Alapon

প্রকৃত জীবনের শুরু মৃত্যুর মুহূর্ত থেকে...



রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দকের যুদ্ধের সময় এ কথা বলে দু‘আ করেছিলেন- اللهُمَّ لَا عَيْشَ إِلَّا عَيْشُ الْآخِرَهْ فَاغْفِرْ لِلْمُهَاجِرِيْنَ وَالأَنْصَارِ - " হে আল্লাহ! পরকালের জীবন ছাড়া সত্যিকারের কোনো জীবন নেই। আপনি মুহাজির এবং আনসারদেরকে ক্ষমা করে দিন।"

বর্তমানে আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যখন হঠাৎ মৃত্যু খুবই স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। হঠাৎ করেই মানুষ মৃত্যু মুখে পতিত হচ্ছে। কখনো কখনো খুব অল্প বয়সেই মানুষ মারা যাচ্ছে।

আবার আজকের দিনেই অনেককে দেখা যায়, জীবনের শেষ বয়সে এসে উপনীত হওয়ার আগে ধর্ম নিয়ে সিরিয়াস হয় না। মনে হয় যেন তাকে গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে যে সে অত বছর বাঁচবে। "এখন, আমার যৌবন কাল উপভোগ করি। অন্য টিনেজাররা যা করে আমাকেও তা করতে দাও।" এ বয়সেও যে মৃত্যু হতে পারে তা নিয়ে তার মাঝে কোনো টেনশন কাজ করে না। "কলেজের অন্য ছেলে মেয়েরা যা করে আমাকেও তা করতে দাও।" মৃত্যুর কথা সে ভুলে যায়। আপনি শুরুর দিকে জীবন উপভোগ করতে চান। শেষ বয়সে এসে আমি অবসর নিবো এবং ধর্ম কর্ম নিয়ে তখন সিরিয়াস হবো। এখন জীবন উপভোগ করি। কেন এমনটা হয়? কারণ, এমন একটা চিন্তা আমাদের মাথায় কাজ করে যে, জীবন উপভোগ করতে হবে শুরুর দিকেই। শক্তি সামর্থ্য থাকাবস্থায় আমাকে আমার জীবন উপভোগ করতে হবে।

অথচ, আমাদের রাসূল (স) বলেছেন- "পরকালের জীবন ছাড়া সত্যিকারের কোনো জীবন নেই।" যার মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত করছেন- জীবন আসলে মৃত্যুর মুহূর্ত থেকেই শুরু হয়। আপনার সত্যিকারের জীবন শুরু হয় মৃত্যুর মুহূর্ত থেকে।

এই চিন্তাটাকে মনের মাঝে গেঁথে নিয়ে কুরআন অধ্যয়ন করুন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- مَنۡ عَمِلَ صَالِحًا مِّنۡ ذَکَرٍ اَوۡ اُنۡثٰی وَ هُوَ مُؤۡمِنٌ فَلَنُحۡیِیَنَّهٗ حَیٰوۃً طَیِّبَۃً- "পুরুষ আর নারীদের মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে আর সে মু’মিনও, তাকে আমি অবশ্য অবশ্যই উত্তম জীবন দান করব।" (১৬:৯৭) এখানে উত্তম জীবন হলো পরকালের জীবন।

এর বিপরীত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সুরাতুল ফাজরে। “যখন যমীনকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হবে পরিপূর্ণভাবে, আর যখন তোমার প্রতিপালক আসবেন আর ফেরেশতারা আসবে সারিবদ্ধ হয়ে, আর সেদিন জাহান্নামকে উপস্থিত করা হবে, সেদিন মানুষ স্মরণ করবে, কিন্তু সেই স্মরণ তার কী উপকারে আসবে? সে বলবে, ‘হায়! যদি আমি আগে কিছু পাঠাতাম আমার জীবনের জন্য’!”

