Alapon

পর্নোগ্রাফি ও মাস্টারবেশন: নীললোহিত থেকে উত্তরণ....



একটার পর একটা পর্নোগ্রাফি দেখেই চলছে রিদম। আমাকে দেখে ধড়ফড় করে ফোনটা লুকিয়ে ফেললো। আমি রিদমের কাছে গিয়ে বসলাম। সে অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

- আবার তুই পর্ন ভিডিও দেখা শুরু করেছিস? তুই না আমার কাছে প্রতিজ্ঞা করলি, আর কখনো দেখবি না!
- আমি যে পারছি না দোস্ত, নেশা হয়ে গেছে।
- হায় আফসোস! অথচ কিসে নেশা হওয়া উচিত ছিলো তোর, আর আজ কিসে নেশা হয়ে গেছে! উঠে বোস্।

রিদম একরাশ ক্লান্তি নিয়ে উঠে বসলো। সে আবারো হস্তমৈথুন করেছে । সপ্তাহে ৪-৫ বার করে। কখনো কখনো ৭-৮ বারও হয় আবার কোন সপ্তাহে ২-৩ বার। অষ্টম শ্রেণি থেকে ও হস্তমৈথুন করে আসছে।
রিদম বিষন্ন চোখে আমার দিকে তাকালো। ভীষণ মায়া হলো আমার, ছেলেটার চোখদুটি কি সুন্দর কিন্তু কি জঘন্য পাপে লিপ্ত!

- কিভাবে ছেড়ে থাকা সম্ভব! আমি তো বারবার একই ভুল করছি দোস্ত! যখন উত্তেজিত হয়ে যাই তখন আর কিচ্ছু ভালো লাগে না আমার। নেট চালু করেই পর্ন সাইটে চলে যাই। আমার দ্বারা সম্ভব না দোস্ত। আমি পর্ন ছাড়তে পারবো না।
- আচ্ছা ছাড়িস না। কিন্তু এই পর্নোগ্রাফি ধীরে ধীরে তোকে কোথায় নিয়ে যাবে সেটাও তো একটু ভাব। এটার বিষাক্ত ছোবল জীবনকে কতোটা অশান্তি আর অস্থিরতায় ভরিয়ে দেবে সেটাও একটু ভাব। একটা সময় আসবে যখন না পারবি কাউকে বলতে, না পারবি সইতে। আচ্ছা সেটাও বাদ দে। নিজের শরীরের কথাই চিন্তা কর, এটা শরীরের জন্য কতোটা ক্ষতিকর সেটা কি জানিস? তুই বিজ্ঞানমনস্ক একজন মানুষ, বায়োলজির স্টুডেন্ট, সেহেতু বিজ্ঞান এ ব্যাপারে কি বলে সেটাও তো একটু জানা উচিত নাকি?
- আচ্ছা। বল।
- বিজ্ঞান বলছে যখন কেউ পর্নোগ্রাফি দেখে তখন তার মস্তিষ্কে কিছু ডোপামিন রিলিজ হয়। এটা ঠিক সাইকেলের চাকার মতো, সাইকেলে যতো শক্তি প্রয়োগ করবি ততই যেমন চাকা গুলো ঘুরবে, ঠিক তেমনি যতই তুই পর্ন দেখবি ততই ডোপামিন রিলিজ হতে থাকবে।

আনন্দ পাওয়ার জন্য মস্তিষ্কে এটা রিলিজ হতে থাকে। অধিক পর্নোগ্রাফি দেখার কারনে ধীরে ধীরে ডোপামিন রিলিজ হবার মাত্রা বাড়তে থাকে, একসময় তুই সফটকোর পর্ন দেখে আর মজা পাবি না। তুই ঝুকে পড়বি হার্ডকোর পর্নোগ্রাফির দিকে। মানে তোর এই সাইকেলে পোষাচ্ছে না, স্পীড বাড়াতে মোটর লাগাতে হবে! হার্ডকোরের মতো ভীষণ জঘন্য পর্নগুলো তখন তোর নিকট প্রিয় হয়ে উঠবে! বিয়ের পর ঠিক এভাবেই স্ত্রীর সাথেও যৌনসঙ্গম করতে চাইবি, কেনোনা এটা তোর মস্তিষ্কে গেথে গেছে। যার ফলাফল হবে ধর্ষনের থেকেও মারাত্মক, ফলে তোর প্রতি তোর স্ত্রীর যে শ্রদ্ধা- ভালোবাসাটুকু ছিল সেটা চলে যাবে, সে তোকে ঘৃণা করতে শুরু করবে। আর এভাবেই পর্নোগ্রাফির হাত ধরে চমৎকার ভাবে তোর সুন্দর সাজানো সংসারটা ধ্বংস হয়ে যাবে।

এরপর ধর, রাস্তায় কোনো মহিলার দিকে তাকাতে গেলি, পর্নস্টারের দেহের মধ্যে খুঁজে বেড়ানো ব্যাপারগুলো তোর র‍্যানডম সেই মহিলাদের মাঝেও খুঁজে বেড়াবে। বাদ যাবে না নিজের মা, বোনও। অবাক হলি? ভেবে দেখ নিজের মা, বোনকে নিয়ে এসব মনে হলে কতোটা খারাপ লাগবে তোর!

