Alapon

আজ কবি গোলাম মোস্তফার মৃত্যুবার্ষিকী

\

আজ কবি গোলাম মোস্তফার মৃত্যুবার্ষিকী । ১৯৬৪ সালের ১৩ অক্টোবর কবি গোলাম মোস্তফা ঢাকায় ইন্তেকাল করেন । আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয় ।

তিনি বাংলা সাহিত্যে মুসলিম রেঁনেসার কবি নামে পরিচিত। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে গোলাম মোস্তফা এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। আধুনিক বাংলাসাহিত্যে ইসলামী ভাবধারার সাহিত্য রচনায় রয়েছে তাঁর বিশেষ কৃতিত্ব। বাঙালি মুসলমানের জাতীয় জাগরণ তাঁর সাহিত্যেকর্মের মূল উদ্দেশ্য।

গোলাম মোস্তফার অনন্য কীর্তি বিশ্বনবী। বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় গ্রন্থগুলোর অন্যতম এ গ্রন্থখানি। বাংলা ভাষায় রচিত হযরত মুহম্মদ (সাsmile-এর জীবনী গ্রন্থগুলোর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ বিশ্বনবী। গোলাম মোস্তফা রাসুল প্রেমিক সাহিত্যিক। তাই রাসূল সা: এর প্রতি অগাধ প্রেম-ভালবাসা থেকেই তিনি বিশ্বনবী রচনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে বইটির প্রথম সংস্করণের ভূমিকায় তিনি লিখেন, মহাপুরুষদের জীবন শুধু ঘটনার ফিরিস্তিনহে; শুধু যুক্তি-তর্কের কণ্টক শয্যাও নহে; সে একটা ভক্তি, শ্রদ্ধা, বিস্ময় ও অনুভবের বস্তু, তাহাকে বুঝিতে হইলে একদিকে চাই সত্যের আলোক ও বিজ্ঞানের বিচার বুদ্ধি, অপরদিকে ঠিক তেমন চাই ভক্তের দরদ, কবির সৌন্দর্যানুভূতি, দার্শনিকের অন্তর্দৃষ্টি আর চাই প্রেমিকের প্রেম। আশেকে রসূল না হইলে সত্যকার রসূলকে দেখা যায় না।

কবি গোলাম মোস্তফার সমকালে রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী কমিউনিজম ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এর প্রভাব ভারতীয় উপমহাদেশেও পড়ে। এতে অনেক তরুণ বাঙালি মুসলিম মার্কসবাদ-লেলিনবাদের কমিউনিজম আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে উঠে। এ প্রেক্ষাপটে গোলাম মোস্তফা ইসলাম ও কমিউনিজম নামে একটি রাজনৈতিক গ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মার্কসবাদ ও লেলিনবাদের অসারতা প্রমাণ করেছেন।

পাশাপাশি ইসলামই যে মুক্তির একমাত্র পথ সে কথাও তিনি তুলে ধরেছেন। এই গ্রন্থে তিনি ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম এবং ধর্মীয় চিন্তা-মতবাদ সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন। এ গ্রন্থটি রচনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি ভূমিকায় লিখেন, মুসলিম তরুণদের অনেকেই আজকাল কমিউনিজমের প্রতি বেশ খানিকটা ঝুঁকিয়া পড়িয়াছে বলিয়া মনে হয়। ইসলামী আদর্শকে পরিত্যাগ করিয়া তাহারা কমিউনিজমের রূপে ভুলিয়াছে। কমিউনিজমই হইল তাহাদের কাছে আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা। যেন দুনিয়ায় এমন সুন্দর ব্যবস্থা আর কোথাও ছিল না, নাই বা হইবে না। ইসলামের বিধান অপেক্ষা কমিউনিজমের বিধানই যে শ্রেষ্ঠতর এবং বর্তমান যুগ সমস্যার সমাধানে এই ব্যবস্থাই যে সর্বাপেক্ষা উত্তম, ইহাই তাদের ধারণা। এই ভ্রান্ত ধারণা দূর করিবার জন্যই আমার এই প্রয়াস।

