Alapon

চিন্তার আড়ালে ভ্রান্তির অনুপ্রবেশ



রিদওয়ান। সে চব্বিশ ঘন্টাই সোস্যাল মিডিয়াতে কিংবা অন্যকোনো স্থানে ইসলামবিষয়ক সমকালীন বিভিন্ন ইস্যুতে তর্কবিতর্ক করে। তর্কবিতর্কের কয়েকমাস পর মুহাম্মাদের মাঝে কিছু ভ্রান্ত ও বিকৃত চিন্তাভাবনা দেখা গেল। সে এই বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গিকে কুরআন সুন্নাহ এবং ইসলামী শরীয়ার বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় মনে করছে।

আরেকজন হলো আবদুর রহমান। সে এসব তর্কবিতর্কের শোরগোলে খুব কম জড়ায়। তার প্রধান কাজ হলো নিয়মতান্ত্রিক অধ্যয়ন চালিয়ে যাওয়া। মাঝে মাঝে প্রাসঙ্গিক কোনো ডিবেটে অংশগ্রহণ করা। দিন যত যাচ্ছে তার হৃদয় ততই প্রশান্ত হচ্ছে। তার সামনে যেসব সংশয় আপত্তি এসে তাকে অস্থির করে তুলত এখন তার হৃদয় খুব সহজেই সেগুলোর সমাধানকে আলিঙ্গন করে নিচ্ছে।

রিদওয়ান এবং আবদুর রহমান কেবল দুটি দৃষ্টান্ত। আমাদের বর্তমান বাস্তবতায় এরকম অসংখ্য চরিত্রের বসবাস আছে। যেই মানুষটি সারাদিন সংশয় নিরসন আর বিতর্কের সাগরে ডুবে থাকে সে হয়তো এক সময় নিজেই সংশয় সৃষ্টিকারীদের দলভুক্ত হয়ে যায় কিংবা চলমান তর্কবিতর্ক থেকে সে কিছু ভ্রান্ত মূলনীতি ও ভূমিকাকে গ্রহণ করে নেয়। আর এভাবেই তার ভেতর অজান্তেই ভ্রান্তি অনুপ্রবেশ করতে থাকে।

এই সঙ্কটের পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে। যেগুলো আমাদের মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। যেমন আল্লাহর সাথে সম্পর্ক না থাকা, শরীয়ত প্রতিষ্ঠিত না থাকা, নিজের উপর কল্পিত আত্মবিশ্বাসের দরুণ আহলে ইলমদের দ্বারস্থ না হওয়া সহ আরও কিছু বিষয় আছে। কিন্তু আমি একদম মৌলিক এবং খুবই প্রাসঙ্গিক একটি কারণের দিকে ইঙ্গিত করতে চাচ্ছি। সেটা হলো ভ্রান্ত মূলনীতি ও পূর্বশর্তকে মেনে নেওয়া।

রিদওয়ানের মতো মুসলিমরা যখন বিতর্ক ও সংশয়ের সাগরে ডুব দেয় আর সেই ভ্রান্ত মূলনীতির ভিত্তিতেই সংশয়গুলোর উত্তর দিতে থাকে তখন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তার চিন্তার আড়ালে চলে যায়। ভুলে বসে, সে এই মূলনীতিগুলো আল্লাহর কিতাবের তাদাব্বুর, রাসূলের সুন্নাহর সাথে দীর্ঘ সময় অপরিবাহিত করা কিংবা ফিকহের একাডেমিক অধ্যয়ন থেকে গ্রহণ করেনি। বরং চলমান বিতর্কগুলো থেকেই সে এই মূলনীতিগুলোকে বিশ্বাস করে নিয়েছে। তারপর নানা অভিযোগ থেকে বাঁচতে এই মূলনীতিগুলোরই আশ্রয় নিচ্ছে।
ইসলামি ইতিহাসে সঙ্কটটা অনেক পুরাতন। মুসলিমদের ভেতর একটি ভ্রান্ত ফিরকা জন্ম নিয়েছিল ‘জাহমিয়া’ নামে। যারা আল্লাহর সিফাতসমূহকে সরাসরি অস্বীকার করত। জাহমিয়াদের নেতা ছিল জাহম বিন সাফওয়ান। তার থেকেই এই ভ্রান্ত ফিরকাটির উদ্ভব। জীবনের শুরুতে জাহম বিন সফওয়ান আল্লাহর সিফাতসমূহকে অস্বীকার করত না। কিন্তু কোনো এক মূর্তিপূজারী শ্রেণির সাথে আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে নিয়মিত বিতর্ক করার পর তার মাঝে এই বিশ্বাস অনুপ্রবেশ করতে থাকে। এক পর্যায়ে সে তাদের পক্ষ থেকে পালাক্রমে আসা সংশয়সমূহ থেকে বাঁচতে আল্লাহর সিফাতসমূহকে অস্বীকার করে বসে। (বিস্তারিত জানতে পড়ুন: আররদ্দু আলাল জাহমিয়্যাহ ওয়ায যানাদিক্বাত, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহিমাহুল্লাহ, ৯৩-৯৫)

