Alapon

কিংবদন্তী মওলানা মওদূদী রহিমাহুল্লাহ



ইসলামকে মানুষের সামনে সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্য প্রতিটি যুগে পৃথিবীতে এসেছিলেন অনেক মর্দে মুজাহিদ ও দার্শনিক। নিজে কোরআনের আলোয় আলোকিত হয়েছেন এবং নিজ জাতিকে আলোকিত করে গেছেন। বিংশ শতাব্দীতে এমন কিছু কিংবদন্তী দার্শনিক এসেছিলেন। ওনাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন 'সাঈয়েদ আবুল আলা মওদূদী রহিমাহুল্লাহ'।

তিনি ছিলেন একাধারে ইসলামি চিন্তাবিদ, সাংবাদিক, দার্শনিক। লিখে গেছেন অনেক গ্রন্থ। উনার লেখা 'তাফহীমুল কোরআন' নামক তাফসীর গ্রন্থটিসহ অসংখ্য মূল্যবান গ্রন্থ আজকে পুরোবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেক ভাষায় অনুবাদ হয়েছে।

উনার জন্ম ১৯০৩ সালের আওরঙ্গাবাদে। শিশু থেকে পিতা আহমদ হাসান মওদূদীর (রঃ) কাছেই থাকেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষা এখান থেকেই শুরু হয়। মাত্র নয় বছর বয়সেই আয়ত্ত্ব করেছেন আরবি ব্যাকরণ, সাহিত্য এবং ফেকাহর বিভিন্ন গ্রন্থ। চরিত্র নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় পিতা আহমদ হাসান মওদূদী (রঃ) সর্বদা নিজের চোখের সামনেই রাখতেন। কখনো বন্ধুদের সাথে মিশতে দিতেন না। এভাবেই বাল্যকাল পার হতে থাকে।

একটি অধঃপতিত মুসলিম উম্মাহকে কীভাবে তার উত্তম আদর্শে ফিরিয়ে নেওয়া যায়, কীভাবে তাকে আবার ইসলামের প্রাথমিক সেই নির্যাতনের কথা স্মরণ করে দিয়ে দিলের ভেতরে ইসলামকে জাগ্রত করতে হয়? কীভাবে এই জাতিকে নিয়ে আবারো ইসলামের সোনালি যুগের আশা করা যায়? এমন সব বিষয় নিয়েই চিন্তা করতে লাগলেন মওলানা মওদূদী (রঃ)। আকিদা-বিশ্বাস, চিন্তা ও কর্মে এই মুসলিম জাতি ছিল অধঃপতিত। যাদের আদ্যোপান্তে মিশে গিয়েছিল পাশ্চ্যাতের কালো হাওয়া। নিজস্ব সংস্কৃতিকে যারা ভুলতে বসেছিল। এমন এক উম্মাহকে নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের কথা চিন্তাও করা যায় না। লোক তৈরি করা, তাদেরকে ইসলামের সঠিক জ্ঞান প্রদান এবং যোগ্যতা সম্পন্ন লোকে পরিণত করা ছিল অনেক কঠিন কাজ। মওলানা মওদূদী (রঃ) এই কাজটিই শুরু করলেন। তিনি স্বপ্ন দেখতে লাগলেন ইসলামের প্রাথমিক যুগের মতো। যেখান থেকে উঠে এসেছিল হযরত ওমর (রা.), হযরত হামজা (রা.) ও হযরত খালিদ বিন ওয়ালীদ (রা.) এর মতো বীর। এই অধঃপতিত সমাজ তো সে সময়কার চেয়ে ভালো রয়েছে। এখান থেকেও এমন বীর তৈরি সম্ভব। তবে এমন বীর তৈরি হওয়ার জন্য প্রশিক্ষককে আগে তারচেয়ে বড়ো বীরত্বের অধিকারী হতে হয়। মওলানা মওদূদী (র.) কোনো অংশেই কম ছিলেন না।

