Alapon

গুমের রাজ্যে প্রিয় স্বদেশ



আজ গুম প্রতিরোধ দিবস। বাংলাদেশে নাগরিকদের গুম করে ফেলার এক নিষ্ঠুর সংস্কৃতি চালু হয়েছে গত ১৩ বছরে। গুমের এই বিভীষিকা বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে। গত ১৩ বছরে ৬৭৯ জন মানুষ বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গিয়েছে। এদের বেশিরভাগেরই কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট থেকে জানা যায় ২০০৯ সালে ৩ জন, ২০১০ সালে ১৮ জন, ২০১১ সালে ৩১ জন, ২০১২ সালে ২৬ জন, ২০১৩ সালে ৫৪ জন, ২০১৪ সালে ৮৮ জন, ২০১৫ সালে ৬৬ জন, ২০১৬ সালে ৯৭ জন, ২০১৭ সালে ৮৬ জন, ২০১৮ সালে ১২২ জন, ২০১৯ সালে ৩৪ জন, ২০২০ সালে ৩১ জন এবং ২০২১ সালে ২৩ জন মানুষ গুম হয়েছেন। মোট ১৩ বছরে ৬৭৯ জন গুম হয়েছেন।

এর মধ্যে র‍্যাব ১৫২ জনকে, পুলিশ, ৫১ জনকে, ডিবি পুলিশ ১৫৫ জনকে, র‍্যাব-ডিবি পুলিশ যৌথভাবে ১২ জনকে, অন্যান্য সংস্থা ৯৮ জনকে এবং বাকীদের বিষয়টা নির্দিষ্ট করা যায়নি।

গুমের পর নির্যাতন ভোগ করে অল্প কয়েকজন যারা ফিরে এসেছেন তারা চুপ হয়ে গেছেন। কারা গুম করেছিল, কেন গুম করা হয়েছিল, গুম করে কোথায় তাদের রাখা হয়েছিল সে ব্যাপারে ভয়ে তারা টুঁ শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করতে পারছেন না। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মানবতা বিরোধী অপরাধে দণ্ডিত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী।

ইসলামী বক্তা আবু ত্ব হা মোহাম্মদ আদনান তাঁর তিন সঙ্গীসহ নিখোঁজ হয়েছিলেন গত ১০ জুন ২০২১। প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে তার সোশ্যাল মিডিয়া টিম জানতে পারে তার মোবাইল ডিজিএফআই-এর কার্যালয়ে আছে। এই খবর মিডিয়ার আসার পরদিন ১৮ জুন তাদের পাওয়া যায় নিজ নিজ বাড়িতে। নিখোঁজের পর ফিরে আসলেও নিজ থেকে চার জনের কেউই কী ঘটেছিল এখন পর্যন্ত সে সম্পর্কে কিছুই বলেননি।

একই অবস্থা সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের ক্ষেত্রেও। ৫৩ দিন নিখোঁজ থাকার পর গত বছরের ৩ মে যশোরের বেনাপোলে ভারত সীমান্তের কাছে পাওয়া যায় শফিকুলকে। উদ্ধারের এক বছর পর গত ৩ মে এক ওয়েবিনারে সাংবাদিক শফিকুল বলেন, আমার এখনও এটি বলার সাহস নেই যে আমাকে কি জোর করে গুম করা হয়েছিল, নাকি আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে আমি আক্রমণের শিকার হয়েছিলাম। কিন্তু, কখনোই ভাবিনি যে আমাকে গুম করা হবে। কীভাবে আমি ও আমার পরিবার সেই নিষ্ঠুর সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছি— তা বলা সম্ভব না। তিনি বলেন, কখনো পরিচিতজনদের মাঝে ফিরতে পারবো, তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারব এটা ভাবিনি।

