Alapon

জামায়াতের রাজনৈতিক জোটে সম্পৃক্ততার ইতিহাস : আওয়ামীলীগ-বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াতের আন্দোলনের কারন-



জামায়াত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয়ের সাথেই ঐক্যের রাজনীতি করেছে। এই রাজনীতি বাংলাদেশে খুবই কমন দৃশ্য। সাধারনত সরকারী দলের অনৈতিক অবস্থানের প্রতিবাদ করে বিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশে এককভাবে ক্ষমতায় বসার ধারাবাহিকতা দেখিয়েছে প্রধানত বিএনপি ও আওয়ামীলীগ। জাতীয় পার্টি লাগাতার ক্ষমতায় থেকে ক্রমেই পেছনে গেছে।

এদিক থেকে নানা রাজনৈতিক পরিবেশে জামায়াত অত্যন্ত সচেতনতার সাথে সরকার বিরোধী আন্দোলন হিসেবে আওয়ামীলীগ, জাতীয়পার্টি এবং বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। প্রতিটি আন্দোলনের ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতি ছিলো। ইতিহাসে জামায়াতের আন্দোলনগুলো কোন অন্ধ আন্দোলন ছিলো না। সেগুলো এমন নয় যে, জামায়াত কারও সাথে জোট করে অন্ধভাবে তাকে সব কাজে সমর্থন দিয়েই গেছে, কিংবা, জোট বিরোধী কোন দলকে অন্ধভাবে কেবল প্রতিহতই করে গেছে। ফলে, যারা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামীলীগ অথবা বিএনপি জামায়াতের কারনে ওমুক ক্ষমতা পেয়েছে বা হারিয়েছে- তারা মূলত লেজুড়ভিত্তিক রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অভ্যস্ত। জামায়াতকেও একইভাবে জাজ করার চেষ্টা করে। তাদের হাস্যকর ডায়ালগের একটি তেমনই একটি হল- জামায়াত একবার এই দলের সাথে সংসার করে, আরেকবার ঐ দলের সাথে সংসার করে। অথচ, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে একেকবার একেক সরকারের দূর্ণীতির বিরোধীতা করাটাই স্বাভাবিক রাজনীতি! কতটা হাস্যকর এসব রাজনৈতিক সরলীকরন।

জামায়াতের নিয়মিত এই আন্দোলনগুলোর পাশাপাশি এ পর্যন্ত সরকার গঠন প্রশ্নে মোট দুইবার বিএনপিকে সহায়তা করেছে। এবং, একবার আওয়ামীলীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
জামায়াত যেইবার আওয়ামীলীগকে প্রত্যাখ্যান করে, নিজ আদর্শের তুলনামূলক নিকটবর্তী দল হিসেবে বিএনপিকে সমর্থন দিয়ে সরকার গঠনে সাহায্য করে, সেইবার শেখ হাসিনা নৈতিকভাবে জামায়াতের কাছে পরাজয় স্বীকার করে, অধ্যাপক গোলাম আযম রহঃ এর বাড়িতে জায়নামাজ পাঠিয়ে- রাজনৈতিক সমর্থন চান। ঠিক সেই বিএনপি সরকারটিই পরবর্তীতে দূর্বৃত্তায়নে মত্ত হয়ে ওঠে।

এরশাদের বিরুদ্ধে জামায়াতের উদ্ভাবিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সিস্টেমে যেই বিএনপি-আওয়ামীলীগ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে এরশাদকে হাঁটিয়ে, জামায়াতের সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ দলীয় সাহায্য নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসে! ঠিক সেই বিএনপিই ক্ষমতায় গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে একতরফা নির্বাচনে মেতে ওঠে। উদ্দেশ্য, দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে চোরাই পথে ক্ষমতায় আসা!

একটি নৈতিক সমর্থনদাতা সংগঠন জামায়াত চাইলে সেই বিএনপি সরকারে মন্ত্রীত্ব গ্রহণের শর্তসহ যেকোন গুরুত্বপূর্ণ শর্ত দিয়ে তা খুব সহজেই আদায় করতে পারতো। এমন একটি জীবন মরন প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা ঠিকই দুটি মন্ত্রীত্বের অফারে জামায়াতের সমর্থন চেয়েছিলেন। অথচ, নিস্বার্থ সমর্থন পেয়ে সরকার গঠনের পর জামায়াতের আমীরকে আইনগত ভোগান্তিতে ফেলে এক পর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাটাই উঠিয়ে দেয়ার চক্রান্তে মেতে ওঠে তৎকালীন খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার! বারবার ভদ্রভাবে আবেদন, অনুরোধ করেও জামায়াত পাত্তা পায়নি!! ফলে, বাধ্য হয়ে নৈতিক রাজনীতির দলটিকে নিজ উদ্ভাবিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলনে নামতে হয়। যে আন্দোলনের স্বাভাবিক সহযোগী হয় আওয়ামীলীগ৷ ফলশ্রুতিতে লজ্জাজনক ভরাডুবি হয় ততকালীন চক্রান্তকারী বিএনপির। এই ঐতিহাসিক সত্যগুলো তরল পানির মত আমাদের স্মরণে থাকা উচিত। যেন ইতিহাসে কোন দূর্বৃত্ত্বই কথিত চরমোনাইয়ের মত নির্লজ্জ বস্তির বুলি কপচিয়ে রাজনৈতিক ইতিহাসকে আরও নিরতলজ্জতার সংস্কৃতিতে নিতে না পারে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে অবৈধ চক্রান্তের কারনে জনপ্রিয়তা হারিয়ে বিএনপি ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়ে। বিএনপির গোয়ার্তুমি ও হীনমন্য আচরনের কারনে বাংলাদেশের ক্ষমতায় চলে আসে ইন্ডিয়ার গুটি আওয়ামীলীগ সরকার। এক বিভীষিকাময় টার্ম পার করে জামায়াত ও বিএনপিকে চার দলীয় ঐক্যজোটের পথে যেতে এক প্রকার বাধ্য করে ইসলাম বিরোধী, বাংলাদেশ বিরোধী হিন্দুস্তানের এই দলটি৷ ক্ষমতায় আসে চারদলীয় ঐক্যজোটের সরকার।

