Alapon

"অন্যের গোপনীয় পাপ প্রকাশ"



আল্লাহর রাসুল কারো ব্যক্তিগত অপরাধ, গোপন পাপ অনুসন্ধান করতে বলেননি। আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা হলো এটা হারাম। রাসুল সঃ নিজেও তা করেননি। তাঁর কাছে এসে মানুষ যিনার গুনাহের স্বীকৃতি দিতো। তিনি মুখ ফিরিয়ে নিতেন। তারা বলতো আমি ব্যভিচার করেছি। রাসুল (সঃ) চাইতো তাদের গোপন পাপ গোপনই থাকুক।

একবার একজন এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল ! আমি যিনা করেছি। তিনি একে একে একবার না দুইবার না, চারবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তিনি তাদেরকে বলছেন; নাহ, তুমি হয়তো স্পর্শ করেছো। সে-লোক বললেন নাহ, আমি ব্যভিচার করেছি। তখন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন নাহ,  হয়তো  তুমি শুধু চুমো খেয়েছো।

কেন এমন করেছেন আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম? তিনি এই জন্যই করেছেন যে, তিনি তথা আল্লাহর রাসুল চাইতেন মানুষের পাপ গোপন থাকুক। তারা আল্লাহর কাছে নীরবেই অনুতপ্ত হয়ে নিক। গোপনেই মাফ চেয়ে নিক।

আমাদের নবী টেনে-হিঁচড়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দোষ বের করতেন না মানুষের। এখন আমরা কী করি? কারো দোষ, কারো ভুল কীভাবে পাওয়া যায় তার জন্যে মাইক্রোস্কপ যন্ত্র লাগিয়ে খুঁজি। গর্ত থেকে টেনে হিঁচড়ে অন্যের দোষ বের করি। পাপ প্রকাশ করি। কেউ কেউ তো এমনও আছেন যে, নিজেই নিজের পাপ প্রকাশ করে গর্ববোধ করে। কেউ কেউ আবার অন্যের সেই দোষের প্রকাশক হয়ে গর্ববোধ করে। কী আশ্চার্য আমরা। আমাদের শিক্ষাটা। চিন্তাটা। তাই না? অথচ আল্লাহর রাসুল কী করেছেন? আল্লাহ কী চান?

আল্লাহ তো চান ওনার বান্দারা তাদের দোষটা ঢেকে রাখুক। নিজেরটাও রাখুক, অন্যেরটাও রাখুক। গোপনে ক্ষমা চেয়ে সংশোধন হয়ে নিক। অন্যকে গোপনে সংশোধন করে দিক।

উল্লেখ্য, সেটা ব্যক্তিগত দোষ বা পাপ আরকি। তবে যেটা সামগ্রিকভাবে প্রকাশ্যে হয়, সেটার জন্য প্রকাশ্যেই বিরোধিতা করতে হবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে ইসলামি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় আইনের যে সাজা, সেটা প্রকাশ্য পাপের জন্যই। গোপনীয়ভাবে ব্যক্তিগত জীবনে আড়ালে কে কী করে সেটার জন্য নয়। বরঞ্চ অন্যের গোপনীয়তা অনুসন্ধান করে প্রকাশ করাটাই অন্যায়। সেটাও একটা পাপ। এছাড়া কেউ যদি প্রকাশ্যে গুনাহ পাপ অপরাধকে প্রমোট করে, দ্বীনের বিকৃতি করে, বিরোধিতা করে, বা উক্ত ব্যক্তির পাপ সমাজের এবং মুসলমানদের ক্ষতির কারণ হয়, সেটা প্রকাশিত করা যায়। প্রকাশ্যে সেটা বিরোধিতাও করা যায়। বরঞ্চ তখন জাতিকে সতর্ক করার জন্য সেটা করাটা আবশ্যকও বটে।

কিন্তু আমরা করি উল্টো, প্রকাশ্য পাপের বিরুদ্ধে মজবুত অবস্থান না নিয়ে বরঞ্চ অন্যের গোপনীয় পাপ প্রকাশের জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করি। যেটা মোটেও উচিৎ নয়। উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর সময়ে একবার এক ব্যক্তির গোপনীয় পাপ, যেটা ওই ব্যক্তি নিজের ঘরে করতেছিলেন সেটা তিনি দেখে গেছেন, সেজন্য উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু উক্ত ব্যক্তিকে শাসিয়ে ওঠলেন, তখন ওই ব্যক্তি উল্টো উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুকে গোপনীয় পাপ অনুসন্ধানের দায়ে অভিযুক্ত করলেন। এবং উমর তখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে সেখান থেকে সরে আসছেনও। শুধু কি তাই? উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু ইসলামপূর্ব জাহিলি জীবনে যে পাপগুলো করেছেন, সেটাও তিনি কখনো প্রকাশ করে রগরগে বর্ণনা দেননি, বা গর্বের সঙ্গে বলেননি। যেটা আমাদের এই প্রজন্মের অনেকেই "দ্বীনে ফেরা" নামক পরিভাষা দিয়ে করে...


~রেদওয়ান রাওয়াহা
২৬.১০.২১ইং

পঠিত : ৮৮০ বার

মন্তব্য: ০