Alapon

বদনজর একটি মারাত্মক ব্যাধি...



বেশকিছু দিন আগেও আমার সাথে এমনটা হতো। হুট করেই কোনো কারণ ছাড়াই মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকতো। কোনও কাজেই মন বসতো না। না পড়াশোনা, না নাওয়া-খাওয়া, আর না হাসি আনন্দ.. কিছুই ভাল্লাগতো না। কেউ ভালো কথা বললেও ফোঁস করে উঠি। মন্দ বললে তো যেন মাথায় আগুন ধরে যায়। কেমন যেন হুদাই কান্না আসতো। খুব ডিপ্রেশড ফিল করতাম। বিশেষ করে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় টা তে। যখন কোনো কারণ খুঁজে না পেতাম এসবের তখন আরও বেশি বিগড়ে যেতো মেজাজ টা। নিজের চুল নিজেই টেনে ছিঁড়তে ইচ্ছে হতো। কি একটা বিতিকিচ্ছিরি অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতাম।
অতঃপর একদিন ভাবলাম বদনজরের রুকইয়াহ করে দেখি! কি হয়। পরদিন থেকে শুরু করলাম। আলহামদুলিল্লাহ দুইদিন পর একেবারেই স্বাভাবিক ফিল করলাম। অবাক হয়ে গেলাম সত্যিই। এরপর যখনই এমন হতো তখনই রুকইয়াহ করতাম। আলহামদুলিল্লাহ দুই একদিনের মধ্যেই সেরে যেতো।

আচ্ছা আপনার ও কি এমন হয়? অথবা হয়েছে কখনো?

এই পর্যন্ত বেশ কয়েকজন বোন আমার সাথে সেইম বিষয় টা শেয়ার করেছে। যেটার মধ্য দিয়ে আমিও যেতাম প্রায়ই। অর্থাৎ মেজাজ বিগড়ে যাওয়া, কোনো কারণ ছাড়াই এমন ডিপ্রেশড, অনেক ধৈর্যশীল হওয়ার পর ও হুট করেই কেমন যেন অসহিষ্ণু হয়ে যাওয়া ইত্যাদি... ইত্যাদি সমস্যা।

কেউ কেউ তো জানালো যে, ওই সময় টা তে ছোট ভাইবোনকেও সহ্য হয় না। হুদাই বকাঝকা করে কখনো বা মাইর ও লাগায়। ঘরে জিনিসপত্র ও ভাংচুর করে। মানে কি একটা অবস্থা! (বলে রাখি এখানে ওই সময় টার কথা বলছিনা, যেটা মেয়েদের প্রতি মাসে হরমোলান প্রব্লেমের কারণে হয়।) তো তাদেরকেও আমার মতো রুকইয়াহ করতে বলি। আলহামদুলিল্লাহ যতজন এই সমস্যা ফেইস করে পরামর্শ চেয়েছে এবং বদনজরের রুকইয়াহ করেছে সবাই বলেছে যে, দুইএকদিনের ভেতর সব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ। সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।

একশ্রেণীর মানুষ বলেন, বদনজরের অস্তিত্ব কেবল ভারত, বাংলাদেশ আর পাকিস্তান ছাড়া অন্য কোথাও নেই! বলি কি,নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থাকতেই পারে তাই বলে সব জায়গায় তা প্রকাশ কইরেন না দয়া করে। বদনজরের অস্তিত্ব কেবল ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানে নয়; পৃথিবীর যেখানেই ইসলামের আলো পৌঁছেছে সেখানেই আছে। বিজ্ঞানের ফুটানি সবজায়গায় দেখানো উচিত না।

যাইহোক বিভিন্নজনের সাথে কথা বলে, বিভিন্ন গ্রুপেও এই সমস্যা টা অনেককেই ফেইস করতে দেখেছি। তা-ই বিষয় টা শেয়ার করা। কেউ একজন ও যদি উপকৃত হয়... ইন শা আল্লাহ।

অনেক বোনেরা বদনজরের রুকইয়াহ কিভাবে করবেন জানতে চেয়ে প্রায়ই নক করেন। দেখা যায় এমন সময় নক করেন যখন ফোন হাতে নেওয়ার ই সময় পাই না,লিখবো তো দূরের ব্যাপার! তাদের জন্য এই পোস্টে সংক্ষেপে দুইটা নিয়ম বলে দিচ্ছি। প্রয়োজনবোধ করলে সেইভ করে রাখতে পারেন। অথবা আপনার আইডিতে সংরক্ষণ করতে পারেন।
বদনজর নিয়ে আমার আরেকটা লেখা আছে। ওখানে প্রতিকার-প্রতিরোধ সবকিছু বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করেছি। লেখাটা বেশ বড় হওয়ায় অনেকেই পড়তে আগ্রহী না। কিন্তু একথা সত্য যে, বড় লেখা পড়তে কষ্ট হলেও সেখান থেকে মুক্তো কুড়ানো যায়। যাইহোক ওই লেখাটা না পড়তে পারলে এখানে দেওয়া সংক্ষিপ্ত নিয়ম দুইটা ফলো করুন।