কবি সুরা ফাতেহার কাব্যানুবাদ করেছিলেন,প্রার্থনা নামে ।
প্রার্থনা
~~~~~
অনন্ত অসীম প্রেমময় তুমি
বিচার দিনের স্বামী।
যত গুণগান হে চির মহান
তোমারি অন্তর্যামী।
দ্যুলোক-ভূলোক সবারে ছাড়িয়া
তোমারি চরণে পড়ি লুটাইয়া
তোমারি সকাশে যাচি হে শকতি
তোমারি করুণাকামী।
সরল সঠিক পূণ্য পন্থা
মোদের দাও গো বলি,
চালাও সে-পথে যে-পথে তোমার
প্রিয়জন গেছে চলি।
যে-পথে তোমার চির-অভিশাপ
যে-পথে ভ্রান্তি, চির-পরিতাপ
হে মহাচালক,মোদের কখনও
করো না সে পথগামী

কবি গোলাম মোস্তফা পেশায় ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক । আতি সরল-সোজা মানুষ। বালিগঞ্জ সরকারি হাই স্কুলে তিনি সত্যজিৎ রায়ের শিক্ষক ছিলেন। তার যশোরী উচ্চারণ নিয়ে সত্যজিৎ মৃদু রসিকতা করেছেন তার শৈশবস্মৃতিতে। তিনি ছিলেন অতি উদার ও ইসলামি ভাবাদর্শের কবি। পাকিস্তান আন্দোলনের এক অবিচল সমর্থক ছিলেন গোলাম মোস্তফা। নজরুল ইসলামের হিন্দু-মুসলমানের সমন্বয়ী সংস্কৃতি ও ভাবধারার তিনি ছিলেন বিরোধী, পাকিস্তানবাদী কবিতা ও গান রয়েছে তার বহু। তার একটি গান ইস্কুলে গাওয়া হতো:

পাকিস্তান জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ।
পূর্ব বাংলার শ্যামলিয়ায়,
পঞ্চনদীর তীরে অরুণিয়ায়,
ধূসর সিন্ধু মরু সাহারায়
ঝাণ্ডা জাগিয়ে আজাদ।

গোলাম মোস্তফা ছিলেন রোম্যান্টিক কবি, কোনো ইনটেলেকচুয়াল বা চিন্তাবিদ ছিলেন না। তখনকার অনেকের মতোই পাকিস্তান ও ইসলাম বিষয়ে প্রচুর কবিতা রয়েছে তার। সেগুলো চল্লিশ, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের প্রথম দিকের রচনা। ১৯৪৯-এ তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তখনই প্রকাশ করেন ‘নওবাহার’ নামে একটি সচিত্র মাসিক পত্রিকা। পত্রিকার ‘উদ্দেশ্য’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল :

“নওবাহার কোনো দলীয় প্রচার-পত্র নয়। এ নিছক একখানি সাহিত্যপত্র। ...বাস্তব রাজনীতির কোন আলোচনা ইহাতে থাকিবে না, তবে রাজনৈতিক চিন্তা ও দর্শন- যাহা সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত- তাহার আলোচনায় বাধা নাই।... পাকিস্তান-বিরোধী কোন বিষয়বস্তুও ‘নওবাহারে’ স্থান পাইবে না।... আমাদের তহজীব ও তমুদ্দনের রূপায়ণ হইবে ‘নওবাহারের’ অন্যতম লক্ষ্য। নওবাহার কমিউনিজম রুখিবে। নারী-প্রগতি ‘নওবাহারের’ অন্যতম সাধনা হইবে।...


কবি গোলাম মোস্তফা একবার কাজী নজরুল সম্পর্কে লিখলেন:

‘কবি নজরুল ইসলাম/ বাসায় একদিন গিছলাম/ ভায়া লাফ দেয় তিনহাত/ হেসে গান গায় দিন রাত...।
নজরুল এর উত্তরে লিখলেন:
‘গোলাম মোস্তফা/ দিলাম ইস্তফা।’

পঠিত : ১২৭৮ বার

মন্তব্য: ০