Alapon

যেকারণে আমি ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন বিএনপির রাজনীতিকে ভালোবাসি:



আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি ২০০৮ সালে তখন একটি বই পড়েছিলাম। “হায়দারাবাদ ট্রাজেডি ও আজকের বাংলাদেশ” এরপরে বইটি ২০১১ সালে আবার পড়ি। যতটুকু মনে পড়ে বইটি নব্বই দশকের আওয়ামী সরকারের আমলে প্রকাশিত হয়েছিলো। এবং ইন্টারেস্টিংলি বইটি পাবলিশ করে বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ।
বইটির লেখক ছিলেন আরিফুল হক। নাট্যকার: একজন মুসলিম জাতীয়তাবাদী ব্যক্তি। নামাজ পড়েন। আজকের নাটক মুভি যেভাবে ধ্বংসের দিকে গিয়েছে উনারা সেই ধারার ছিলেন না। উনারা ছিলেন সাম্রাজ্যবাদী ভারত বিরোধী। বইটি ছিলো হায়দারাবাদ যেভাবে ভারত দখলে নিয়েছিলো সেই ইতিহাস। একইদিকে ভারত এই দেশেও কিভাবে সেই আগ্রাসী ভূমিকা পালন করছে সেই ইংগিত।

লেখক জামায়াতী ধারার নয় - বিএনপি ধারার। কিন্তু মুসলিম ঐতিহ্যবাহী পরিবারের এবং একজন ধর্মমনা মানুষ হওয়ায় সাহিত্য ও সংস্কৃতির জায়গায় তিনি ছিলেন জামায়াতমনা ব্যক্তিত্বই। আবার বুক সোসাইটি ছিলো জামায়াত ধারার।বইটি পড়ে আমি লেখক ও বিএনপির প্রতি টান অনুভব করি সেই তখন থেকেই।

আমার ভাই যখন এক্টিভ বিএনপি করতেন তখন উনাকে আমি দেখেছি- উনি নামাজী, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী সৎ, পত্রিকা পড়েন, পাকিস্তানের খেলা দেখেন এবং ভারত বিরোধী এবং সামাজিকভাবে সম্মানি মানুষ। আমি বলছিনা এসব করলেই সৎ হওয়া যায় কিন্তু তৎকালীন সময়ে বিএনপির প্রতিটি মানুষের মধ্যে প্রাথমিকভাবে এই আচরণগুলো পাওয়া যেত।
৯ম, ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত আমার বেড়ে উঠা ছিলো এমনসব মানুষের সাথে যারা নিয়মিত ঘরে হাদীস রাখতেন, কুরআন পড়তেন, মসজিদের মোতাওয়াল্লি থাকতেন, ভালো মানের গ্রামীণ মুসলমান (যদিও এদেরকেই আমি এই ১০ বছরে পাল্টাতে দেখেছি)।
এই যে চরিত্রগুলো বললাম এরা সবাই বিএনপি। এবং জামায়াতে ইসলামী ইসলামী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিতে যেহেতু বিশ্বাসী সেহেতু গ্রামে ও শহরে সামাজিকভাবে, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে, পারিবারিক আঙ্গিনায় একটা ভালো মিল-মহব্বত -জোট ছিলো। এখনো আছে।
যেমন, আমাদের অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন বিএনপির। এখনো অনেক সামাজিক প্রোগ্রামে বিএনপির অনেকেই থাকেন আমরা রাখি। বিয়ে ও ইফতার মাহফিলে এখনো সম্পর্কটা আছে।

সেই জোট শুধু পরিবার কিংবা সমাজেই কিন্তু থেমে থাকেনি সেই জোট শেষ পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক ময়দানেও আত্মপ্রকাশ করেছে এবং দেশ ও ইসলামের হয়ে কাজ করেছে।
পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী-ইসলামী ঐক্যজোট ও এরশাদ সাহেবের জাতীয় পার্টি( পরবর্তীতে নাজিউর রহমান মঞ্জুর অংশ) ১৯৯৯ সালের ৩০শে নভেম্বর আওয়ামিলীগের দুঃশাসন থেকে দেশ রক্ষার জন্য ৪ দলীয় ঐক্যজোট গঠন করেন।
টার্গেট ছিলো অনেকগুলো। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:-

