Alapon

একজন মুসলিমের রাজনীতি কেমন হবে?




ইসলামী আন্দোলন সমূহের টার্গেট ও কর্মপদ্ধতি যেটা, সেটা নিয়ে আজকে কেউ কেউ বুঝে হোক বা না বুঝে হোক- কিছু সমালোচনা করেন।

মূলত ইসলামি আন্দোলনকৃত দল বা সংগঠন-সমূহের মূল টার্গেট জীবনের সব বিষয় দ্বীনের আলোকে গঠন-পরিগঠন করা। এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন করা। মানে সোজা কথায় আল্লাহর সন্তোষ অর্জনই মূল বিষয়। এটা তাঁদের সাংবিধানিক এবং সাংগঠনিক ঘোষণা। পুরোটা জীবনের ভেতর সাংস্কৃতিক বিষয় আছে, সামাজিক বিষয় আছে। আছে রাজনীতিও। সে হিসেবে তারা সেসবেও অংশগ্রহন করে। সেসব কার্যক্রম পরিচালনা করে। যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা দখল করা তাঁদের লক্ষ্য নয়। কিংবা এমপি-মন্ত্রী বা নেতা হওয়াও তাঁদের উদ্দেশ্য নয়। তাঁরা সামগ্রিক। তাই তাঁদের কার্যক্রমও সামগ্রিক।

এখন যে ইসলামী আন্দোলন বুঝেছে, সে কখনোই ক্ষমতার রাজনীতিতে ইসলামী দলগুলো কেন সফল নয়, কেন তারা বাংলার এরদোয়ান কিংবা একেপি হয়ে ওঠতে পারেনি বা পারেনা, এই হতাশায় তাঁদের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানিয়ে সমালোচনা করবে না।

সমালোচনাকারীদের কেউ কেউ ইসলামি সংগঠনগুলোকে নসীহা পেশ করে যে, রাজনীতি করতে হবে রাজনীতির ভাষায়। জনতার ভাষায়। কিংবা গণমানুষের ভাষায়। এই টাইপের কিছু মুখরোচক পপুলার কথবার্তা আরকি। অথচ একজন মুসলিমের রাজনীতি হবে কুরআনের ভাষায়। রাসুলের পদ্ধতিতে। আল্লাহর বাতলে দেয়া বিধানের মাধ্যমে। সেকুলারদের শিখিয়ে দেয়া রাজনীতির ভাষায় রাজনীতি নয়, দ্বীনের ভাষায় রাজনীতি হবে একজন মুসলিমের রাজনীতি। দ্বীন এসেছে পাবলিক সেন্টিমেন্টকে দুনিয়ার সব কিছুর দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে আল্লাহর দাসত্বকে বরণ করিয়ে নেওয়ার কাজ করতে।

এসব কথাবার্তা ও চিন্তাধারা যেসব ভাইয়েরা শেয়ার করেন, তা শেয়ার করার আগে চিন্তা করা উচিৎ ইসলাম আমাদের জন্য দ্বীনে কামিল কিনা! যদি তা দ্বীনে কামিল হয়, তাহলে তাতে রাজনীতি অবশ্যই আছে। এখন রাজনীতি যদি থাকে, সে রাজনীতির রূপ কেমন হবে তা কি ইসলামে থাকা স্বাভাবিক নয়? রাসুলুল্লাহ সাঃ এর জীবন কি আমাদের জন্য পরিপূর্ণ আদর্শ নয়? কুরআন কি আমাদের বলেনি রাসুল যা এনেছে তা ধরো আর যা প্রত্যাখ্যান করেছেন তা বাদ দাও?

এখন দেখুন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নবুওয়তের ২৩ বছরের জিন্দেগীতে কথিত গণ মানুষের ভাষায় রাজনীতি করেছেন, নাকি আল্লাহর হুকুমমত রিসালাতের ভিত্তিতে রাজনীতি করেছেন!

