কিংবদন্তী মওলানা মওদূদী রহিমাহুল্লাহ
তারিখঃ ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৫:৪৭
শেষ পর্ব!
ইতোমধ্যেই জামায়াতে ইসলামীতে হাজার হাজার লোক যোগদান করেছে। একটি বড় ইসলামিক রাজনৈতিক দলে পরিণত হচ্ছে। এমতাবস্থায় সামরিক সরকারের মাথায় ঢুকে পড়ে কীভাবে এটিকে খতম করা যায়। ১৯৬৪ সালে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ৬০ জন নেতাকর্মীসহ মওলানা মওদূদী (রঃ)-কে গ্রেফতার করা হয়। এতে বিক্ষোভ করে দেশের জনতা। বিভিন্ন দেশের মুসলিম নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদ করেন। কিন্তু সামরিক সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।
১৯৩২ সালের পর থেকে মওলানা মওদূদী (রঃ) প্রকাশিত 'তর্জমানুল কোরআন' নামক পত্রিকাটি পাকিস্তান বা তাফহীমুল কোরআনের কাজ কেউ বন্ধ করেনি। না ভারত সরকার, না পাকিস্তান সরকার। কিন্তু সামরিক সরকার ১৯৬৪ সালে গ্রেফতারের পর তর্জমানুল কোরআনের ৬ মাস প্রকাশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। আর তাফহীমুল কোরআনের কাজ করাও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে অবশ্য আবার অনুমতি দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানের আদালতে রিট উত্থাপন করা হয়। এতে করে সরকার জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদেরকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। মওলানা মওদূদী (রঃ) এর বিপক্ষে অনেক অভিযোগও উত্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি মুক্তি পেয়ে সেসব অভিযোগের উপযুক্ত জবাব দেন।
এখানে দ্বিতীয় অভিযোগ উত্থাপন করেছিল যে, 'পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধী ছিলেন মওলানা মওদূদী (র.) এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনবরত সরকারের সাথে শত্রুতাপোষণ করেছেন'। এর জবাবে উনি বলেন, "এখানে দুটি অংশ! একটি হচ্ছে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অংশ, অপরটি প্রতিষ্ঠার হবার পর এর বিরোধীতা করা। অর্থাৎ প্রথমটি তাদের কাছে এতোই নিছক ভিত্তিহীন মনে হয়েছে যে এর সাথে ২য় বিষয়টিও জুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর প্রথম বিষয়টির সাথে তারাও জড়িত ছিল"। কি চমৎকার জবাব!
এভাবে তিনি সকল অভিযোগের জবাব দেন। এরপর শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্থান আলাদা হবে কিনা এর সিদ্ধান্ত। মওলানার অনেক প্রচেষ্টার ফসল অবশেষে আল কোরআনের তাফসীর লেখা শেষ করেন। প্রকাশ করেন তাফহীমুল কোরআন নামক এক অনন্য গ্রন্থ। যা বিশ্বের মুসলিমদেরকে আবার ভাবতে শিখিয়েছে। জ্ঞান বিজ্ঞান ও কোরআনের উপর ভিত্তি করে রচিত করেন এটি। ঘুমন্ত মুসলিমের বিবেককে নাড়া দিয়ে ওঠে তা।
তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিদেশ ভ্রমণ করেন। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশ পাড়ি জমান। মওলানার জীবনের বড় শখ ছিল 'নবী করিম সা: এর জীবন চরিত রচনা করার'। লেখা শুরু করেছিলেন। মক্কী জীবনে শেষ করেছেন কিন্তু মাদানী জীবন আর শেষ করা হয়নি। তবে অনেক গ্রন্থ রচনা করে গেছেন। অনেক গবেষণা মুসলিম বিশ্বকে উপহার দিয়ে গিয়েছেন। ১৯৬৮ সালে তিনি লন্ডনে পাড়ি জমান চিকিৎসার উদ্দেশ্যে কিন্তু শেষ পর্যন্ত রোগ নিরাময় হয়নি। ১৯৭৯ সালে বাফেলো শহরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেন। জানাযা হয় বাফেলো, লন্ডন, করাচী এবং লাহোরে। পৃথিবীতে বিস্তৃত ভক্তকুল শরীক হোন এই জানাযায়।
মওলানা মওদূদী রহিমাহুল্লাহর কিছু উল্লেখযোগ্য উক্তি:
★আমি যদি বসে পড়ি তাহলে দাঁড়িয়ে থাকবে কে?
★ভাই, আমার মনোভাব কী তাদের তো জানাই আছে। আমার অপরাধ কী তাদের তো জানাই আছে। তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হওয়ার চেয়ে ফাঁসিতে ঝুলাই অনেক ভালো।
★যামানা বড় নির্মম যাচাইকারী। আপনি কোনো কৃত্রিম উপায়ে এবং বানোয়াট পদ্ধতিতে তার পরীক্ষা নিরীক্ষায় খাটি বলে বিবেচিত হবেন না।
★ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতা এমন দুটি নৌকার মতো যা দুটি বিপরীত দিকে চলে।
মাওলানার কিছু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ:
ইসলাম ও পাশ্চাত্যের দ্বন্ধ, একমাত্র দ্বীন, হেদায়াত, সীরাতে সরওয়ারে আলম,সত্যের সাক্ষ্য, আল কোরআনের অর্থনৈতিক নীতিমালাসহ আরো অনেক গ্রন্থ। এমন অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করে চিরদিনের জন্য বিদায় নেন এই মর্দে মুজাহিদ। তবে উনার কাজের প্রতিদান আল্লাহ তা'য়ালা নিশ্চয়ই দিবেন। আল্লাহ তা'য়ালার কাছে এমন এক কিংবদন্তীর জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকান কামনা করছি। (আমিন)
~আব্দুল্লাহ আল কাফি জোহা
মন্তব্য: ০