Alapon

বিহারের শেখ আমিনুদ্দিন ভাই



ঢাকায় জামায়াতের কাজ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না এই খবর পৌঁছে গেছে বিহারের ছোট নাগপুরের রুকন শেখ আমিনুদ্দিনের কাছে। ১৯৪৭ সালে বিহার থেকে হিজরত করে পশ্চিম পাকিস্তানে গেছেন। কিন্তু তার মন পড়ে আছে বাংলায়। কারণ ঢাকায় জামায়াতের কাজ করার লোক তৈরি হচ্ছে না।

শেখ আমিনুদ্দিন দাওয়াতী কাজ করার জন্য ঢাকায় চলে এলেন। তিনি দাওয়াতী কাজ করতে পছন্দ করেন। ঢাকার অলি গলিতে হাঁটেন আর পুরান ঢাকার মানুষের সাথে উর্দুতে কথা বলেন, পরিচিত হন। এভাবে নবাবপুরে তিনি বেশ পরিচিতি লাভ করেন।

তিনি খেয়াল করেছেন, ঢাকার মানুষ পান খেয়ে গল্প করতে পছন্দ করেন। তিনি পান দোকান দিয়ে বসলেন মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য। একটি দুটি নয় ঢাকায় নবাবপুর, মোহাম্মদ পুর, বংশাল ও মিরপুরে পানের দোকান দিয়ে মানুষকে পান খাওয়াতেন। ঢাকার মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করে তিনি ইকামাতে দ্বীনের দাওয়াত দিতেন।

ঢাকায় যখন মোটামুটি সংগঠন কায়েম হয়ে গেল, অনেকজন দায়ি তৈরি হয়ে গেল তখন একদিন তিনি আমীরের অনুমতি নিয়ে চলে গেলেন বগুড়ায়। শুরু করলেন সেখানে দাওয়াত দেওয়া। বগুড়ায়ও তিনি পান দোকান দিয়ে সংগঠনের দাওয়াত দিতে থাকলেন!

বাংলায় জামায়াতে ইসলামীর পথচলার একেবারে শুরুতে যারা দাওয়াতী কাজে জীবন উতসর্গ করেছেন তাদের মধ্যে একজন বিহারের শেখ আমিনুদ্দিন ভাই। দ্বীন কায়েমকে তিনি সত্যিকারভাবেই জীবনের লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছেন।

কত মহামানুষের অপরিসীম ত্যাগের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ইসলামী আন্দোলন! এই তালিকা শেষ হবার নয়। শেখ আমিনুদ্দিন ভাইয়ের গল্প যেদিন প্রথম শুনছিলাম, তীব্র অপরাধবোধ কাজ করছিল।

এই অঞ্চলের বাঙালিদের ইসলামী আন্দোলন বুঝাতে আমিনুদ্দিন ভাইয়ের যত পেরেশানী, এই অঞ্চলের মানুষের প্রতি তাঁর যে ভালোবাসা তার এক ছটাক যদি আমাদের থাকতো! হায়!

আমরা যদি সত্যিই এই অঞ্চলের মানুষকে ভালোবেসে তাদেরকে জান্নাতের দাওয়াত দেওয়ার পেরেশানী নিয়ে কাজ করতাম তাহলে তো আমাদের চোখে ঘুম ধরার কথা ছিল না। কাজের নেশায় পাগল হয়ে যেতাম। হায়!

আজ ২৬ আগস্ট জামায়াতের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকল কাজপাগল মুজাহিদদের প্রতি সম্মান জানাচ্ছি। যাদের রক্তঘামের ওপর দাঁড়িয়ে আছে সংগঠন, যাদের কাজের বদৌলতে আমরা ইকামাতে দ্বীনের দাওয়াত পেয়েছি, তাঁদের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে সম্মান ভিক্ষা চাইছি।

পঠিত : ৯১৮ বার

মন্তব্য: ০