মাসিক পত্রিকা 'তর্জমানুল কোরআন' এর মাধ্যমে আন্দোলনের সূচনা করেন। গঠন করেন বৃহত্তর সংগঠন 'জামায়াতে ইসলামী'। ঐক্যবদ্ধ করেন অন্যান্য আলেমদেরকে। ব্রিটিশ সরকারের বিপক্ষেও কাজ করেছেন।

১৯৩৭ সালে তৎকালীন আরেক উস্তাদ আল্লামা ইকবাল মওলানা মওদূদী (রsmile কে হায়দ্রাবাদ থেকে পাঞ্জাবে হিজরত করার পরামর্শ দেন। সেখানে চৌধুরী নিয়াজ আলী নামক এক এসডিও ইসলামের স্বার্থে তার প্রায় ৬৬ একর জমি দান করেন। আল্লামা ইকবাল মওলানা মওদূদীর (র.) সাথে পরামর্শ গ্রহণ করেন। তিনি এই সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য মাওলানা মওদূদীকে উত্তম ব্যক্তি মনে করেন। একপর্যায়ে মাওলানা মওদূদী ইকবালের আহ্বানে সেখান গমণ করে প্রতিষ্ঠা করেন দারুল ইসলাম ট্রাস্ট।

একটি রাষ্ট্রের জনগণকে ইসলামিক জীবনবিধান মানাতে যতটা পরিশ্রম করতে হয় তার থেকে কম পরিশ্রম করতে হবে যদি সেই রাষ্ট্রকেই ইসলামিক বানানো যায়। একটি ইসলামিক রাষ্ট্রের জনগণও ইসলামিক জীবন বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করবে। এই লক্ষ্যকেই সামনে রেখে সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (রsmile রাষ্ট্রকে ইসলামিক সংবিধানে পরিচালনার জন্য প্রচারণা শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে ইসলামি সংবিধান ও ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠার প্রচারণা এই কাজ শুরু করেন। ফলে তৎকালীন পাকিস্থান সরকার উনাকে কারাগারে বন্দী করে। আবার এর পরের বছরই ১৯৪৯ সালেই পাকিস্থান সরকার জামায়াতে ইসলামী সংবিধানের রূপরেখা গ্রহণ করেন। পরে মওলানা মুক্তি পান।

পাকিস্থানে ১৯০০ সাল থেকেই শুরু হয়েছিল কাদিয়ানী আন্দোলন। মুসলিমদেরকে তাদের নিজ পূর্ণাঙ্গ ধর্ম থেকে দূরে রেখে ব্যাক্তিজীবনেই ইসলামকে সীমাবদ্ধ করতে চেয়েছিল। বিশেষ করে আল্লাহ তা'য়ালার দেওয়া ফরজ বিধান 'জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ' থেকে মানুষকে দূরে রাখতে চেয়েছিল। তারা নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করে যদিও তারা অমুসলিম। আর কোরআনের চারটি হরফ তারা মানে না। শুধু মাত্র চারটি হরফ। মোহাম্মদ (সাsmile যে শেষ নবী, উনার পরে যে আর কোনো নবী আসবে না! আসতে পারে না, এটা তারা মানে না। ১৯৫৩ সালে মওলানা মওদূদী (রsmile তাদের সম্পর্কে একটি গ্রস্থ রচনা করেন। সেই গ্রন্থে তিনি কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম প্রমাণ করেন। এতে তারাও ক্ষেপে যায়। হাঙ্গামা সৃষ্টি করে। কিন্তু মওলানা মওদূদী (রsmile এর বই রচনার পরে অনেকগুলো ইসলামী দলগুলো ও তাদের ব্যাপারে সোচ্চার হয়। তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনেও মওলানা মওদূদী (র.)-কে গ্রেফতার করা হয়। উনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বড় বড় স্কলার'সদের দাবিতে এই আদেশ পরে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় আদালত। যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। অবশ্য পরে এটিও প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় আদালত।

১ম পর্ব!

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ইনশাআল্লাহ)

~আব্দুল্লাহ আল কাফি জোহা

পঠিত : ৪৭১ বার

মন্তব্য: ০