Alapon

মহররম: কারবালা থেকে অনুপ্রেরণার মাস


মহররম। হিজরী নববর্ষের ১৪৪৪তম সাল। এই মাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুসলিমদের নানান স্মৃতিবিজড়িত কথা, ইতিহাস। এই মাসের কথা বললে দু'জন ব্যক্তির কথা খুব মনে পড়ে। মসজিদে, মাদরাসায় যাদেরকে নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। সেই দু'জন কোনো সাধারণ ব্যক্তিত্বের মানুষ নয়। আল্লাহ তা'য়ালার প্রিয় হাবিবের নাতি। জান্নাতের যুবকদের সর্দার।

৬১ হিজরি। কারবালার প্রান্তরে হযরত হোসাইন রা. কে শাহাদতের পেয়ালা পান করানো হয়। একটু খানি পানির জন্য নিজের সন্তান কাসেম মৃত্যু বরণ করেন। তবুও ইয়াজীদ বাহিনী তার প্রতি একটু নরম হয়নি। কাসেমকে পানি দিতে অস্বীকার করে। শাহাদত বরণ করে হোসাইন রা. সহ আরো অনেকেই।

প্রত্যেকটি শাহাদতের পেছনে কোনো না কোনো কারণ রয়েছে। উদ্দেশ্য রয়েছে। ইসলামের জন্য যারা যুগে যুগে জীবন দিয়ে এসেছে তাদের প্রত্যেকেরই এমন একটি উদ্দেশ্য ছিল। হয় ইসলামকে এই জমিনে প্রতিষ্ঠা করবো নতুবা আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবো। তবুও ইসলামী আন্দোলন চলতেই থাকবে।

ইয়াজীদের বাইয়াত গ্রহণ না করায় হোসাইন রা. এর সঙ্গে ইয়াজীদের দু'বার সংঘর্ষ হয়। প্রথমে হোসাইন রা. এর সৈন্যরা জিতে যায়। এজন্য হোসাইন রা. এর উপর ক্ষিপ্র হয়ে, উনাকে বশে আনতে পানি সংগ্রহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। একসময় যুদ্ধরত অবস্থায় হোসাইন রা. শহীদ হয়ে যান।

যাইহোক, হোসাইন রা. এর শাহাদতের ঘটনার সারসংক্ষেপ মোটামোটি আমাদের জানা। এজন্য অনেক মুসলমান বুঝে অথবা না বুঝে মহররমের ১০ তারিখে 'হায় হোসেন! হায় হোসেন' বলে লাফালাফি করেন। শাহাদতের ঘটনাকে আমরা বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। উনার শাহাদতের পেছনের কারণটা খতিয়ে দেখার মতো সময় আমাদের হয়না। এতো বছর পর্যন্ত উনাকে এই সমাজ স্মরণে রেখেছে এটি নিঃসন্দেহে পজেটিভ দিক। তবে উনার শাহাদতের উদ্দেশ্যটা না দেখা এর থেকেও বেশি নেগেটিভ দিক।

মহররম মাসটা আমাদের কাছে এজন্য গুরুত্বপূর্ণ যে এই মাসে হযরত হোসাইন রা. শাহাদত বরণ করেছেন। আমরা উনার থেকে শিক্ষা নিবো। উনার শাহাদতের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হবো। তবুও বাতিল শাসকের নিকট মাথা নত করবো না। এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমাদের মাথায় এখন অন্যকিছু ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইমাম হোসাইন রা. এর শাহাদতের উদ্দেশ্য যদি আমরা না জানি, উনি যেকারণে শাহাদত বরণ করেছেন সেই কারণটা যদি না জানি অথবা জেনেও সেই পথে না চলি তাহলে মহররম মাসে উনার শাহাদতের কারণে একদিন বিলাপ করার কোনো প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি না। উনাকে স্মরণ করার সবচেয়ে বড় পন্থা হচ্ছে উনার কর্মপদ্ধতির আলোকে নিজের জীবনকে পরিচালনা করা। বাতিল শক্তির সাথে আপোষ না করা। আমরা এসব না করে মহররমের দশ তারিখ নতুন কিছু তৈরি করেছি।

অতীত ঘাটলে দেখা যায়, হযরত আবু বকর রা. থেকে হযরত মুয়াবিয়া রা. পর্যন্ত খেলাফত সুন্দর ভাবে পরিচালিত হচ্ছিল। কিন্তু হযরত মুয়াবিয়া রা. এর শাহাদতের পর ইয়াজিদ রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে চায়। রাজতন্ত্রে পরিণত করতে চায়। খেলাফতের নিয়ম না মেনে সে জোর পূর্বক রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে বসে যায়। এতে অধিকাংশ জনগণ তার সমর্থনও করে। (এখান থেকে আমাদের একটি বড় শিক্ষা হলো, কোনো কিছু যাচাই বাচাই না করে অধিকাংশ লোক যেদিকে সমর্থন করবে সেটাকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ নয়। সেটি ভুলও হতে পারে।)

এরমাধ্যমে রাষ্ট্রে বড়ধরণের পরিবর্তন দেখা দিল। ইসলামি রাষ্ট্র নবী করিম সা. যেকারণে প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন তার পরিবর্তন থেকে শুরু করে মানুষের মধ্যে ইসলামের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হতে শুরু করলো। ইসলামী শাসণতন্ত্রের নীতিগুলোকে না মেনেই শাসক নির্বাচন করা হয়। এতে রাষ্ট্রের আমুল পরিবর্তন দেখা দিল। পূর্বের সেই সোনালী সমাজ আর গড়ে উঠলো না। হযরত হোসাইন রা. এর শাহাদতের উদ্দেশ্যকে আমরা প্রাধান্য না দেওয়ায়, উনার উদ্দেশ্যকে নিজেদের উদ্দেশ্যে রূপান্তর না করায় ইমানের একটি বড় অংশে ঘাটতি রয়ে গেছে। এখনো আমাদের সমাজে এই নীতিহীন ভাবেই শাসক নির্বাচন হচ্ছে। সমাজ থেকে নৈতিকতার জায়গাটুকু আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে।

~আব্দুল্লাহ আল কাফি জোহা

পঠিত : ৩৮৭ বার

মন্তব্য: ০