Alapon

গণতন্ত্র সম্পর্কে ছাত্রশিবির



গণতন্ত্র-বিষয়ে আমার প্রিয় কাফেলা শহিদী ঈদ্গাহ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের অবস্থান কী?

মাসিক ছাত্রসংবাদের আগষ্ট সংখ্যার প্রশ্নোত্তর বিভাগে একজন ভাই মুহতারাম কেন্দ্রীয় সভাপতিকে প্রশ্ন করেছেন। প্রশ্ন এবং উত্তরটা নিম্নে প্রদত্ত হলো।

প্রশ্ন: ইসলামী ছাত্রশিবির কি গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা পরিবর্তনের মাধ্যমে ইসলাম কায়েমে বিশ্বাসী নাকি পরিপূর্ণ দাওয়াত, মোয়ামেলাত, মোয়াশারাত, জিহাদের মাধ্যমে খেলাফার সোনালী সূর্য আনার জন্য কাজ করে?

উত্তর: গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম কায়েম করার কোনো সুযোগ নেই। ইসলাম কায়েম করতে হবে কুরআন দিয়ে; খেলাফতব্যবস্থা দিয়ে। বর্তমান সময়ে গণতন্ত্র হলো ক্ষমতা পরিবর্তনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য পন্থা বা ব্যবস্থা। আর ক্ষমতার পরিবর্তন হলেই যে ইসলাম কায়েম হয়ে যাবে এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। বরং এটি একটি সুযোগ যে ক্ষমতা পরিবর্তন হলে ইসলাম কায়েমের পরিবেশ তৈরি হবে। আপনার মনে হয়তো আরেকটি বিষয় খটকা লাগতে পারে যে, প্রচলিত ভোটব্যবস্থা জায়েজ কিনা...? এটা সব থেকে সহজ ভাষায় বললে বলতে হবে- ভোট ব্যবস্থাকে সরাসরি নাজায়েজ বলার সুযোগ নেই। কারণ যে পন্থা ইসলাম সাপোর্ট করে তা হচ্ছে কেউ ক্ষমতার অভিলাষী হতে পারবে না কিন্তু প্রার্থী শুরা দ্বারা (পরামর্শের মাধ্যমে) নির্ধারিত হবে। এই সিস্টেমটি খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগেও ছিলো। তাহলে সিদ্ধান্ত কি? গণতান্ত্রিক উপায়ে যেহেতু লোকের মধ্যে দাওয়াতী কাজের সুযোগ আছে, মেশার, মোয়ামেলাতের সুযোগ আছে তাই সেটিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠিত পলিসি ভেঙ্গে খেলাফতের ঝাণ্ডা উড্ডয়ন করতে হবে ইনশাআল্লাহ।

- হাফেজ রাশেদুল ইসলাম

মুহতারাম কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

দেখুন, এই হচ্ছে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, আমরা গণতন্ত্রকে দ্বীন কায়েমের একমাত্র পথ, কিংবা গণতন্ত্র হচ্ছে এই যুগের জিহাদ ; ইত্যাদি মনে করি না ।

আমাদের কাজ মৌসুম ভিত্তিক না। বছরে বারোটি মাস, সপ্তাহে সাতটি দিন, দিনে ছব্বিশটা ঘন্টাই আমাদের কাজ আছে। আমরা দাওয়াত-তারবিয়াতের কাজ নিয়মিতই করে থাকি। এরমধ্যে গণ্তান্ত্রিক নির্বাচন আসে পাঁচ বছরে একবার। আর আমরা সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও নির্বাচন হবে, না করলেও হবে। বরঞ্চ ইসলামের প্রতি সহনশীল কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে ইসলাম বিদ্বেষীরা আরো বেশি সুযোগ পাবে, সে কারণে আমরা সৎ-নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও প্রদর্শনের একটা সুযোগ এবং মাধ্যম মনে করি গণতান্ত্রিক এই নির্বাচনকে।

এখন যে অবস্থা আমাদের বাংলাদেশি মুসলমানদের, সে অবস্থায় নানাবিধ কারণে জি/হাদ করার সামর্থও আমাদের বাংলাদেশের মুসলিমদের নেই। ভৌগলিক অবস্থানটা এখানে বড়োসড়ো একটা ফ্যাক্ট। সেজন্যে সামাজিক কাজ, দাওয়াত-তালিম-তারবিয়াত ও সাংগঠনিক কাজের পাশাপাশি যখন নির্বাচন আসে, তখন অন্তত ইসলামের পক্ষে যেন কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখা যায়, সেজন্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। যদি কখনো নির্বাচনে মুসলমানদের রায়ে আমরা ক্ষমতায় আসি, তাহলে হয়তো ধীরে ধীরে খেলাফত ফিরিয়ে আনারও চেষ্টা করা হবে (যদিও এটা কতোটা সম্ভবপর, অনেকের কাছে সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ একটা বিষয়)। তবে শাইখ সালেহ আল উসাইমীনের একটা ফতোয়া আছে এরকম যে, যেখানে আল্লাহর বিধান কায়েম নেই, সেখানে ইসলামপন্থীরা একজন হলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, যাতে সংসদে যখন আল্লাহ বিরোধী আইন তোলা হবে, তখন সেখানে যেন অন্ততপক্ষে প্রতিবাদটা করা যায়।

আর প্রচলিত গণতন্ত্রকে মূলগতভাবে ঔন না করার কারণে কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। জামায়তে ইসলামী যেখানে সুস্পষ্ট কুফুরি করা হচ্ছে, আল্লাহর বিধান লঙন করা হচ্ছে, সেটার সাথে কম্প্রোমাইজ করেনি। যদি কখনো সেই কম্প্রোমাইজ ইসলামের নামে করা হয়, তখন আমি নিজেও জামায়াতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেব ই্ন শা আল্লাহ। তবে এখন যেভাবে নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে একশ্রেণির মোজাহেদ তেড়ফুঁড়ে আসে, বা হুটহাট প্ল্যান-পরিকল্পনা ছাড়া মাথামোটার মতো কাজ করে ৬৩ জেলায় বোমা হামলা করে, আমি বা আমরা সেরকম মৌসুমী বিরোধী হবো না।

-রোহান আব্দুল্লাহ

পঠিত : ৫৬২ বার

মন্তব্য: ০