Alapon

পরীক্ষায় ভালো করার ১০ টি কার্যকারী টিপস এবং কিছু কথা...



পরীক্ষার প্রস্তুতি তো নেওয়া হলো, খাতায় লেখার পদ্ধতিও কিন্তু জানা দরকার। তা নাহলে দেখা যাবে খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষার খাতায় ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে না পারার কারণে আশানুরূপ রেজাল্ট আসবে না। তাহলে চলুন জেনে নিই পরীক্ষার খাতায় লেখার সেরা ১০টি টেকনিট!

১. মনকে রিল্যাক্সড বা প্রশান্ত করা:
প্রশ্নপত্র পাওয়ার আগে চোখ বন্ধ করুন, গভীর শ্বাস নিন ও আল্লাহর উপর ভরসার দুআ করুন,
"حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ، نِعْمَ الْمَوْلَىٰ وَنِعْمَ النَّصِيرُ
উচ্চারণ : "হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল, নি’মাল মাওলা ওয়া নি’মান-নাসির"
অর্থ : "আল্লাহ তাআলাই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই হলেন উত্তম কর্মবিধায়ক; আল্লাহ তাআলাই হচ্ছে উত্তম অভিভাবক এবং উত্তম সাহায্যকারী।"
এটি আপনার যে কোনো চাপ বা উদ্বেগের সাথে মোকাবিলা করবে এবং আপনার মনকে সতেজ করবে ইনশাআল্লাহ। পরীক্ষা ভালো হওয়ার জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে। যথাযথ তাওয়াক্কুল বা ভরসা থাকলে আল্লাহ তাআলা পরীক্ষার পেরেশানি ও দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন। আপনি সুন্দরভাবে পরীক্ষা দিতে সমর্থ্য হবেন। কারণ মহান আল্লাহ নিজেই বলেছেন-
وَ مَنۡ یَّتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ فَهُوَ حَسۡبُهٗ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بَالِغُ اَمۡرِهٖ
‘আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই।’
(সুরা ত্বালাক : আয়াত ৩০)
আল্লাহর কাছে হিসাব দেওয়ার মহাপরীক্ষা থেকে আশ্রয়ের জন্য নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দোয়ায় সাহায্য প্রার্থনা করেছেন; সে দোয়াটি পড়ে পরীক্ষার কঠিন মুহূর্ত ও দুঃশ্চিন্তা থেকে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে পারেন-
اللَّهُمَّ حَاسِبْنِي حِسَابًا يَسِيرًا
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা হাসিবনি হিসাবাইঁ ইয়াসিরা।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার হিসাব (পরীক্ষা) সহজ করে দেন।’
যদিও এটি দুনিয়ার পরীক্ষায় সহজে পার হওয়ার জন্য সরাসরি কোনো দোয়া নয়। তবে পরীক্ষা সহজের নিয়তে এ দোয়ার আমল করা যেতে পারে।

২. খাতা রেডি করা:
পরীক্ষার খাতা হাতে পেয়ে মার্জিন ও রোল/রেজিস্ট্রেশন লেখার কাজ সম্পন্ন করুন। রোল বা রেজিস্ট্রেশন নম্বরের মতো সেনসিটিভ তথ্যগুলো লেখার সময় সতর্ক থাকবেন যেন ভুল না হয়ে যায়। মার্জিনের জন্য বলপেন ব্যবহার না করার চেষ্টা করবেন, পেন্সিল বা সবুজ কালি দিয়ে মার্জিন করবেন। এতে খাতা দেখতে পরিচ্ছন্ন লাগবে ইনশাআল্লাহ।

