Alapon

আল্লাহর রাসূলের একাধিকা বিবাহ এবং কিছু কথা...



প্রতিটি মানুষের জীবনেই দুটি দিক থাকে। বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দিক। কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানার জন্য দু্টো দিক বিস্তারিত জানা আবশ্যক।

বাহ্যিক দিক ওই অবস্থার নাম, মানুষ যা সাধারণ লোকদের মধ্যে অতিবাহিত করে। এই অংশের ব্যাপারে বিস্তারিত অবস্থা জানার জন্য অধিক পরিমাণে প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য উপস্থিত হয়ে থাকে। আর অভ্যন্তরীণ অবস্থা মূলত তাঁর পারিবারিক জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, যার মাধ্যমে তাঁর চারিত্রিক অবস্থার সঠিক ও বিশুদ্ধ তথ্য পাওয়া যায়। কারণ, প্রতিটি ব্যক্তি তাঁর ঘরের চার দেওয়ালে সর্বপ্রকার বাধা ও বন্ধন হতে মুক্ত থাকে এবং নিজের ঘরের লোকদের সঙ্গে অকৃত্রিমভাবে উঠাবসা করে থাকে। তাই পরিবারের লোকদের নিকট ব্যক্তির চারিত্রিক ও আমলি ত্রুটিসমূহ গোপন থাকে না।

তাই, একজন মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের সার্বিক অবস্থা জানার জন্য সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হলো, তাঁর পারিবারিক জীবন দুনিয়াবাসীর সামনে এসে যাবে।

ঠিক তেমনিভাবে মহানবি ﷺ এর পবিত্র জীবনেরও বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দুটি দিক ছিল। তাঁর বাহ্যিক জীবন সম্পর্কে সাহাবায়ে কিরাম মানুষের নিকট এমন পূর্ণাঙ্গ ও পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তুলে ধরেছেন, যার উদাহরণ কোনো জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মমতে পাওয়া যায় না। কোনো উম্মাহ তাদের নবির জীবনের সমুদয় অবস্থা এমন বিস্তারিত, বিশ্লেষণপূর্ণ ও সূক্ষ্মতার সঙ্গে সংরক্ষণ করেনি। বরং এ চিন্তাও কেউ করেনি।

আর মহানবি ﷺ এর পারিবারিক জীবন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে উম্মাহাতুল মুমিনীন দুনিয়াবাসীর সামনে পেশ করেছেন। এর ফলে অন্দরমহলে নবি করিম ﷺ এর ইবাদত-বন্দেগি, তাহাজ্জুদ, রাত্রি জাগরণ, দারিদ্রতা, সাধুতা, এবং চারিত্রিক ও আমলি যিন্দেগির বিস্তারিত গোপন অবস্থা দুনিয়াবাসীর সামনে এসে গিয়েছে।

এর মাধ্যমে মহানবি ﷺ এর খোদাভীরুতা, সরলতা ও পবিত্রতা দিবালোকের মতই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, রাতের অন্ধকারে যখন অদৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহ তাআলা ছাড়া দেখার মত কেউ ছিল না, তখনও কিভাবে তিনি আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগিতে থাকতেন। অবশ্য এর সাক্ষ্য হিসাবে কুরআন মাজিদের সুরায়ে মুয্যাম্মিলই যথেষ্ট।

এসব কারণেই মহানবি ﷺ খাদিজাতুল কুবরা রাযি. ছাড়াও আরো দশজন নারীকে বিবাহ করেন, যাতে নারীদের একটি বড় দল মহানবি ﷺ এর পারিবারিকজীবন দুনিয়াবাসীর সামনে তুলে ধরতে পারেন। কেননা স্ত্রী যতটা তাঁর স্বামীর মন-মানসিকতা ও গোপন বিষয় সম্পর্কে অবহিত হতে পারে অন্য কারো পক্ষে তা কখনোই সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।
এরজন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : পূর্ণ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।” [তিরমিযীঃ ১১৬২]

এসব বিবেচনায়ই মহানবি ﷺ বহুবিবাহ করেছিলেন। পরবর্তীতে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে দুনিয়াবাসীর সামনে এসে গিয়েছে। যেনো সত্যতা নিয়ে কোনো প্রকার সন্দেহ ও সংশয়ের অবকাশ না থাকে।

পাশাপাশি শরিয়তে ইসলামের যেসব বিধি-বিধান ও মাসআলা- মাসায়েল কেবল নারীদের সঙ্গেই সম্পৃক্ত; পুরুষদের মাধ্যমে যেগুলো বর্ণনা করার ক্ষেত্রে লজ্জা অন্তরায় হয়ে থাকে, শরিয়তের এমন বিধি-বিধান যেন উম্মাহাতুল মুমিনিনের মাধ্যমে উম্মাহর সামনে এসে যায়।
নাউজুবিল্লাহ! মহানবি ﷺ এর বহুবিবাহ কখনো তাঁর যৌন কামন-বাসনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে ছিল না। কেননা রাসুলুল্লাহ ﷺ একটি বিবাহ ব্যতীত বাকি সকল বিবাহই এমন বিধবা নারীদেরকে করেছিলেন যাদের রূপ-সৌন্দর্য ততটা সুবিদিত ছিল না। ধন-সম্পদের দিক দিয়েও তারা খুব ধনী ছিলেন—এমনও নয়, বরং তদন্ত করলে এর উল্টো চিত্রই আমাদের সামনে প্রকাশ পাবে। তাছাড়া রাসুলুল্লাহ ﷺ এর অন্দরমহলে আরাম-আয়েশের উপায়-উপকরণও ছিল না, বরং তাঁর বহুবিবাহের উদ্দেশ্য ছিল যাতে নারীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিধি-বিধান নারীদের মাধ্যমেই প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়ে যায়। উম্মাহাতুল মুমিনিনের হুজরা মূলত উম্মাহর শিক্ষা ও দীক্ষার আদর্শ মহাবিদ্যালয় ছিল।

যে মহামণীষীর বরকতময় ঘরে দুই দুই মাস পর্যন্ত আগুন জ্বালাবার সুযোগ পর্যন্ত আসত না এবং পানি ও খেজুরই যার পরিবার-পরিজনের নিত্যদিনের সহচর ছিল, যার দিন অতিবাহিত হত মসজিদে এবং রাত অতিবাহিত হত, আল্লাহ তাআলার সামনে দাঁড়িয়ে পা মোবারক ফুলে যেত সেখানে আরাম-আয়েশের কল্পনা করাও অসম্ভব নয় কী?

- Sharafat Sharif

পঠিত : ৩৪১ বার

মন্তব্য: ০