Alapon

ফেব্রুয়ারি ২০১৩ : বিএনপির শাহবাগ স্বপ্নভঙ্গ...



২০১৩ ঈসায়ীর ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই দেশের সব রাজনৈতিক শক্তির কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে সামনে আসল খেলা শুরু হতে যাচ্ছে। জানুয়ারির ৩০ তারিখে বাংলাদেশের পরাক্রমশালী দুই বেগমের একজন, সাবেক উজিরে আজম বেগম খালেদা জিয়া, ওয়াশিংটন টাইমসে একটি নিবন্ধ লিখেন যেই নিবন্ধে বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্র উঠে যাবে এই আশঙ্কায় মিসেস জিয়া আমেরিকাকে অনুরোধ করেন বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধোজ্ঞা আরোপ করার জন্য। ফেব্রুয়ারির শুরুতেই এ নিয়ে রাজনৈতিক পারা সরগরম ছিল।
এর মধ্যে ৫ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩ ঈসায়ীতে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই জামায়াত-শিবির এবং জনগনের সাথে রাষ্ট্রশক্তির সংঘর্ষের ঘটনা দেশজুড়ে ঘটছিল। পুলিশের সহিংসতায় বিপুল সংখ্যক জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকসহ সাধারণ জনতাও হতাহত হয়। কিছুক্ষেত্রে জামায়াত-শিবির এবং উন্মত্ত জনতাও পুলিশের ওপর চড়াও হয়, প্রাণ হারান বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। আঞ্চলিক এবং জাতীয় পর্যায়ে হরতালের মত কর্মসূচী চলতেই থাকে।

৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ঈসায়ীতে আকস্মিকভাবে জামায়াতে ইসলামীকে মতিঝিলে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। পুলিশের হঠাত এই “উদারতা” রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরী করে কারণ কিছুদিন আগেই পুলিশের পক্ষ থেকে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের ব্যাপারে শ্যুট এট সাইট ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। প্রায় দুই বছরের বেশী সময় কার্যত নিষিদ্ধ থাকার পর হঠাত করে জামায়াতকে এককভাবে সমাবেশ করার অনুমোদন দেয় সরকার।

৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ ঘোষণা করে ট্রাইবুনাল। মোল্লার ফাঁসি না হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলাদেশের ফিরিঙ্গি শক্তি শাহবাগ।

৫ তারিখে জামায়াতের ডাকে দেশজুড়ে হরতাল ছিল। পূর্বে জামায়াতের ডাকা হরতালগুলিতে বিএনপির নৈতিক সমর্থন থাকলেও পাঁচ তারিখের হরতালে বিএনপির সমর্থন ছিল না। শুধু তাই না, বিএনপি স্পষ্টভাবে জানায় যে ট্রাইবুনাল বন্ধের জামায়াতের যে দাবী তার সাথে তারা একমত নয়। আন্তর্জাতিক মান রক্ষার দাবী জানালেও মোটা দাগে বিএনপি ট্রাইবুনালের পক্ষে অবস্থান নেয়। শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধের বিচারের বদলে বিএনপি ক্রমাগতভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শব্দমালা ব্যবহার করার মাধ্যমে বিএনপি অভিযুক্তদের অপরাধ প্রমাণের আগ পর্যন্ত নিরপরাধ জ্ঞান করার যে সার্বজনীন মানবাধিকার রয়েছে তা থেকেও বঞ্ছিত করে। শুধু তাই নয়, জামায়াতের সাথে সরকারের আঁতাত হয়েছে কিনা এমন সন্দেহও বিএনপি নেতারা ব্যক্ত করেন।

৫ ফেব্রুয়ারি মোল্লার যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নাই। প্রতিক্রিয়া না দেখালেও জামায়াতের থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেয় বিএনপি। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ করার কথা থাকলেও জামাত বিতৃষ্ণার কারণে সেই সমাবেশ স্থগিত করা হয়। অবশ্য জামায়াতকে দলীয় পরিচয় গোপন করে সমাবেশে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু জামাত সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

শাহবাগে ফিরিঙ্গি তাবেদারদের উত্থানের এক সপ্তাহ পরও বিএনপি শাহবাগ প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে নাকামিয়াব হয়। তবে, কাজেকর্মে বিএনপি চেষ্টা করে শাহবাগের মন যুগিয়ে চলার। জোটসঙ্গী জামায়াতের ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময়ে বিএনপি জামায়াতের পায়ের তলা থেকে মাটি সরিয়ে নেয় এবং বর্ষীয়ান রাজনৈতিক সহকর্মীদের পাশে থাকার মর্মে সামান্য বিবৃতি পর্যন্ত প্রদান থেকে বিরত থাকে।

