Alapon

তালিবান কর্তৃক বামিয়ানের পাহাড়ে বুদ্ধমূর্তি ধ্বংসের কাহিনী।



২০০১ সাল।
তালিবান তখন আফগানিস্তানের মসনদে। ইউরোপ থেকে একদল লোক আসলো আফগানিস্তানে।
তারা ডাইরেক্ট আফগান সরকার প্রধান মোল্লা মুহাম্মাদ উমারের সাথে সাক্ষাত করলো। তিনি তাদের কথা শুনলেন।
তারা একটা সংস্থার পক্ষ থেকে এসেছে।

তারা এসেছে বামিয়ানের বিশাল ও হাজার বছরের পুরনো বুদ্ধমুর্তিকে সংস্কার করতে। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ হুবে এটি সংস্কারে।
বুদ্ধমুর্তিটি নির্মিত হয়েছে খৃষ্টিয় ৬ষ্ঠ শতকে। আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর আগে। অনেক বিশাল প্রাচীন মূর্তি এটা। পাহাড় কেটে নির্মাণ করেছে লোকেরা।

বোকা ও মুর্খ লোকেরা এটি নির্মাণ করে এর পূজা করতো। মাটির মূর্তি নিজেরা সৃষ্টি করছে, তাদের খেতে দিচ্ছে। তাদের পালন করছে।
মোল্লাম উমার তাদের কথা শুনে আশ্চর্য হলেন। হায়! আফগানিস্তানে প্রতিদিন হাজার হাজার শিশু রাতে অভুক্ত অবস্থায় ঘুমায়, কত শিশু না খেয়ে মারা যাচ্ছে। এগুলো তাদের নজরে পড়লো না। তাদের নজরে পড়লো প্রাণহীন এই জিনিসগুলো। তিনি তাদের বললেন, "আশ্চর্য! আপনারা মৃত জিনিসকে রক্ষা করতে এসেছেন, অথচ জীবিত মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে এখানে।"
ইসলামি ইমারাতের নেতৃবৃন্দ তাদের অনুরোধ করলেন এই টাকা দিয়ে বুভুক্ষু আফগান দরিদ্রদের সাহায্য করতে। কিন্তু এই লোকগুলো তা করতে অসম্মতি প্রকাশ করলো। তারা চলে গেলো। তিনি তাদের নির্দয়তা দেখে এবার সত্যিই ক্ষুদ্ধ হলেন। আদেশ দিলেন এই মুর্তি ধ্বংসের। অথচ এই পাহাড়ের ফাঁকে থাকা এই প্রাচীন মুর্তি ধংসের ইচ্ছা ছিলো না তাঁর। এটা থাকা বা না থাকা নিয়ে তালিবদের কোনো মাথাব্যাথা ছিলো না। কিন্তু যে প্রাণহীন মূর্তি তথাকথিত "সভ্য জাহিলদের" দৃষ্টি খাবারের অভাবে মৃতপ্রায় মানুষ থেকে সরিয়ে নিজের দিকে নিয়ে যায় তা রাখার দরকার নেই। ডিনামাইট ঢুকিয়ে, রকেট ছুড়ে ধ্বংস করে দেয়া হলো এই মাটির নিষ্প্রাণ মূর্তি।

গোটা বিশ্ব আলোড়িত হয়ে গেলো। প্রতিবাদ জানালো, জাতিসংঘ, আমেরিকা, ইউরোপ, রাশিয়া চীন। প্রতিবাদ জানালো পাকিস্তান, তুরস্ক, বাংলাদেশ, সৌদি আরব। তারা এই ঘটনাকে "savage" কার্যক্রম হিসেবে আখ্যা দিলো। প্রতিবাদ জানালেন বিভিন্ন সো কল্ড মুসলিম দেশের দরবারী উলামায়ে কেরাম। এই ঘটনাকে অনৈসলামিক কর্মকান্ডরুপে চিহ্নিত করলেন তারা। কিন্তু এর পিছনের কাহিনী কেউ খুঁজলো না। খাবারের অভাবে আহাজারী করা আফগান শিশুদের বেদনা বুঝলো না সভ্য জাহিলরা। তারা শুধু শোনলো মৃত মাটির মূর্তির আর্তনাদ।

পঠিত : ১০৫২ বার

মন্তব্য: ০