তখন সে বলবে- یٰلَیۡتَنِیۡ قَدَّمۡتُ لِeحَیَاتِیۡ - হায়! যদি আমার জীবনের জন্য আমি আগে ভাগে কিছু পাঠাতাম! তখন সে এ কথা বলবে না, যদি দুনিয়ার জীবনটা ভালোভাবে উপভোগ করতাম! কারণ সে মুহূর্তে আমরা রাসূলুল্লাহ (স) এর হাদিসটি পরিপূর্ণরূপে উপলব্ধি করবো- "পরকালের জীবন ছাড়া কোনো জীবন নেই।"

জীবনের শুরু থেকেই যদি মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে জীবন পরিচালনা করেন, এটা আপনাকে হতাশাবাদীতে পরিণত করে না। আমি বরং বলবো, এটা আপনাকে অনেক বেশি আশাবাদী ব্যক্তিতে পরিণত করে।

কারণ আপনি এমন কিছুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন যা একেবারে নিশ্চিত ও পরম সত্য। পার্থিব এই জীবনে আপনি যত কিছুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন, সবকিছুতেই আছে কোনো না কোনো ধরণের অনিশ্চয়তা। আমরা নিজেদের অভিজ্ঞতা বা খবরের কাগজ থেকে জানি, কত মানুষ নিজের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পথে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়। কত মানুষ কিছু একটার জন্য বহু বছর ধরে অপেক্ষায় ছিল, এরপর জিনিসটা পাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে মৃত্যু মুখে পতিত হয়। যেমন, কত মানুষ গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পূর্ব মুহূর্তে মারা যায়।

সুতরাং, দুনিয়ার এ জীবন হলো সত্যিকারের জীবনের প্রস্তুতি নেয়ার সময়কাল মাত্র। আমরা এখন যেটাকে জীবন বলছি এটা শুধু ডিপোজিট করার স্থান মাত্র। আমি এখন সৎ কাজের ব্যাংক-এ আছি। আমার সওয়াবের কাজগুলো জমা দিচ্ছি। এটাই সব।

তাই, পার্থিব এ জীবনেই সবকিছু উপভোগ করতে হবে এমন কোনো তাড়াহুড়ো আমার মাঝে আর কাজ করে না। আমাকে সবচেয়ে উপভোগ্য এক জীবন পার করতে হবে- এমন কোনো টেনশনও আমার মাঝে আর কাজ করে না।

জানেন? আমি হয়তো দুনিয়ার সব সুন্দর সুন্দর জায়গাগুলো ভ্রমণ করতে পারবো না, কিন্তু আল্লাহর দয়ায় আমি জান্নাত দেখতে পাবো। আমার হয়তো অমুক অমুক ব্যক্তির সাথে দেখা নাও হতে পারে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায়, আমি জানি যদি আমি সঠিকভাবে ভালো ভালো কাজগুলো জমা করতে পারি তাহলে আমি রাসূলুল্লাহ (স) এর সাক্ষাৎ লাভ করবো, হাউজে কাউসারে। এর নামই জীবন। এর নামই জীবন। আমি এটার আশাতেই আছি।

আমি হয়তো এখানে নিজের বাড়িটাকে সুন্দরভাবে মেরামত করতে পারবো না বা একটি বাড়ি ক্রয় করতে পারবো না; হয়তো গাড়ি কিনতে পারবো না। কিন্তু আমি নিশ্চিত জানি, যদি আমি সঠিকভাবে সওয়াবের কাজগুলো জমা করতে পারি, তাহলে আমার কবরই জান্নাতের একটি বাগানে পরিণত হবে। কারণ, পরকালের জীবন ছাড়া যে কোনো জীবন নেই।

সে দিন আমি তার মত কপালপোড়া হতে চাই না যে বলবে- "ইয়া লাইতানি কাদ্দামতুলি হায়াতিই- হায়! যদি আমি নিজের জীবনের জন্য অগ্রিম কিছু প্রেরণ করতাম!" আমি বরং তার মত হতে চাই যে কিয়ামতের দিন নিজের আমলনামা ডান হাতে গ্রহণ করে বলবে-اِنِّیۡ ظَنَنۡتُ اَنِّیۡ مُلٰقٍ حِسَابِیَهۡ- আমি জানতাম যে, আমাকে আমার হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে।’ فَهُوَ فِیۡ عِیۡشَۃٍ رَّاضِیَۃٍ - অতঃপর সে আনন্দময় জীবন যাপন করবে। (৬৯ঃ ২০-২১)

- ড. ওমর সুলেইমানের আলোচনা অবলম্বনে

পঠিত : ৯৩০ বার

মন্তব্য: ০