Alapon

আমেরিকার ফায়ার পাওয়ার আনপ্যারালাল্ড, তা দিয়ে ব্যাটেল জেতা যায়, কিন্তু যুদ্ধ...?



পুতিনকে ধরা হতো ধুরন্দর গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজিস্ট। যেখানে পুতিন তার নাক গলায় সেখানে আমেরিকা কখনও সরাসরি জড়ায় না। একজন আরেকজনকে জায়গা ছেড়ে দেয়। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অত্যন্ত দুর্বল পারমরমেন্স, আর ততোধিক দুর্বল মিলিটারি প্ল্যান পুতিনের দুর্বলতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে প্রমান করছে পুতিনকে যতটা ফরমিডেবল মনে করা হতো ততটা সে নয়।
.
একটু পিছন থেকে শুরু করি। ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু, বিপ্লবিরা আসাদ কে হারিয়ে দিচ্ছ, তাদের জয় তখন কেবল কিছুদিনের ব্যাপার। আমেরিকা-তুরস্ক-ইয়োরোপ সবাই খুশি। ওবামা এরদোয়ান সবার এক কথা 'আসাদ মাস্ট গো'। আর এভাবে আসাদ হারতে হারতে চলে আসে ২০১৪, যুদ্ধের সুবাদে আইসিল দখল করে নেয় সিরিয়ার বিশাল ভুখন্ড। ঠিক সেই সময় আসাদের সাপোর্টে মাঠে নামে তেহরান আর আকাশে উড়ে মস্কো। গেইম গেলো উল্টে। ওবামার দেয়া রেড লাইন আসাদ ক্রস করলেও রাশিয়ার বোমারূ বিমান যেহেতু সিরিয়ার আকাশে তাই আমেরিকা ওবামার হুশিয়ারী হজম করে রাশিয়ার সাথে নেগশিয়েট করে আসাদের আসাদের বিরুদ্ধে কেবল মুখ দিয়ে হুমকি ধামকি দেখিয়েই খান্ত দেয়। নিজেদের ফোকাস রাখে কেবল আইসিল এর বিরুদ্ধে। রাশিয়া আকাশ থেকে বোমা ফেলে তামা তামা করতে থাকে বিপ্লবীদের দখলে থাকা শহরগুলো, বিপ্লবীদের সরিয়ে শহরগুলো একের পর এক দখল করতে থাকে ইরান ব্যাকড আসাদ বাহিনি, শিয়া মিলিশিয়া বাহিনি। আসাদ গেলো জিতে, এটলিস্ট টিল নাউ। আরো অনেক কিছু ঘটে..................তুরস্ক দখলে নেয় তুরস্ক সীমান্তবর্তী সিরিয়ার লম্বা করিডোর, আমেরিকা কুর্দিদের দিয়ে আইসিলকে হটিয়ে কুর্দিদের ক্ষমতায়ন করে বসায় সিরিয়ায়, আর পুতিনপ্রেমীরা ভাবা শুরু করে পুতিনের স্ট্র্যাটেজির কাছে বাকিরা নস্যি। পুতিন ইজ ইনভেন্সিবল।
.
কিন্তু পুতিনের বিরাট পার্সোনালিটির পিছনের মুল পাত্রটি সবার আড়ালে থেকে যায়। আর তিনি ছিলেন ইরানের আইআরজিসির কুডস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। সোলাইমানি ঊড়ে যায় মস্কোতে, পুতিনকে সিরিয়ার যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজি পেশ করে, পুতিনকে রাজি করায় কে কোথায় কিভাবে তার ফোর্স নামাবে, রাশিয়া থাকবে আকাশে আর সোলাইমানির নেতৃত্বে আসাদ বাহিনি-মিলিশিয়া বাহিনি মাটিতে, সিরিয়ার যুদ্ধের গ্র্যান্ড মাস্টার প্ল্যান। আসাদ জিততে শুরু করে, আর তার বিরোধী গ্রুপগুলো হারতে থাকে। একের পর এক হারানো শহর দখলে নিতে থাকে আসাদ-সোলাইমানির ফাইটাররা।
.
সোলাইমানি খুব রুথলেস আর গ্র্যান্ড মাস্টার প্ল্যানার। আমেরিকাকে ইরাকের মাটিতে নাকানি চুবানি খেতে হয়েছে এই সোলাইমানির কারনে। সে সরাসরি সেনা দিয়ে যুদ্ধ না করে, লোকাল মিলিশিয়া বাহিনি দিয়ে, ইরাকের মাটি সবসময় গরম করে রাখে আমেরিকার বিরুদ্ধে। হি নিউ হাউটু প্লে , উইথ দ্যা লিস্ট এমাউন্ট অফ মানি, ইন দ্যাট নেক অফ দ্যা উড। সোলাইমানি ইউজড পুতিন। আর পুতিন খুব উইলিংলি গেট ইউজড, কারন মস্কোর এখানে হারানোর কিছু নাই। আমেরিকা ভালো মতই জানতো কার লিডারশীপের কারনে সিরিয়া, ইরাক কোন খানেই আমেরিকা বিরাট কিছু করতে পারছে না, তাই দেয় একেবারে সোলাইমানিকে খতম করে।
.