অপহরণ, গুম বা নিখোঁজ হন চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার জানান, গত বছর নভেম্বরের ঘটনা এটা। তিনি ওই ওয়েবিনার বলেন, কীভাবে তাকে সারাক্ষণ প্রাণভয়ে থাকতে হতো এবং এক পর্যায়ে তিনি তার চট্টগ্রামের বাসা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হন। ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়–য়া বলেছিলেন, এ মুহূর্তে সরোয়ারের জন্য সাংবাদিকতা করার চেয়ে বেঁচে থাকাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুয়ায়ী গত ১৩ বছরে (২০২০ সালের আগষ্ট পর্যন্ত) ৬০৪ জনের মধ্যে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে৷ ৮৯ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং ৫৭ জন কোনো না কোনোভাবে ফিরে এসেছেন৷ অন্যরা কোথায় আছেন, কেমন আছেন তার কোনো তথ্য নাই পরিবারের কাছে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও কোনো তথ্য দিতে পারছে না৷

সাম্প্রতিক আবু ত্ব–হার মতো রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ বা অপহরণের পর গত ১৩ বছরে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন অনেকেই। এসব ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে কিছু অভিন্ন ছক বা মিল লক্ষ করা যায়। অপহৃত ব্যক্তিদের একটি বড় অংশকে অপহরণের পর উদ্ভ্রান্ত’ অবস্থায় কোনো সড়কে পাওয়া যায়। কিন্তু ফিরে আসার পর অনেকে কোনো কথা মনে করতে পারেন না। বাকিরা ফিরে এসে
মুখে কুলুপ আঁটেন। আবার অনেকে বাসায় ফিরে আসেন। তাঁরাও পরে আর কোনো কথা বলেন না।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্রের হিসাবে দেশে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজের সংখ্যা আরো বেশি। গুম হওয়া ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনের অভিযোগ, এর সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই জড়িত। এর মধ্যে টাকার জন্যও মানুষ গুম ও খুনের শিকার হচ্ছে।

নিখোঁজ হওয়া ৫২৪ জনের নাম অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস কমিশনের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের কেউ বাসা থেকে বা অফিস থেকে বেরিয়েছিলেন। কেউ বাসাতেই স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মায়ের সাথে ছিলেন। কখনো সাদা পোশাকে, কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোক পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাদের তুলে নিয়ে যায়।

এখানে গুমের যে পরিসংখ্যান উঠে এসেছে তা হলো রাষ্ট্র কর্তৃক অপহরণের তালিকা। যাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন ফিরে এসেছেন বা তাদের পাওয়া গিয়েছে। কিছু মানুষের লাশ পাওয়া গিয়েছে। আর বাকীদের কোন খবর নেই। এদের বেশিরভাগই রাজনীতির সাথে জড়িত।

পুলিশ সদরদপ্তরের রিপোর্ট অনুসারে গত ১২ বছরে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৮২৫৩টি। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ৮০০ জন, ২০১০ সালে ৮৮১ জন। ২০১১, ২০১২ এবং ২০১৩ সালে ৮৭০ জন করে অপহৃত হয়েছে। ২০১৪ সালে ৯২২ জন, ২০১৫ সালে ৮০৬ জন, ২০১৬ সালে ৬৩৯ জন, ২০১৭ সালে ৫০৯ জন, ২০১৮ সালে ৪৪৪, ২০১৯ সালে ৪২২ জন এবং ২০২০ সালে ২২০ জন অপহরণের শিকার হয়েছে।

বাংলাদেশে টাকার জন্য অপহৃত হওয়া বা গুম হওয়া নৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রায় প্রতিদিনই অনেক মানুষ হারিয়ে যায়। কিছুদিন গুম করে রাখার পর তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। এই কাজটা আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যেমন করছে তেমনি করছে থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ। এরকম একটি অপহরণ চক্র নিয়ে প্রতিবেদন করেছে প্রথম আলো। গুম ও ক্রসফায়ার নিয়ে করা জানা যায় বাংলাদেশের এমন কোন থানা অবশিষ্ট নেই, যে থানার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ নেই।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি কাউকে গ্রেফতার করে তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে উপস্থাপন করার কথা। অথচ গত দশ বছরে যেসব রাজনৈতিক ব্যাক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের বেশিরভাগকেই তিন-চারদিন গুম করে রেখে তারপর আদালতে হাজির করা হয়েছে। এই সংখ্যা লক্ষাধিক। আর যেসব ব্যক্তি গুম হয়েছেন বা ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন তাদের কথাতো বাদই।

