Alapon

ঘর থেকে বের হওয়ার দুআ এবং কিছু কথা...



বাহিরে বের হওয়ার জন্য দরজাটা খুললেন, তারপর বাহিরের দিকে তাকালেন, বাহিরের আবহাওয়া এবং নিজের মনোভাবের উপর ভর করে অনুমান করলেন দিনটি কেমন যাবে। দিনটা ভালো কাটবে নাকি একটি বাজে দিন পার করবেন। আপনার ভালো বোধ হয় নতুবা খারাপ। কিন্তু এই কয়েক মুহূর্তেই অনেক কিছু ঘটে যায়।

ঘর থেকে বাইরে বেরোনোর সময় রাসূল (সা) আমাদের খুব সুন্দর একটি দোআ শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। তো, আপনি ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়লেন, নির্ধারিত জিকির-আজকারগুলো করলেন। অতঃপর, দরজা খুলে যেই মাত্র বাহিরের পৃথিবীতে পদার্পণ করেন, রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, তখন পাহারাদার দুজন ফেরেশতারাও আপনাকে অনুসরণ করে। তখন যে দোয়াটি আপনি পড়বেন তা হলো - بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ - “বিসমিল্লাহি, তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।” এটা খুব কঠিন কোন দোয়া না।

“বিসমিল্লাহ” অর্থ “আল্লাহর নামে”, “তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ” অর্থ “আমি আমার সমস্ত আস্থা রাখছি আল্লাহর উপর”, “ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” অর্থ “এবং আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোনো শক্তি ও ক্ষমতা নেই।“

রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, নিজের ঘর থেকে বের হয়ে বাইরের জগতে প্রবেশ করার সময় যদি এই দোয়া পড়েন, ঐ ফেরেশতারা আপনার দোয়ার জবাব দিয়ে থাকেন। যখন আপনি বলেন “বিসমিল্লাহ”, তারা বলেন, “হুদিতা” অর্থাৎ “আল্লাহর নামে তোমাকে পথ দেখানো হলো।” এরপর আপনি বলেন, “তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ - আমি আল্লাহর উপর ভরসা করলাম।”, তারা বলেন, “কুফিতা”, অর্থাৎ “তোমাকে সুরক্ষা দেয়া হল সকল ক্ষতিসাধনকারীদের থেকে যে তোমার ক্ষতি করতে চায় আজকে।” এরপর, আপনি বলেন, “লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”, অর্থ “আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোন শক্তি ও ক্ষমতা নেই”, এটা শুনে ফেরেশতারা বলেন, “উকিতাহ” অর্থাৎ “এবং তোমাকে নিরাপত্তা দেয়া হলো সমস্ত বিপদ থেকে সারাদিনের জন্য।”

আপনি যখন এই দোয়া পড়বেন বাইরে যাওয়ার আগে, যে দুইটা শয়তান এসেছে আপনাকে আক্রমণ করার জন্য, তাদের একজন আরেকজনকে বলে, “আমরা কি করতে পারি ঐ লোকের সাথে, যে আল্লাহর নামে ফেরেশতাদের দ্বারা পথ প্রদর্শিত, সুরক্ষিত ও নিরাপদ?” অতএব, তারা বুঝতে পারে যে তারা আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না ঐদিন। তাই তারা আপনাকে ছেড়ে যায় সারা দিনের জন্য।

হযরত ওমর (রা) এর বিখ্যাত একটি ঘটনার সাথে এর শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। স্পষ্টত, হজরত ওমর এতোই পবিত্র ছিলেন যে, তিনি শুধু এই শব্দগুলো উচ্চারণ করতেন না, এগুলো জীবনে ধারণ করতেন। “বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।”

তার সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার এতই তীব্র বাসনা ছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, তিনি স্বাভাবিক ভাবেই সত্য পথে পরিচালিত হতেন। কারণ ফেরেশতারা যেন তার সাথে কথা বলতেন। তার নিজস্ব চিন্তা মিলে যেত আসমানী পথ প্রদর্শনের সাথে। তার আল্লাহর প্রতি এতটাই আস্থা ছিল যে, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন অন্য কেউই তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। ওমরের এমন ক্ষমতা এসেছিল আল্লাহর ক্ষমতার উপর তার অপরিসীম আস্থা থেকে।

এবং সেই বিখ্যাত ঘটনা, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কোন পথে হাঁটেন, শয়তান তখন অন্য পথ দিয়ে হাঁটত। তিনি যেই পথ দিয়ে যেতেন, শয়তান সেই পথে দৃশ্যমান হতো না।

এখন, আমরা কিভাবে এই শক্তি ও বিশ্বাসকে আমাদের জীবনে আনব? ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আমরা পড়ব- “বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।” “আল্লাহর নামে, আমি আমার সমস্ত আস্থা আল্লাহর প্রতি সমর্পণ করলাম এবং আল্লাহ ছাড়া কারও কোন শক্তি ও ক্ষমতা নেই”। এবং ফেরেশতারা প্রতিউত্তরে বলবেন, “তোমাকে পথ দেখানো হলো, সুরক্ষিত করা হলো এবং নিরাপত্তা দেয়া হলো।” এতে আপনার শয়তান জানল যে, আপনি ফেরেশতাদের নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে থাকবেন এবং আল্লাহ আপনাকে পথ দেখাবেন, সারাদিনব্যাপী।

-- শায়েখ ওমর সুলেইমান।

পঠিত : ৪২৫ বার

মন্তব্য: ০