অর্থাৎ এখানে যেই বিষয়টা ঘটেছে সেটা হলো, যেই ভুল মূলনীতির আলোকে তার বিতর্ক চলছে সেটাকেই সঠিক বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। আর এই মূলনীতিকে ইসলামের প্রতিরক্ষায় এবং শত্রুর বুদ্ধিবৃত্তিক আক্রমণ প্রতিরোধে জরুরী হিসেবে বিশ্বাস করা হয়েছে। সবশেষে গৃহীত মূলনীতির আলোকে ইসলামকেই বদলে দেওয়া হয়েছে। আবার এটাকে ইসলামের খেদমতও মনে করা হয়েছে!

প্রাচীন ও আধুনিক সকল সংশয়ের মূলে লক্ষ্য করলে আমরা হুবহু এই সঙ্কটকে খুঁজে পাব। রিদওয়ানের মতো অধিকাংশ মুসলিমই বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্কগুলোতে অংশগ্রহণ করার পর কিছু ভ্রান্ত মূলনীতিকে চুষে নেয়। তারপর এই মূলনীতির পক্ষে শরয়ী দলিল তালাশ করতে থাকে। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না যে, তার মূলনীতি শরীয়ার নুসুস এবং সালাফদের বক্তব্য পাঠ করে গ্রহণ করা হচ্ছে না।

উদাহরণস্বরূপ ধরুন, কোথাও মসজিদ নির্মাণ এবং মুসলিমদের ইবাদাতের অধিকার নিয়ে পশ্চিমাদের সাথে ডিবেট হচ্ছে। সেখানে রিদওয়ানের মতো কেউ পশ্চিমাদের ধরাশায়ী করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তখন পশ্চিমারা তাকে বলল, ‘তোমরা তো নিজেদের দেশে গীর্জা বানানোর অনুমোদন দাও না এবং অমুসলিমদেরকে নিজেদের দীন প্রচারের স্বাধীনতাও দাও না!’ রিদওয়ান তৎক্ষণাৎ প্রতিউত্তর করল, ‘আপনাদের দাবি সঠিক নয়। ইসলামী রাষ্ট্রে উপাসনালয় নির্মাণ এবং দীন প্রচারের পরিপূর্ণ অধিকার অমুসলিমদের রয়েছে। মুসলিমদের সমপরিমাণ তাদেরও ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে। তবে জাযিরাতুল আরবের ব্যাপারটি পরিপূর্ণ আলাদা। এই স্থানের বিশেষ ধর্মীয় মর্যাদা আছে কিংবা সেখানে কোনো অমুসলিমের অস্তিত্ব নেই ইত্যাদি।’

সে কিন্তু চার্চ নির্মাণ কিংবা ধর্মপ্রচারের অনুমোদনসংক্রান্ত আলোচনা শরয়ী নুসুস এবং ফুকাহায়ে কেরামের মতামতের ভিত্তিতে করেনি। যদিও পরবর্তীতে কোনো নস কিংবা ফিকহী মত উল্লেখ করে থাকে, সেটার উদ্দেশ্য হলো তার নিজের দাবিকে মজবুত করা। যেই দাবি সে ধর্মীয় সমতার মতো ইন্টারফেইথের মূলনীতির আলোকে করে বসেছে।