৩. প্রশ্নপত্র পড়া:
প্রশ্ন হাতে পেয়েই তাড়াতাড়ি করে লেখা শুরু করে দিবেন না। এটা করলে দেখা যায় আপনি এমন একটা প্রশ্ন শুরু করে দিলেন যেটা আপনি পারেন না, অথচ প্রথম অংশ কমন পড়েছে দেখে পরেরটুকু না দেখেই শুরু করে দিয়েছেন। বেশ অনেকটা লিখে ফেলার পর পরের প্রশ্নগুলো পড়লে ভুলটা চোখে পড়লো, কিন্তু তখন কিছু করার নেই। হয় গোঁজামিল দিয়ে সেই প্রশ্নটা লেখা শেষ করতে হবে, নাহলে এতক্ষণ লেখা আনসার কেটে অন্য প্রশ্ন শুরু করতে হবে। আর শিক্ষক যখন আপনার খাতার প্রথম পৃষ্ঠায়ই কাটাছেঁড়া দেখবেন, নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপারটি স্বাভাবিকভাবেই আপনার বিপক্ষে যাবে। তাই পরীক্ষার প্রথমেই ১০ মিনিট সময় নিয়ে প্রশ্নপত্রটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করুন। প্রথমে নির্দেশাবলী পড়া দিয়ে শুরু করুন। তারপর প্রতিটি প্রশ্ন এবং কোন প্রশ্নে কত নম্বর আছে তা লক্ষ্য করুন। এইভাবে আপনি প্রতিটি প্রশ্নের জন্য কত সময় ব্যয় করতে হবে তা জানতে পারবেন।

৩. টাইম ম্যানেজমেন্ট:
পরীক্ষার মোট সময়কে আপনাকে কতগুলো আনসার লিখতে হবে তা দিয়ে ভাগ করুন। প্রতি প্রশ্নে কয়মিনিট সময় ব্যয় করবেন ঠিক করুন। শেষে ৫/১০ মিনিট সময় রিভিশনের জন্য বাড়তি রাখুন। আনসার লিখতে গিয়ে বরাদ্দকৃত সময়ের কথা মাথায় রাখুন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এক প্রশ্নের উত্তর শেষ করে পরের প্রশ্নের উত্তর শুরু করুন। নির্ধারিত সময়ে কোনো উত্তর লেখা শেষ না হলে এমনভাবে সমাপ্তি টানুন যেন আরো কিছু সংযোজন করা যায়। কিছুটা জায়গা ফাঁকা রেখে পরের উত্তর লেখা শুরু করুন। পরীক্ষার শেষদিকে সময় থাকলে এই উত্তরে আরো কিছু যোগ করতে পারবেন।

৪. প্ল্যানিং:
আপনি কোন কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে যাচ্ছেন তা ঠিক করুন। প্রশ্নে দাগ দেওয়ার অনুমতি থাকলে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিবেন সেগুলো মার্ক করুন। মনে মনে একটি প্ল্যান করুন, কোন প্রশ্নের উত্তরে কী কী পয়েন্ট লিখবেন তা মনে মনে ঠিক করুন। সেই অনুযায়ী লেখা শুরু করুন। পর্যাপ্ত সময় নিন এবং তাড়াহুড়ো করবেন না। যে উত্তরগুলো আপনি সবচেয়ে ভালোভাবে পারেন সেগুলো দিয়ে উত্তর লেখা শুরু করেন। কঠিন প্রশ্নগুলো শেষের জন্য রাখুন।

৫. হাতের লেখা ক্লিয়ার রাখুন:
হাতের লেখা ভালো হতেই হবে এমন কোন কথা নেই। তবে হাতের লেখা পরিষ্কার হতে হবে। হাতের লেখা ভালো হলে পরীক্ষকের পরীক্ষার্থীর সম্পর্কে একটা ইতিবাচক ধারণা তৈরী হয়, যার প্রভাব সম্পূর্ণ খাতার উপরেই পড়ে। কাটা-ছেঁড়া কম করার চেষ্টা করবেন, ভুল হলে একটান দিয়ে কাটবেন।

৬. প্যারা করে লিখুন:
গৎবাঁধা গরুর রচনা না লিখে প্যারা করে লিখলে একই সাথে আপনার উপস্থাপিত তথ্য ভালোভাবে শিক্ষকের চোখে পড়বে এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো সুস্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হবে। উত্তর লেখার সময় পয়েন্ট সহকারে প্যারা করে লিখবেন আর খেয়াল রাখবেন উভয় প্যারার মাঝে দূরত্ব যেন অন্যান্য লাইনের মধ্যবর্তী দূরত্বের দ্বিগুণ হয়।

