Alapon

যৌনতা ও ক্ষমতার সমীকরণ !



একশ বছর আগে, ইতালিতে কমিউনিস্ট পার্টির আধিপত্য সত্ত্বেও, তাদেরই বহিস্কৃত নেতা মুসোলিনি ক্ষমতায় আসার পর বামদের চরম নিপীড়ন ও অপদস্থতার স্বীকার হতে হয়।
বন্দী হয় কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক আন্তোনিও গ্রামসি। কারারুদ্ধ অবস্থায় গ্রামসি দীর্ঘমেয়াদী ও ব্যাপক প্রভাব সত্ত্বেও 'ভুইফোড়' মুসোলিনির হাতে পরাজিত হওয়ার তত্ত্ব অনুসন্ধান করতে গিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে-
"সাংস্কৃতিক আধিপত্য বা কালচারাল হেজিমনি ক্ষমতা ও সমাজ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম নিয়ামক!"
.
সংস্কৃতি আসলে কী?
.
আসিফ আদনান ভাই বলেন,
"কিছু নিয়ম, রীতিনীতি, প্রথাপ্রচলন, কিছু ট্যাবু, কিছু মূল্যবোধের সমষ্টিই তো, তাই না?
গ্রামসির মতে, কেউ যদি সমাজের ন্যারেটিভ নিয়ন্ত্রন করতে পারে, এবং কেউ যদি জনগণকে বোঝাতে পারে– যেসব সাংস্কৃতিক রীতিনীতি (norms) আমাদের সমাজে আছে, সেটাই পৃথিবীর চিরন্তন রীতি, সবকিছু এভাবেই সবসময় ছিল অথবা এভাবেই সবসময় থাকার কথা–তাহলে মানুষ বিদ্যমান অবস্থা নিয়ে আপত্তি করবে না।"
.
বোঝা দরকার যে, গ্রামসি "হেজিমনি" শব্দটি একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহার করেছিল। হেজিমনি হচ্ছে এমন কর্তৃত্ব, যা কর্তৃত্বাধীনরা স্বেচ্ছায় মেনে নেয়। গ্রামসি তত্ত্বটি উপলব্ধি করেছিলেন কারাগারে এবং সেখানেই মারা যান। পরবর্তীতে তাই তার চিন্তার বিকাশ ঘটায় জার্মানির ফ্র‍্যাঙ্ফুর্টকেন্দ্রিক কিছু বাম বুদ্ধিজীবি। যারা হিটলারের শাসনামলে এসব বাম তাত্ত্বিকরা নাৎসি জার্মানী থেকে আমেরিকায় পালিয়ে আসে এবং সেখানে ঘাটি গেড়ে বসে। এদের চিন্তাধারা পরিচিতি লাভ করে 'ফ্র‍্যাঙ্কফুর্ট স্কুল' নামে! যা পশ্চিমা মার্ক্সবাদ, কালচারাল মার্ক্সবাদ বা নিউ লেফট নামেও পরিচিত।
.
এসকল ''বুদ্ধিজীবি" ক্ষমতার কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে- সমাজ ও রাস্ট্রের পুরনো সংস্কৃতি ভেঙে, নতুন এক সংস্কৃতির উত্থানের সিদ্ধান্ত দেন!
কেননা, রক্ষণশীল ও ধর্মীয় সমাজে নাস্তিক্যবাদী ও কট্টর সেক্যুলার মানসিকতা প্রবেশ করানো অসম্ভব। আর এর ফলে তাদের পক্ষে সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তার সম্ভবও ছিল না।
এসকল চিন্তাবিদদের শীর্ষস্থানীয়রা হচ্ছেন ইয়ার্গেন হেবেরমাস, হার্বার্ট মার্কুইস, ম্যাক্স হর্খহেইমার, এরিক ফ্রম, থিওডর এডোর্নো, কার্ল কশ, উইলহেম রাইখ প্রমুখ।
.
'৩০ এর দশকে জার্মানী থেকে আমেরিকায় পালিয়ে বিকৃত মানসিকতার গুটিকয়েক এসকল দার্শনিক সময়েই পরিক্রমায় মার্কিন মুলুকে নিজ তত্ত্বের সফল প্রয়োগ ঘটাতে সক্ষম হয়। ব্যাপক জনপ্রিয় কিছু বই লিখে শুরু করার পর, পর্যায়ক্রমে প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় ও মিডিয়াতে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিপ্লবকে তাত্ত্বিকতা থেকে বাস্তবতায় নিয়ে আসে গ্রামসির অনুসারী ফ্র‍্যাঙ্কফুর্ট স্কুল।
.