আরেক জায়গায় সে ইসলামের নারী সম্পর্কিত বিধান নিয়ে বিতর্কে অংশগ্রহণ করল। ইসলামের বিধানগুলোকে যৌক্তিক প্রমাণের জন্য সে প্রাণপণ চেষ্টা করর যাচ্ছে। কিন্তু দিনশেষে দেখা যাচ্ছে এই বিতর্ক থেকে সে নারী পুরুষের সমতার মতো একটি পশ্চিমা মাপকাঠিকেই গ্রহণ করছে ইসলামের জাত রক্ষার জন্য।

এরকম অসংখ্য দৃষ্টান্ত আমাদের সমাজে বিদ্যমান। যেখানে ব্যক্তি ইসলামকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেই ভ্রান্ত মূলনীতির উপর বিশ্বাস স্থাপন করে ফেলছে। ইসলামের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সে এই মূলনীতিগুলোকেই সবচেয়ে কার্যকর হিসেবে মেনে নিচ্ছে। উপরোক্ত উভয় দৃষ্টান্তেই রিদওয়ান একটি ভুল মূলনীতিকে মেনে নিয়েই বিতর্ক করেছে। সেটা হলো সমতা। ইসলাম সার্বিকভাবে সমতাকে রক্ষা করে না। সমতা ইসলামের কোনো মূলনীতিও না। ইসলাম সব জায়গায় ন্যায়কে ধারণ করে। আর প্রত্যেককে তার উপযুক্ত প্রাপ্য মিটিয়ে দেওয়াই হলো ন্যায়। সত্যকে তার অধিকার দেওয়া আর মিথ্যাকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়াই হলো ন্যায়। আর উভয়টার মাঝে সমতার বিধান করা হলো অন্যায় এবং জুলুম। সত্য আর মিথ্যা কখনো এক না। সত্যের অধিকার হলো তাকে প্রতিষ্ঠিত করা হবে, ছড়িয়ে দেওয়া হবে। আর বাতিলের প্রাপ্য হলো তাকে দমিয়ে দেওয়া হবে। বাতিল কখনো সত্যের সমান অধিকার ও স্বাধীনতা পাবে না। এটাই ন্যায়।

এমনিভাবে পুরুষকে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া আর নারীকে তার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়াই হলো ন্যায়। আর উভয়ের মাঝে সার্বিক সমতার বিধান করা হলো অন্যায় ও জুলুম। পাশ্চাত্য সভ্যতার একটি মৌলিক বিশ্বাস এবং মাপকাঠি হলো সমতা। ফলে সমতার ভিত্তিতে পাশ্চাত্যরা সকল কিছুকে জাস্টিফাই করলেও মুসলিমরা সেটা পারে না। ইসলাম সমতাকে কোনো মানদণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। রিদওয়ানের মতো মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ভ্রান্তি এই মাপকাঠির জায়গায়। বিতর্কগুলোতে তারা এই মাপকাঠির আলোকেই কথা বলে। আর এই মাপকাঠির সাথে ইসলামের কোনো বিধান না মিললে সেই বিধানকে বিকৃত করে ফেলছে পাশ্চাত্য মাপকাঠি ঠিক রাখার জন্য।

সে বুঝতে পারছে না, এক দেয়াল ঠিক করতে গিয়ে পুরো দালানকেই সে ধ্বসিয়ে দিচ্ছে। সে হয়তো সাময়িকভাবে একটা আপত্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছে। তবে তার চিন্তার রাজ্যে এমন ভয়াবহ ভাইরাস অনুপ্রবেশ করে ফেলেছে যেটা তার পুরো বিশ্বাসের দালানকেই ধ্বংস করে দিতে পারে। বিতর্কের শোরগোলে সে অনুভবই করতে পারছে না ভ্রান্ত মূলনীতিগুলো তার ভেতর কোত্থেকে ঢুকে বসেছে। সে মনে করছে ফিকহের ভাণ্ডার থেকেই বুঝি মানদণ্ডগুলো গৃহীত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এগুলোর উৎস ফিকহ নয়, বরং নষ্ট পাশ্চাত্য সভ্যতা।

