Alapon

বাংলাদেশের অবস্থা কি শ্রীলংকার চেয়েও খারাপ...?



পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম, শ্রীলংকায় লিটার প্রতি ডিজেলের দাম ১০ টাকা কমানো হয়েছে। অন্যদিকে, আমাদের দেশে রাতারাতি ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। শ্রীলংকায় গ্যাসের দাম সিলিন্ডার প্রতি ২০০ টাকা করে কমানো হয়েছে। আর আমাদের দেশে তো সিলিন্ডার গ্যাসের কোনো স্ট্যান্ডার্ড মূল্যই নাই। সিলিন্ডার গ্যাস সাপ্লাইকারী কোম্পানীগুলো ইচ্ছেমতো ১০০-১৫০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর দেশের মানুষের জন্য একটু দয়া হলে মাঝে মাঝে ৫-১০ টাকা সিলিন্ডার প্রতি দাম কমিয়ে দিচ্ছে। শ্রীলংকা যেখানে গ্যাসের দাম কমিয়ে দিয়েছে, সেখানে আমাদের সরকার ভাবছে, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে দিবে। আমাদের দেশের অবস্থা কি তাহলে শ্রীলংকার চেয়েও খারাপ?

সরকার বলছে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই সরকার বাধ্য হয়ে তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববাজারে তেলের দাম অনেক কম। আর তেলের দাম কমে যাওয়ার দরুণ খোদ শ্রীলংকা তেলের দাম কমিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে তেলের দাম বৃদ্ধি করা হলো।

আচ্ছা ধরেই নিলাম, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ছিল অনেক কম। কিন্তু সরকার সে সময় বাংলাদেশে তেলের দাম কমায়নি। আর তেলের দাম না কমানোর কারণে বিপিসি প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি প্রফিট করেছে। আর সরকার বলছে, তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর বিপিসি ৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। ভর্তুকি দেওয়ার মতো বিপিসির কাছে আর অর্থ নেই। এখন প্রশ্ন হলো, বিপিসি যে ৪৭ হাজার কোটি টাকা প্রফিট করেছে, সেখান থেকে না হয় ৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। বাকি ৩৯ হাজার কোটি টাকা তাহলে গেল কোথায়?

উল্লেখ্য, বিগত বছরে সরকার একটি নতুন আইন পাস করে। সেই আইন অনুসারে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উদবৃত্ত টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়ে যাবে। সেই আইন অনুসারে বিপিসির ৩৯ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়ে গেছে। সরকার যদি বিপিসির অতিরিক্ত লাভের টাকা নিয়ে নিতে পারে; বিপিসি যে টাকা জনগণের পকেট থেকে কামিয়েছে, এখন জনগণের স্বার্থে সরকার বিপিসিকে টাকা দিচ্ছে না কেন? কেন সরকার জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে না?

সরকার আসলে আল্টিমেটলি যাচ্ছে, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করে জনগণ ক্রয় ক্ষমতা হারিয়ে ফেলুক। তাতে দেশের আমদানি কমে যাবে এবং রিজার্ভও বাড়তে থাকবে। তখন সরকার আবার ফলাও করে রিজার্ভ অ্যামাউন্ট প্রচার করতে পারবে। কিন্তু এতে আসলে জনগণের বা রাষ্ট্রের কতটুকু উপকার হবে?

এর ফলে যে জনগণ বা রাষ্ট্রের কোনো উপকার হবে না, তা নিশ্চিত করেই বলে দেওয়া যায়। তাহলে সরকার সাধারণ জনতার কথা ভাবছে না কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর খুবই সহজ। একটি সরকার যখন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে, তখন তাকে সর্বাগ্রে জনগণের কথা ভাবতে হয়। আর যখন কোনো সরকার বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে কিংবা ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতার মসনদে বসে, তখন সেই সরকার আর জনগণের কথা ভাবে না। সেই সরকার কেবল নিজের লাভ ক্ষতির কথা চিন্তা করে। আওয়ামী লীগ সরকারও সেই পথেই হাটছে। দেশের শেয়ারবাজার, ব্যাংক ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি দেশের অর্থনীতির সাড়ে সর্বনাশ ঘটিয়ে, দেশের অর্থনীতির কফিনে শেষ পেরেক মারার জন্য হাসিনা সরকার জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করল।

পঠিত : ৯৫৩ বার

মন্তব্য: ০