Alapon

এরদোয়ান দ্যা চেঞ্জ মেকার (বই রিভিউ)

ইস্তাম্বুলের রাস্তায় রুটি আর শরবত ফেরী করে বিক্রি করছে এক সুদর্শন যুবক। বিক্রির এই টাকা দিয়ে নিজের পড়াশুনার খরচ সাথে ছোট ভাইদের পড়ার খরচ চলবে। তারপরও যদি সেখানে কিছু টাকা বেঁচেই যায়, তবে সেই টাকা দিয়ে বই কেনা হবে। নিজের ব্যক্তিগত লাইব্রেরীর জন্য বই। একসময় এই ফেরীর টাকা দিয়েই, সেই যুবক সমৃদ্ধ এক পাঠাগার তৈরী করে ফেলেন। সেই ফেরী করে শরবত বিক্রি করা ছেলেটি কে জানেন?

সেই ছেলেটিই আজকের তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট রিজেব তাইয়্যেপ এরদোয়ান।

ছাত্র জীবনে তিনি তুখোড় মেধাবী ছাত্র ছিলেন, এমন গতবাধা কথা আমি বলব না। তবে তরুণ বয়সে তিনি যে একজন তুখোড় ফুটবলার ছিলেন, তা বলতে পারি। তাঁকে দলে নেবার জন্য তুরষ্কের সেসময়ের অনেক ক্লাবই ভালো রকমের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু এরদোয়ানের বাবা চান নি বলে, এরদোয়ানের ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও ফুটবল জগতে ক্যারিয়ার গড়া হয় নি। কে জানে, তিনি যদি ফুটবলার হতেন তবে ইতিহাস হয়তো ভিন্নভাবে রচিত হত...

বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিনি ইস্তাম্বুলের মেয়র হলেন। তিনি যখন মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন ইস্তাম্বুল শহরটির ভগ্ন দশা। শহরের মোড়ে মোড়ে ময়লার স্তুপ, পানি সরবরাহ প্রায় বন্ধ। সেসময় অবস্থাটি এমন ছিল যে, ইস্তাম্বুলের মানুষরা পানির অভাবে সপ্তাহে মাত্র একদিন গোসল করতে পারতেন!

এরদোয়ান রাষ্ট্রিয় কর্মচারী, দলের কর্মী এবং স্বয়ং নিজেই রাস্তায় নেমে গেলেন। প্রথমেই পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থার সমাধান করলেন। তারপর পানি। বছর খানিকের মধ্যে এরদোয়ান ইস্তাম্বুলের চেহারা প্রায় রাতারাতি পরিবর্তন করে ফেললেন। এরদোয়ানের এই সফলতার পিছনের কারণটি হল জবাবদিহিতা।

এরদোয়ান তাঁর অফিস স্টাফদের সাথে নিয়ে পার্টি অফিসে উপস্থিত হতেন। তারপর সেখানে পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছে নিজের সহকর্মীরাসহ জবাব প্রদান করতেন। এভাবেই ধীরে ধীরে এরদোয়ান ইস্তাম্বুলকে অন্যতম পরিষ্কার শহরের রূপান্তর করলেন এবং পর্যটন খাতে ব্যাপক উন্নতি সাধন করলেন। উল্লেখ্য, পৃথিবীর পর্যটন প্রধান শহরগুলোর মধ্যে ইস্তাম্বুল অন্যতম।

‘এরদোয়ান দ্যা চেঞ্জ মেকার’ বই থেকে প্রথম তিনটি অধ্যায় লিখতেই লেখাটি বিরাট বড় হয়ে গেল। আর দির্ঘ করব না, শুধু একটি অধ্যায় নিয়ে বলি।

এই অধ্যায়টি পড়তে গিয়ে আমি অনেকবার শিহরিত হয়েছি, কখনো মনের অজান্তেই চোখের কোনা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়েছে। আর খুব সম্ভবত এই অধ্যায়টিই বইটির অন্যতম স্পর্শকাতর অধ্যায়।

২০১৬ সালের ব্যর্থ সেনা কূয়্যে শহীদ এবং গাজীদের ঘটনা পড়তে গিয়ে আমি হতভম্ব হয়েছি। যে জাতির বাবারা তাঁদের সন্তানকে সাথে নিয়ে শহীদ হয়, যে জাতির মায়েরা দুধের শিশুকে ঘরে রেখে জালিমের বিরুদ্ধে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়, সেই জাতি সত্যিই মহান। এই জাতির সার্বভৌমত্ব কেয়ামতের আগ পর্যন্ত অক্ষুন্ন থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

লেখক হাফিজুর রহমান ভাই রচিত ‘এরদায়ান দ্যা চেঞ্জ মেকার’ বইটি পড়ে কিন্তু একবারের জন্যও মনে হয় নি, এটিই লেখকের প্রথম বই। মনে হচ্ছিল, এ বহু অভিজ্ঞ এক শানিত হাতের লেখা। আল্লাহ আপনার লেখার যোগ্যতাকে আরো বাড়িয়ে দিন।

আর বই এর প্রচ্ছদ,গেটআপ,মেকআপ এবং বাইন্ডিং নিয়ে শুধু একটা কথাই বলব- গার্ডিয়ান থেকে প্রকাশিত এ যাবতকালে সব বইয়ের চেয়ে এই বইটির প্রচ্ছদ এবং বাইন্ডিং চোখে পড়ার মত হয়েছে। তবে তাতেও আমি সন্তুষ্ট নই। এর চেয়ে আরো ভালো কাজ হওয়া উচিত।

পঠিত : ১৪২২ বার

মন্তব্য: ০