১. ফ্যাসিবাদী আওয়ামিলীগ দমন

২. খুন হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ, ভোট ডাকাতি যেমন- লক্ষীপুর মিরসরাই, পাবনা টাংগাইল
ও ফরিদপুরে ভোট ডাকাতিকে ঠেকানো

৩. ট্রানশিপমেন্টের নামে ভারতকে করিডোর দেয়ার প্রতিবাদ।

৪. দেশের সার্বভৌমত্ব ও ইসলামী মূল্যবোধ বিকিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।

৫. সীমান্তে ভারতের কাছে বিডিয়ার সদস্যদের হত্যা বন্ধ করা।

দেশীয় সার্বভৌমত্ব, ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষা ইত্যাদি সহ দেশের সার্বিক ব্যবস্থাকে ইসলামী জাতীয়তাবাদী শক্তির অধীনে নিয়ে আসার জন্য একটি রাজনৈতিক শক্তিশালী জোট হয়। যেন পরবর্তীতে আওয়ামিলীগ আর ভোটচুরি, ডাকাতী, দেশ বিক্রি করে দেয়া, ইসলামের উপর আঘাত হানা। এসব কাজ এই দেশে না করতে পারে।

এই জোট ও ইসলামী মূল্যবোধের মহব্বত পরবর্তীতে সাংবাদিক, আইনজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পেশাজীবি, বুদ্ধিজীবী, কৃষিজীবি, সাংস্কৃতিক অংগন ও আলেম-ওলামা পর্যায়ে যায়। এবং শক্তিশালী মেলবন্ধনে রূপ নেয়। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে নিয়ে আওয়ামী এজেন্ডার বিরুদ্ধে জামায়াত ও বিএনপি ছিলো ভাই ভাইয়ের মতন।
কিন্তু ২০০৯ সালে আবারো ক্ষমতায় চলে আসলো আওয়ামিলীগ। এরপর তারা হয়ে গেলো উন্নতমানের বলা যায় বিশ্বমানের ডাকাত ও স্বৈরাচার জালেম সরকার। অর্থাৎ যখন জোট হয় তখন আওয়ামিলীগ ছিলো ছেছড়া চোর। আর এখন হয়েছে বিশ্বমানের ডাকাত।
ছেছড়া চোরের বিরুদ্ধে গোলাম আযম সাহেব, খালেদা জিয়া, শায়খুল হাদীস আজিজুল হক ও এরশাদ মিলিত হয়ে জোট করেছিলেন। সেই গ্রামের পকেটচোর আজ হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মাফিয়া। আজ আওয়ামীলীগের শক্তি অনেক বেশি। আজ শুধু পাবনা মিরসরাই ও ফরিদপুরে ভোট ডাকাতি হয়না। আজ সারাদেশে ভোট ডাকাতি সাধারণ বিষয়।

আজ আওয়ামীলীগ যতটুকু ইসলামবিরোধী শক্তিশালী হয়েছে বিএনপি ঠিক ততটুকুই ইসলামী মূল্যবোধের শক্তি হারাচ্ছে। মির্জা ফখরুল সাহেব সহ অন্যন্য বাম নেতাদের বক্তব্য তার প্রমাণ। এখন দেখা যাচ্ছে, দেশকে ভারত থেকে রক্ষা করা-আওয়ামিলীগ হটানো ও একইসাথে বিএনপিকে ইসলামী মূল্যবোধে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ আরোও বেশি সামনে আসছে। তাহলে এখন জোট ছাড়ার প্রসঙ্গ আসছে কেন?

পঠিত : ১০১৫ বার

মন্তব্য: ০