শুধু তাই না, এটা একটা ভয়ংকর নেশাও। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মাদকসেবনের ফলে মস্তিস্কে যে হরমোন নিঃসৃত হয়ে আনন্দের অনুভূতি দেয়, পর্ন দেখলেও ঐ একই হরমোন একইভাবে কাজ করে। মাদকসেবনের ফলে ডোপামিন, অক্সিটোসিন প্রভৃতি হরমোন নিঃসরিত হয়ে মস্তিস্কে একটি পথ (pathway) তৈরি করে, যে পথে নিয়মিত হরমোন নিঃসরণের প্রয়োজন দেখা দেয়, যা ব্যক্তিকে মাদকাসক্ত করে তোলে। পর্ন দেখলেও ঐ একই হরমোন রিলিজ হয়। পর্ন-আসক্ত ও মাদকাসক্ত ব্যাক্তিদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে দেখা গেছে, তাদের মস্তিষ্কের গঠন হুবহু এক। তাই পর্নও একধরনের মাদক। এটা হিরোইন, গাঁজা, ইয়াবা, কোকেন, আফিম, ফেনসিডিল থেকেও লক্ষ গুনে মারাত্মক। তোরও ঠিক এমন নেশাই হতে চলছে।

- বলিস কি! তাহলে আমি গাঁজাখোর থেকেও খারাপ পর্যায়ে আছি!
- তা তো অবশ্যই। শুধু তাই না, এবার হস্তমৈথুন করলে কি কি সমস্যায় পড়বি একটু শুনে নে..

১. অকাল বীর্যপাত বা Premature Ejaculation এর অন্যতম কারন হলো হস্তমৈথুন। হস্তমৈথুন করার সময় তুই যেমন চেষ্টা করিস কত তাড়াতাড়ি চুড়ান্ত মুহূর্তে পৌঁছা যায়, দেরি হলে ভালো লাগেনা। এমনটা হতে থাকলে মস্তিষ্ক দ্রুত বীর্যপাত হওয়ার বিষয়টি গেঁথে নেবে, ফলে যৌনসঙ্গীর সাথে এমনটিই ঘটবে, দ্রুত বীর্যপাতের দরুন স্ত্রী অতৃপ্তই থেকে যাবে।

২. হস্তমৈথুনের কারনে Chronic Penile Lymphedema নামের ঘিনঘিনে একটি রোগে আক্রান্ত হবারও আশংকা থাকে। যার ফলে যৌনাঙ্গ কুৎসিত আকার ধারণ করে। (Springer Science+ Business Media New York 2013; Page 2)

৩. হস্তমৈথুন তোকে যৌনমিলনের জন্য অযোগ্য, অক্ষম বানিয়ে দিবে। মেডিকেল সাইন্সের ভাষায় একে বলা হয় লিঙ্গত্থানজনিত সমস্যা বা Erectile Dysfunction (ED)।
European Federation of Sexology এর প্রেসিডেন্টসহ আরও অনেক বিষেষজ্ঞদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে হস্তমৈথুন লিঙ্গত্থানজনিত সমস্যার অন্যতম কারন।

৫. হস্তমৈথুনের ফলে মানবদেহে টেস্টোস্টোরনের (Testosterone) পরিমান কমে যায়। শরীরে যদি টেস্টোস্টোরনের মাত্রা কমে যায়, তাহলে যেগুলো হতে পারে -
ক. ক্লান্তিভাব
খ. বিষণ্ণতা
গ. দুর্বল স্মৃতিশক্তি
ঘ. মনোযোগ কমে যাওয়া
ঙ. অতিরিক্ত অস্থিরতা
চ. কম শারীরিক ক্ষমতা
ছ. আত্মনিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়া
জ. পুরুষালি আচরন কমে যাওয়া
ঝ. আচরনে মিনমিনে ভাব আসা
ঞ. স্বাভাবিক যৌনক্রিয়াতে আগ্রহ না থাকা
ট. দ্রুত বীর্যপাত
ঠ. দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া
ড. মেরুদণ্ডে ব্যাথা
ঢ. পেশি সুগঠিত না হওয়া
ণ. শরীরে চর্বি জমে যাওয়া
ত. হাড় ক্ষয়ে যাওয়া
থ. চুল পড়ে যাওয়া

৬. স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতে সন্তান ধারনের জন্য একজন পুরুষের ৪২ কোটি শুক্রাণু প্রয়োজন, ২০ কোটি কম হলে সন্তান হবে না। নিয়মিত হস্তমৈথুনের ফলে শুক্রাণু সংখ্যা কমতে থাকে। পরিশেষে সন্তানের জন্য যথেষ্ট শুক্রাণু তৈরি করতে অক্ষম হয়ে যায় শরীর।

৭. তাছাড়া হস্তমৈথুনের কারনে প্রষ্টেট (মূত্রথলির) ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
সবচেয়ে সাংঘাতিক ব্যাপার হলো যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্ত পড়া। একটা গাঁজাখোরকে গিয়ে জিজ্ঞেস করিস, একদিন গাঁজা না খেলে কি অবস্থা হয় তাদের, এটা যেহেতু গাঁজা থেকেও এটা বেশি নেশাকর সেহেতু এমন একটা সময় আসবে যখন প্রত্যহ হস্তমৈথুন করতে হবে তোকে। যৌনাঙ্গ বিশ্রী আকার ধারণ করার পরও বিরত থাকতে পারবি না, কারণ নেশা যখন চরম আকার ধারণ করে, তখন সেটি না করে থাকতে পারা ভীষণ যন্ত্রণার। এভাবে চলতে থাকলে একদিন আর বীর্য বের হবে না। রক্ত বের হওয়া শুরু করবে।
আমার নিজের দেখা একটা ঘটনা শোন, ক্লাস সেভেন থেকে প্রত্যহ হস্তমৈথুন করা এক ছেলে ৬ বছর পর ২০১৮ সালে মারা যায়, সে প্রত্যহ এটা করতো। তার যৌনাঙ্গের নার্ভ গুলো দূর্বল হয়ে পড়ে, ভেতরের নালি ফেটে যায়, অবশেষে রক্ত আসা শুরু করে। রক্ত পড়তে পড়তে শেষে মরেই গেলো।
- বলিস কি! এতোকিছু তো জানতাম না দোস্ত। শুনেই তো ভীষণ ভয় লাগছে আমার।
- এর থেকেও ভীষণ ভয়ের হলো একটি হাদিস শরিফের বর্ননা। শুনবি?
- হুম বল।

- " রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "আমি স্বপ্নে একটি চুলা দেখতে পেলাম, যার ওপরের অংশ ছিলো চাপা আর নিচের অংশ ছিলো প্রশস্ত আর সেখানে আগুন উত্তপ্ত হচ্ছিল, ভেতরে নারী পুরুষরা চিৎকার করছিল। আগুনের শিখা ওপরে এলে তারা ওপরে উঠছে, আবার আগুন স্তিমিত হলে তারা নিচে যাচ্ছিল, সর্বদা তাদের এ অবস্থা চলছিল।

আমি জিবরাঈল (আঃ)কে জিজ্ঞাসা করলাম," এরা কারা"? জিবরাঈল (আঃ) বললেন, "এরা হলো যিনাকারী নারী ও পুরুষ। " (সহিহ বুখারী:১৩৮৬)

হস্তমৈথুনও এক ধরনের জঘন্যতম যিনা। ভেবে দেখ, পারবি এক সেকেন্ড জাহান্নামের আগুন সহ্য করতে? এই আগুন এতোটাই ভয়াবহ যে, এক সেকেন্ড না, এক মাইক্রো সেকেন্ড বা তার কম সময়ও পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি ব্যাক্তিটি যদি থেকে আসে তবে সে দুনিয়ায় সব সুখ শান্তি নিমিষেই ভুলে যাবে। সে বলবে- "আল্লাহর কসম সুখ শান্তি কি জিনিস আমি জানি না।" অথচ দুনিয়ায় আগুনই সহ্য হয়না আমাদের! জাহান্নামের আগুন থেকে কাউকে বের করে এনে যদি দুনিয়ার আগুনে রাখা হয় তবে শান্তিতে ঘুমাবে সে। ভেবে দেখ তাহলে! কতটা ভয়ানক সে আগুন। যদি তুই এমন আগুন সহ্য করতে পারিস তবে দেখ পর্ন। কর হস্তমৈথুন।

রিদম অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লো। আমি মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ বললাম। এতোদিন সে এটা নিয়ে তেমন চিন্তিত ছিলো না। অথচ কতো সিরিয়াস একটা বিষয়!
- না দোস্ত। আমি তাহলে ফিরে আসবো৷ একদিকে শরীরের ক্ষতি আরেকদিকে পরকালের ভয়ংকর আযাব! আমাকে ফিরে আসতেই হবে দোস্ত। কিন্তু কিভাবে বেঁচে থাকবো পর্ন থেকে? হস্তমৈথুন থেকে?

- এসব থেকে ফিরতে যেসব পদক্ষেপ অবশ্যই নিতে হবে সেগুলো বলছি। তবে মনে রাখিস, এসব করার জন্য দৃঢ় সংকল্প করা চাই। এটাকে একটা যুদ্ধ ক্ষেত্র মনে কর। তুই একজন যোদ্ধা, নিজের নফসের সাথে যুদ্ধ করবি। কলিজা ফেটে যাক, ভিতরে তোলপাড় শুরু হোক, প্রচন্ড ঝড় উঠুক, তবুও পর্ন দেখবি না হস্তমৈথুন করবি না। এভাবে না দেখতে দেখতে একসময় সহজ হয়ে আসবে। না দেখাটাই অভ্যাস হয়ে যাবে। এসব দেখার আর কোনো ইচ্ছে জাগবে না। ঘৃণা হবে। তবেই তুই যুদ্ধে জিততে পারবি। মনে রাখিস, এই যুদ্ধে জিতলেই জান্নাত পেয়ে যাবি।

কেনোনা রাসুল( সঃ) বলেছেন-
" যে ব্যক্তি আমাকে তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী জিনিস (জিহ্বার) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী জিনিস (যৌনাঙ্গের) নিশ্চয়তা (সঠিক ব্যবহারের) দেবে, আমি তার জন্য বেহেশতের নিশ্চয়তা দেবো।"
- (বুখারী ও মুসলিম)

