Alapon

উমার রা.-এর নেতা নির্বাচন পদ্ধতি



মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি নিয়ে উমার রা. চিন্তিত ছিলেন। বিশেষভাবে মুহাম্মদ সা.-এর ইন্তেকালের পর নেতৃত্ব নিয়ে সৃষ্ট ঝামেলা ওনাকে কষ্ট দিয়েছে। তাই তিনি ইসলামের মূলনীতির মধ্যে থেকে একটি নেতা নির্বাচন পদ্ধতি দাঁড় করিয়েছেন। যাতে মুসলিমরা বিনা ঝামেলায় তাদের নেতা নির্বাচন করে নিতে পারেন। এতে তাঁর ঈমানের গভীরতা, মুসলিম জাতির কল্যাণ কামনায় তার আন্তরিকতা ও নিঃস্বার্থপরতারই প্রমাণ মেলে। মুমূর্ষ অবস্থায়, যখন তাঁর খাদ্যনালী ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে তখন তিনি পরবর্তী নেতা নির্বাচন নিয়ে পেরেশানীতে ছিলেন।

ইসলামিক রাষ্ট্রের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে তার বাস্তব ও স্বচ্ছ ধারণারই প্রতিফলন তাঁর এই পদ্ধতিতে। আল্লাহর রাসূলের মৃত্যুর পর মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব কে দেবেন তা রাসূল সা. স্পষ্ট করে মৃত্যুর পূর্বে জানিয়ে যাননি। তবে তিনি ইশারা করে গেছেন। আল্লাহর রাসুল সা.-এর জীবনের শেষভাগে কোন কোন সাহাবী মুসলিম উম্মাহর পরবর্তী নেতৃত্ব সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করেন। তার পর কে নেতা হবেন এটাই ছিল তাদের জিজ্ঞাসা। জবাবে আল্লাৱহর রাসূল সা. বলেন,

তোমরা যদি আবু বকরকে আমীর বানাও তাকে পাবে আমানতদার, দুনিয়ার প্রতি নির্মোহ এবং আখিরাতের প্রতি আকৃষ্ট। তোমরা যদি উমারকে আমীর বানাও তাকে পাবে শক্তিধর, আমানতদার এবং আল্লাহর ব্যাপারে সে কোন নিন্দুকের নিন্দায় পরোয়া করবে না। আর যদি আলীকে আমীর বানাও- আমার মনে হয় না তোমরা তা করবে- তাহলে তাকে পাবে পথ প্রদর্শনকারী ও পথ প্রাপ্ত ব্যক্তি। সে তোমাদেরকে সঠিক পথ চালাবে।” মুসনাদে আহমাদ
এখান থেকে আল্লাহর রাসূল সা. কিছু ব্যক্তিকে সাজেশন এটাই নির্দেশ করেছেন যে, মুসলিমরা নিজেরাই তাদের নেতা বানিয়ে নেবে বা নির্বাচন করে নেবে। এটা তাদের দায়িত্ব। নেতা নির্বাচনে এটাই মূলনীতি যে, মুসলিমরা নিজেরাই তাদের মধ্যেকার যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করবে।

নেতা নির্বাচনে নেতার যোগ্যতা কী হবে?
হযরত আবু মাসউদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : মানুষের ইমামতি করবে সে-ই, যে কুরআন ভাল পড়ে। যদি কুরআন পড়ায় সকলে সমান হয়, তবে যে সুন্নাহ বেশি জানে। যদি সুন্নাহেও সকলে সমান হয়, তবে যে হিজরত করেছে সে। যদি হিজরতেও সকলে সমান হয়, তবে যে বয়সে বেশি। কেউ যেন অপর ব্যক্তির অধিকার ও সেইস্থলে ইমামতি না করে এবং তার বাড়িতে তার সম্মানের স্থলে অনুমতি ব্যতীত না বসে। (মুসলিম)

