্লাহর কাছে হাত তুলে নিজের পাপগুলো স্বীকার করে নিন। সবসময় আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। যে পাপই করেন না কেন। পাপগুলোকে ব্যবহার করুন এমনসব ভালো কাজে অনুপ্রানিত হওয়ার ক্ষেত্রে, যেগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় আপনি করতেন না। বুঝতে চেষ্টা করুন, যদি এটা করতে পারেন আপনার জন্য এখনো আশা আছে।

এ বিষয়ে অনেক বর্ণনা আছে। জানেন না? এক পতিতা যার গোটা জীবন ছিল পাপে পরিপূর্ণ, সে জানতো সে একজন পাপী। নিজে পাপী জানা সত্ত্বেও সে একটি কুকুরকে পানি পান করলো। সেও ভালো কিছু করতে চাইলো। আর শুধু এই কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।

জানেন না? রাসূল (স) আরেক জন কবিরা গুনাহকারীর কথা বলেছেন। এমন কোনো পাপ কর্ম নেই যা সে করেনি। সে ধনী ছিল, প্রচুর টাকা-পয়সার মালিক ছিল। তার কাছ থেকে ঋণ গ্রহীতাদের সাথে সে উদার আচরণ করতো। সে মানুষকে টাকা ধার দিতো। টাকা আদায় করতে যাওয়া তার চাকর-বাকরদের সে বলতো, কেউ যদি ঋণ পরিশোধে অপারগ হয় তাকে মাফ করে দাও। কারণ, আমার আল্লাহর ক্ষমা অনেক বেশি দরকার।

শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি এটা করেছো। আমি তোমার চেয়েও বেশি দয়াবান। আমি তোমাকে মাফ করে দিলাম যেমন তুমি মানুষদের মাফ করে দিতে।
এই লোক পাপী ছিল। সে তার অপরাধী মন ব্যবহার করলো সৎ কাজ করার জন্য। আর এই জন্য আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।

প্রিয় মুসলিম, আল্লাহর ক্ষমা থেকে নিরাশ হবেন না। প্রতিনিয়ত আল্লাহর দিকে ফিরে আসুন। সবসময় ইস্তেগফার করুন। আপনার পক্ষে যে ভালো কাজই করা সম্ভব, করুন।
আর হ্যাঁ, একেবারে ভালো হয়ে যাওয়াটাকে নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। কিন্তু, জেনে রাখুন, আমরা আসলে কোনোদিন সে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব না। আল্লাহ আমাদের নিখুঁত হওয়ার জন্য সৃষ্টি করেন নি। আমাদের ক্ষমা পাওয়াটা নিখুঁত হওয়ার মাঝে নয়, বরং নিখুঁত হওয়ার ইচ্ছে এবং প্রচেষ্টার মাঝে নিহিত।

— ড. ইয়াসির ক্বাদী।

পঠিত : ৩৬৬ বার

মন্তব্য: ১

২০২২-০৮-০৪ ১৫:২০

User
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

অসাধারণ কিছু কথা বলেছেন। আশাকরি আমাদের ঈমান তাজা হবে।

submit