তুই কি সেই জান্নাত চাস না? যে জান্নাত জাফরান ফুলের সৌরভে মুখরিত, বিশাল বিশাল উঁচু উঁচু অট্টালিকা, ইটগুলো হবে সোনা রুপার, হাজারো আশ্চর্য নেয়মতে ভরপুর, যা কেউ কখনো কল্পনাও করেনি। কল্পনাতে আসবেও না। দুনিয়াতে যেটুকু সুখ শান্তি আছে এগুলো তো কিছুই না, সামান্য নমুনা। অনন্ত যৌবন, চির সজিব এক প্রাণ নিয়ে ঝলমল করতে করতে হুরদের কাছে যাবি। সেই হুর এমন এক মেয়ে যাকে বানানো হয়েছে কার্পুরের উপাদান দ্বারা, তাতে মেশক ও জাফরানের সংমিশ্রণ দেয়া হয়েছে, তার উপর মুক্তা ও নূর জড়ানো হয়েছে, যদি সে সমুদ্রের লবনাক্ত পানিতে সেই মেয়ে মুখের লালা ফেলে, তবে সমুদ্রের পানি মিঠা হয়ে যাবে। যদি তার হাতের কব্জি সূর্যের সম্মুখে ধরা হয়, তবে সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে। যদি সে অন্ধকারে এসে উপস্থিত হয় সমস্ত ঘর আলোকিত হয়ে যাবে এবং ঝলমল করে উঠবে। যদি সে তার সাজসজ্জা সহকারে পৃথিবীতে এসে পড়ে, তবে সারা জাহান ঘ্রাণে মোহিত হয়ে যাবে, উজ্জল হয়ে যাবে। সে মেশক ও জাফরানের বাগিচায় লালিতপালিত হয়েছে। ইয়াকুত ও মারজানের শাখাসমূহে খেলেছে। সেই অপূর্ব চিরকুমারী মেয়ের সাথে মিলন ঘটবে জান্নাতে। দুনিয়ায় কখনো যে আশা মিটেনি সেখানে তা পূরণ হবে।

তোকে সেই জান্নাতের জন্য যুদ্ধে নামতে হবে দোস্ত । নফসের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। এটাকেই সবচেয়ে বড় জিহাদ বলা হয়েছে। সেই জান্নাতের তামান্না নিয়ে, হাতে আল্লাহ প্রেমের তরবারী নিয়ে একের পর এক সাফ করে দে সমস্ত শত্রুদের।

১. মেয়ে দেখা বন্ধ করে দে। সেটা হতে পারে বাস্তবে দেখা বা ছবিতে দেখা অথবা ভিডিও, টিকটক ইত্যাদিতে দেখা। কুদৃষ্টিকে শয়তানের অব্যর্থ তীর বলা হয়েছে। কুদৃষ্টি থেকে শুরু হয় কুকল্পনা, এরপর হস্তমৈথুন।

২. ফেসবুকে মেয়েদের রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করবি না। বর্তমানে যারা আছে আনফ্রেন্ড করা শুরু করে দে। মনে রাখবি, এক পাপ অন্য পাপকে টেনে আনে। মেয়ের ছবি, স্টাটাস, রোমান্টিক গল্প, কবিতা ইত্যাদি দেখলে তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করবে। যাস্ট ফ্রেন্ড থেকে শুরু হয়ে তা হস্তমৈথুনে গিয়ে ঠেকবে।

৩. যদি হারাম রিলেশন থেকে থাকে, তবে ফিরে আয়। অনেক কষ্ট হয় জানি, কিন্তু ফিরে আসতেই হবে। মেয়ের সাথে কথা বলা, ভিডিও চ্যাটিং ইত্যাদি ছাড়তে না পারলে হস্তমৈথুন থেকে বাঁচতে পারবি না।

৪. যেসব চ্যাটিং গ্রুপে ছেলে-মেয়েদের আড্ডা হয়, সেখান থেকে লিভ নে। এরা মজা করতে করতে ধীরে ধীরে ১৮+ কথাবার্তা বলতে শুরু করবে। এসব গ্রুপ হলো শয়তানের আখড়া।

৫. মাঝে মাঝে রোযা রাখবি৷ এটা নবী (সঃ) নির্দেশ দিয়েছেন। রোযা যৌন উত্তেজনাকে প্রশমিত করে।

৬. খুসু-খুজু (ধ্যান খেয়াল) ওয়ালা নামাজ শুরু করে দে, আল্লাহ পাক বলেন- " নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে"। [২৯:৪৫]

৭. নিজের উপর শাস্তির বিধান কর। কুদৃষ্টি বা কোনো মেয়ের সাথে চ্যাটিং বা পর্ন সাইটে ঢোকা ইত্যাদি হয়ে গেলেই সাথে সাথে ১০ রাকাআত নামাজ শাস্তিস্বরূপ পড়ে নে। দেখবি এসব অনেক কমে গেছে।

৮. দৈনিক কমপক্ষে ২০ বার মৃত্যুর স্মরণ করবি। মৃত্যুর স্মরণ যতো বেশি করবি, গুনাহের হার ততই কমবে। মৃত্যু যখন অবধারিত, আল্লাহর সামনে দাঁড়ানো যেখানে অবশ্যম্ভাবী, সেখানে গুনাহ করার কোনো মানেই হয় না।

৯. খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করবি। ভালো দ্বীনদার বন্ধুদের সাথে মিশবি। কথায় আছে সঙ্গ গুণে রঙ্গ ধরে। সোনার সাথে থাকতে থাকতে লোহার গায়েও একদিন সোনার ছটা লাগে!

