Alapon

তাওহীদ ভিত্তিক সভ্যতা-সাংস্কৃতিক বুনিয়াদ বিনির্মাণ কি খুব কঠিন কিছু?



তাওহীদ ভিত্তিক সভ্যতা-সাংস্কৃতিক বুনিয়াদ বিনির্মাণ কি খুব কঠিন কিছু?


তাওহীদ ভিত্তিক সাংস্কৃতিক বুনিয়াদ বিনির্মাণ কি খুব কঠিন কিছু? বিশ্ব সভ্যতাকে আজো কি তাওহীদের বুনিয়াদের ওপর দাঁড় করানো সম্ভব?

আমরা যদি সরলীকরণ করে উত্তর প্রদান করি, তাহলে হ্যাঁ, সত্যিই অনেক বেশি কঠিন তা। এরজন্য প্রয়োজন অনেক বেশি ত্যাগ-তিতিক্ষার। প্রয়োজন অনেক বেশি পরিশ্রমের। প্রয়োজন অনেক বেশি ধৈর্যের!

তবে এই ত্যাগ-তিতিক্ষা, ধৈর্য ও পরিশ্রমকে একপাশে রেখে আমরা যদি বাংলাদেশের বাস্তবতার দিকে মনোনিবেশ করে দেখি, তাহলে দেখবো যে- এটা আসলে খুবই সহজ এবং সম্ভবপর না হলেও, অনেকটাই সহজ এবং সম্ভবপর ব্যাপার।

দেখুন, কাজী নজরুল ইসলামের হাত ধরেই কিন্তু বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিতে, বাংলা গান-কবিতায় ইসলামের শব্দাবলী ও মুসলিমদের ঐতিহ্য লালনকারী উপমা সমূহের ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে। অস্বচ্ছ অশালীন ও শিরকী সংস্কৃতির জয়জয়কার ছিলো যখন, তখন কিন্তু নজরুলই সাহসের শামিয়ানা টাঙিয়ে মুসলমানদের আধ্যাত্মিক অনুসর্গগুলোকে নিয়ে, দ্বীনি পরিভাষাগুলো দিয়ে সাহিত্য সৃষ্টি শুরু করেছেন। বিশুদ্ধ সংস্কৃতির যে আবহ তিনি সৃষ্টি করেছেন, সেই পথ ধরে পরবর্তীতে আমাদের মাঝে শুদ্ধতার আরো বিরাট এক জাগরণ নিয়ে হাজির হলেন ইসলামি রেনেসাঁর কবি খ্যাত ফররুখ আহমদ ও গোলাম মোহাম্মদরা।

ফররুখ আহমদ চলে গেলেন, চলে আসলেন আমাদের মাঝে আলোর মশাল জ্বেলে মল্লিক। তিনি আমাদেরকে দেখিয়ে দিলেন যে, হ্যাঁ, তাওহীদ ভিত্তিক সাংস্কৃতিক বুনিয়াদ বিনির্মাণ আসলেই এই যুগেও সম্ভব।

তার হাত ধরেই তাই শিরকিয়্যাত মুক্ত বিশুদ্ধ এক শক্তিশালী সাংস্কৃতিক ধারা তৈরি হলো। নজরুলের সূচনা আর ফররুখের পথকে তিনি আরো গতিময় করলেন। একটা শক্তিশালী তাওহীদ ভিত্তিক সাংস্কৃতিক বুনিয়াদ বিনির্মাণ করলেন।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই ধারা কি এমনিতেই তৈরি হয়ে গেছে? নাহ। এখানে আসলে উম্মাহর জন্য অপরিসীম দরদের প্রয়োজন ছিলো। যেটা মল্লিকের ছিলো। এখানে ডেডিকেশনের সর্বোচ্চটুকুন ঢেলে দেওয়ার প্রয়োজন ছিলো। যেটা মল্লিক করেছেন। প্রয়োজন ছিলো দ্বীনের স্বার্থে বা দ্বীনের ব্যাপারে আল্লাহর নুসরত পাবার জন্য আপোষহীন মনোভাবের। যে আপোষহীন মনোভাব মল্লিকের ছিলো। তিনি আপোষকামী ছিলেন না। যার কারণে আমরা একটা শশক্তিশালী সাংস্কৃতিক ভিত্তি পেয়েছি।