সরকারের পক্ষ থেকে মানুষ গুম হওয়ার কথা শুরু থেকেই অস্বীকার করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে এসেছে গুম বলে কিছু নেই। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজা সঠিকভাবেই বলেছেন, অব্যাহতভাবে ঘটে চলা গুমের ঘটনা এই বার্তাই দিচ্ছে যে, দেশে আইনের শাসন বা সুশাসন বলে কিছু নেই। যে কেউ যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো জায়গা থেকে গুম হয়ে যেতে পারেন। কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি!

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০১৮ সালের ১২ জুলাই আয়োজিত একটি গোলটেবিল আলোচনায় অভিযোগ করেছেন, ২০০৯ সালের পর বিভিন্ন সময় বিএনপির নিখোঁজ হওয়া ৫০০ নেতা-কর্মীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া ১০ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য অনুষ্ঠানে বিএনপি বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাদের হারিয়ে যাওয়া ২৯ নেতা কর্মীর তালিকা প্রকাশ করেছে।

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ গুম হওয়ার বেশ কিছু দিন পর তাকে ভারতের শিলংয়ে উদ্ধার করা হয়। কে বা কারা তাকে সেখানে রেখে আসে। তিনি প্রায় মরণাপন্ন অবস্থায় ছিলেন। বর্তমানে ভারতে তিনি অবৈধ অনুপ্রবেশের একটি মামলা মোকাবেলা করছেন। অথচ প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখেছেন বাংলাদেশের র‍্যাব তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যেতে। জামায়াত নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার একজন সাক্ষীর ব্যাপারেও এমন ঘটনা ঘটেছে।

সুখরঞ্জন বালি নামে এক সাক্ষীকে ডিবি পুলিশ একেবারে প্রকাশ্যে একটি সাদা গাড়িতে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। এর বহুদিন পর তাকে পাওয়া যায় ভারতের দমদম কারাগারে। ভারতীয় আদালত তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ১১০ দিনের কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষের উপরের নির্দেশে তার শাস্তির মেয়াদ শেষ হলেও তাকে ছাড়া হয়নি।

এমন ঘটনা বাংলাদেশের মানুষকে ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের নতুনভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করেছে। ২০১৮ সালে করা অ্যানালাইসিস বিডির জরিপে দেখা যায় বাংলাদেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে এদেশে রাজনৈতিক গুমের সাথে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (RAW) জড়িত। তাদের মর্জি মতো এদেশের বিরোধীদলীয় রাজনৈতিকদের গুম, ক্রসফায়ার ও গ্রেপ্তার করা হয়।

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল গুম করা হয়। এটা বেশ আলোচিত গুম। আজ পর্যন্ত তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। ইলিয়াস আলী ও সালাহউদ্দিন আহমেদের গুম হওয়ার আগে বিএনপির মহানগর ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম গুম হন। ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল রাজধানীর উত্তরা থেকে গুম হন সিলেটের ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমেদ ও জুনেদ আহমেদ। সাদা পোশাকে একদল লোক তাদের তুলে নিয়ে যায়। আশুলিয়ার শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের গুমও বেশ আলোচিত ঘটনা।

তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ঢাকা সফরকালে বিভিন্ন বক্তব্যে বারবার আমিনুল ইসলাম ও ইলিয়াস আলীর গুমের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। গুমের পর নিহত আশুলিয়ার শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের লাশ পাওয়া গেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমের। তাদের ভাগ্যে যে কী ঘটেছে কেউ তা জানে না।