১০. টেবিলের উপর ছোট্ট একটা কেলেন্ডার রেখে দে। সারাদিন হস্তমৈথুন আর পর্নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পর ঘুমাতে যাওয়ার আগে ওই দিনের তারিখে টিক চিহ্ন দে। এই টিক চিহ্ন ওই দিনের যুদ্ধজয়ের টিকচিহ্ন। মাস শেষে উন্নতি কতদূর হলো দেখবি। ইনশাআল্লাহ এমন একদিন আসবে সেদিন আর কেলেন্ডার লাগবে না। প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত হবে যুদ্ধজয়ের দিন-রাত।

১১. "মুক্ত বাতাসের খোঁজে" বইটা কিনবি। আমার মনে হয় এই একটা বই-ই যথেষ্ট, কারণ তোর ভেতর মানার গুণ রয়েছে।

ব্যাস, আর কিছু লাগবে না। মাত্র ১১ টা কাজ। এতটুকু করতে পারলেই যথেষ্ট।
রিদমের চোখ খুশিতে চকচক করে উঠলো, মনে হচ্ছে এসব ওর জন্য খুব সহজ । কারণ ওর গালফ্রেন্ড নেই, ব্রেকাপ হয়ে গেছে। আমার সামনে প্রতিজ্ঞাও করেছিলো হারাম প্রেম কখনো করবে না। বাদবাকি কাজগুলো ওর জন্য ব্যাপার না। যার মাথায় গালফ্রেন্ড নামক বোঝাটি নেই, সে এই যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত তরবারী চালাতে পারে। তবে গালফ্রেন্ড নামক বোঝাটি উড়িয়ে দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া আরও অধীক বীরত্ব রাখে।

- আমি সব করবো দোস্ত। আমায় জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হবে, জান্নাত পেতে হবে আর শারিরীক সমস্যা থেকেও বাঁচতে হবে। এসব ভালো লাগে না আর। হস্তমৈথুন করার পর ইচ্ছে করে নিজেকে খুন করে ফেলি। বিতৃষ্ণা আর অশান্তিতে হৃদয় ঢুবে যায় ৷ এই নীললোহিত থেকে আমি বাঁচতে চাই দোস্ত।

- মাশাল্লাহ। তোর কথা শুনে ভাল্লাগছে। এটা থেকে বেঁচে থাকতে হলে প্রথমত তোকে তওবা করে ফিরে আসতে হবে। এটা প্রথম কাজ। একটাবার চেয়ে দেখনা সেই মহান রবের ধৈর্যশীলতার দিকে তাকিয়ে!

তুই কি দেখছিস না প্রতিটা দিন তোর গুনাহের পরেও কিভাবে তোকে আগলে রাখছেন তিনি! কখনো খাবার কেড়ে নেননি, কখনো পানি কেড়ে নেন নি, কখনো অক্সিজেন কেড়ে নেননি, যে হাত দিয়ে তুই হস্তমৈথুন করতি সে হাত প্যারালাইজড করে দেননি, যে চোখ দিয়ে যেনার গুনাহ করতি সে চোখ নষ্ট করে দেননি, যে অঙ্গ দিয়ে যেনার গুনাহ করতি সে অঙ্গ অচল করে দেননি। কোটি কোটি ভাইরাস, কোটি কোটি জীবণু থেকে প্রতিনিয়ত বাঁচিয়ে দিচ্ছেন তোকে। সকালে, দুপুরে, রাতে পর্ন ভিডিও দেখার পরেও প্রতিদিন সকালের নাশতা, লান্স, ডিনার সবকিছুর ব্যাবস্থা করে দিয়ে গেছেন।

সেই রবের দিকে ফিরবি না তুই?
- ফিরবো দোস্ত। অবশ্যই ফিরবো। কিন্তু তিনি কি আমার মতো এতোবড় জঘন্যকে ক্ষমা করবেন?
- এটা কি বললি তুই! তোর পাপ কি রবের ক্ষমাশীলতার থেকে বেশি হয়ে গেলো! তবে মনে রাখ, সেই পাক জাতের কসম যার হাতে আমার প্রাণ তোর গুনাহ দিয়ে যদি সারা আসমান জমিনও ভরে যায়, তবে সেটা তার ক্ষমাশীলতার সামনে সামান্য মশা-মাছিও না। তুই যদি একবার খালেছ তওবা করতে পারিস, তোর গুনাহ যদি সমুদ্রের ফেনা পরিমানও হয় তবুও সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা করে দিবেন তিনি। এতটাই গফুরুর রহিম আমাদের রব! তুই কি জানিস, সেই মহান আল্লাহ পাক তোর ফিরে আসার অপেক্ষায় আছেন!
আশ্চর্য হয়ে গেলো রিদম।

- আমার মতো নাফরমানের জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন!
- হ্যাঁ দোস্ত, তিনি যে অপেক্ষায় আছেন এটা তো তিনি নিজেই বলেছেন। আমাদের অশ্লীলতা, যেনা ব্যাভিচার, হাজারো রকমের পাপাচার ইত্যাদি দেখে " সমুদ্র প্রতিদিন আল্লাহর কাছে অনুমতি চায়, হে আল্লাহ আপনি অনুমতি দিন আমি এই জাতির উপর উপচে পড়ে এদের ভাসিয়ে নিয়ে যাই, জমিন বলতে থাকে হে আল্লাহ আপনি আমায় অনুমতি দিন এই বেহায়া জাতিকে আমার ভিতর গিলে ফেলি, এই মিথ্যুক বদমাশ জাতিকে ধ্বংস করে দেই, ফেরেশতারা বলতে থাকে ইয়া আল্লাহ আপনি আমাদের অনুমতি দিন আমরা এদের সাফ করে দেই, আল্লাহ পাক তখন বলেন - যাও যাও নিজের কাজ করো এরা আমার বান্দা। এটা আমার আর আমার বান্দার বিষয়, যদি তোমার বান্দা হয় তবে মেরে ফেলো আর যদি আমার বান্দা হয় তবে অবশ্যই আমি তার জন্য অপেক্ষা করবো।" [মুসনদে আহমদ এর রেওয়ায়ত ]