৭. ভিন্ন রঙের কলম ব্যবহার:
অনেকে পরীক্ষার খাতায় নানা রঙের কলম ও কালি ব্যবহার করে থাকে। এতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে হবে। পুরো খাতা শুধু কালো কলমে লিখলে পয়েন্ট, রেফারেন্স আলাদাভাবে চোখে পড়বে না। এগুলো হাইলাইট করতে কালো রঙের পাশাপাশি অন্য যেকোনো একটি রঙের কলম ব্যবহার করুন। সবুজ কালির কলম হলে সবচেয়ে ভালো হয়। তবে সবুজ কলম না থাকলে নীল কালির কলমও ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সাবধান থাকবেন, কোনোভাবেই লাল, কমলা, গোলাপী ইত্যাদি কোনো রঙের কলম ব্যবহার করবেন না। আর রঙিন কলম একটি রঙের বেশি ব্যবহার করবেন না। এতে সময় যেমন নষ্ট হয় তেমনি খাতার উপস্থাপনার সৌন্দর্যও নষ্ট হয়।

৮. বস্তুনিষ্ঠ উত্তর লিখুন:
প্রশ্নে যা জানতে চেয়েছে তাই বুঝিয়ে লেখার চেষ্টা করুন। প্রথমে ভালোভাবে পড়ুন, তারপর কী লিখতে হবে বুঝুন অত:পর খাতায় লিখুন। অযথাই এক কথা বারবার লিখে উত্তর অপ্রাসঙ্গিক করলে নাম্বার তেমন আসে না! তাই খেয়াল রাখুন প্রশ্নে কী চেয়েছে। যা জানতে চেয়েছে সংক্ষিপ্ত উত্তর লিখুন। অযথা অপ্রাসঙ্গিক কথা লিখে উত্তরের কলেবর বাড়ানোর চেষ্টা করবেন না। প্রশ্নের ওজন অনুযায়ী লিখুন। প্রতি মার্কের জন্য ২টি পয়েন্ট সাধারণত যথেষ্ট।

৯. রেফারেন্স এড করুন :
শুধু অনুচ্ছেদের পর অনুচ্ছেদ প্লেইন লেখায় ভরিয়ে না ফেলে যত বেশি সম্ভব রেফারেন্স, চিত্র, ডায়াগ্রাম, আয়াত/হাদিস ইত্যাদি এড করার চেষ্টা করুন। প্রতি প্রশ্নে অন্তত একটা চিত্র এড করার চেষ্টা করুন। আয়াত, হাদিস বা কোটেশন ব্যবহার করুন। এগুলো নম্বর বাড়াতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে।

১০. উত্তর সম্পূর্ণ করুন ও রিভিশন দিন:
পারা প্রশ্নের উত্তর লেখা শেষ হবার পর যদি দেখেন আনসার কমপ্লিট হচ্ছে না তাহলে যে প্রশ্নের উত্তর আপনি ভালোভাবে পারেন না তাও লেখা শুরু করুন। যদি প্রশ্নের এক অংশ সম্পর্কে ধারণা থাকে তবুও লিখুন। কোনো উত্তর ছেড়ে আসবেন না। পরীক্ষায় খালি খাতা জমা দিয়ে আসার চাইতে কিছু লিখে আসা অনেক অনেক ভালো। হারাবার তো কিছু নেই, তাই না? ভুল হলে আপনি নম্বর না পেলেন কিন্তু ক্ষতি তো হচ্ছে না। খালি খাতা দিলে নিশ্চিত ০ পেতেন। তার চাইতে কিছু লিখে আসতে পারলে অন্তত ২/১ হলেও পাবেন। ক্ষতি নেই, বরং যে নম্বরটুকু বাড়লো তাই তো লাভ।

লেখা শেষ হওয়ার পরে আপনার উত্তরগুলো রিভিশন দিন। আপনার সমস্ত উত্তর সম্পূর্ণরূপে পড়ার চেষ্টা করুন। এইভাবে আপনি আপনার অনেক ভুল সংশোধন করতে পারবেন এবং প্রয়োজনে উত্তরগুলোকে আরো ভালো করতে বা কিছু এড করতে পারবেন।

আলহামদুলিল্লাহ, পরীক্ষা শেষ। পরীক্ষা যেমনই হোক না কেন এটা ভাবুন যে আপনি আপনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন কিনা। যদি করে থাকেন তাহলে অভিনন্দন। পরীক্ষা খারাপ হলেও যা হয়ে গেছে তা নিয়ে চিন্তা না করে পরের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিন।

আপনি যদি উপরের কৌশলগুলো কাজে লাগান, ইনশাআল্লাহ আপনার রেজাল্ট অনেক ভালো হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সফলতা ও জ্ঞান দান করুন, আমীন।

- হাবিবুন নাহার মিমি

পঠিত : ১১৩৪ বার

মন্তব্য: ০