১১ই ফেব্রুয়ারি বিএনপি প্রথম শাহবাগ প্রসঙ্গে নিজস্ব অবস্থান জানান দেয়। ঈসায়ী ৯ ফেব্রুয়ারিতে মাহমুদুর রহমান সম্পাদিত আমার দেশ ঐতিহাসিক “শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি” হেডিং সম্বলিত পত্রিকা প্রকাশের দুই দিন পর বিএনপি অবশেষে শাহবাগকে ফ্যাসিবাদ আখ্যা দেয়।

শাহবাগকে ফ্যাসিবাদ বলে যেই বিবৃতি বিএনপি দেয় সেই বিবৃতিতেও বিএনপির ভাষা ছিল অনেক সংযত। দৈনিক আমার দেশ, দৈনিক নয়াদিগন্ত, দৈনিক সংগ্রাম, মাহমুদুর রহমান এবং অধ্যাপক পিয়াস করিমের বিরুদ্ধে শাহবাগীদের হুমকির নিন্দা জানালেও বিএনপি মোটা দাগে শাহবাগকে তুষ্ট করার রাস্তাতেই হাঁটে। বিএনপি বলে যে শাহবাগে উপস্থিত ফিরিঙ্গি তাঁবেদার তরুনদের দাবী মৌলিকভাবে সঠিক হলেও সরকার এই তরুনদের দিকভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদদের জুলুম থেকে বাঁচানোর বদলে বিএনপি শহুরে মধ্যবিত্ত ফ্যাসিস্ট শ্রেণিকে তুষ্ট করার পপুলিস্ট রাস্তা বেঁছে নেয়। বিএনপি বলে যে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে থাকা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার দাবীসহ দেশে গুম, দুর্নীতি, ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার মত বিষয়গুলি যদি এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করে শাহবাগীরা, তবে সেক্ষেত্রে বিএনপি শাহবাগে শরিক হবে। সাম্প্রদায়িক শক্তি সিপিবি-ইউনিয়নের ক্যাডার লাকি আক্তারের পক্ষেও বিবৃতি প্রদান করে বিএনপি।

এর পরদিন অর্থাৎ ১২ই ফেব্রুয়ারি বিএনপির শাহবাগ তোষণ সব সীমা-পরিসীমা ছাড়িয়ে দেয়। আগের দিন যদিওবা শাহবাগের খানিকটা সমালোচনা বিএনপি করেছিল, ১২ তারিখে বিএনপি সরাসরি শাহবাগকে স্বাগত জানায় এবং বলে যে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি সব “যুদ্ধাপরাধী”দের বিচার করবে।

ফেব্রুয়ারির ১৯ তারিখ পর্যন্ত মোটা দাগে বিএনপি শাহবাগ তোষণ নীতিতেই অটল থাকে। ১৮ই ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ততকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি নেতা মওদূদ আহমদ, এবং বিএনপি নেতা সাদেক হোসান খোকা শাহবাগের পক্ষ নিয়ে বলেন যে মোল্লার রায় জনগন মেনে নেয় নাই এটারই প্রমাণ শাহবাগ। শাহবাগ আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা – বিএনপি নেতারা এরকম কথাও বলেন।

তবে সেই সাথে তারা শাহবাগের আওয়ামীকরণের বিরুদ্ধে সতর্কবানীও উচ্চারণ করেন। অর্থাৎ, শাহবাগে যদি আওয়ামী লীগ নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম না করে তবে এমনিতে ফিরিঙ্গি শাহবাগীদের ব্যাপারে বিএনপির কোন আপত্তি নাই।

তবে এক্ষেত্রে বলে রাখা ভাল যে দলগতভাবে বিএনপি শাহবাগতোষণের নীতিতে হাঁটলেও বিএনপির অনেক নেতা আলাদাভাবে শাহবাগের সমালোচনা-বিরোধিতাও করেছেন। বিএনপি নেতা তরিকুল আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের আঁতাতের গন্ধ পেয়েছেন। আবার তিনিই একখানে শাহবাগের সমালোচনা করেছেন। বিএনপি নেতা হান্নান শাহ্‌ এক অনুষ্ঠানে যেয়ে শাহবাগকে রাজনৈতিক চক্রান্ত বলেন। ব্যারিস্টার মওদূদও শাহবাগের পর ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতা আর থাকবে কিনা এনিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির দলীয় বক্তব্য ছিল শাহবাগের মনোরঞ্জন করে কোনভাবে শাহবাগকে পাশে পাওয়া যায় কিনা।

প্রায় দুই সপ্তাহের শাহবাগ তোষণের পরও শাহবাগ থেকে বিন্দুমাত্র সমর্থন না পেয়ে বিএনপি অন্যদের দ্বারস্থ হওয়ার চিন্তা শুরু করে।