দীন নিয়ে অত্যাধিক এবং অযথা বিতর্কে লিপ্ত হওয়া এমনিতেই একটি মন্দ বিষয়। তার সাথে যদি না থাকে সঠিক ইলম তাহলে ব্যাপারটা আরও ভয়াবহতার দিকে চলে যায়। আমাদের সালাফরা দীন নিয়ে বিতর্ক করাকে এড়িয়ে চলতেন। ইলমী দুর্বলতা, সংশয় নিরসনের সক্ষমতা না থাকা, সমকালীন সংশয়গুলোর ব্যাপারে জ্ঞান না থাকা সহ কোনো অক্ষমতার কারণে তারা অযথা বিতর্ক এড়িয়ে চলতেন না। কারণ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সালাফরা ভ্রান্ত লোকদের খণ্ডনে যেই প্রজ্ঞা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, সেই জায়গা থেকে সালাফদের ব্যাপারে অক্ষমতার চিন্তাও আসা সম্ভব না। দীনের ব্যাপারে অযথা এবং অধিক বিতর্ক হৃদয়কে অস্থির করে দেয়। জাফর বিন মুহাম্মাদ রহ. বলেন, ‘তোমরা দীনের ব্যাপারে অযথা বিতর্ক থেকে বেঁচে থাকো। কারণ এই বিতর্ক অন্তরকে অস্থির করে তুলে এবং সেখানে সংশয় প্রবেশের সুযোগ তৈরি করে দেয়।’ (শরহু উসূলি ইতিকাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ-১/১৪৫)

উমর ইবনে আবদুল আজীজ রহ. বলেন, ‘যে দীন নিয়ে অধিক ও অযথা বিতর্কে জড়ায়, সে অস্থির হয়ে যায় এবং তার চিন্তাচেতনায় ঘনঘন পরিবর্তন ঘটতে থাকে।’ (প্রাগুক্ত-১/১৪৪)
আমর বিন কায়েস একবার হিকাম বিন উতাইবাকে জিজ্ঞাস করলেন, ‘মানুষের ভেতর কুচিন্তা-সংশয় অনুপ্রবেশ করানোর ক্ষেত্রে কোন জিনিস অধিক প্রভাব রাখে। তিনি বললেন, অযথা বিতর্ক।’ (প্রাগুক্ত-১/১৪৫)

হাসান বসরী রহ. এর কাছে এক লোক এসে বলল, আমি আপনার সাথে বিতর্ক করতে চাই। তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি অন্য কারও কাছে যাও। আমি আমার দীনের ব্যাপারে সুদৃঢ় বিশ্বাস রাখি। তোমার সাথে বিতর্ক সেই করবে যে নিজের দীনের ব্যাপারে সন্দিহান।’ (প্রাগুক্ত-১/১৪৪)

প্রশ্ন হতে পারে এই সঙ্কটের সমাধান কী তাহলে? আমরা কি সংশয় নিরসন এবং ইসলামের পক্ষে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরোধ ছেড়ে বসে থাকব? মোটেও না। ইসলামের পক্ষে প্রতিরোধ ছেড়ে দেওয়া, এই বিষয়ে দুর্বলতা দেখানো কিংবা এমন তৎপরতাকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এটা কখনো সমাধান নয়। বরং এই কাজগুলো দীনের অনেক বড় খিদমাত। কিন্তু জরুরী হলো, আগে আমাদেরকে শরয়ী ইলমের মাধ্যমে নিজেদের স্বকীয়তা লাভ করতে হবে। যে মুসলিম শরয়ী আহকাম ও তার স্বকীয়তার ব্যাপারে অবগত নয় তার জন্য বিতর্কের শোরগোলে প্রবেশ করা মোটেও উচিৎ হবে না। দ্বিতীয়ত নিজস্ব মনগড়া উসুল ও বিধান তৈরি করা যাবে না। এরজন্য অবশ্যই পূর্ববর্তী উলামায়ে কেরামের মতামত দেখতে হবে এবং সমকালীন নিষ্ঠাবান আহলে ইলমদের সাথে পরামর্শ করতে হবে। কারণ আমাদের উদ্দেশ্য আপতিত সংশয়ের যেকোনো উত্তর প্রদান করা নয়। বরং আসল উদ্দেশ্য সঠিক উত্তর পর্যন্ত পৌঁছা।