হযরত আবু সায়ীদ খুদরী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : যখন তিন ব্যক্তি হবে, তখন যেন তাদের মধ্য হতে একজন নেতৃত্ব দেয় এবং নেতৃত্বের অধিকার তার, যে কুরআন অধিক ভাল পড়ে। (মুসলিম)

এরকম যতগুলো হাদীস এসেছে তা সবই এই হাদীসদ্বয়ের অনুরূপ।

হাদীসটিতে রাসূল সা. নেতা হওয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় গুণাগুণ বা যোগ্যতাগুলো যে ক্রম অনুযায়ী উল্লেখ করেছেন, তা হচ্ছে-
ক. শুদ্ধ করে পড়াসহ কুরআনের জ্ঞান থাকা,
খ. সুন্নাহ তথা হাদীসের জ্ঞান থাকা,
গ. হিজরত করা এবং
ঘ. বেশি বয়স/ প্রাজ্ঞতা/ অভিজ্ঞতা

অনেক স্কলার হিজরতের ব্যাখায় বলেছেন ইসলাম প্রতিষ্ঠায় যারা গুরুত্বপূর্ণ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। মদীনার প্রাথমিক সময়ে হিজরত ছিল সবচেয়ে বড় আমল যা করতে সবচেয়ে বেশী ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। হিজরত করেছেন তারা যারা দ্বীন কায়েমের জন্য তাদের সকল সহায় সম্পত্তি আত্মীয় স্বজন বিসর্জন দিয়েছেন। এখনো আমাদের দেশে যারা দ্বীন কায়েমের পথে নিয়োজিত আছেন, শ্রম দিচ্ছেন, ত্যাগ স্বীকার করছেন তারা নেতা হওয়ার জন্য অধিকতর যোগ্য। যাই হোক এগুলো হল নেতার গুণাগুণ।

নেতা নির্বাচনে নেতার অযোগ্যতা কী হবে? অথবা কোন কারণে নেতা তার যোগ্যতা হারাবে?
ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, তিন ব্যক্তির নামাজ কবুল হবে না। যে কোন গোত্র বা জাতির ইমাম হয়েছে অথচ তারা তাকে পছন্দ করে না, যে নামাজ পড়তে আসে দিবারে। আর দিবার হল- নামাজের উত্তম সময়ের পরের সময়কে এবং যে কোন স্বাধীন নারীকে দাসীতে পরিণত করে। (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)।

ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, তিন ব্যক্তির নামাজ তাদের মাথার উপর এক বিঘতও ওঠে না অর্থাৎ কখনই কবুল হয় না। ক. যে ব্যক্তি কোন গোত্র বা জাতির ইমাম হয় কিন্তু তারা তাকে পছন্দ করে না, খ. সেই নারী যে রাত্রি যাপন করেছে অথচ তার স্বামী সঙ্গত কারণে তার ওপর নাখোশ এবং গ. সেই দুই ভাই যারা পরস্পরে বিচ্ছিন্ন। (ইবনে মাজাহ)

আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেন, ‘হে আবদুর রহমান ইবনে সামুরা! তুমি নেতৃত্ব চেয়ে নিয়ো না। কেননা চাওয়ার পর যদি তোমাকে দেওয়া হয়, তবে তার দায়-দায়িত্ব তোমার ওপরই বর্তাবে। আর যদি চাওয়া ছাড়া তোমাকে দেওয়া হয়, তবে এ ব্যাপারে তোমাকে সাহায্য করা হবে। (বুখারি)

আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও আমার গোত্রের দুই ব্যক্তি নবী (সা.)-এর কাছে এলাম। সে দুজনের একজন বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে আমির নিযুক্ত করুন। অন্যজনও অনুরূপ কথা বলল। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যারা নেতৃত্ব চায় এবং এর লোভ করে, আমরা তাদের এ পদে নিয়োগ করি না।’ (বুখারি)