সমাজ ও শাসনকাঠামোতে মিডিয়া ও কালচারের প্রভাব বোঝাতে গিয়ে, কালচারাল মার্ক্সিজমের অন্যতম কান্ডারী হার্বার্ট মার্কিউস তার One Dimensional Man এ উল্লেখ করেন যে,
"এখন (১৯৬৪'র আমেরিকায়) মানুষ যৌনবিপ্লব, পপুলার মিউজিকসহ ম্যাস মিডিয়াতে এতটাই পরিতুষ্ট যে, তারা কোনো প্রকার (রাস্ট্রীয়) জুলুমের ব্যাপারেই রুখে দাঁড়াতে আর আগ্রহ অনুভব করেনা।"
.
তাদের গুরু কার্ল মার্ক্স যা আলোচনা করে যায়নি, সেদিকটি নিয়েই কালচারাল মার্ক্সবাদীরা মূলত আলোচনা তুলেছিল। 'ক্রিটিকাল থিওরি' শিরোণামে এসকল কট্টর সেক্যুলার, কালচাড়াল বামরা অর্থনীতির গঁৎবাধা আলোচনা থেকে বেরিয়ে এসে- ভূরাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, সাইকোএনালাইসিস থেকে নিয়ে জ্ঞান ও দর্শনের বহুমুখী শাখায় জোর দেয়।
.
পূর্বের রক্ষণশীল, ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এদের কাছে শাসনক্ষমতায় কার্যকর ভূমিকা রাখার পথে বাঁধা। তাই প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দর্শন ও চিন্তাধারার সংস্কার তাদের জন্য ছিল জরুরী।
তাই রাস্ট্রে প্রাচীনকাল থেকে বিদ্যমান ব্যাক্তিগত ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কাঠামো, বিশেষত মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ নষ্ট করার জন্য তারা রাজনীতি, সংস্কৃতি, ভূগোল, মনোবিজ্ঞান ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিভিন্নমুখী দর্শন সামনে নিয়ে আসতে থাকে।
কালচাড়াল বামরা শুধু তত্ত্ব হাজির করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং নিজেদের তত্ত্ব বাস্তব ময়দানে প্রয়োগেও সক্ষম হয়।
.
তারা উপলব্ধি করেছিল, নতুন যে কোনো কিছু ব্যাক্তি ও সমাজকে গেলাতে হলে সরাসরি পদক্ষেপের পরিবর্তে, একডেমিক পেপার, সংবাদপত্র ও ম্যাস মিডিয়ার সাহায্য নেয়া বেশী উপযোগী। তাই নিজস্ব ঘরানার ম্যাস মিডিয়ার প্রচার ও বুদ্ধিজীবিদের বয়ান চলতেই থাকে, যতক্ষণ না তাদের নবপ্রস্তাবিত মত মানুষ গ্রহণ করে নেয়াকে "status quo" বা 'স্বাভাবিক অবস্থা' মনে করে।
যেমন-
‌√ পুরুষদের দাঁড়ি কেটে নারীর রূপধারণ কিংবা নারীদের চুল ছেটে পুরুষের রূপ ধারণই এখন স্বাভাবিক। বরং, এমনটাই এখন গ্রহণযোগ্য, প্রশংসনীয় বা আধুনিকতা।
√ দেশীয় বা পশ্চিমা সেক্যুলার সংস্কৃতির মাধ্যমে ধর্মীয় ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে ছুড়ে ফেলার প্রবণতা ব্যাপক হয়েছে।
.
হর্খহেইমার ও এডোর্নো তাদের 'বিখ্যাত' বই Dialectic of Enlightenment' লিখেন,
"কালচার (ইন্ড্রাস্ট্রি) আজ সবাইকে সমানভাবে প্রভাবিত করছে; হোক তা ফিল্ম, রেডিও বা ম্যাগাজিনের মাধ্যমে। এসব মাধ্যমের একটি অপরটিকে শক্তিশালী করছে।"
.
