Alapon

রেঁনেসার কবি কবরে, মুসলিমরা ঘুমের ঘোরে...



সারাজীবন অধঃপতিত মুসলিমদের জাগাতে, দুঃখদুর্দশায় কাবু হওয়া মানুষদের কথা তুলে ধরতে যার কলম সদা সজাগ ও জাগরূক ছিলো। যার ইসলামের সুমহান বাণি প্রচার ও ইসলামের প্রসারিত আদর্শে আদর্শিত হওয়ায় হারাতে হয়েছিলো ঢাকা বেতারের চাকরি। সস্ত্রীক ১১ জন সন্তান নিয়ে ভীষণ টানাপোড়েনে দিন কেটেছিলো ব্রিটিশ ভারতের প্রখ্যাত সৈয়দ বংশের এই বিখ্যাত মানুষটির।

যার প্রবল অর্থসংকটে চিকিৎসক হতে পারেনি ছেলে আর চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে মেয়ে। যার জীবন সায়াহ্নে কবরের জায়গাটুকুনও মেলেনি। তিনি আর কেউ নন। তিনি কবি সৈয়দ ফররুখ আহমদ। যাকে আমরা মুসলিম রেনেসাঁর কবি হিশেবে চিনি।

যে মুসলিম নবজাগরণে তিনি উন্মুখ ছিলেন। যাদের ঘুমন্ত বিবেক জাগ্রত করতে দিনমান চালিয়ে গেছেন কলম। লিখেছেন–

❝কত যে আঁধার পর্দা পারায়ে ভোর হলো জানি না তা
নারঙ্গী বনে কাঁপছে সবুজ পাতা।
দুয়ারে তোমার সাত সাগরের জোয়ার এনেছে ফেনা
তবু জাগলে না? তবু তুমি জাগলে না?❞
তাদের ঘুমন্ত বিবেক জাগেনি আজও। তারা এখনো উদ্ভ্রান্তের মতোই পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে। কবি চলে গেছেন। রেখে গেছেন, তার অনবদ্য লেখনী সম্ভার। তার ভাবনা, কখনো না কখনো কেউ না কেউ জেগে উঠবেই। তাই তো আহ্বান করেছেন বারেবার।
❝রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে?
তুমি মাস্তুলে আমি দাঁড় টানি ভুলে;
অসীম কুয়াশা জাগে শুন্যতা ঘেরী।❞

নিজে দারিদ্রকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন এবং অসহায়, হতদরিদ্রদেরও আহ্বান করেছেন। যেন এক আল্লাহ ছাড়া অন্যের গোলামি করতে না হয়।

❝তোরা চাসনে কিছু কারো কাছে খোদার মদদ ছাড়া
তোরা পরের উপর ভরসা ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়া❞

ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের সব অন্যায়ের জবাব দিয়েছেন। কখনো প্রতিবাদী হাতে, কখনোবা প্রতিরোধী মাঠে। ভাষা আন্দোলনে ছিলো যার অনন্য অবদান। আর তাকেই কিনা থাকতে হয়েছিলো অনাহারে! চিরতরে বিদেয় জানাতে ধরনা দিতে হয়েছিলো দুয়ারে-দুয়ারে!
আক্ষেপ করে তাই আহমদ ছফা বলেছিলেন–

“আজকের সমগ্র বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদের মত একজন শক্তিশালী স্রষ্টা নেই। এমন একজন স্রষ্টাকে অনাহারে রেখে তিলে তিলে মরতে বাধ্য করেছি আমরা। ভবিষ্যত বংশধর আমাদের ক্ষমা করবে না।”

- হাসিবুল ইমাম।

পঠিত : ৩০৭ বার

মন্তব্য: ০