উপরিউক্ত হাদীসগুলো থেকে একথা স্পষ্ট কোন ব্যক্তির নেতৃত্বের যোগ্যতা থাকার পরও দুই কারণে নেতৃত্বের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন
১. অধিকাংশ মুসলিমদের ভোট বা সমর্থন না থাকলে তিনি ইমামতি তথা নেতা হওয়ার যোগ্যতা হারান।
২. তিনি নেতৃত্বের প্রত্যাশী হলে নেতৃত্বের যোগ্যতা হারান

আবু বাকর রা. কী করেছেন?
আবু বাকর রা. তাঁর মৃত্যুর সময় শীর্ষস্থানীয় সাহাবিদের সাথে আলোচনা করে ‘উমারকে পরবর্তী খলীফা নির্বাচিত করেন। যখন আবু বাকর রা. ‘উমারকে নিযুক্ত করেছিলেন, তখন সাহাবারা জানতেন, আবু বাকরের মৃত্যুর পর সবচেয়ে শক্তিশালী ও দায়িত্ব পালনের যোগ্য উমারই ছিলেন। সুতরাং আবু বাকর সিনিয়র সাহাবিদের সাথে আলোচনা করে ‘উমারকেই খলীফা নিযুক্ত করেছিলেন। এতে কেউ অমত করেনি। সবার মাঝে ঐকমত্য ছিল এবং সবাই উমারের কাছে অকুণ্ঠচিত্তে আনুগত্যের বাইআত দিয়েছিল।

উমার রা.-এর পদ্ধতি
উমার রা. ভেবেছেন সব সময় নেতৃত্বের জন্য সর্বগ্রহণযোগ্য লোক হয়তো পাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে কী করা যাবে? তাই উমার রা. পরিস্থিতিকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করেন। খলীফা নিযুক্ত করার জন্য উমার রা. যে পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন তা ছিল প্রখ্যাত কয়েকজন সাহাবির সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন। তিনি রাসূলের ছয়জন সাহাবির সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন। তারা প্রত্যেকে ছিলেন বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবি। রাসূল সা. আমৃত্যু তাদের ওপর সন্তুষ্ট ছিলেন। প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন গুণাবলির অধিকারী হলেও তারা সবাই ছিলেন খলীফা হওয়ার জন্য অধিকতর যোগ্য। কীভাবে খলীফা নির্বাচিত হবে, নির্বাচন প্রক্রিয়ার সময়কাল কতটুকু হবে, খলীফা হওয়া জন্য কতজনের সমর্থন লাগবে সবকিছু ‘উমার নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।

এছাড়াও তিনি আবার কয়েকজন ব্যক্তিকে উপদেষ্টা পরিষদের পর্যবেক্ষক, পাহারাদার ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকারী হিসেবে নিযুক্ত করে দিয়ে যান। তারা সভার কার্যবিধি পর্যবেক্ষণ করবেন এবং সমন্বিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধাচরণকারীদের শায়েস্তা করবেন। কোনো বিশৃঙ্খলা যেন না হয়, সেজন্য তিনি এ নিয়মও করেছিলেন যে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের সেই সভায় অন্য কেউ প্রবেশ করবে না, ভেতরের আলোচনা বাইরের কেউ শুনতে পারবে না।

উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ছয়। তারা হলেন, ‘আলি ইবনু আবু তালিব, উসমান ইবনু আফফান, ‘আবদুর-রাহমান ইবনু আউফ, সাদ ইবনু আবি ওয়াক্কাস, যুবাইর ইবনুল-আওয়াম এবং তালহা ইবনু উবাইদুল্লাহ। এরা সবাই ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত। সাঈদ ইবনু যায়েদ ইবনু নুফাইল জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০জন সাহাবির একজন হওয়া সত্ত্বেও তাকে অন্তর্ভুক্ত না করেননি উমার রা.। কারণ তিনি ছিলেন উমারের নিজ গোত্র বানু আদির লোক।