এখন উল্লেখ্য যে, সমাজকাঠামো পরিবর্তন এবং রাস্ট্রের শাসন ও পলিসিতে প্রভাব বিস্তারে প্রয়োজন পূর্ব থেকে চলে আসা সংস্কৃতির পরিবর্তন। আর যে কোনো জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয়ে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখে 'যৌনতা'।

কালচারাল বামদের ফ্র‍্যান্কফুর্ট স্কুল ও তাদের "ক্রিটিকাল থিওরি"র কেন্দ্রীয় মেহনতের ফসল হচ্ছে ষাটের দশকের 'যৌন বিপ্লব'; যা হাজার বছরের পশ্চিমা সংস্কৃতির ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে। ফলাফল হিসেবে প্রোটেস্টেন্টদের সরিয়ে রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ামক ভূমিকা রাখতে শুরু করে উগ্র বাম রাজনীতিবিদরা; যা ক্রমান্বয়ে এতই ব্যাপক হয় যে, এই অদম্য উদ্দামতার সামনে তাসের ঘরের মতো খ্রিস্টিয় মূল্যবোধ যতটুকু ছিল তাও নিশ্চিহ্ন হতে থাকে।
.
কেননা, সামগ্রিকভাবে মানুষের যৌনতাকেন্দ্রিক দৃস্টিভঙ্গী মোটা দাগে একটি জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয় বহন করে থাকে। যৌনতার ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাপকভাবে ব্যাক্তি, পরিবার ও রাস্ট্রকে প্রভাবিত করে থাকে।
.
আর ঐতিহাসিক বাস্তবতা হচ্ছে,
সুস্থ ও স্বাভাবিক যৌনতা যেমন শক্তিশালী জাতি ও সমাজকাঠামো নির্মাণে ভূমিকা রাখে, তেমনই বিকৃত ও বিকারগ্রস্ত যৌনতা জাতি ও সভ্যতার পতন ঘটিয়ে থাকে। জোসেফ আনউইনের ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত "Sex and Culture" বইয়ে দেখান যে-
"একটি জাতির সাংস্কৃতিক অগ্রসরতা ও যৌন সংযম পরস্পর পরিপূরক। অসংযত যৌনতাই শক্তিশালী জাতির সাংস্কৃতিক তথা সামাজিক-রাজনৈতিক অধঃপতনের কারণ হয়ে থাকে।
উদগ্র যৌনতা জাতির উদ্ভাবনী ও আধিপত্য বিস্তারের শক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে।"
.
যেমন কবি ইকবাল বলেন,
"আসো তোমাকে বলি জাতির উথান-পতনের সূত্র,
শুরুতে তীর-তরবারী আর শেষে শরাব-সেতার আর নৃত্য!"
.
জোসেফ আনউইন আরো বলেন,
"After a nation becomes prosperous, it becomes increasingly liberal concerning sexual morality. It thus loses its cohesion, impetus and purpose, which he claims is irrevocable."
.
এহেতু, পূর্ব থেকে বিদ্যমান সামাজিক কাঠামোকে চুর্ণবিচূর্ণ করে আগাগোড়া সেক্যুলার সমাজ বিনির্মানের লক্ষ্যে- উগ্র সেক্যুলার কালচাড়াল বামরা"ক্রিটিকাল থিওরি"র মোড়কে জোরেশোরে মেহনত শুরু করে!
.
তাদের অন্যতম ব্যাক্তিত্ব, ফ্র‍্যাঙ্কফুর্ট স্কুলের ভাতাপ্রাপ্ত জার্মান ডাক্তার উইলহেম রাইখ হাজির করে Sexual Revolution তত্ত্ব!
রাইখই নিজ বইয়ে সর্বপ্রথম যৌনবিপ্লব বা Sexual Revolution কথাটি ব্যাবহার করে। উইলহেম রাইখের বইটির নাম ছিল Die Sexualität im Kulturkampf, যার অর্থ দাঁড়ায়- "সাংস্কৃতিক যুদ্ধে যৌনতার ভূমিকা"। পরবর্তীতে ইংরেজিতে বইটি "Sexual Revolution" নামে প্রকাশিত হয়।
বইটির উপ-শিরোণাম ছিল, "zur sozialistischen Umstrukturierung des Menschen", অর্থাৎ- "সমাজতন্ত্রের উপযোগী মানবজাতির পুনঃনির্মাণের উদ্দেশ্যে (লিখিত)"
.
