Alapon

ইসলামি নারীবাদের চর্চা ও অন্ধের হাতি দেখা



ইসলামি নারীবাদের চর্চা যারা করেন, তারা ইসলামকে দেখেন অন্ধের হাতি দেখার বিখ্যাত গল্পের মতো। এটা শুধু ইসলামি নারীবাদের ক্ষেত্রেই না, ইসলামি কমিউনিজম, ইসলামি ডেমোক্রেসি সহ যেকোমো মতবাদকে ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে দেখাতে চান, প্রায় সবার একই অবস্থা।

ইসলামি নারীবাদ নিয়ে এ পর্যন্ত যারা লেখালেখি করেছেন, তারা শুধু ইসলাম নারীদেরকে কতো অধিকার দিয়েছে এই নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। ইসলাম নারীদেরকে অধিকার দিয়েছে, এটা তো আনডিনাইয়েবল কিছু না। কিন্তু, ইসলামের যেকোনো বিধানকে সার্বিকভাবে পাঠ করতে হয়।

মানুষ মেশিন না। মেশিনকে কমান্ড দিলে সে কমান্ড অনুসারে চলে। মানুষের ক্ষেত্রে কমান্ডের পাশাপাশি কম্পাশন কাজ করে। অধিকার বুঝিয়ে দেবার ক্ষেত্রে কম্পাশন যদি কাজ না করে, তাহলে একপক্ষ চায় অন্যকে অধিকার বঞ্চিত রাখতে, আরেকপক্ষ চায় যেকোনোভাবেই হোক অধিকার আদায় করতে।
ছোট্ট মেয়ে তার বাবাকে বলে দিলো, "আব্বু, বাসায় আসার সময় আমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে এসো, চকলেট নিয়ে এসো।"

সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাবার, সন্তানের সেটা অধিকার। এই যে বাবা অফিস থেকে ফেরার সময় তার আদরের মেয়ের জন্য আইসক্রিম, চকলেট নিয়ে যাবেন, এটার পেছনে তার মনে কী 'মেয়ের অধিকার' এই চিন্তা কাজ করবে, নাকি আইসক্রিম পাবার পর মেয়ের হাসিমুখ তিনি আইসক্রিম কেনার সময় কল্পনা করবেন? এই কাজটি তিনি নিছক মেয়ের অধিকার বুঝিয়ে দেবার জন্য করবেন না। এটা করবেন কম্পাশন থেকে।

আমরা মানুষ হিশেবে সারাক্ষণ অধিকার-কর্তব্য মাথায় রেখে কর্পোরেট লাইফ লিড করি না। মানুষের আবেগ আছে বলেই সে অধিকারের বাইরেও কিছু দিতে চায়। ভিক্ষুকদের ৫-১০ টাকা দিই, কিন্তু কোনো ভিক্ষুককে দেখে যদি বুঝতে পারি তার সত্যিই চিকিৎসা করা প্রয়োজন, পরিবার না খেয়ে আছে, তখন তাকে ৫০০-১০০০ টাকা দেয়া হয়। কিন্তু, এই অনুভূতি এটিএম বুথে পাবেন না। আপনার লাগবে ৫০০০ টাকা, ব্যাংকে আছে ৪৯৯০ টাকা৷ এটিএম বুথে যতোই ৫০০০ টাকা প্রেস করুন, আপনাকে ৫০০০ টাকা দিবে না; ৪৫০০ টাকা দিবে।

একজন মানুষকে আপনার এই প্রয়োজন বুঝান, দেখবেন সে ঠিকই ১০ টাকা বাড়িয়ে দিবে।
স্বামী তার স্ত্রীর বেসিক রাইট পূরণ করে। তারপরও তো মাঝেমধ্যে বাইরে থেকে ভালো খাবার নিয়ে যায়, সারপ্রাইজ গিফট নিয়ে যায়। অন্যদিকে, স্ত্রীও মাঝেমধ্যে স্বামীর জন্য স্পেশাল কিছু করতে চায়, ভালো খাবার রান্না করে।
এই কাজগুলো অধিকারের বাইরের হিশাব। হিউম্যান ফিলিংসের কারণে মানুষ এগুলো করে।