২০১২ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রকে কুষ্টিয়া যাওয়ার পথে ‘হানিফ পরিবহন’ বাস থেকে নামিয়ে গুম করে র‍্যাব। দুই ছাত্র ওয়ালীউল্লাহ ও মুকাদ্দাসের আজ পর্যন্ত কোন খোঁজ নেই। ২০১৩ সালের ৩ এপ্রিল ছাত্রশিবিরের আদাবর থানার সভাপতি হাফেয জাকির হোসেনকে পুলিশ তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। আজ পর্যন্ত কোন খবর পাওয়া যায়নি।

২০১৬ সালে গুম হওয়া ৯৭টি ঘটনার মধ্যে জামায়াত নেতা গোলাম আযম ও মীর কাসেম আলী এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে যথাক্রমে আমান আজমী, মীর আহমেদ বিন কাসেম ও হুম্মাম কাদের চৌধুরীর কথা বেশ আলোচিত। এই তিনজনকে নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া বহু প্রতিবেদন তৈরি করে। এর মধ্যে হুম্মাম ‘নিখোঁজ হওয়ার’ সাত মাস পর বাড়ি ফেরেন, যাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

বিএনপি কর্মী সাজেদুল ইসলাম সুমন, যিনি ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন। ২০১৪ সালের ২৮ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজনৈতিক সহকর্মীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে গুম হন ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের ৫ কর্মী। তারা হলেন- সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সম্রাট মোল্লা, ৭৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি খালেদ হাসান সোহেল, ৭৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি আনিসুর রহমান খান, একই ওয়ার্ডের সহসাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব ও ৮০ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দল সম্পাদক মিঠু। ১১ দিন পর মুন্সীগঞ্জে নিয়ে আনিসুর রহমান, বিপ্লব ও মিঠুকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু এখনও খোঁজ মেলেনি সম্রাট ও খালেদের।

২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর রাজধানীর শিশুপার্ক এলাকা থেকে মাহফুজুর রহমান সোহেল সরকার, বংশাল থানা ছাত্রদলের সহসভাপতি হাবিবুল বাশাল জহির, ৭১নং ওয়ার্ডের সভাপতি পারভেজ হোসাইন ও ছাত্রদল কর্মী হোসাইন চঞ্চলকে সাদা পোশাকে কে বা কারা তুলে নিয়ে যায়। তারা এখনও নিখোঁজ। একই বছর ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা থেকে ছয়জন নিখোঁজ হন। তারা হলেন- ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমন, সুমনের খালাতো ভাই জাহিদুল করিম তানভীর, মাজহারুল ইসলাম রাসেল, মো. আল আমিন ও আসাদুজ্জামান রানা, আবদুল কাদের ভুঁইয়া মাসুম। এদের মধ্যে তিনজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এই তালিকা অনেক বড়। শেষ হবার নয়।

২০১৭ সালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ৩ জুলাই রাজধানীর শ্যামলীর আদাবরের নিজ বাড়ি থেকে ভোর পাঁচটার দিকে প্রখ্যাত কবি ও বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয়। এর ১৮ ঘণ্টা পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে যশোরের অভয়নগরে একটি বাস থেকে উদ্ধার করে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিকের মতে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেসব দেশে রাষ্ট্রযন্ত্রের সহযোগিতায় গুমের ঘটনা ঘটছে, সেসব দেশে আদালত সবসময় ভুক্তভোগীদের পক্ষে সুবিচার করতে পারেন না। এতে করে বিচারব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমে যায়। দেশগুলোতে অপরাধ প্রবণতা বাড়ে।

বাংলাদেশে গুম এখন এক আতঙ্কের নাম। গুমের ঘটনা এতটাই বাড়ছে যে, অনায়াসেই বলা যায় দেশ গুমরাজ্যে পরিণত হয়েছে কিংবা এখন দেশে জাহিলি বা বর্বর যুগ চলছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থই এর কারণ। পরিণতিতে সমাজে ভীতি ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি একই দেশে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এটা কোনো সভ্য নাগরিকের কাম্য হতে পারে না।

পঠিত : ৮৯৬ বার

মন্তব্য: ০