তিনি যে ভিত্তি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন আমাদের জন্য, আজ সেই ভিত্তিকে আরো সাজানো প্রয়োজন। আরো অনেক বেশি মজবুত করা প্রয়োজন।

তিনি তো প্রাথমিকভাবে শুরু করে রব্বুল আলামিনের দরবারে হাজির হয়ে গেলেন। তার সেই পথ ধরে বা সেই কাজের ধারাবাহিকতা ঠিক রেখে আমরাও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু সেই বিজয়ের হাসি হাসবার জন্য চাই আরো বেশি যোগ্য, আরো বেশি মুখলিস দা'ঈ-সংগঠকের, আরো বেশি নিবেদিত প্রাণ মুজাহিদের। আমাদের মধ্যে যদি তেমন নিবেদিত প্রাণ মুজাহিদের আগমন ঘটে, এবং আমরা যদি সেই ধারাবাহিকতায় কাজ চালু রাখতে পারি, তাহলে ইন শা আল্লাহ আমাদের স্বপ্ন পুনরায় আরো সতেজ হয়ে জেগে ওঠবে। আমাদের স্বপ্ন পূর্ণতার পথে যাবে।

তবে, যেটুকুন এগিয়েছি আমরা, মুশরিকদের আধিপত্য, সমাজতান্ত্রিক কমিউনিস্টদের কালচারাল হেজেমনিকে উপেক্ষা করে যে পথ আর যে ভিত্তির ওপর ওঠে দাঁড়িয়েছি আমরা, সেটার ওপর আস্থা-বিশ্বাস আর ভরসা রেখে বলতে পারি যে, তাওহীদ ভিত্তিক সাংস্কৃতিক বুনিয়াদ বিনির্মাণ আসলেই মুমিন হিসেবে খুব বেশি কঠিন কিছু নয় আমাদের জন্য। বিশ্ব সভ্যতাকে ভোগবাদী চেতনা থেকে ফিরিয়ে এনে আজো তাওহীদের বুনিয়াদের ওপর দাঁড় করানো সম্ভব। তবে কষ্ট-ক্লেশ তো কিছু হবেই। কিন্তু যেটুকু কষ্ট হবে, সেটুকু কষ্ট তো আমরা আমাদের রব্বুল আলামিনের জন্য, তার সন্তুষ্টির দিকে চেয়ে করতেই পারি! আমরা তো পৃথিবীতে কাজ করতে আর কষ্ট স্বীকার করতেই আসছি। আয়েশ করতে নয়...

মরহুম মতিউর রহমান মল্লিকের একটা কালজয়ী অনুপ্রেরণা মূলক গান দিয়ে এই লেখাটির আপাতত ইতি টানছি। যেখানে তিনি বলেছেন -

এখনো অনেক ধৈর্য ধরতে হবে
এখনো অনেক কষ্ট করতে হবে।

বিরাম-বিরতিহীন অবিরত,
আসহাবে রাসুলের ত্যাগের মতো।


হ্যাঁ, আমরা ধৈর্য ধরে-কষ্ট করে এবং আসহাবে রাসুলের ত্যাগের মতো পরিপূর্ণ ত্যাগের নজরানা পেশ করে মুশরিকদের সাংস্কৃতিক আধিপত্যের জাল ছিন্ন করবো, সভ্যতার ঘুনোপোকাদের বিতাড়িত এবং বিনাশ করে তাওহীদ ভিত্তিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির বুনিয়াদ বিনির্মাণ করবো এই দুনিয়ায়। ইন শা আল্লাহ!


~ রেদওয়ান রাওয়াহা
https://t.me/RedwanRawaha

পঠিত : ৩৪৬ বার

মন্তব্য: ০