উমার উপদেষ্টা কমিটিকে নির্দেশ দেন, তাদের যেকোনো একজনের বাড়িতে তারা একত্রিত হবেন এবং পরবর্তী খলীফা নিযুক্তির বিষয়ে পরামর্শ করবেন। তাদেরকে তিনদিনের সময় বেঁধে দেন। উমার রা. সর্বোচ্চ তিনদিনের সময় নির্ধারণ করে দেন। বস্তুত নির্বাচনের জন্য এটা ছিল যথেষ্ট। যদি এর চেয়ে বেশি সময় লেগে যায়, তাহলে বোঝা যাবে তাদের ভেতর চরম দ্বন্দ্ব চলছে। এজন্য উমার বলেন, “চতুর্থ দিন আসার আগেই তোমরা তোমাদের মধ্যের একজনকে নেতা নির্বাচিত করবে। আর এই তিন দিন রাষ্ট্রের অন্তর্তীকালীন ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করবেন ও সালাতের ইমামতি করবেন সুহাইব আর রুমি রা.। মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ এবং আবু তালহা আনসারি এ সভার কার্যবিধি পর্যবেক্ষণ করবেন। তারা তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছেন কিনা এবং কেউ বাড়াবাড়ি করছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করবেন।

আমিরুল মু'মিনিন উমার রা. ভারপ্রাপ্ত শাসক সুহাইব রা.-কে বললেন, “তিন দিন তাদের জামাআতে তুমি ইমামতি করবে, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের এক বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করবে। তারা ঐকমত্যের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর যদি কেউ যদি বিশৃঙ্খলা করে তবে তার শাস্তির ব্যবস্থা করবে। উমার রা. আরও বলেন, ৬ জনের মধ্যে অধিকাংশের রায় হবে চূড়ান্ত। যদি উভয়পক্ষে ৩ জন করে মত দেয় তাহলে অতিরিক্ত হিসেবে আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের রায় নেবে। তাতে একদল সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাবে। যদি আব্দুল্লাহর রায় পছন্দ না হয়, তবে আব্দুর রহমান ইবনে যেই রায়ের পক্ষে থাকবেন তা চূড়ান্ত হবে। এরপর আবদুর-রাহমান ইবনু আউফকে জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “কতই-না জ্ঞানী, প্রজ্ঞাসম্পন্ন মানুষ তিনি। তিনি হিদায়াতপ্রাপ্ত এবং আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত। তার কথা তোমরা শুনবে। সুহাইব রা.-কে নির্দেশ দিয়ে একদল সৈনিককে বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে নিযুক্ত করেন।

উমার আবু তালহা আনসারিকে ডেকে বলেন, “হে আবু তালহা, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তোমার মাধ্যমে ইসলামকে সাহায্য করেছেন। পঞ্চাশজন আনসারের সমন্বয়ে একটি বাহিনী গঠন করো। উপদেষ্টা পরিষদের সাথে থাকো, তাদের মধ্য থেকে একজনকে খলীফা মনোনয়ন করার কাজটি পর্যবেক্ষণ করো।” তিনি মিকদাদ ইবনুল-আসওয়াদকে বলেন, “আমাকে দাফন করার পর খলীফা মনোনয়নের জন্য এ ছয় জনের পরিষদটিকে একটি বাড়িতে একত্র করবে।” এরপর উমার রা. ইন্তেকাল করেন। ভারপ্রাপ্ত শাসক সুহাইব রা. জানাজার নামাজের ইমামতি করেন।