তিনি তো এতটাই গফুরুর রহিম যে, এক পতিতা মহিলাকে পর্যন্ত ক্ষমা করে দিয়েছেন একটা কুকুরকে সামান্য পানি পান করানোর কারণে , তাহলে তোকে তিনি কেনো ক্ষমা করবেন না? তিনি তো ক্ষমা করার জন্যই অপেক্ষায় আছেন।

রিদম মাথা নিচু করে চোখ মুছলো। কেনো জানি খুব কান্না পাচ্ছে তার। নিজের উপর প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছে। কি এক আশ্চর্যের কথা! যেই আল্লাহ পাককে এতো জঘন্যতম গুনাহ করে অসন্তুষ্ট করেছি, সেই আল্লাহ পাক আমার মতো এতোবড় নালায়েক নাফরমানের উপর বিন্দু মাত্র প্রতিশোধ না নিয়ে বরং অপেক্ষা করছেন! ভাবতে লাগলো রিদম। কতোই না সু-মহান সেই আল্লাহ পাক! হায়! তার দিকে না ফিরে আমি এ কোথায় যাচ্ছি!

- একটা জিনিস চিন্তা কর দোস্ত। ধর, দুপুরে তুই মুরগীর রোস্ট দিয়ে দুই প্লেট বিরিয়ানি খাইলি। পেট ভরে খাইলি। এটাই কি শেষ? তোকে আর খেতে হবে না? আর ক্ষিধে লাগবে না? রাত হলে ঠিকই আবার ক্ষিধে লাগবে তোর। আবারও পেট ভরে খেতে হবে তোকে। ঠিক হস্তমৈথুনের ব্যাপারটাও এরকম, এখন তুই হস্তমৈথুন করলি, পর্ন দেখলি, এটাই কি শেষ? চাহিদা মিটে গেলো? আর করতে হবে না? কিছু সময় পর আবারও তো উত্তেজনা আসবে তোর। তাই বারবার করাটা কোনো সমাধান না দোস্ত। বরং কিভাবে না করে থাকা যায় সেটাই ভাবতে হবে তোকে।

আমি জানি প্রথম প্রথম ভীষণ কষ্ট হবে তোর। হাতের কাছে এন্ড্রয়েড ফোন। অন্ধকার রাত, আশেপাশে কেউ নেই। একা রুমে তুই। ফোর-জি নেট! পর্ণ সাইটে ঢুকলি, ক্লিক করা মাত্র ২ সেকেন্ডের ব্যাপার। নেমে আসবে লক্ষ লক্ষ পর্ন ভিডিও। কেউ দেখছে না তোকে, আমি দেখছি না, তোর বাবা-মা, ভাই-বোন দেখছে না, কেউই দেখছে না। তুই নিশ্চিন্ত মনে কম্বল মুড়ি দিয়ে ভিডিও অন করলি! অথচ ঠিক সেই মুহুর্তেও একজন তোকে দেখছে। যার দৃষ্টি থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই। আল্লাহ পাক তখনো তোর দিকে তাকিয়ে আছেন। ভেবে দেখ একবার, আল্লাহ পাক তোর দিকে চেয়ে আছেন, আর তুই হস্তমৈথুন করবি!
- না দোস্ত! ইশ কতো হাজার বার যে করেছি, আর তিনি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন! হায়! লজ্জায় মাথা কাটা যায়না কেনো আমার!

রিদম মাথা নিচু করে নিজের প্রতি প্রচন্ড আক্ষেপ নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি বাহবা দিলাম!
- এই লজ্জা থাকাটা ভীষণ দরকার দোস্ত। লজ্জা ইমানের বিশেষ শাখা।
- আমি এসব বাদ দিতে চাই দোস্ত। সত্যি বাদ দিতে চাই।

- আমি জানি, পারবি তুই ইং শা আল্লাহ। তবে এটা থেকে বেঁচে থাকতে একটু কষ্ট হবে । কোনো কিছু পেতে গেলে কষ্ট তো করতেই হয় তাই না? তুই আল্লাহকে পেতে চাস, জান্নাত পেতে চাই, জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চাস, এই কষ্টটুকু মানিয়ে নিতে হবে তোকে। উত্তেজনায় হৃদয় তোলপাড় হওয়া সত্বেও তুই পর্ন দেখছিস না, হস্তমৈথুনও করছিস না। ফলে ভীষণ কষ্টে হৃদয় ভেঙে চৌচির হয়ে যাবে তোর। কিন্তু তুই কি জানিস? আল্লাহ পাক এই ভগ্নহৃদয় কে কতটা ভালোবাসেন?

স্রেফ ইবাদত তো ফেরেশতারাও করে। বরং তারা মানুষ থেকেও বেশি করে। ইবাদতে মগ্ন ফেরেশতারা যে, যে অবস্থায় আছে তারা সেই অবস্থায় কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে। কেউ রুকু অবস্থায়, কেউ সেজদা অবস্থায় লক্ষ লক্ষ বছর আছে তো আছেই। তো মানুষেকে আল্লাহ পাক কেনো সৃষ্টি করলেন ? মানুষেকে আল্লাহ পাক আলাদা একটা ক্ষমতা দিয়েছেন যা ফেরেশতাদের দেন নি। সেটা হলো গুনাহ করার ক্ষমতা। গুনাহ না করে থাকাটাই মানুষের জন্য অনেক বড় একটা ইবাদত। আর মানুষ ক্ষমতা থাকা সত্বেও যখন গুনাহ করে না, গুনাহের মজাটা না নেয়, তখন সে কষ্ট পায়। হৃদয় ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। সেই হৃদয়েকে আল্লাহ পাক ভীষণ পছন্দ করেন। হাজারো কষ্ট দুঃখ যন্ত্রণা সহ্য করে প্রেমিকার কাছে গেলে একজন প্রেমিকা কতোটা খুশিতে আপ্লুত হয় সেটা তো জানিসই। তো আল্লাহ পাকের জন্য কষ্ট সহ্য করলে তিনি কেনো খুশি হবেন না? কেয়ামতের দিন এসব হৃদয় নূরে ঝলমল করতে থাকবে, যারা আল্লাহর জন্য নিজের নফসকে দমন করেছে। সামান্য হারাম মজা ত্যাগের কারণে এর বদলায় তারা চিরো সুখের মালিক আল্লাহকে পেয়ে গেছে! এটা তো লাভেই লাভ!

