Alapon

ইসলামী ছাত্রসংঘের ইতিহাস...



ইসলামী ছাত্র সংঘ এদেশের ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের বীজতলা। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ছাত্র সংঘের ইতিহাস অনির্ণীতই থেকে গেছে। যে কারণগুলোর কারণে সংঘের ইতিহাস চর্চা এক ধরনের ট্যাবু হয়ে আছে, সেই কারণগুলো আমার মনে হয় এখন মূল্য হারিয়েছে। আমাদের হারানোর আর কিছু নেই।

প্রচলিত ইতিহাস আলোচনায় আমরা দেখতে পাই— ১৯৭৭ সালে হঠাৎ ছয়জন ছাত্র মিলে ‘ইসলামী ছাত্রশিবির’ নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করল এবং সাথে সাথে দিকে দিকে হাজার হাজার জনশক্তি ও ইউনিট হয়ে গেল। এমন অপূর্ণাঙ্গ ইতিহাস যদি কোনো প্রয়োজন ও বাস্তবতার কারণে হয়ে থাকে, তাহলে তা থাকুক। তারপরও কোনো রকম সংযোগ ছাড়াই ইসলামী ছাত্রসংঘের ইতিহাস স্বতন্ত্রভাবে আলাপে আসতে পারে এবং আসা উচিত। তা নাহলে শেকড়ের পরিচয় হারিয়ে যাচ্ছে।

পাকিস্তান জামায়াতের ছাত্র শাখা কাজ শুরু করে ১৯৪৭ সালের শুরুতে; অবশ্য ‘ইসলামী জমিয়তে তালাবা’ নামে স্বতন্ত্র ছাত্র সংগঠনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় আরও পরে—১৯৪৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর।

বাংলা অঞ্চল বা বর্তমান বাংলাদেশে ইসলামী ছাত্রসংঘের গোড়াপত্তন হয় খাজা মাহবুব ইলাহীর মাধ্যমে। তিনি জামায়াতের ছাত্র জনশক্তি ছিলেন। পুরান ঢাকার টিপু সুলতান রোডে ছিল তাঁর আবাস। খাজা মাহবুব ইলাহীর বাসভবনে প্রথম ছাত্র জনশক্তিদের নিয়ে আলাদা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সে বৈঠকে জামায়াতের প্রাদেশিক সেক্রেটারি মরহুম মাওলানা আবদুর রহীম অতিথি ছিলেন। ১৯৫৪ সালে ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ’ নামে কাজ শুরু হয় এবং খাজা মাহবুব আলীর নেতৃত্বে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিকভাবে পরিচালিত হয় ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ’।

১৯৫৬-৫৮ সেশনে সর্বপ্রথম জমিয়তে তালাবা বা ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রাদেশিক সভাপতি নির্বাচিত হন সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আলী। তাঁর সহযোগী ছাত্রনেতাদের মধ্যে পরে পরিচিতি লাভ করেন মাওলানা আবদুস সোবহান ও ব্যারিষ্টার কোরবান আলী। তাঁরা তখনকার ছাত্রসংঘের উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন।

এরপর দীর্ঘদিন আমরা ছাত্রসংঘের কোনো ইতিহাসের নাগাল পাই না আর। পুনরায় আমরা ছাত্রসংঘের কিঞ্চিত ইতিহাসের আলাপ পাই ১৯৬৩-৬৪ সেশনে এসে। কারণ, সেই সেশনের প্রাদেশিক সভাপতি এ.কে.এম. নাজির আহমদ পরে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসেন। এসময় মাওলানা নিজামী প্রাদেশিক শাখার অফিস সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৫-৬৬ সেশনে তিনি প্রাদেশিক সভাপতির দায়িত্বে আসেন।

ছাত্রসংঘের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা দুটি। এই দুটিই ঘটে ১৯৬৯ সালে। প্রথমটি হলো মাওলানা নিজামীর নিখিল পাকিস্তান জমিয়তে তালাবার নাজিমে আ’লা (কেন্দ্রীয় সভাপতি) নির্বাচিত হওয়া। পূর্ব পাকিস্তান তুলনামূলকভাবে পশ্চিমের পরে যাত্রা শুরু করে, শহর-নগর হিসেবেও, শিক্ষাদীক্ষায়ও এবং ইসলামী আন্দোলনচর্চায়ও; ফলে এ অঞ্চল থেকে জমিয়তের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়া বড়ো ঘটনা।

দ্বিতীয়টি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং সংঘের গুরুত্বপূর্ণ নেতা আব্দুল মালেকের শাহাদাত। আব্দুল মালেকের শাহাদাত পুরো ইসলামী আন্দোলনকে কাঁপিয়ে তুলেছিল।
একাত্তরে সংঘের মধ্যে কিছু সংকটের আভাস পাওয়া যায়, যদিও সে বিষয়টাও স্পষ্ট কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। নেতৃত্ব সংকটের একটি বিষয় জানা যায়। স্বাধীনতাত্তোর সময়ে প্রথম দায়িত্বে আসেন শহীদ আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ। এর আগে আগে দায়িত্ব পালন করেন মরহুম নুরুল ইসলাম। এরপর দায়িত্বে ছিলেন আ.ন.ম. আবদুজজাহের। মরহুম শাহ আবদুল হান্নান সাহেব একসময় প্রাদেশিক সেক্রেটারি ছিলেন সংঘের।

এটুকুই মোটামুটি সংঘের ইতিহাস সম্পর্কে আমার সংক্ষিপ্ত জানাশোনা। এ প্রজন্মের আর কার কার কেমন জানাশোনা আছে আমার ধারণা নেই। কিন্তু এমন একটি সংগঠনের কোনো ইতিহাসের রসদ মজুদ থাকবে না—এটা অনুচিত। এই ইতিহাস সামনে আনতে হবে। কেননা, অতীতের প্রেরণা বর্তমানের খোরাক আর ভবিষ্যতের পথনির্দেশ।

পঠিত : ৪২৯ বার

মন্তব্য: ০