Alapon

শহীদ আবরারের বুয়েট ক্যাম্পাস ও ছাত্রলীগ!



বিক্ষুব্ধ বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
গতকাল থেকেই কাঁপছে বুয়েট ক্যাম্পাস।
সবার মুখে মুখে একই স্লোগান।
.
.
❝ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই বুয়েটে হবে না!❞
❝আবরার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দিব না!❞
মূলত শোক দিবস উপলক্ষে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নানা অনুষ্ঠান ও নতুন করে কমিটি ঘোষণার চেষ্টা দেখে পুরো বুয়েট ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে ওঠে!

মূলত আবরার ফাহাদকে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যার কারণে পুরো বুয়েটের সমস্ত শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের উপর ক্ষেপে ছিল আগে থেকেই, তার উপর ছাত্রলীগ নানাভাবে আবরার হত্যায় জড়িত খুনিদের মুক্তির জন্য বহুদিন ধরে আইনী লড়াই চালিয়ে আসছে— এটাও বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ফুসে ওঠার বড় কারণ।

ছাত্রলীগের ভাষ্য, ❝বুয়েট এখন বাংলাদেশের সমস্ত জামায়াত-শিবির-জঙ্গিদের অভয়ারণ্য! বুয়েটকে মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী থেকে বাঁচানোর জন্য, বুয়েটে থাকা সাম্প্রদায়িক শক্তির সবাইকে শেষ করে বুয়েটকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভুত প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরির জন্য শীঘ্রই বুয়েটে নতুন করে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা দরকার!❞

উল্লেখ্য, পুরো বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার পর থেকে শান্তি বিরাজ করলেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অন্যান্য ইউনিট থেকে বুয়েটে জোরপূর্বক আবার ছাত্রলীগ কমিটি গঠন করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে৷ বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীরা কেউ রাজনীতি চায়না, বুয়েট প্রশাসন রাজনীতি চায়না, তারপরও যদি জোরপূর্ব বুয়েটে আবার ছাত্রলীগ তাদের কার্যকলাপ শুরু করে, তবে প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ?

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মীরা ঢাকা মেডিকেলের এক ইন্টার্ন ডাক্তারকে গায়ের জোরে বিনা কারণে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে, সেটারও বিচার হয়নি! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলেন বা ঢাকা মেডিকেল— অধিকাংশ শিক্ষার্থী এসব রাজনৈতিক বড় ভাইদের আতঙ্কে থাকলেও আবরারের মৃত্যুর পর থেকে বুয়েট এতদিন মুক্ত ছিল, এখনো আছে।

আজকাল ঢাবি সহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীরা মসজিদে নামাজে যেতে ভয় পায়, কেননা নিয়মিত নামাজে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের নামের লিস্ট করে রাখা হয় সম্ভাব্য শিবিরকর্মী হিসেবে! পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য! অনেক হোস্টেলে নতুনদের দাড়ি রাখার উপর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা থাকে, দাড়ি রাখার অনুমতি থাকে না! প্যান্ট টাখনুর উপর পড়লে প্রায়ই জিজ্ঞাসাবাদের ঝামেলায় পড়তে হয়! এই কথিত রাজনৈতিক বড় ভাইদের জন্য মুসলিম ছাত্রছাত্রীরা ন্যূনতম দ্বীন-ধার্মিকতা পালনের সুযোগ পায় না অনেক জায়গায়ই।

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নিয়মিত মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া দেখেই মূলত সর্বপ্রথম জিজ্ঞাসাবাদের জন্য টার্গেট করা হয়েছিল! আবরারের খুনিদের যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কেন তাকে শিবিরকর্মী বলে মনে হয়েছে, তখন সে ছাত্রলীগ কর্মীরা উত্তর দিয়েছিল, ❝ও সবাইকে নামাজে ডাকতো!❞ অর্থাৎ শিবিরকর্মী হওয়ার জন্য নিয়মিত নামাজে যাওয়া, বা বন্ধুকে নামাজ পড়তে বলাই যথেষ্ট! ধর্মের কথা না হয় বাদ দিলাম, সাধারণ একজন ছাত্রের ছাত্রত্বের সুরক্ষা কোথায় এখানে?

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ছাত্ররাজনীতি নেই, ছাত্রদের রাজনীতির নামে বড় ভাইয়ের দালালি আর আদুভাই হয়ে ক্যারিয়ার নষ্ট করতে হয় না— সেখানে বাংলাদেশের মতো বাজে শিক্ষাব্যবস্থার দেশে ছাত্ররাজনীতি লাগবে কেন? হোস্টেলে হোস্টেলে রাজনীতির নামে অস্ত্রধারী ছাত্রসন্ত্রাস থাকা লাগবে কেন? হেলমেটের গুদামঘর থাকা লাগবে কেন?

দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে হেলমেটধারী ছাত্রসন্ত্রাস থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারছে না, যেখানে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য পরিবেশ কতটুকু উপযোগী?

সাধারণ বাবা-মা না হয় অবুঝ, কোনো সচেতন বাবা' কি তার কোলেপিঠে করে বড় করা প্রাণপ্রিয় সন্তানকে এই এই নিকৃষ্ট পরিবেশে দিতে চাইবে? বা কোনো বুঝদার মা' কি জেনেবুঝে তার পেটে ধরা যক্ষের ধনকে এই সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিবে?
ব্যক্তিগত দাবী একটাই, """দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনীতিমুক্ত হোক। ছাত্রসন্ত্রাস থেকে বাচুঁক। ছাত্রদের পিটিয়ে মারা বন্ধ হোক।"""

পঠিত : ২৬২ বার

মন্তব্য: ০