মোটকথা, আমাদেরকে আবদুর রহমানের মতো হতে হবে। মুসলিমদের ভেতর অধিকাংশ সংশয়ই জন্ম নেয় দীনের ব্যাপারে বিশুদ্ধ ইলম না থাকার কারণে। কেউ যদি নিয়মিত ইলম অর্জন করতে থাকে তাহলে এক সময় তার মনে আসা পূর্বের আপত্তিগুলো আপনাআপনিই নিরসন হয়ে যাবে। আহলে ইলমদের সাহচর্য এই ক্ষেত্রে অনেক নিরাপদ একটি আশ্রয়কেন্দ্র। আহলে ইলমদের সাহচর্যে যাওয়া-আসার মাধ্যমেও অনেক সংশয়ের সুন্দর ও বিশুদ্ধ উত্তর জানা যায়। আশরাফ আলি থানবী রহ. একবার আলিগড় ইউনিভার্সিটিতে সফর করেন। তিনি সেখানকার ছাত্রদের উদ্দেশ্যে নসীহতমূলক বয়ান রাখেন। সেই বয়ানে তিনি সংশয় নিরসনের ক্ষেত্রে একটি বিষয়ে খুব গুরুত্ব দেন এবং আরেকটি বিষয় থেকে সতর্ক করেন। যেই বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন সেটা হলো, নির্ভরযোগ্য আহলে ইলমদের কাছে নিয়মিত যাতায়াত করা। আর যেই বিষয়ে সতর্ক করেন সেটা হলো, নিজের উপর অতি আত্মবিশ্বাসী না হয়ে যাওয়া। (আল ইনতিবাহাতুল মুফীদাহ-৪৫-৪৬)

এভাবে ইসলামী শরীয়ার স্বতন্ত্রতা সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান লাভের পর প্রাসঙ্গিক কোনো বিতর্কে অংশগ্রহণ করাই নিরাপদ। তবে অবশ্যই সেই বিতর্ক উম্মাহর জন্য জরুরী এবং উপকারী হতে হবে। যদি বিতর্কের পূর্বে সঠিক মূলনীতি চিহ্নিত না করা যায়, তাহলে ব্যক্তি দুটি সমস্যায় পতিত হবে। প্রথমত ব্যক্তির ভিতর বিকৃত চিন্তা অনুপ্রবেশ করবে। দ্বিতীয়ত ব্যক্তি কোনো শক্ত অবস্থান থেকে বিতর্ক চালাতে পারবে না। বরং সে এক পিচ্ছিল অবস্থানে ঘুরপাক খেতে থাকবে। যেখান থেকে সে প্রশ্নের পর প্রশ্নের সম্মুখীন হবে, কিন্তু প্রতিপক্ষকে কখনো থামাতে পারবে না কিংবা সন্তুষ্ট করতে পারবে না। শক্তিশালী বিতার্কিক সেই ব্যক্তি যে যে সত্যের উপর অবিচল থাকে এবং সত্যের সাথে বাতিল কোনোকিছুর মিশ্রণ থেকে মুক্ত থাকে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের অন্তরগুলোকে তার দীনের উপর অবিচল রাখুন, ইয়াকিনের নিয়ামতে ধন্য করুন এবং সর্বপ্রকার সংশয় ও বিকৃতি থেকে নিরাপদ রাখুন। আমিন।

পঠিত : ৩৬০ বার

মন্তব্য: ০