যদি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনীর দিকে তাকাই, তাহলে দেখবো যে, আল্লাহর রাসুল কিন্তু কথিত রাজনীতির ভাষায় রাজনীতি করেননি। গণ-মানুষের ভাষায় রাজনীতি করেননি। বরঞ্চ তিনি দ্বীনকে, আল্লাহর রুবুবিয়্যাত ও হাকিমিয়্যাতকে গণ মানুষের ভাষায় রূপান্তর করেছেন। পাবলিক সেন্টিমেন্টকে, কিংবা পাবলিক পালসকে দ্বীনের অনুগামী আর অনুগত করেছেন। একজন ইসলামি রাজনীতিবিদ যিনি হবেন, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দেখিয়ে দেওয়া এই কাজটিই করবেন।

এখন যার কাছে রাসুলের পরিপূর্ণ জীবন আদর্শ উপস্থিত, সে রাজনীতির ভাষায় রাজনীতি করুন, এই ধরনের কথাবার্তা বলে ইসলামি সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করবে না, হীনমন্যতা তৈরি করবে না। দ্বীনকে গৌণ কিংবা ঐচ্ছিক হিসেবে রাখবে না। এসব একজন সেকুলারের কর্ম হবে। একজন সেকুলারের দৃষ্টিভঙ্গি এমন হবে। ইসলামি দলসমূহের কর্মী বা নেতৃত্বের চিন্তাধারা এমন হবে না।

একজন ইসলামী রাজনীতিবিদ যিনি হবেন, তিনি অন্যান্য মৌলিক কাজের পাশাপাশি মানুষকে দ্বীন বোঝানোর কাজটিও করবেন । মানুষের সুখে-দুঃখেও পাশে দাঁড়াবেন। স্রেফ রাজনীতির জন্যে দ্বীন আর আদর্শ বিষর্জন করতে পারে না একজন মুসলিম। বিশেষত তারা, যারা ইসলামী আদর্শের ছাঁচে নিজেদেরকে দীর্ঘদিন যাবৎ গড়ে তুলেছেন।

আল্লাহর রাসুল মানুষের পাশে দঁড়িয়েছেন। রোগ-শোকে সেবা দিয়েছেন। বিপদে আপদে সহায়তা করেছেন, তবে নিজেকে সেকুলার পরিচয় দিয়ে তা করেননি। সাহাবায়ে কেরামও তা করেননি। তাঁরা যা করতেন আদর্শের ব্যানারে করতেন। আদর্শিক ব্যানার ছেড়ে সেকুলার ব্যানারে তা করেননি তিনি।

আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ প্রদত্ত নারীর যে অধিকার ও মর্যাদা, সেটা বাস্তবায়ন করেছেন। তবে নারীর ক্ষমতায়নের নামে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারী-পুরুষের ফ্রি-মিক্সিং ঘটাননি। কিন্তু আজকের ইসলামী আন্দোলন-সমূহের প্রকাশ্য বিদ্বেষী সমালোচক কিংবা গোপনীয় সফটকোর সমালোচক বা হিতাকাঙ্ক্ষী সুলভ শালীন সমালোচকরা ইসলামী আন্দোলন সমূহের দ্বারা এসবই করাতে চাচ্ছেন। কিংবা ইনিয়ে-বিনিয়ে এসবই করার উপদেশ দিচ্ছেন, এবং তাঁরা নিজেদের কৌশল-কর্মসূচির মাধ্যমে সেসবও করছেন। তাঁদের অনুরূপ করেনা বিধায় তাঁরা ইসলামী আন্দোলনগুলোর সমালোচনায় মূখর থাকে। তাঁরা বুঝতে চায় না যে, সেকুলার-লিবারেল ধারার ক্ষমতার রাজনীতি, আর ইসলামী আন্দোলন-সমূহের রাজনীতি কস্মিনকালেও এক নয়। কখনো ছিলোও না।

কেউ যদি রাজনীতিকেই সফলতার একমাত্র মানদণ্ড বানান কিংবা মনে করেন, তাহলে তারজন্যে আওয়ামী লীগ বিএনপি আছে কিংবা তিনি সেসব দল করতে পারেন, কিন্তু ইসলামী আন্দোলন-সমূহ তার জন্যে নয়। কারণ, ইসলামী আন্দোলনকারী দলগুলোর সফলতা সেকুলারদের বাটখারায় মাপা হয় না। মাপা হয় রব্বুল আলামীন প্রদত্ত কুরআনিক বাটখারায়.........

~রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ৩৩৪ বার

মন্তব্য: ০