এই সরকারে জামায়াতের দুইজন মন্ত্রী তিনটি মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেন। নৈতিক রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বাধীনতার পর সকল সরকারের ইতিহাসে এই দুইজন মন্ত্রী নিখুঁত দূর্ণীতিহীন মন্ত্রণালয় পরিচালনা করে এক ঐতিহাসিক রেকর্ড গড়েন। যা জামায়াতের চরম শত্রুরাও শ্রদ্ধার সাথে স্বীকার করে। এই সরকারের নাস্তিক-বাম অংশের চক্রান্তের বলি হয় ২৮শে অক্টোবরের জামায়াত। পল্টনের নিষ্ঠুর ময়দানে বাবরের নিশ্চুপ তামাশায় পুলিশ নিরব ভূমিকায় থেকে আওয়ামীলীগের হাতে জামায়াতের নেতাকর্মীদেরকে সাপের মত পিটিয়ে নিহত করতে দেয়। আভ্যন্তরীন জিঘাংসায় বাবর-তারেকের অন্তর ক্ষণিক তৃপ্ত হয় ঠিকই, কিন্তু তার জেরে ক্ষমতার নৌকাই পূণরায় এসে হাজির হয় অবৈধ পথে। অবৈধ ভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে মার্কিন-ভারতীয় সিগনালের এক আজব সেনা সরকার চেপে বসে। অধ্যাপক গোলাম আযম রহঃ এর যোগ্য ছেলে ব্রিগেডিয়ার আমান আজমির অনেক জুনিয়র মইন উদ্দিন আহমেদকেই নির্ভরযোগ্য মনে করে খালেদা জিয়া-তারেক রহমান যে কুমির টেনে রেখেছিলেন, যথাসময়ে সেই কুমিরের পেটেই চলে যান।

আঁতাতের চোরাই নির্বাচনে ক্ষমতা হারায় ঐক্যজোট। এরপর ইতিহাস বড় নির্মম। প্রকাশ্যে মিথ্যার বেসাতি বসিয়ে ভারত বিরোধী স্বাধীন ও সৎ মুসলিম নেতাদের বেছে বেছে বিচারিক হত্যাকান্ড হতে থাকে। আর বিএনপি নিরব দর্শকের ভূমিকায় আলাদিনের চেরাগে ক্ষমতায় যাবার স্বপ্নে বিভোর থেকে একের পর এক ইদের পর আন্দোলন ঘোষণা করে ঘরোয়া পিকনিক পালন করতে থাকে। এই পিকনিকের মাঝেই খালেদা জিয়াকে এতিমের টাকা মারার মামলায় তিলে তিলে হত্যার দিকে নিয়ে যাবার চক্রান্ত হতে থাকে। অথচ, কথিত মানবতাবিরোধী মামলার বিচারের হীনমন্যতায় জোটগত শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জামায়াত প্রশ্নে বিএনপি নিদারুন এক পরাজয় স্বীকার করে জোটকে অকার্যকর করে তোলে।

এই পর্যন্ত জামায়াত তাদের নেতাদের হারিয়েছে। কিন্তু আত্মসমর্পণ কিংবা ন্যূনতম জীবনভিক্ষাও চায়নি। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজ সামর্থে একক প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মাঠে জামায়াত ছিলো বাংলাদেশের "টিম একাই একশ"!

জামায়াত তার আন্দোলনের দিক পরিবর্তন করেছে শ্রেফ নৈতিকতার ভিত্তিতে। কোন দিনই নীতিকে পরিবর্তণ করেনি। আন্দোলনের নীতির প্রশ্নে জামায়াত কখনও দেখেনি, তার সামনে কোন রঙের মানুষ দূর্ণীতি করেছে! সাদা নাকি কালো?

-রহমান বিপ্লব

পঠিত : ৯০৮ বার

মন্তব্য: ০