Alapon

খাজা নাজিমুদ্দিনের মৃত্যু বার্ষিকী আজ !




বাঙালি মুসলমানের অন্যতম প্রধান নেতা,ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সৈনিক,যুক্ত বঙ্গ ও পূর্ব বঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর জেনারেল ও প্রধানমন্ত্রী আলহাজ খাজা নাজিম উদ্দিন । তিনি ১৯৬৪ সালের ২২ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে তাকে দাফন করা হয় ।

নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সদস্য হিসেবে নাজিমুদ্দিন দুইবার বাংলার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর মৃত্যু পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালে তিনি পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হন। ১৯৫১ সালে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের মৃত্যুর পর তিনি পাকিস্তানের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হন।

নাজিম উদ্দিন শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের সাথে সমান তালে পার্লামেন্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য জোর দাবী তোলেন এবং কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের বলেন,কেন তারা ঢাকার প্রতি ঈর্ষান্বিত তিনি তা বুঝতে পারেন না ।

তিনি উনিশ শ ত্রিশ সালে বাংলার শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন পাশ করেন । এই আইনের মাধ্যমে পূর্ব বাংলার পল্লী এলাকার দরিদ্র মুসলমানদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয় ।

নাজিম উদ্দিন বেঙ্গল গভর্নমেন্টের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে উনিশ শ পয়ত্রিশ সালে দরিদ্র কৃষকদেরকে মহাজনদের উচ্চ হারে সুদ থেকে রক্ষা করার জন্য বঙ্গীয় কৃষি ঋণ সালিশি বিল পাশ করেন । এ বিলের পথ ধরেই পরবর্তী কালে শেরেবাংলা ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন করেন ।

বাঙ্গালী মুসলমানের এরকম একজন উপকারী নেতার বিরুদ্ধে নানারকম বিষোদগার করা হয়েছে । কারণ তিনি ঢাকার নওয়াব পরিবারের সদস্য ছিলেন এবং মাতৃভাষা ছিল উর্দু ।
শুধু উর্দুভাষী হওয়ার কারণে বাঙ্গালী মুসলমানের জন্য যিনি সারাজীবন রাজনীতি করেছেন তার অবদান কি আমরা অস্বীকার করবো?

কোলকাতা কেন্দ্রিক বহু বাংলা ভাষী হিন্দু জমিদার ছিল । তারা বাঙ্গালী মুসলমানদের শোষণ ছাড়া আর কিছুই করেননি । তাদেরকে নিয়ে আমরা যথেষ্ট মাতামাতি করি কিন্তু আমরা আমাদের উপকারী বন্ধুকে চিনতে পারিনা ।

মুসলিম লীগের বিশিষ্ট নেতা হিসাবে খাজা নাজিমউদ্দিন এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তৎকালীন রাজনৈতিক মহলে বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন । তাঁরা উভয়ে ছিলেন বিদ্বান লোক এবং তাঁদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও ছিল যথেষ্ট । তবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও ব্যক্তিত্বের দিক দিয়ে খাজা নাজিমউদ্দিনের চেয়ে অনেক উঁচু মানের ।

ব্রিটিশভারত বিভাগের পরে পূর্ব পাকিস্তানে যে সকল নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হয়েছিল খাজা নাজিমউদ্দিন সেসব সমস্যার মোকাবেলা তেমন সফলভাবে করতে পারেননি । যদি তখন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পূর্ব বাংলা পেত তবে ঐ সকল সমস্যার সমাধান আরো অধিক সফলতার সাথে নিষ্পন্ন করা যেত । নাজিমউদ্দিনের প্রতি মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সমর্থনের কারণে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিক্ষুব্ধ হয়েছিলেন,যার ফলশ্রুতিতে পূর্ব বাংলা হয়েছিল অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত ।

যদিও নাজিমুদ্দিন এর মতো সৎ, ধার্মিক আর ভদ্র রাজনীতিক এদেশে আর হবে না। তার শত্রুরাও এবিষয়ে একমত। তারা তার সমালোচনা করতো এটা বলে যে তিনি তার ভাই শাহাবুদ্দিন এর কথায় চলতেন। মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি পার্টি তাকে নেতৃত্বে আনে।উল্লেখ্য তখন খাজা পরিবার থেকেই সম্ভবত ১৯ জন এম পি ছিল। মুসলিম লীগ এর বামপন্থীরা সোহরাওয়ার্দীকে নেতৃত্বের জন্য ফুসলালে তিনি জবাব দিয়েছিলেন, নাজিমুদ্দিন এর অধীনে আমি বেশ আছি। শেষ পর্যন্ত কুটকৌশলে শাহাবুদ্দিনকে কেন্দ্রীয় পরিষদে পাঠানোর মাধ্যমে তারা সোহরাওয়ার্দীকে নেতা বানাতে সক্ষম হয়।নাজিমুদ্দিন আইয়ুবের বিরুদ্ধেও ছিলেন।

এখনকার ইতিহাসে সোহরাওয়ার্দী গণতন্ত্রের মানসপুত্র! কিন্তু দেখুন ক্ষমতা না পাওয়ায় পাকিস্তানে না আসা,করাচিতে থিতু হওয়া,ভাষা আন্দোলনের বিরোধিতা, নিজের অধিনস্ত বোগরার আন্ডারে মন্ত্রী হওয়া,ক্ষমতায় গিয়ে ৯৮% স্বায়ত্তশাসন কায়েম হয়েছে ঘোষণা,তার সময়েই সংসদে স্পিকার হত্যা - ফলশ্রুতিতে সামরিক শাসন ইত্যাদি । আবার তার অনুসারীদের দিকে দেখুন। একজন সম্পর্কে তিনি নিজে বলতেন "মাই ইললিটারেট গ্রাজুয়েট "। কাকে বলতেন নিশ্চয়ই বুজেছেন।

পঠিত : ৪২৮ বার

মন্তব্য: ০