এই জঘন্য জানোয়ারের মূল বক্তব্য ছিল,
"স্বৈরাচারী শাসকরা জুলুমের হাতিয়ার হিসেবে যৌনতাকে ব্যাপক ও সেচ্ছাচারী হতে দেয় না। দূর্বলকে শাসনের উদ্দেশ্যেই শাসকগোষ্ঠী 'যৌনতার স্বাধীনতা'য় (যেমন, সমকামিতা, বিবাহবহির্ভূত যৌনতা ইত্যাদি) হস্তক্ষেপ করে, এবং যৌনক্ষেত্রে বঞ্চিত হওয়ার ফলেই, নিপীড়িত শ্রেণী পরিবর্তন বা বিপ্লবের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে,
তাই, শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে অবাধ যৌনতার স্বাধীনা নিশ্চিত করা অপরিহার্য!!"
.
সুন্দর পাত্রে বিষ পরিবেশনের কি বিচিত্র নমুনা!!
.
এই কামাতুর উন্মাদ নিজ মহিলা রোগীদের সাথে যৌনবিকৃতিতে লিপ্ত হতো। এক পর্যায়ে সে মৈথুনযন্ত্র (orgasmitron) বাজারজাত করে।
হলিউডের জনপ্রিয় পরিচালক উডি এলেন তার নির্মিত ফিল্ম "Sleeper" এ যন্ত্রটির চিত্রায়ন ঘটায়।
মুভিটির প্রোটাগোনিস্ট চরিত্রকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, "তুমি কিসে বিশ্বাস করো?" উত্তর মিলে- "যৌনতা ও মৃত্যুতে।"
.
এছাড়াও, 'ক্রিটিকাল থিওরি'র অন্যতম গডফাদার, যৌনবিপ্লবী হার্বার্ট মার্কিউস তার কুখ্যাত বই Eros and Civilization এ লিখেন,
"যৌনতার ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা বা দমন করার মানসিকতা, মানবজাতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। (অর্থাৎ, কেউ যখন খাহেশাত থাকা সত্ত্বেও, নিজ চাহিদাকে আল্লাহর ভয়ে বা সামাজিক রীতিনীতির কারণে দমন করে- তখন তা ক্ষতি বয়ে আনে!)
আর যৌনতার ক্ষেত্রে ভিক্টোরিয়ান (অর্থাৎ রক্ষণশীল) মানসিকতা থেকে মুক্ত হওয়ার মাধ্যমেই একটি উন্নত বিশ্ব নির্মাণ সম্ভব!"
(পৃ. ২২৭-২২৮)
.
পরবর্তীতে, ফ্র‍্যাঙ্কফুর্ট স্কুলের কালচারাল মার্ক্সবাদীদের হাত থেকে দায়িত্ব বুঝে নেয় বর্তমানে পোষ্ট-মর্ডানিস্ট হিসেবে পরিচিত বামপন্থী সেক্যুলাররা।
সেক্যুলারিজম' নামক ধর্মের 'মার্ক্সিজম' মাযহাবের উপ-মাযহাব হচ্ছে 'ফ্র‍্যাঙ্কফুর্ট স্কুল/কালচাড়াল মার্ক্সিজম', যাদের বিবর্তিত রূপ হলো হালের 'পোস্ট-মর্ডানিজম'।
এই মাযহাবের অনুসারী বামপন্থী সেক্যুলাররা স্বাভাবিক যৌনতাকে- পুঁজিবাদী, ক্ষমতাসীন শ্রেণির শোষণের হাতিয়ার মনে করে; তাই তারা ক্ষমতার সমীকরণ বদলে দিতে, সমাজে অবাধ ও বিকৃত যৌনতার প্রচারপ্রসারকে অপরিহার্য সাব্যস্ত করেছে।
.
