Alapon

দুটি সন্তান নীতির ফল হবে চীন-জাপানের মত ভয়ঙ্কর...



সন্তান গর্ভে ধারণ, মাতৃত্ব ও সন্তান প্রতিপালনকে অনেক ‘উচ্চশিক্ষিত’ নারী মনে করেন উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রধান প্রতিবন্ধক। অনেকে উটকো ঝামেলাও মনে করেন। বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তর থেকে তোতাপাখির মত জনসংখ্যার সমস্যা বিষয়ক রচনাবলী মুখস্থ করে তাদের বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেছে সন্তান যত কম হবে সংসার তত উন্নত ও সমাজ তত অর্থশালী হবে। ফলে স্বচ্ছল জীবনের আশায় ও নির্ঝঞ্ঝাট পরিবারের খাহেশে অনেকে সন্তান নিতে অনাগ্রহী।

উপরন্তু দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ‘দুটি সন্তানের বেশী নয়; একটি হলে ভাল হয়’ জাতীয় স্লোগান মুখস্থ করানো, গর্ভ নিরোধক ওষুধপত্রের ফ্রি বিতরণ ও গর্ভপাতকে সহজীকরণের মাধ্যমে জনশক্তি বৃদ্ধির এই মহাসুযোগকে বন্ধ করে দেওয়ার সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আদতে এটা কতটা ভয়াবহ আল – জাযিরার পরশুর একটি প্রতিবেদনে তা উঠে এসেছে।

‘পরিবারগুলোকে অধিক সন্তান গ্রহণের প্রতি উৎসাহিত করার লক্ষ্যে চীন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে’ শিরোনামের সেই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে : মঙ্গলবার, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় এবং স্থানীয় সরকার প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য ব্যয় বাড়ানো এবং শিশু যত্ন পরিষেবাগুলি উন্নত করার আহ্বান জানিয়েছে।

মন্ত্রনালয় বলেছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের উচিত সন্তান জন্মদানের হার বৃদ্ধির জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সবরকম সহযোগিতা প্রদান, ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া, স্বাস্থ্য বীমাকে উন্নত করা। পাশাপাশি পরিবারগুলোর জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থানের ব্যাপারে সহযোগিতা করা। ২ থেকে ৩ বছরের বাচ্চাদের জন্য প্রয়োজনমত নার্সিং হোমের ব্যবস্থা করা।

ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকস -এর তথ্য অনুসারে, চীনের জন্মহার গত বছর কমে প্রতি 1,000 জনে 7.52 জন হয়েছে যা 1949 সালে কমিউনিস্ট চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে দেশটিতে সর্বনিম্ন সংখ্যক। সর্ববৃহৎ জনশক্তিধর রাষ্ট্রটির এমন বেহাল অবস্থার পেছনে উপর্যুক্ত কারণগুলো যে প্রধান নিয়ামক তা গবেষক ও চিন্তক সবাই বাধ্য হয়ে স্বীকার করছেন।

নিম্ন জন্মহার যেসব দেশে : নিম্ন জন্মহারে এগিয়ে আছে জাপান। বর্তমানে জন্মহার ১ দশমিক ৩। এরপর রাশিয়া ১ দশমিক ৬, ব্রাজিল ১ দশমিক ৮, ইন্দোনেশিয়া ২ দশমিক ০ হারে অবস্থান করছে।

এসব দেশ ছাড়াও চীন, তাইওয়ান, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার নারীরা কম সন্তান জন্ম দেওয়ায় তাদের দেশেও জন্মহার অত্যন্ত কম।

বাংলাদেশের অবস্থা : বাংলাদেশে ২০২২ সালের জনশুমারির প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে দেশে জন্মহার কমেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ত্রিশ বছর যাবতই বাংলাদেশে জন্মহার ধারাবাহিকভাবে কমছে।

১৯৯১ সালে বাংলাদেশের জন্মহার ছিল দুই দশমিক ১৭ শতাংশ, যেটি ২০০১ সালে নেমে আসে এক দশমিক ৫৮ শতাংশে।

