Alapon

শাসককে নসিহত করার পদ্ধতি...



কেউ যদি কোনো শাসককে নসিহত করতে চায়, তবে সে যেন খুবই নম্রতার সাথে করে। তার মুখের সামনে যেন এমন কিছু না বলে যা তাকে জালেম সাব্যস্ত করবে। এর কারণ [থিওলজিক্যাল নয়, প্র্যাকটিকাল]।

অধিকাংশ শাসকই হয়ে থাকে কঠোর, কঠিন ও উদ্ধত স্বভাবের। তাই তাদের যদি কোনো তিরস্কার করা হয়, সেটাকে তারা অপমান হিসেবে নেয়। সহ্য করতে পারে না।

নসিহতের সময়ে শাসকের কিছু ভালো কাজ, প্রজাদের প্রতিপালনে কিছু সঠিক সিদ্ধান্তের কথাও উল্লেখ করা উচিত। সাথে সাথে পূর্ব যুগের যে সকল ন্যায়পরায়ণ শাসক, সুলতান বা খলিফা ছিলেন, তাদেরও কিছু ঘটনা আলোচনা করা যেতে পারে।

মূল বিষয় হলো, এ ধরনের কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তিকে নসিহত করার আগে তার আগের অবস্থার দিকে খেয়াল করে নেয়া। নসিহতকারী যদি দেখে, শাসকের অতীত কার্যাবলি ভালো, তাহলে সাহস করে কিছু কথা নিশ্চয়ই সে বলতে পারে। যেমন মানসুর ইবনে আম্মার এবং অন্যরা খলিফা হারুনুর রশিদকে নসিহত করতেন। সেই নসিহত শুনে খলিফা কান্নাও করতেন। এভাবে যদি কোনো ব্যক্তির নিয়ত শুদ্ধ থাকে, তাহলে শাসককে অধিক নসিহত ও উপদেশ প্রদান করতে পারে।

অন্যদিকে যদি দেখা যায় শাসকটি আসলে জালেম, কল্যাণের কোনো ইচ্ছাই তার নেই আর ভীষণ রকম মূর্খ?

তাহলে প্রথমে চেষ্টা করতে হবে যেন কোনোভাবে এমন শাসকের সাথে যেন সাক্ষাৎই না ঘটে। কোনো নসিহতই যেন করতে না হয়। কারণ তাকে নসিহত করতে গেলে নিজের জীবনই ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। অন্যদিকে প্রশংসা করলে সেটা তোষামোদি হবে। এরপরও যদি কোনো ঘটনাচক্রে তাকে কিছু বলতে বাধ্য হতেই হয় তবে তা ইঙ্গিতের মাধ্যমে বোঝাবে। স্পষ্ট করে কিছুই বলার দরকার নেই না।

হ্যাঁ, তবে অতীত শাসকদের মধ্যেও এমন কিছু ব্যক্তি এসেছিলেন যারা নসিহত শোনার ক্ষেত্রে নম্রতার পরিচয় দিয়েছেন। এমনকি নসিহতকারীর রূঢ় বাক্যও সহ্য করেছেন। এমনকি খলিফা মানসুরকে মুখের সামনে জালেম বলা হলেও তিনি ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে তা শ্রবণ করেছেন।

তবে সেই কাল বদলে গেছে। এখন আর সেই সময় নেই। বর্তমানে অধিকাংশ শাসক হলো খারাপ প্রকৃতির। জেদি, লোভী ও নিষ্ঠুর। আর বেশীরভাগ শিক্ষিত ও পণ্ডিত ব্যক্তিরা তাদেরকে তোষামোদ করে চলে। আর যে ব্যক্তি তোষামোদ করে না, তার বিপদের কোনো সীমা থাকে না। চুপ করে যেতে হয়।

আগে শাসনের বিষয়ে জ্ঞাত, প্রাজ্ঞ ও আমানতদার ব্যক্তিরাই দায়িত্ব নিতেন। যারা ছিলেন এ বিষয়ে অভিজ্ঞ। কিন্তু আজকের অবস্থা গেছে পাল্টে। আজকের শাসকদের প্রায় সকলেই সমান মূর্খ, দুনিয়ার প্রতি লোভী। স্বজনপ্রীতির দোষে দুষ্ট। এ কারণে প্রশাসনের দায়িত্বও অর্পিত হয় অযোগ্যদের হাতে। পারতপক্ষে এ ধরনের লোকদের থেকে সতর্ক ও দূরে থাকাই উত্তম ।

হ্যাঁ, এরপরও যদি কেউ তাদেরকে কিছু বলার ক্ষেত্রে বাধ্য হয়, তবে সে যেন তার কথায় খুবই সতর্ক থাকে। এমন কথা যেন না বলে যা তাদেরকে রাগিয়ে দেবে। আবার মিথ্যা তোষামোদও করবে না।

আর তারা যদি কখনো নিজ থেকে আগ্রহ প্রকাশ করে বলে--আমাকে কিছু নসিহত করুন--তাহলে এ যুগে তাদের এই ধরনের কথায় ধোঁকায় পড়া যাবে না। এটা তাদের নিছক একটি কথার কথা। এটাকে সত্য মনে করে নসিহতকারী যদি এমন কথা বলে ফেলে যা তাদের মত ও উদ্দেশ্যের বিরোধী, তাহলে তারা এর প্রতিশোধ নিতে দেরি করবে না।

আরেকটা বিষয়। যে ব্যক্তি শাসকের সাথে কথা বলে, সে যেন প্রশাসনের অন্য ব্যক্তিদের সম্পর্কে তার নিকট কিছু না বলে। এতে অন্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে তার প্রাণনাশের চেষ্টা করতে পারে। কারণ সকলেই ভাববে, তার কথা বুঝি শাসকের নিকট লাগিয়ে দিয়েছে।

মোটকথা, এই যুগে শাসকদের থেকে দূরে থাকাই সবচেয়ে কল্যাণকর। তাদের কোনো ওয়াজ-নসিহত না করাই সবচেয়ে নিরাপদ। কিন্তু এরপরও যদি কেউ কিছু বলতে বাধ্য হয়, তবে খুবই সতর্কতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে বলবে। বরং তাদের প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত সাধারণ মানুষদের নসিহত করা। যাতে তাদের ঈমান ও আমল সঠিক হয়। যেহেতু তাদের ক্ষেত্রে এ ধরণের কোনো সমস্যা নেই।

~ ইমাম ইবনুল জাওযি, সাইদুল খাতির
==============
[প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে জালিম শাসকের স্যামনে সত্য বলা সর্বোত্তম জih@দ হাদিসে ব্যাপারে কি হবে?

উত্তর হলো, এটা আসলে সেই লেভেলের তাকওয়াবানদের জন্য প্রযোজ্য। যেমন ইমাম আবু হানিফা, মালেক, আহমদ বিন হাম্বল, ইবনে তাইমিয়া ইত্যাদি। কেউ যদি মনে করে নিজ ও পরিবারের উপর বিপদের খড়গ নেমে আসলেও ধৈর্য ধারণ করতে পারবে এবং জালেমের স্যামনে সত্য প্রকাশ করলে মাসলাহাত বিবেচনায় ক্ষতির চাইতে উপকার বেশী তবে সে যদি এই কাজ করে তবে তার জন্য নিয়ত অনুসারে সেটা সর্বোত্তম জih@দ হবেই। আল্লাহ ভালো জানেন।]

পঠিত : ৯০৩ বার

মন্তব্য: ০