উগ্র সেক্যুলার সমাজ কায়েমে উইলহেম রাইখ আর হার্বার্ট মার্কিউসের পর, যৌনবিপ্লবের তাত্ত্বিক ভিত্তি আরো শক্তিশালী করতে অগ্রগামী ভূমিকা রাখে মিশেল ফুকো, জুডিথ বাটলার প্রমুখ; যাদেরকে এদেশীয় সেক্যুলার কালচাড়াল বামরা (স্বঘোষিত পোস্টমর্ডানিস্ট) কথায় কথায় উদ্ধৃত করে থাকে।
সহজভাবে বলতে গেলে- সমকামিতা, উভকামিতা, পশুকামিতা বা অজাচার সবই কালচাড়াল মার্ক্সবাদী সেক্যুলারদের কাছে বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। তাই পূর্ব থেকে পশ্চিম সর্বত্রই বিচিত্র ও বিকৃত সব চিন্তাধারার সুপারস্ট্রাকচার নির্মাণে তারা নিরন্তর মগ্ন!
.
উল্লেখ্য, এখানে বিপ্লব বলতে যৌনবিপ্লব উদ্দেশ্য নয়, বরং উদ্দেশ্য হচ্ছে- শাসনকাঠামোর খোলনলচে পাল্টে দেয়ার বিপ্লব সম্পন্ন করা বা নিদেনপক্ষে এতে ভূমিকা রাখা!! সেক্যুলার, কালচাড়াল বামদের কাছে যৌনবিপ্লব উপকরণ, উদ্দেশ্য নয়।
.
তাই,
জাতিকে ব্যাপকভাবে যৌনতার ক্ষেত্রে সুস্থ, স্বাভাবিক তথা ইসলামী দৃস্টিভঙ্গীর উপর ফিরিয়ে আনা, বিশুদ্ধ বিপ্লবের প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গের অন্যতম!
.
মুখরোচক গালভরা তত্ত্বকথার আশ্রয় নিয়ে এবং শাসক আর মিডিয়ার ছত্রছায়ায় থেকে এসকল পোস্ট-মর্ডানিস্টরা আমেরিকা, ইউরোপ থেকে শুরু করে গোটা দুনিয়াতেই ধর্মহীনতা, আইডেন্টিটি পলিটিক্স, যৌনবিপ্লব, সাব্জেক্টিভ মোরালিটি আর অপশাসনের মড়ক ছড়িয়ে দিচ্ছে।
বর্তমান সময়ে সমকামিতা, উভকামিতা বা ট্রান্সজেন্ডার মুভমেন্টের মতো বিকৃত মানসিকতাকে সার্বজনীন রূপ দিতে সামনে থেকে নের্তৃত্ব দিচ্ছে পোস্টমর্ডান বুদ্ধিজীবি ও এক্টিভিস্টরা।
প্রসঙ্গত, পোস্ট-মর্ডানিজমের অন্যতম পুরোধা মিশেল ফুকো স্বয়ং ছিলেন বিকৃতমনা এক সমকামী।
.
এরই ধারাবাহিকতায় মুসলিম সমাজে সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারে সেক্যুলারদের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে, সমাজে যৌনতার বিস্তৃতি। বরং, মুসলিমদের দেশগুলোতে যৌনতার অবাধ জোয়ারে আরো জোরদার চেষ্টাই হয়েছে, যেহেতু আদর্শিকভাবে মুসলিমরা অন্য যে কোনো জাতির চেয়ে অধিক শক্তিশালী।
.
এছাড়াও মুসলিম সমাজে সেক্যুলার শাসনের আধিপত্য নিশ্চিতেও অবাধ যৌনতা ছিল জরুরী। কেননা, যৌনায়িত মুসলিম সমাজ কখনোই নিজ আদর্শ ও অধিকার আদায়ে সচেতন হতে সক্ষম নয়, বিশেষত যদি যৌনতাকে স্বাভাবিক দৃস্টিতে দেখা হতে থাকে!
.
আমরা যদি আমাদের দেশেও নজর দেই- বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয় ও মিডিয়াতে এসকল নোংরা চরিত্রের বামদের ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করতে পারব।
সেক্যুলার শাসকগোষ্ঠী, সুশীল বাম বুদ্ধিজীবি ও মিডিয়ার ত্রিমুখী শয়তানী চক্রের ধারাবাহিক ও সমন্বিত কার্যক্রমই, ধীরে ধীরে আমাদের সমাজকে যৌনবিপ্লবের জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ফরহাদ মজহার, সলিমুল্লাহ খান বা হুমায়ুন আজাদদের সুলুক সন্ধান করলে দেখা যাবে, এদের প্রত্যেকেই কালচাড়াল বামদের আদর্শিক জারজ!
