Alapon

পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে করণীয়


পারিবারিক বন্ধনগুলো কেমন যেন খসে খসে পড়ছে। পরিবারগুলো এখন পরিণত হয়েছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে। মা-বাবার কাছ থেকে ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছে সন্তানেরা। এক পরিবারে থেকেও মা-বাবা ও সন্তানেরা দিন কাটাচ্ছে যে যাঁর মতো করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক বন্ধন আর আগের মতো দৃঢ় নয়, হয়ে পড়েছে বড়ই ঠুনকো।

মানুষ হিসেবে আমরা সবাই সুখ প্রত্যাশী। সুতরাং সুখ নিশ্চিত করতে হলে সুস্থ্য ও সমৃদ্ধ পরিবার গড়ে তুলতে হবে। চেষ্টা করতে হবে কোনো সন্তান যেন বাবা-মায়ের আদর-যত্ন এবং মায়া-মমতা থেকে বঞ্চিত না হয়। এ ঘাটতি কোনোদিন পূরণ হওয়ার নয়।
গত তিন মাসে পারিবারিক কলহের জেরে ৬৬ জন নারী ও ৩১টি শিশু খু*ন হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮ জন নারী স্বামীর হাতে খু*ন হয়েছেন বলে অভিযোগ এসেছে। মামলাও হয়েছে। নিহতদের ১৪ জনের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এ সময়ে ২৪ জন নারী আ#ত্মহ*ত্যাও করেছেন। বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি কালের কণ্ঠ প্রকাশ করেছে। গত ১০ মাসের সমীকরণে ২৫৩ জন নারী পারিবারিক কলহের জেরে খু*ন হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। এবং চলতি বছরের ৯ মাসে রাজধানীর ৫০ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ১ হাজার ৬০৭টি মামলা হয়েছে।

একটি পরিবার থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। কারণ সমাজের প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মানুষ তার পরিবার থেকেই সমাজ ও রাষ্ট্রের রীতি-নীতির সঙ্গে প্রাথমিক পরিচয় লাভ করে। পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় হলে সামাজিক সম্পর্কে এর প্রভাব পড়ে। এ কারণে পরিবারে স্বামী-স্ত্রী এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সু-সম্পর্ক অত্যান্ত জরুরী। বাবা-মাসহ পরিবারের বড় সদস্যদের আচার-আচরণ শিশুদের ওপর প্রভাব ফেলে এবং সে অনুযায়ীই তারা অন্যদের সঙ্গে আচরণ করে। পরিবারে সুখ ও শান্তি বিরাজ করলে সন্তানরা পরিবার বিমুখ হয় না এবং তাদের বিপথে যাওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। এ কারণে পরিবার গঠন ও পারিবারিক বন্ধনকে সূদৃঢ় করতে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।

করনীয়
স্বামীর দায়িত্ব:
মোহরান প্রদান: পরিবার গঠনের প্রথম স্টেপ হচ্ছে বিয়ে। আর দ্বীনদার ভালো পাত্রী দেখে বিয়ের শুরুতেই স্ত্রীর প্রতি স্বামীর প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে সন্তুষ্টচিত্তে তার মোহর পরিশোধ করে দেওয়া। (সুরা আন-নিসা-৪)। মহানবী (সা.) বলেন, ‘অবশ্য পূরণীয় শর্ত হচ্ছে, যার বিনিময়ে তোমরা স্ত্রীর যৌ*নাঙ্গকে নিজের জন্য হালাল মনে করো।’ অর্থাৎ মোহর। অনেকেই পারিবারিক বন্ধনের প্রথম স্টেপেই ভুল করেন ও মোহরানা দেয়া থেকে বিরত থাকেন।

ভরণ-পোষণ:
রাসূল (সা.) বলেন, ‘তাদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা তোমাদের দায়িত্ব।’ হাকীম বিন মু‘আবিয়া (রাsmile পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করি, হে রাসুলুল্লাহ! স্বামীদের ওপর স্ত্রীদের কী হক? তিনি (সা.) বলেন, ‘সে যা খাবে তাকেও তা খাওয়াবে, আর সে যা পরিধান করবে তাকেও তা পরিধান করাবে। আর তার (স্ত্রীর) মুখমন্ডলে প্রহার করবে না।
সদ্ব্যবহার : মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের সঙ্গে সৎভাবে জীবনযাপন করবে।’ (সুরা আন নিসা-১৯)। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট সর্বোত্তম।

স্ত্রীর দায়িত্ব:
স্বামীর আনুগত্য করা : মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজানের রোজা রাখে, নিজের সতীত্বকে রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, তাহলে তাকে (কিয়ামতের দিন) বলা হবে, জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ তবে স্বামী যদি স্ত্রীকে কোনো পাপের কাজে নির্দেশ প্রদান করে তাহলে স্ত্রী সে নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করবে; কখনো মানবে না।

স্বামীর আমানত রক্ষা করা: স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজেকে সব অশ্লীলতা ও অপকর্ম থেকে হিফাজত করা এবং স্বামীর অর্থ-সম্পদের আমানত রক্ষা করা স্ত্রীর অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সতী স্ত্রীরা হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হিফাজতযোগ্য করে দিয়েছেন লোকচক্ষুর অন্তারালে তার হিফাযত করে।’ (সুরা আন নিসা-৩৪)।

মূলত পরিবার হলো একটি বড় ধরনের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের প্রশিক্ষক হলেন বাবা-মা। সন্তানরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে পারিবারিক ও সামাজিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানলাভের পাশাপাশি জীবনযাপনের প্রস্তুতি সম্পর্কেও প্রশিক্ষণ পায়। শিশু-কিশোররা এই পরিবার থেকেই ভালোবাসা, আত্মত্যাগ ও সাহসিকতার মতো মহৎ গুণগুলো আত্মস্থ করে।

চলবে.........

পঠিত : ৩২৫ বার

মন্তব্য: ২

২০২২-১১-১৩ ২০:৪৫

User
রেদওয়ান রাওয়াহা

ma sha allah,
welcome brother.....

carry on....

submit

২০২২-১১-১৪ ১৭:৪৮

User
সামিউল ইসলাম বাবু

সুন্দর পোস্ট

submit