Alapon

নিজের জন্মদিনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কি করতেন...



বছরের মাথায় জন্মদিন পালন খ্রিষ্টান বিশ্বের একটি সংস্কৃতি। পরবর্তীতে তা বিভিন্ন জাতির কৃষ্টিতে ও সমাজে ঢুকে পড়ে। বছরের শেষে তারিখ ঠিক রেখে জন্মদিন পালন করা হলেও সেটা মূলত জন্মদিন পালন করা হয়না বরং জন্মসাল কিংবা জন্মতারিখ পালন হয়।
আরো কথা আছে এভাবে জন্মদিন পালনে বছরের হিসেব যদি সৌর বছরে গণনা করা হয়, তাহলে চাঁদ কি দোষ করল! আর চাঁদের বছর মানলে সূর্য কি অপরাধ করল! যেদিন শিশু জন্ম নিয়েছে, সেদিন চাঁদ-সূর্য দুটোই তো আকাশে ছিল! জন্মদিন পালনে এমন হিসেব বিদঘুটে বৈ আর কিছু নয়!

আজ ২০২২ সালের ৭ই অক্টোবর শুক্রবার। যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করবে আগামী ২০২৩ সালের এই দিনে তা হয়ে যাবে শনিবার। পরবর্তী বছর হয়ে যাবে সোমবার। তাহলে প্রকৃত জন্মদিন তো মিলে নাই! মূলত জন্মদিন প্রতি সপ্তাহে একবার ফিরে আসে। কিন্তু সপ্তাহে জন্মদিন গণনা করলে তো বিষয়টি সস্তা হয়ে যায়, উপঢৌকনের ঘাটতি হবে বলে, এভাবে কেউ জন্মদিন পালন করেনা।

জন্মদিন কোন হাসি-খুশি, তামাশার দিন নয়। বরং এটা হল একজন মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন। তিনি যদি মরে যেতেন তাহলে এই দিনের দেখা পেতেন না! এটা স্মরণ করে, এক বছর অতিরিক্ত জীবন পেয়ে কে কতটুকু কাজে লাগাতে পেরেছে সেটা পরিমাপ করার দিন।

রাসুল (সা) নিজেও জন্মদিন পালন করতেন! নতুন কথা ভেবে অনেকেই তাজ্জব বনে যেতে পারেন। না বিষয়টি স্বয়ং রাসুল (সা) নিজেই বলেছেন। তিনি প্রতি সোমবার রোজা রাখতেন। এদিন রোজা রাখার জন্যে উম্মতকেও নসিহত করেছেন।

"রাসুল (সাঃ) কাছে সোমবারের রোজা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন এদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এদিনই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে" মুসলিম - ২৬৪০
এর দ্বারা বুঝা গেল, রাসুল (সাঃ) সোমবারে জন্মগ্রহণ করেছেন, জন্মদিন বছরে ৫২ বার ফিরে আসে। আল্লাহর কাছে তার কৃতজ্ঞতা জানাতে তিনি বছরের ৩৬৫ দিনের অন্যান্য আরো রোজার সাথে ৫২ টি রোজা শুধুমাত্র জন্মদিনের কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থেই রাখতেন!
আরো লক্ষণীয় আমরা জন্মদিনে হৈ হুল্লোড়ের সাথে ফকির তাড়িয়ে, টাকা উড়িয়ে, গলা ফুলিয়ে, উদর ভরিয়ে, নানা রকমের খানা গিলে থাকি। রাসুল (সাঃ) এই দিনের মহাত্বের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণের নিমিত্তে জন্মদিনে কোনদিনই খানা খান নাই!
সুতরাং কেউ যদি নিজের জন্মদিন প্রকৃতই পালন করতে চায়! তাহলে তিনি যেন রাসুল (সা) দেখানো পদ্ধতিতে, তার নিজের জন্মদিনে যেন রোজা রাখে। আল্লাহর এবাদত করে। মিসকিনদের খাওয়ায়। কোন অবস্থাতেই যেন এই দিনটাকে আনন্দ উৎসবের দিনে পরিণত না করে।

আল্লাহর রাসুল (সাঃ) জগতের মহা সম্মানিত ব্যক্তিদের অন্যতম। জগতময় তাঁর কাছে সালাম পাঠায়, বিশ্বজগতের জন্যে তিনি করুণার মূর্ত প্রতীক। তাই আল্লাহ সোবহানাহু ওয়া তায়ালা সোমবারের দিনটিকে বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত করেছেন। সেদিন রাসুল (সা) জন্মেছেন, সেদিন কোরআন নাজিল হয়েছে, সেদিন আসমানের দরজা খোলা হয়। সেদিনই তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন। তাই এদিন দুনিয়ার বহু মুসলমান রোজা রাখে। মানুষ নিজের জন্মদিন পালন না করে, সোমবারে রাসুল (সা) জন্মদিনে নিজে রোজা রেখে, তাঁর প্রতি সম্মান ও ভালবাসা জানায়। সাথে সাথে অন্য সকল বরকতের ভাগীদার হয়। তাই সবাই চলুন রোজা রাখার মাধ্যমে রাসুল (সাঃ) মীলাদুন্নবী পালন করি।

গরু-মহিষ কেটে, রাস্তা ঘাটে ফেস্টুন উড়িয়ে, আলীশান গাড়ীকে পালকির মত সাজিয়ে, শাহেন শাহ দুলহার মত আরামে বসে, লাখো ক্ষুধার্ত মানুষকে পায়ে হাঁটিয়ে, রথযাত্রার ন্যায় জনতার ঠেলা সামলে, গগন বিদারী চিৎকার দিয়ে গলা ফাটানো যায়। এমন প্রকৃতির সম্মান রাসুল (সাঃ) সাহাবীরা করেন নাই, প্রয়োজনও মনে করে নাই, এর কোন মামুলী গুরুত্বও ইসলামে নেই। এটা রাসুলের প্রতি ভালবাসা নয় বরং নিজেদের অহংকারিত্ব আর দ্বীনের জ্ঞানের মূর্খতা প্রকাশের নামান্তর। চলুন এসব লোক দেখানো, মানুষের বানানো অনুষ্ঠান পালন থেকে বিরত থাকি।

- নজরুল ইসলাম টিপু

পঠিত : ১১৩৬ বার

মন্তব্য: ০