Alapon

আলিমদের ইংরেজি শিক্ষার প্রতি বিরূপ মনোভাব লালনের মনোসতত্ত্ব !



আমাদের দেশের ভার্সিটিগুলোতে সাধারণত ইংরেজি ভাষায় পাঠদান হয়। বিশেষ করে সায়েন্স ও বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে। এটা শুধু আমাদের দেশে না, বিশ্বের যেসব দেশে মাতৃভাষার বাইরে দ্বিতীয় কোনো ভাষায় পাঠদান করা হয়, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ দেশে ইংরেজি ভাষায়। ইংরেজি এখন আন্তর্জাতিক ভাষা।

কেউ যেকোনো ভার্সনে পড়াশোনা করুক না কেনো, ভালো ইংরেজি বলতে পারাকে যোগ্যতা হিশেবে দেখা হয়।

অন্যদিকে, যারা কলেজ-ভার্সিটিতে পড়ালেখা করে, তাদেরকে বাকিরা অভিযুক্ত করে, পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে প্রভাবিত, পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থার ব্রেইন ওয়াশড!

মজার ব্যাপার হলো, ১২০০ শতাব্দীতে ব্যাপারটি ছিলো একেবারে উল্টো। তখন বিশ্বের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার ভাষা ছিলো আরবি। মুসলিম বিশ্বে যেমন আরবিতে পড়ানো হতো, বিজ্ঞানের বইগুলো আরবিতে পাওয়া যেতো, তেমনি তখন ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবিতে পড়ানো হতো। কারণ, তারা যা পড়াতো, তা ল্যাটিন ভাষায় এতোটা এভেইলেবল ছিলো না।

রবার্ট গ্রসেটেস্ট অক্সফোর্ড ভার্সিটিতে আরবিতে বিজ্ঞান পড়ানো শুরু করেন। তার ছাত্র ছিলেন রজার বেকন। সে যুগে যারা উচ্চশিক্ষা লাভ করতে চাইতো, তারা কোনো না কোনোভাবে আরবি ভাষার ওপর নির্ভর করতো।

তখনকার তরুণরা প্রয়োজন প্লাস স্ট্যাটাস, দুটোর জন্যই আরবি শিখতো; এখন যেমন ইংরেজি শিখে। এটা দেখে রক্ষণশীল খ্রিস্টানরা বিরক্ত ছিলো। উপমহাদেশের আলেমদের কেউ কেউ ইংরেজি শেখাকে 'হারাম' বলেছিলেন, এই মনস্তত্ত্ব অনেকেই বুঝতে পারে না। অথচ সেই সময় মুসলিমদের প্রভাব ঠেকাতে খ্রিস্টানরা যুবকদের জন্য আরবি শেখা 'হারাম' ঘোষণা করেছিলো। এই ইতিহাস অনেকেই জানে না।

ল্যাটিন ভাষার বিখ্যাত লেখক আল গারো আফসোস করে বলেন, "অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে যে, আমাদের তরুণরা নিজেদের সংস্কৃতি ছেড়ে মুসলিমদের পেছনে ছুটছে। তাদের মন-মানসিকতায় আরবি সঙ্গীত যাদুকরী প্রভাব বিস্তার করেছে। এই কারণে তারা ল্যাটিন ভাষাকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে এবং অন্যান্য ভাষা ছেড়ে প্রভাবশালী (মুসলিম) লোকদের ভাষা শিখে।"

কথাটি অনেকটা পরিচিত মনে হচ্ছে না? এখনকার সময়ে আলেমগণ আফসোস করে বলেন যুবকরা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির পেছনে ছুটছে, হলিউডের প্রভাব তাদের ওপর পড়েছে, তারা আরবি ভাষাকে অবজ্ঞা করে...।

পঠিত : ৭৫৫ বার

মন্তব্য: ০