বিএনপির শাহবাগতোষণ নীতির বিপরীত চিত্র দেখতে পাওয়া যায় মাহমুদুর রহমান সম্পাদিত আমার দেশে। মিসেস জিয়া যখন তাঁর সর্বশেষ ক্যাবিনেটের সদস্যদের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও চুপ করে আছেন, মির্জা ফখরুল যখন শাহবাগকে পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন, সেখানে মাহমুদুর রহমান স্রোতের বিরুদ্ধে একা লড়ে যান। ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে সন্ত্রাসীদের আঘাতে ফিরিঙ্গি তাবেদার রাজীব হায়দার খুন হওয়ার পর শাহবাগের নেপথ্য শক্তির লুকানো ইতিহাস সামনে আসতে থাকে। প্রথমে দৈনিক ইনকিলাব রেখেঢেকে এব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ করলেও মাহমুদুর রহমানের আমার দেশ একাই এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে রাজীব হায়দার গংদের কীর্তি ফাঁস করে দেন।
ব্লগসহ অনলাইনে বাংলাদেশ ও বাঙ্গালীর যাপিত জীবন, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, এবং সংস্কৃতি নিয়ে ফিরিঙ্গি শাহবাগীদের অশ্লীল প্রচারণার কথা মাহমুদুর রহমানের উছিলায় রাষ্ট্র হয়ে গেলে আলেম-ওলামারা মাঠে নামেন। ১৯ তারিখ বিএনপি অনলাইনে বাঙ্গালীবিদ্বেষের নিন্দা জানায়। ২০ তারিখে বাঙ্গালীবিদ্বেষীদের ফাঁসির দাবী জানান চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং ইসলামী ঐক্যোজোট। চরমোনাই পীর শাহবাগী রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবী জানান। অন্যদিকে ইসলামী ঐক্যজোট বলে যে প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা শাহবাগকে সৃষ্টি করেছে।

২২শে ফেব্রুয়ারী শনিবার জাতির অভিভাবক ধর্মীয় নেতাদের নেতৃত্বে আপামর জনতা বায়তুল মোকাররম থেকে বাঙ্গালীবিদ্বেষের প্রতিবাদ জানাতে সমবেত হলে কঠোর রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগে তা দমন করা হয়। সারাদেশে কমপক্ষে ৪ জন নিহত হন। সাংবাদিকদেরও রেহাই দেয় নাই পুলিশ; আহত হন ১৭ সাংবাদিক।

যদিও বিএনপি এ পর্যায়ে শাহবাগের ব্যাপারে অনেকটাই নিরাশ। তবু সুস্পষ্ট নৈতিক অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয় বিএনপি। বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া কিছুদিন আগে চিকিতসার প্রয়োজনে সিঙ্গাপুর সফরে রওয়ানা হয়েছেন। সর্বোচ্চ নেত্রীর অবর্তমানে মির্জা ফখরুল ২৩শে ফেব্রুয়ারি বলেন যে বিএনপি ধর্মের নামে হানাহানি সমর্থন করে না। রাষ্ট্রীয় নীপিড়নে বাঙ্গালী সভ্যতা-জাতি যখন হুমকির মুখে, তখন বিএনপি মজলুমদের পক্ষ নেওয়ার বদলে কল্পিত ধর্মীয় সংঘাতের বিরোধিতাতে ব্যস্ত ছিল।

২৪ তারিখ নাগাদ বিএনপির বোধদয় হয় যে জাতির সাথে বেঈমানী করে শহুরে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত ফ্যাসিস্ট এলিটদের মনোরঞ্জনে বিএনপি আম-ছালা দুইটাই হারাবে। বিএনপি নেতারা দেশের অভিভাবক ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের দাবীর সাথে একমত এরকম গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।

২৬ তারিখে বিএনপি নেতা ফখরুল শাহবাগীদের ফাঁসিবাদের রাজনীতি ছেড়ে আসার অনুরোধ জানান। সরকারকে বলেন বাঙ্গালীবিদ্বেষ উসকে না দিতে। বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ বলেন দেশে ইসলাম বনাম অনৈসলাম বিভাজন করে বাঙ্গালী জাতিকে শাহবাগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঠেলে দিচ্ছে সরকার।

বলা যেতে পারে ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০১৩ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্ববহ দিন। এদিন ট্রাইবুনাল বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাওলানাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আদেশ দেয়। ক্ষোভে ফেটে পড়ে সারাদেশ। দুইদিনের মধ্যে রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে এক অসম লড়াইয়ে দুই শতাধিক মানুষ শহীদ হন। পুলিশ সদস্য নিহত হন প্রায় দশজন। এই মাওলানার ফাঁসির রায়ই বিএনপির সাথে শাহবাগের সব সম্পর্ক শেষ করে দেয়। মনোরঞ্জনবাদী পপুলিস্ট রাজনীতি ছেড়ে বিএনপি নীতি ও আদর্শের রাজনীতিতে হাঁটতে শুরু করে। অবশ্য সে হাঁটাও যথেষ্ট ছিল না।