[১]
প্রথমতঃ যদি কার নজর লেগেছে সেটা জানা যায় তাহলে ওই ব্যক্তির ওজুর পানি অথবা হাতমুখ ধোয়া পানি দিয়ে গোসল করে নিলে অথবা গায়ে ছিঁটিয়ে নিলেই বদনজর কেটে যাবে ইন শা আল্লাহ। ওজুর পানি নেওয়া উত্তম। তবে যদি ওজুর পানি নেওয়ার মতো সিচুয়েশন না থাকে তাহলে হাত-মুখ ধোয়া পানি নিলেই হবে ইন শা আল্লাহ। সে পানি দিয়ে গোসল করা উত্তম। তবে গোসলে সমস্যা হওয়ার আশংকা থাকলে তখন গায়ে ছিটালে হবে।

[২]
আর যদি জানা না যায় যে কার নজর লেগেছে সেক্ষেত্রে নিচের নিয়মটা ফলো করলে হবে। কয়েকটা পদ্ধতির মধ্যে এটাই সহজ পদ্ধতি।

প্রথমে বদনজরের রুকইয়াহর নিয়ত করে নিবেন। তারপর এক বালতি পানি নিবেন। পানিতে দুই হাত কোনুই পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখবেন।(সমস্যা হলে না রাখতে পারেন। রাখা ভালো) ৭/৫/৩ বার দরুদে ইব্রাহিম পাঠ করবেন। (৭ বার করা উত্তম। সময় কম থাকলে ৫/৩ বার পড়বেন) তারপর ৭ বার সুরা ফাতিহা পড়বেন। ৭ বার আয়াতুল কুরসি, সুরা কাফিরূন,ইখলাস, ফালাক্ব, নাস পড়বেন। প্রত্যেকটা ৭ বার করে। তারপর আবার ৭ বার দরুদে ইব্রাহিম পড়বেন। তারপর ওই পানি থেকে বিসমিল্লাহ বলে ৩ ঢোক খেয়ে নিবেন। অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করে ফেলবেন। এই পানির সাথে অন্য পানি এড করবেন না। প্রয়োজনে পরে অন্য পানি গায়ে ঢালা যাবে। এখানে অন্য পানি এড করলে প্রভাব কমে যেতে পারে।

বদনজরের রুকইয়াহর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ফলদায়ক হচ্ছে যদি পানিতে বরই পাতা মেশানো যায়। এক্ষেত্রে ৭ টা বরই পাতা ধুয়ে পেস্ট করে(বেটে) পানিতে মিক্স করে নিবেন। এটা অনেক বেশি উপকারী। সিহরের রুকইয়াহর ক্ষেত্রে ও এই সাজেশন টা দিয়ে থাকেন সম্মানিত আলেমগন। তাই সম্ভব হলে বদনজরের রুকইয়াহর গোসলের পানিতে ৭ টা বরই পাতা বেটে মিক্স করে নিবেন। পাওয়া না গেলে কিছু করার নেই। সাধারণ পানি দিয়েই করতে পারেন।

বিঃদ্রঃ শহরের ওয়াশরুম গুলোতে টয়লেট আর গোসলের জায়গায় খুব বেশি দুরত্ব থাকে না। তাই বালতি ওয়াশরুমের বাইরে এনে পানি টা রেডি করবেন ইন শা আল্লাহ।
পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে যদি রুকইয়াহ করার প্রয়োজন পড়ে, আর পানি রেডি করে দেওয়ার মতো কেউ না থাকে তাহলে নিজের টা নিজেই করতে পারবেন ইন শা আল্লাহ। পিরিয়ডকালীন সময়ে কুরআন তিলাওয়াত নিয়ে যথেষ্ট ইখতিলাফ আছে। কেউ কেউ বলেছেন এ সময়ে মেয়েরা তিলাওয়াত করতে পারবে না। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেছেন, "যারা পাক-পবিত্র তারা ছাড়া আর কেউ এই কিতাব স্পর্শ করতে পারবে না"।[সুরা ওয়াক্বিয়াহ- ৭৯]

অনেকে এখানে অপবিত্র বলতে নারীদের পিরিয়ড কে ও বুঝিয়েছেন। কিন্তু অন্যান্য আলেমরা এখানে অপবিত্র বলতে অমুসলিমদেরকে বুঝিয়েছেন। যেহেতু ইখতিলাফ আছে তাই তিলাওয়াত না করাই নিরাপদ।

কিন্তু এই পানিটা তৈরি করতে যে সুরা গুলো পড়া হয় সেগুলো কিন্তু মাসনুন আমলের মধ্যে পড়ে, যা হায়েজ-নেফাসকালীন সময়ে পাঠ করার অনুমতি আছে। তাই নিজে নিজেই পানিটা রেডি করতে পারেন সমস্যা নাই ইন শা আল্লাহ।

কারো কারো ক্ষেত্রে একদিন গোসল করলেই প্রভাব কেটে যায়। কিন্তু যদি পুরোপুরি সুস্থ না হয় কেউ তাহলে ৩/৫/৭ দিন একটানা করে যাবেন। আল্লাহ চাহে তো পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন।

পঠিত : ৯৮৫ বার

মন্তব্য: ০