Alapon

রবের তোষামোদি

মানুষের স্বাভাবিক একটা বৈশিষ্ট হচ্ছে, সে অপরের মুখ থেকে নিজের কাজের প্রশংসা শুনতে ভালোবাসে, নিজের কোন কাজের স্বীকৃতি পেতে পছন্দ করে, কোন উপনাম বা উপাধি থাকলে লোকেরা তাকে তা দিয়ে ডাকুক, এটাই সে প্রত্যাশা করে।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরসহ এই মহাবিশ্বের যত কিছু আছে সব-ই সৃষ্টি করছেন। তিনি আমাদের রব, আমরা তার গোলাম।

মালিক হিসেবে আল্লাহ তা‘আলা চায় আমরাও তার প্রশংসা করি, তার গুণাবলি আলোচনা করি, তার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করি এবং তার গুণবাচক সুন্দর নামগুলো দিয়েই তাকে ডাকি, নিজের দুর্বলতা তার কাছে প্রকাশ করি, নিজের অসহায়ত্বের কথা তাঁকে বলি। এটা এজন্য যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা যেন আমাদেরকে সবকিছু আরো বেশি করে দিতে পারেন।

কিন্তু আমরা কি এভাবে তাকে ডাকি? আল্লাহ তা‘আলার ‘আল্লাহ’ নামটি ছাড়া আরো যে ৯৯ টি নাম রয়েছে তা আমরা ক’জনে জানি? সে সব নাম গুলোর অর্থ অনুধাবন করার জন্য আমরা ক’জনেই বা চেষ্টা করি। অথচ নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর ৯৯ টি নাম রয়েছে। যে এগুলো মুখস্থ (অনুধাবন) করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

চিন্তা করছেন! আল্লাহর ৯৯ টি নাম যদি আপনি ভালভাবে উপলব্ধি করে এগুলো মনেপ্রাণে ধারণ করে রাখেন, তাহলে আপনি জান্নাতে যেতে পারবেন।

জান্নাতে যেতে পারবেন না কেন? জান্নাতের মালিক যিনি তিনি যদি আপনার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান, তবে আপনাকে তো জান্নাত দিবেনই, এটাই স্বাভাবিক। উপরন্তু এটা তো নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের-ই একটা ঘোষণা। তার ঘোষণা কি কখনো মিথ্যা হতে পারে? (নাউজুবিল্লাহ)

বস্তুজগতের দিকে একটু দৃষ্টি দেন, দেখবেন- কেউ যখন তার অফিসের বসের প্রশংসা করে, তখন বস তাকে চাকরিতে প্রমোশন দেয়। নেতা/নেত্রীর তোষামোদি করলে তারা তাকে দলের্ উপরের পদে টেনে তোলে। কোন মানুষের তোষামোদি করলে সে আপনাকে কাছে টেনে নেয়, আপনাকে আপন ভাবতে শুরু করে।

তাহলে যে আল্লাহ সব দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ, সবকিছু থেকে অমুখাপেক্ষী, আপনি যখন তাঁর তোষামোদি করবেন, তাঁর গুণবাচক নাম গুলো দিয়ে তার কাছে অনুনয় বিনয় করবেন, তখন তিনি কেন-ই বা আপনাকে যা চান তা দিবেন না? অবশ্যই দিবে।

কিন্তু কথা হলো, আমরা কয়জনে আল্লাহ তা‘আলার তোষামোদি করি? তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করি? তাঁর গুণাবলি সমুহ মানুষের সামনে পেশ করি?

আমরা তো করি নেতা/নেত্রীর প্রশংসা, অফিসের বসের তোষামোদি, নিজ দলের ব্যক্তি বা হুজুরদের তোষামোদি। মাঝে মাঝে কিছু পীর, হুজুর বা নেতাদের নামের অাগে/পরে এমন সব উপাধি, গুণবাচক নাম আমরা দেখতে পায়, যার যোগ্য আজও সে হয়েছে কিনা আল্লাহ মা’লুম। অধিকন্তু কিছু কিছু উপাধি গুনাহের পর্যায়ে চলে যায়।

তবুও আমরা এসব করি। কারণ, আমরা নেতা/নেত্রীর সাথে, বসের সাথে, নিজ দলের প্রধানদের সাথে সম্পর্ক থাকা, তাদের কাছে যেতে পারাটাকে সফলতা মনে করি। মনে করি এর মধ্যেই আমাদের যাবতীয় কল্যাণ নিহিত রয়েছে।

কিন্তু সব নেতার বড় নেতা যিনি, সব বসের বড় বস যিনি, সব সৃষ্টির স্রষ্টা যিনি, তাঁর তোষামোদি আমরা করি না। তার গুণগ্রাহী গুলো আমরা বর্ণনা করি না। তার যে বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ৯৯টি নাম রয়েছে তা আমরা জানিনা। আমরা শুধু ‘আল্লাহ’ নামটি দিয়েই তাকে ডাকতে থাকি। অথচ আমাদের প্রতিটি প্রয়োজন, প্রতিটি চাওয়া এবং প্রতিটি কাজের সাথেই আল্লাহ তা‘আলার গুণবাচক নাম গুলোর সম্পৃক্ততা রয়েছে।

সুতরাং আমরা যদি আমাদের একেক প্রয়োজনে আল্লাহর একেক নাম ধরে তাকে ডাকি, সর্বদা তাঁরই প্রশংসা এবং তোষামোদি করি, তাহলে তিনি আমাদের উপর খুশি হবেন যেভাবে আমরা অপরের মুখ থেকে প্রশংসা শুনে খুশি হয়ে থাকি। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা যদি কারো উপর খুশি হয়ে যায়, তাহলে তার আর কি লাগে বলুন তো?

পঠিত : ৭৯৫ বার

মন্তব্য: ০