এরপর ২০১১ সালে আদমশুমারির প্রতিবেদনে দেখা যায় জন্ম হার আরো কমে এক দশমিক ৪৬ শতাংশ হয়েছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই হার এক দশমিক ২২ শতাংশ।

বাড়ছে বয়স্ক কর্মঅক্ষম মানুষের সংখ্যা : ২০২২ সালের জনশুমারিতে দেখা যাচ্ছে, ৬৫ বছর থেকে শুরু করে তার ঊর্ধ্বে জনসংখ্যা ৫.৮৮ শতাংশ।

এটি যদি সাত শতাংশে পৌঁছে যায় তখন সেটিকে ' বয়স্কদের সমাজ' হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এ পরিস্থিতি হলে দেশে কর্মক্ষম লোকের ঘাটতি দেখা দেবে এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

কেন সন্তান জন্ম দেবার হার কমে যাচ্ছে?

বিবিসির একটি প্রতিবেদন বলছে :প্রথমত, শিশু মৃত্যু কমে গেছে। শিশু মৃত্যু হার কমে গেলে মহিলারা কম সন্তান নেয়। দ্বিতীয়ত, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সহজলভ্যতা
তৃতীয়ত, নারীরা শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে। চতুর্থত, অনেক ক্ষেত্রে সন্তান কম জন্ম দেয়া এক ধরনের সফলতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পৃথিবীর অর্ধেক দেশে এখনো যথেষ্ট সংখ্যায় শিশু জন্মগ্রহণ করছে। কিন্তু এসব দেশ যত অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে যাবে, ততই সন্তান জন্ম দেবার সংখ্যা কমে যাবে। ফলে অর্থনৈতিক উন্নতির আশায় সন্তান গ্রহণ বন্ধের ফল হবে ‍বুড়োদের সমাজে কর্মক্ষম লোকের অভাব এবং এতে অতি সত্বর অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়বে রাষ্ট্র, যা ইতোমধ্যে উন্নত বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রে বাস্তবতা হয়ে দেখা দিয়েছে। এজন্যই বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোকে ‘দুটি সন্তানের বেশী নয়’ মুখস্থ করালেও নিজেরা বিলবোর্ড টানিয়ে দিচ্ছে ‘বিয়ে করুন আর বাচ্চাকাচ্চায় ভরিয়ে দিন দেশ’।

ইসলামের নির্দেশনা : ইসলাম এক্ষেত্রে সর্বদা অধিক সন্তান গ্রহণের প্রতি উৎসাহিত করে। অর্থনৈতিক সংকটের চিন্তায় সন্তান না নেওয়া ও গর্ভের সন্তানকে হত্যা করাকে কুরআনে কঠোরভাবে বারবার নিষেধ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে ‘রিজিকের দায়িত্ব রব্বে কারিমের এবং তিনি তোমাদের ও তাদের উভয়কে রিজিক দান করেন’। [সুরা আরাফ : ১৫১, সুরা বনি ইসরাইল : ৩৩]

নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও অধিক সন্তান গ্রহণের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। বিয়ের সময় পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দুটো জিনিস তিনি দেখতে বলেছেন : ১. সে প্রেমময়ী কি না, ২. অধিক বাচ্চা প্রসবের সক্ষমতা রাখে কি না। হাদিসের ভাষ্য :
“তোমরা প্রমময়ী ও অধিক সন্তানপ্রসবা নারীকে বিয়ে কর। কেননা আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মতের ওপর গর্ব করবো।”[সুনানে আবু দাউদ, (২০৫০)]

একইসাথে জন্মনিয়ন্ত্রন করার প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুৎসাহিত করেছেন। ফলে একজন মুমিনের উচিত যথাসম্ভব সন্তান বৃদ্ধি করার প্রতি মনোযোগী হওয়া। আল্লাহ তাআলা তো তাকে ওয়াদা দিয়েছেন : “আর পৃথিবীতে বিচরণশীল যে কারো রিযিক আল্লাহর উপর” [সূরা হুদ, আয়াত: ৬]

- Nahid

পঠিত : ২৭১ বার

মন্তব্য: ০