মাওলানা সাঈদীর রায়ের ব্যাপারে বিএনপি ছিল নিশ্চুপ। যেখানে কোর্ট পর্যন্ত মাওলানার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করছে, দেশের মানুষ জীবন দিয়ে মাওলানার জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিচ্ছে, সেখানে মাওলানার জোটসঙ্গী বিএনপি নেতারা এই হত্যাদেশের ব্যাপারে একটা শব্দও বলেন নাই।

তবে বিএনপি রাষ্ট্রশক্তির নির্যাতন নিয়ে বিএনপি মুখ খুলে। এবং এই মুখ খোলাই ইতি ঘটায় বিএনপি-শাহবাগ প্রণয় পর্বের। শুরু হয় হেফাজত-বিএনপি সখ্যতাপর্ব।
দেশের মানুষের ওপর চালানো নির্বিচারে গুলিকে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির গনহত্যা আখ্যা দেন। সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে বিএনপি ও জোটনেত্রী বেগম জিয়াও মির্জা সাহেবের কথা ধরে চলমান গনহত্যার প্রতিবাদ জানান।

পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ঘটনাবহুল এবং গুরুত্বপূর্ণ মাস ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অবস্থান ছিল হতাশাজনক। প্রথমে বিএনপি জোটসঙ্গী ও বিএনপির রাজপথের প্রধান চালিকাশক্তি জামায়াতকে কোরবানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যে ট্রাইবুনালে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীম এবং সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির সিটিং সাংসদ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে রাজনৈতিক জিঘাংসাবশত জুলুম করা হচ্ছে, সেই ট্রাইব্যুনালের সুস্পষ্ট বিরোধিতা বিএনপি কখনো করতে পারে নাই। বিএনপি যে শুধু জামায়াতের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাই না, বিএনপি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে নিজ দলের নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুক, আব্দুল আলীমদের সাথেও। এরা প্রত্যেকে শাহবাগের জুলুমের শিকার হয়েছে।

বিএনপির প্রত্যাশা ছিল শহুরে মধ্যবিত্ত ফ্যাসিস্ট এলিটদের মনোরঞ্জন করে তাদের সাথে নিয়ে সরকারবিরোধিতা করা। যদি শাহবাগ আওয়ামী লীগের বদলে বিএনপিকে জায়গা করে দিত তবে বিএনপি খুব সম্ভবত সদলবলে শাহবাগে যেয়ে সরকারপতনের আন্দোলন করত। এতে মোল্লা-সাঈদীদের হত্যা করতেও ওদের খুব একটা দ্বিধা সম্ভবত ছিল না। বাংলাদেশের জনগনকে বিএনপি টেকেন ফর গ্র্যান্টেড হিসাবে নিয়েছিল।

বিএনপির ধারণা ছিল বিএনপি যতই শাহবাগের সাথে ফ্লার্ট করুক না কেন, দেশপ্রেমিক জনগন শেষ পর্যন্ত বিএনপিকেই সমর্থন করবে। সম্ভবত বিএনপির এই ধারণা খুব একটা ভুল ছিল না।

কিন্তু বিএনপির যেই ধারণা ভুল ছিল সেটা হচ্ছে বিএনপি ভেবেছিল শাহবাগ তোষণের মাধ্যমে শহুরে মধ্যবিত্ত ফ্যাসিস্ট এলিটদের মন পাওয়া যাবে। বাস্তবে শাহবাগ কখনোই বিএনপিকে জায়গা করে দেয় নাই। অবশেষে বিএনপিকে দেশের অভিভাভক ধর্মীয় নেতাদেরই দ্বারস্থ হতে হয়। তবে এখানেও বিএনপি পুরোপুরি শাহবাগ পরিত্যাগ করতে চায় নাই। জাতীয় নেতাদের সঙ্গে নিলেও জামায়াত ও ট্রাইব্যুনাল প্রশ্নে বিএনপি নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখার মত হঠকারি ও অনৈতিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

বিএনপির কর্মকাণ্ড এবং মাহমুদুর রহমানের আমার দেশের কর্মকাণ্ডের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য ছিল। বিএনপি শাহবাগরঞ্জনবাদী অযুত প্রচেষ্টার মধ্যেও মাহমুদুর রহমান একদম শুরু থেকে স্পষ্টভাষায় ফিরিঙ্গি ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরোধিতায় সোচ্চার ছিলেন।

@muhammad Ishrak

পঠিত : ২৮৩ বার

মন্তব্য: ০