আমাদের মায়েরা সারাক্ষণ বাবাদেরকে বলে না, "বাজার থেকে মাছ এনো, এটা আমাদের অধিকার।" আবার বাবারাও বলে না, "আজ গরুর ভূনা রান্না করো, এটা আমার অর্ডার।" ছোট্ট মেয়ে তার বাবাকে বলে না, "আব্বু, আমার স্কুলের খাতা দিও, এটা আমার অধিকার।"
এগুলো আপনি কারো মুখে শুনবেন না। কারণ, মানবজীবন সারাক্ষণ অধিকার-কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে চলে না।

আমাদের সমাজের নারীরা ইসলামের মৌলিক কয়েকটি অধিকার থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে ফিন্যান্সিয়াল রাইটস। সম্পত্তির উত্তরাধিকার, মোহরানা। এগুলো নিয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা প্রয়োজন। আলেম এবং সাধারণ সচেতন মানুষজন এগুলো নিয়ে কথা বলতে হবে।

কিন্তু, সমস্যা হচ্ছে এই বিষয়গুলোকে এজেন্ডা করে যারা লেখালেখি করছে, তারা আস্তে আস্তে নারীর অধিকার আন্দোলনকে নারীবাদী আন্দোলনে নিয়ে চলে যাচ্ছে। ভ্যালিড অধিকার চাওয়া দোষের কিছু ছিলো না। কিন্তু, অন্ধের মতো হাতি দেখা শুরু করলে ইসলামকে জীবনবিধান হিশেবে না দেখে ইসলামকে ব্যক্তিগত এজেন্ডা সার্ভের ট্যুল হিশেবে দেখা হবে। তখন খুঁজে খুঁজে বের করা হবে ইসলাম কোথায় নারীর অধিকার নিয়ে বলেছে।

ইসলামে যেকোনো অধিকার-কর্তব্যের বিধানে তিনটি জিনিস দেখা যায়। নারীবাদীরা হয় তাদের অজ্ঞতার ফলে, নতুবা তাদের চেরিপিকিং দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এগুলো এড়িয়ে যায়। এই তিনটি জিনিস হলো:

১. অধিকার (Righst)
২. দায়িত্ব-কর্তব্য (Responsibility)
৩. কর্তৃত্ব (Authority)

নারীবাদীরা শুধু প্রথমটা নিয়েই পড়ে থাকে- অধিকার। কিন্তু, ইসলাম একজন নারীকে কী কী দায়িত্ব পালনের কথা বলে সেটা নিয়ে তাদের কী-বোর্ড থেকে লেখা বের হবে না! আর 'অথোরিটি' শব্দটাই তারা এড়িয়ে যায়।
ফলে, তারা প্রশ্ন তুলে- 'নারীরা কি ঘরের কাজ করতে বাধ্য? নারীরা কি স্বামীর জন্য রান্না করতে বাধ্য? নারীরা কি স্বামীর মা-বাবার সেবা করতে বাধ্য?' ইত্যাদি।
অধিকার-দায়িত্বের জায়গায় কথার কথা বলা হলো- না, বাধ্য না।

এটা শুনেই তারা খুশিতে বাক-বাকুম। কিন্তু, পরের প্রশ্ন যদি করা হয়, এটার উত্তর তারা দিতে পারবে না। সেটা হলো, "স্বামী যদি তার স্ত্রীকে বলে আজকে আমার জন্য রান্না করো, আজকে ঘর পরিষ্কার করো, আমার অনুমতি না নিয়ে তুমি কোথাও বেড়াতে যাবে না" এগুলো মানতে কি নারী বাধ্য?
ইসলামের টেক্সট দেখুন। ইসলাম বলবে, এক্ষেত্রে নারী অবশ্যই স্বামীর আনুগত্য করতে বাধ্য।

ইসলামের যেকোনো বিধানের RRA বিবেচনায় না নিয়ে শুধু প্রথম R নিয়ে আলোচনা করলে সেটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। দ্বীনি সার্কেলে এই অজ্ঞতার চর্চা ইদানীং অনেক বেশি হচ্ছে।

- আরিফুল ইসলাম

পঠিত : ৩০৭ বার

মন্তব্য: ০