কতো চমৎকার ভাবেই না খাজা আজীজুল হাসান মাজযুব (রহsmile বলেছেন -
"হামনে লিয়া হ্যায় দারদে দিল
খো কে বাহার জিন্দেগী
এক গুলে তারকে ওয়াস্তে
হামনে চামন লুটা দিয়া"

অর্থাৎ, "আমি এই বাইরের চাকচিক্যময় দুনিয়ার (হারাম মজাকে) বিসর্জন দিতে গিয়ে আঘাতে আঘাতে আমার হৃদয়কে জর্জরিত করেছি,
একটি তাজা ফুলকে পাওয়ার জন্য একটি পূর্ণ বাগানই আমি উজাড় করে দিয়েছি!"
জানিস, আগে আমারও হস্তমৈথুনের ইচ্ছে জাগতো। একটাবার পর্ন সাইটে ঢোকার জন্য ভীষণ উত্তেজনায় ছটফটিয়ে উঠতো ভিতরটা। এই যন্ত্রণা এই ব্যাথা ভরা বুক নিয়ে তখন আল্লাহর কাছে হাত তুলে বলতাম-
হে আমার রব, দেখেননা আমার ভীষণ ইচ্ছে করছে পর্ন দেখতে, হস্তমৈথুন করতে। অথচ কি সাংঘাতিক ব্যাপার, আমি দূর্বল জীর্ণ শীর্ণ, অসুস্থ থাকলে এই উত্তেজনা তো আসতোই না বরং মেডিকেলের কোনো এক বেডে শুয়ে থাকতাম , অথচ তুমি আমায় দূর্বল করোনি, জীর্ণ শীর্ণ করোনি। স্বাস্থ্যবান করেছো। প্রতিদিন এতো এতো নিয়ামতে ভরিয়ে রেখেছো, খাওয়াচ্ছো, সুস্থ রাখছো, যার কারনেই না শক্তি পাচ্ছি! তোমার দেওয়া শক্তি নিয়ে কিভাবে তোমাকে অসন্তুষ্ট করবো আমার রব? তুমি তো আমায় কুকুর, শূকরও বানাতে পারতে বানাও নি, মানুষ বানিয়েছো, তুমি তো তোমায় অটিস্টিক বানাতে পারতে তাও বানাওনি, সুস্থ-সবল ভাবে বড় করেছো। সেখানে আমি কিভাবে এই কাজ করবো? এতো বড়ো অকৃতজ্ঞ আমি হতে পারবো না আমার রব। তোমায় অসন্তুষ্ট করা যাবে না। জীবন যায় যাক, কলিজা ফেটে যাক তবুও তোমায় অসন্তুষ্ট করবো না, কক্ষনও না। তুমি আমার এই যন্ত্রণা, এই উত্তেজনা দূর করে দাও! আমায় হালাল মজা দিয়ে দাও। আমি যে এ ব্যাপারে দূর্বল, গুনাহ করতে ভালোবাসি।

তখন আমার চোখ দিয়ে অশ্রুধারা প্রবাহিত হতে থাকে। ভীষণ কান্না চলে আসে। হৃদয়ের অস্থিরতা দূর হয়ে যায়, কেমন জানি মধুর এক অনুভূতি জেগে ওঠে, সত্যিকারের এক আশ্চর্য স্নিগ্ধ ভুবন ভেসে ওঠে, এক প্রেমময় রাজত্ব, যে রাজত্ব স্রষ্টা ও সৃষ্টির একান্ত প্রেমের রাজত্ব, কথপোকথনের অপূর্ব এক স্বাদ হৃদয়কে আকুল করে তোলে। এক প্রেমময় বসন্ত আমায় ঘিরে নেয় আমি অনুভব করতে থাকি আমার কষ্ট ভরা হৃদয়ের জখমের উপর আল্লাহ পাক স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছেন।