এরপর ৬ জনের উপদেষ্টা পরিষদ একত্রিত হন। তারা একে অপরকে যোগ্য মনে ভোট দিলেন। ৬ জন থেকে পরামর্শের মাধ্যমে ৩ জনে নেমে এলো। আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রা., আলী রা. এবং উসমান রা.। আব্দুর রহমান রা. বলেন, আমি নিজেকে প্রত্যাহার করলাম খিলাফতের দায়িত্ব থেকে। আপনারা যদি আমাকে দায়িত্ব দেন তাহলে আমি মদিনাবাসীর পরামর্শ নিয়ে বাকী দুইজনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ জনকে বাছাই করতে পারবো। বাকী ৫ জন সাথে সাথেই রাজি হলেন এবং তার সিদ্ধান্তই মেনে নিবেন বলে সম্মত হন। আব্দুর রহমান প্রথমে আলী রা.-কে জিজ্ঞাসা করলেন কে উপযুক্ত খিলাফতের জন্য? তিনি বললেন, উসমান রা.। একইকথা উসমান রা.-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আলী রা.-কে উপযুক্ত বলেন।

এরপর আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রা. শুরা বৈঠক শেষ করে মদিনার জনগণের সাথে পরামর্শ করতে লাগলেন। সমস্ত সাহাবা, সমস্ত গোত্রপ্রধান, মুসলিমদের সাথে পৃথক পরামর্শ, দলবদ্ধ পরামর্শ গ্রহণ করতে থাকলেন। সারা মদিনায় একটা নির্বাচনী উতসব বিরাজ করতে থাকলো। আব্দুর রহমান ইবনে আওফ মদিনায় আগমণকারী বাইরের ব্যবসায়ী দলের কাছ থেকেও পরামর্শ নিলেন। বিশিষ্ট মহিলাদের থেকেও পরামর্শ নিলেন আমীর নির্বাচনের ব্যাপারে। শুধু তাই নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকেও পরামর্শ নিলেন। বেশিরভাগ লোকজন উসমান রা.-এর প্রতি তাদের পরামর্শ ব্যক্ত করলেন।

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আব্দুর রহমান রা. সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছার চেষ্টা করেছেন। এরপর তিনি নতুন আমীর ঘোষণার সময় জানালেন। মসজিদ ভর্তি মানুষ। তিল ধারণের জায়গা ছিল না। উসমান রা. ও আলী রা.-কে ডেকে নিয়ে আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রা. মিম্বরে দাঁড়ালেন। সাথে সুহাইব রা.-এও উপস্থিত ছিলেন। সবার উপস্থিতিতে তিনি উসমান রা.-এর পক্ষে বেশিরভাগ মানুষের সমর্থনের কথা জানালেন। এরপর হাত ধরে বললেন, আপনি কি আল্লাহর কিতাব, রাসূল সা.-এর সুন্নাহ, আবু বকর ও উমারের কর্মপন্থা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার অঙ্গিকার করছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এভাবে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে উসমান রা.-এর শপথ গ্রহণ হলো।

এরপর আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রা. উসমান রা.-এর হাত ধরে উপরের দিকে তাকিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো (তিন বার)। আমার জিম্মায় খেলাফতের নেতৃত্ব বাছাইয়ের যে দায়িত্ব ছিল তা উসমানের জিম্মায় দিলাম। আলী রা. প্রথমে উসমান রা.-কাছে আনুগত্যের বাইয়াত নিলেন। উপস্থিত সবাই এবার উসমান রা.-এর কাছে আনুগত্যের বাইয়াত নিতে থাকলেন। উমার রা.-এর প্রচেষ্টায় নেতা নির্বাচনের একটি দারুণ পদ্ধতি দাঁড়িয়ে গেল যার মূলনীতি গ্রহণ করা হয়ে রাসূল সা.-এর হাদিস থেকেই এবং প্রসিদ্ধ সাহাবাদের হাত ধরেই এই পদ্ধতি ডেভেলপ হয়েছে।

বলাবাহুল্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নেতা নির্বাচনের এই পদ্ধতিকে গ্রহণ করেছে নিজ দলের জন্য এবং বাংলাদেশে যাতে এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা তৈরি হয় তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি প্রস্তাবনা জামায়াত থেকে এসেছে।

পঠিত : ৯২৬ বার

মন্তব্য: ০