একটু লক্ষ্য করলেই, মিডিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমরা ঘাপটি মেরে বসে থাকা পর্দার আড়ালের এই নব্য বামদের দেখতে পারব।
.
আজ ইসলামপন্থীরা যদি চায়, মুসলিমদের যমীনে ইসলামের শাসন ফিরে আসুক; আর এজন্য প্রয়োজনীয় ইসলামী আদর্শে দীক্ষিত যোগ্য লোকবল বের হয়ে আসুক; এবং ইসলামী বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠুক মুসলিম জাতি; তবে, অবশ্যই মুসলিম নারীপুরুষকে অবাধ যৌনতার করাল গ্রাস থেকে সুরক্ষিত রাখা আবশ্যক!
.
অন্যথায় আত্মমর্যাদাবোধ, হিম্মত ও আত্মত্যাগী মানসিকতা অনুপস্থিত থাকায় সাহাবাদের ন্যায় গড়ে উঠবে না আদর্শ সংগঠন; যারা আসন্ন ইসলামী বিপ্লবের ঝান্ডাধারী হবে!
অন্যথায়, অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না সে সকল মা আর স্ত্রীদের; যাদের বিনয়, হায়া ও কোমলতা জাতিকে উপহার দিতে পারে আদর্শ বিপ্লবী পুরুষ!
.
বিকৃত যৌনতায় মত্ত মুসলিমের পক্ষে ইসলামের কিছু ইবাদত আদায় সম্ভব হলেও, নিজ জাতির কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মতো ব্যাক্তিত্ব গড়ে তোলা অসম্ভব!! চাই তার নামের শুরু আর শেষে থাকুক নানামুখী লকব, কিংবা মাথায় থাকুক দর্শনীয় পাগড়ি!!
উদগ্র যৌনতায় মত্ত জাতি বিপ্লবের অনুপযোগী!
অশ্লীলতার অতল গহব্বরে হারিয়ে যাওয়া যুবক আত্মত্যাগে অক্ষম!!
.
ইসলামপন্থীদের তথা মুসলিমদের আজ অপরিহার্য দায়িত্ব-
.
√ উপলব্ধি করতে হবে, সুসংহত ইসলামী সমাজকাঠামো তৈরীতে বিকৃত, অবাধ যৌনতার অপসারণ আবশ্যক। আর শক্তিশালী সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কাঠামো ব্যাতিত ইসলামের ক্ষমতায়ন ফিরিয়ে আনা বা ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব।
.
√ নারীপুরুষ নির্বিশেষে সাংস্কৃতিক যুদ্ধের ময়দানে সেক্যুলারদের পরাজিত করতে ভূমিকা রাখতে- অনৈতিক ও অস্বাভাবিক যৌনতা থেকে পরিচিত-অপরিচিতদের দূরে রাখার সম্ভাব্য সকল চেষ্টা রাখবেন।
.
√ পুরুষদের দ্রুত স্বনির্ভর হওয়া এবং বিশ পেরোনোর আগে বিয়ের চেষ্টা করা। অন্যথায় কম খাওয়া, কম ঘুম ও সিয়ামের অভ্যাস জারি রাখা।
.
√ বিদ্যমান সুলেখক, এক্টিভিস্ট ও জ্ঞানী ব্যাক্তিবর্গ 'কালচাড়াল' বাম তথা হাল জমানার পোস্ট মর্ডানিস্টদের মানবতাবিরোধী কুদর্শন ও অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ক্রিটিক হাজির করবেন এবং তাদের আদর্শিক ও জ্ঞানগত দেউলিয়াপনা উন্মোচন করে দিবেন।
.
√ বৈরী পরিবেশ সত্ত্বেও, সম্ভাব্য সকল মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে- ক্রমাগত মানসম্মত দাওয়াহ, পরামর্শ জারি রাখা চাই। বৃহত্তর পরিসরে সহজবোধ্য আলোচনা, ম্যাগাজিন, বই, পডক্যাস্ট, অডিও-ভিডিও ইত্যাদি জাতির মাঝে সরবরাহে ভূমিকা রাখা চাই।
.
সর্বোপরি, অবাধ যৌনতার বিরুদ্ধে ব্যাক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় ও সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা চাই।
.
আল্লাহ তা আলা তাওফিক দান করুন।

পঠিত : ৭০১ বার

মন্তব্য: ০