রিদম অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। জানিনা ওর মনের ভেতর এখন কি চিন্তা খেলা করছে। হঠাৎ আমার হাত চেপে ধরে কাঁদতে লাগলো রিদম।
- সেই অনুভূতির মজাটা কি গুনাহের মজা থেকেও বেশি দোস্ত ?
ওর এই প্রশ্ন শুনে নিজেও কেঁদে ফেললাম আমি। কি জবাব দিবো এই প্রশ্নের! কিসের সাথে কিসের তুলনা! কোথায় গুনাহের মজা আর কোথায় আল্লাহ প্রেমের মজা! নারকেলের ছাল চিবিয়ে কেউ যেনো জিজ্ঞেস করেছে- নারকেলের ছাল থেকেও কি ভিতরটা বেশি মিষ্টি? যেখানে হারাম মজাকে নগদ পাপের সাজা বলা হয়েছে! আর আল্লাহ প্রেম? হায়! কেউ যদি বুঝতো আল্লাহর জন্য গুনাহকে কোরবানি করে দেওয়ার মজা যে কতোখানি, কেউ যদি বুঝতো আল্লাহর জন্য হৃদয়ের রক্তক্ষরনের মজা যে কতোখানি, কেউ যদি বুঝতো আল্লাহর জন্য নিজের নফসের উপর ছুরি চালানোর কি স্বাদ! তাহলে সে গুনাহ করার কথা কখনো কল্পনাও করতে পারতো না, সব সময় সেই মহান প্রেমময় সত্তার ভালোবাসায় মগ্ন হয়ে থাকতো, যার কাছ থেকে প্রতিটা মুহুর্তে প্রশান্তির এক দরিয়া প্রবাহিত হতে থাকে তার প্রিয় বান্দাদের হৃদয়ে, অবিরত ছাকিনা বর্ষিত হতে থাকে প্রশান্ত অন্তরের উপর, সেই হৃদয়কে তো আল্লাহ পাক সিংহাসন বানিয়ে ফেলেন!

আমি চোখ মুছে, রিদমের হাত ধরে বললাম।
- আল্লাহর কসম করে বলছি দোস্ত, সকল সৌন্দর্য, সকল সুখ, সকল শান্তি, সকল আরাম যার থেকে উৎসরিত সেই মহান রবের জন্য গুনাহ ত্যাগ করার মজা জান্নাতে গেলেও পাবি না, তার জন্য কান্না করার মজা জান্নাতে গেলেও পাবি না, কোটি কোটি বৎসর বেঁচে থাকবি সেখানে এক ফোঁটা চোখের পানি বের চাইবি বের হবে না, দুনিয়ায় তার জন্য কান্না করার যে মজা তা না আছে টাকায়, না আছে অট্টালিকায়, না আছে মেয়ে দেখায়, প্রেম করায়, পর্ন দেখায়, না আছে হস্তমৈথুনে। তার জন্য কান্না কর। তার জন্য জজবা কোরবান করে দে, নিজের নফসের উপর ছুরি চালিয়ে দে, এই লজ্জত, এই মজা তো জান্নাতেও মিলবে না। জান্নাতে খাওয়ার মজা পাবি, হুরের সাথে মেলামেশার মজা পাবি, কোটি কোটি বৎসর যুবক থাকার মজা পাবি কিন্তু তার জন্য কান্না রোনাজারি, ছটফট করার মজা পাবি না!
রিদম শার্টের হাতা দিয়ে চোখে মুছলো।

- আমি তওবা করেছি দোস্ত। তুই এসব না বললে কখনো জানতামই না। আজ আমার চোখ খুলে গেছে। আমি বুঝে গেছি হারামে কোনো শান্তিই নেই। তুই হস্তমৈথুন না করে থাকতে পারলে আমি কেনো পারবো না! আমি এই অশান্তি বিতৃষ্ণা থেকে বাঁচতে চাই দোস্ত! আল্লাহকে পেতে চাই। আল্লাহ পাকের প্রেমে হৃদয় রাঙাতে চাই। এই গান্ধা, নোংরা জঘন্য পাপ ছেড়ে দিয়ে মহাপবিত্র সেই সত্তার ভালোবাসায় মোহিত হতে চাই।

"হে আল্লাহ আমিও তওবা করেছি, আমি আর কখনো পর্ন ভিডিও দেখবো না। এই দেখো সব কিছু ডিলিট দিচ্ছি, সব পর্ন ভিডিও ডিলিট করছি, হে আমার রব, আমি মেয়েদের সাথে আর চ্যাটিং করবো না, সবাইকে আনফ্রেন্ড করে দিবো, গ্রুপ গুলো থেকে লিভ নিবো, দৃষ্টিকে হেফাজত করবো। আমায় ক্ষমা করে দাও আমার রব। তুমি ক্ষমা না করলে আর কার কাছে যাবো বলো? কে আছে এই আসমান জমিনের দ্বিতীয় কোনো সত্তা! আমার এতো গুনাহের পরও তুমি আমায় আগলে রেখেছো, ধ্বংস করে দাওনি। আজও আমায় কাছে টেনে নাও... হে আমার রব..কাছে টানবে না? আমি ভীষণ নোংরা বলে... "

রিদম ভেউভেউ করে কাঁদতে লাগলো। কিছুতেই কান্না থামাতে পারছে না ও। এমন সময় এশার আজান দিলো। রিদম চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো।

- নামাজ পড়তে যেতে হবে দোস্ত। তুই একটু ওয়েট কর, আমি গোসল করে আসছি।
রিদম ওয়াশরুমে গোসলের জন্য ঢুকলো। আমি ওর বিছানা গোছাতে লাগলাম। নিজের অজান্তেই এক ফোঁটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো। আল্লাহ পাক এভাবেই তার বান্দাকে আপন বানিয়ে নেন, তিনি যাকে ইচ্ছে হেদায়েত দান করেন। তিনি মহাক্ষমাশীল, মহা প্রতাপশালী।

সাহায্যকারী কিতাব:
১. মুক্ত বাতাসের খোঁজে,
২. ফাজায়েলে সাদাকত,
৩. ফাজায়েলে আমল,
শাঈখ: হযরত কোরবান আলী।
বয়ানে : মাওলানা তারেক জামিল (দাঃমাঃ)।

পঠিত : ১০৫৯ বার

মন্তব্য: ০