এই যে ইউক্রেনের যুদ্ধে পুতিন একের পর এক কমান্ডার পরিবর্তন করেও এখন পর্যন্ত দখলকৃত জায়গা ধরে রাখতে পারছে না, এমনকি সিরিয়ায় বুচার নামে খ্যাত রাশিয়ান কমান্ডার সুরোভিকিন পর্যন্ত যুদ্ধের হাল নিজেদের দিকে ঘুরাতে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ তার কারন রাশিয়াকে যতোটা ফরমিডেবল আর গ্র্যান্ড ভাবা হতো এই পর্যন্ত আসলে তা নয়। সিরিয়ায় রাশিয়ার পারফর্মেন্সের মুল কারিগর ছিল সোলাইমানি।
.
পুতিন কিন্তু এরদোয়ানের সাথেও ডিপ্লোম্যাসিতে প্যাসেঞ্জার সিটে থাকে, মিনিং এরদোয়ান ড্রাইভস দ্যা কন্ডিশান্স ফর এনি সাচ ডিল বাট এট দ্যা সেইম টাইম পুতিনের মুখ কালোও করে না, দ্যা আর্ট অফ ডিপ্লোম্যাসি। আমেরিকা যেখানে রাশিয়াকে আগাতে দেখলে জায়গা থেকে সরে পড়ে বা সরাসরি হস্তক্ষেপ করে না, যেমন সিরিয়া, লিবিয়া, এরদোয়ান কিন্তু তা নয়। সিরিয়া-লিবিয়া-নগর্নো কারাবাখে পুতিন আর এরদোয়ান বিপরিদ ক্যাম্পে মুখোমুখি অবস্থান করেছে যেভাবেই হোক। এরদোয়ানকে আগাতে দেখলে এবার আমরা দেখেছি পুতিন স্পেস ছেড়ে দিয়েছে। গেলো ১০ বছর আমরা এমন বন্ধু-শত্রু ডিপ্লোম্যাসি দেখি নাই। এরদোয়ানের বিরুদ্ধে যারা যায়, তাদের সাথেই ফের এরদোয়ানকে দেখা গেছে এমন ডিল মেইক করতে যেখানে তুরস্কও জিতেছে আবার সেই দেশও, অনেকটা উইন-উইন টাইপ। সৌদি আরব-আরব আমিরাত-রাশিয়া-ইজরায়েল সব দেশের সাথেই এরদোয়ানের ভালো ডিপ্লোম্যাটিক সম্পর্ক, বিজনেস পার্টনারশিপ, ডিপ্লোম্যাটিক আদান প্রদান, কেবল আমেরিকা ছাড়া। বাইডেনের ফরেইন এডভাইজার টিম এরদোয়ানের ঘোর শত্রু। মাঝে মাঝে মনে হয় আমেরিকা যদি চীনকেও ছাড় দেয়, তুরস্ককে দিবে না। অথচ আমেরিকা-তুরস্ক দুইটাই ন্যাটো মেম্বার।
.
গেলো দশ বছরের মধ্যপ্রাচ্যের সব ধরনের বিষয়াদি নিয়ে কেবলমাত্র নিজেদের স্বকীয় দক্ষতার প্রেক্ষিতে, সেটা যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজি বলেন, কিংবা ডিপ্লোম্যাসি, বিশ্বনেতাদের র‍্যাঙ্কিং হচ্ছে ১) সোলাইমানি, ২)এরদোগান ৩) পুতিন, ৪) এমবিএস ৫) আমেরিকার সরকার। কিন্তু ৫ নাম্বার ১ নাম্বার কে দিয়েছে খতম করে। চিন সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যে কখনও জড়ায় না, তাই আপাতত তাদের এই লিস্টে রাখা যাচ্ছে না।
.
আমেরিকার ফায়ার পাওয়ার আনপ্যারালাল্ড, তা দিয়ে ব্যাটেল জেতা যায়, কিন্তু ওয়ার? তার জন্য দরকার হয় ধুরন্দর ডিপ্লোম্যাসি আর প্ল্যানিং। এখন এরদোয়ান প্রথম পজিশনে আছে। তার থেকে অনেক দূরে দ্বিতীয় পজিশনে আছে পুতিন, আর আরও অনেক দূরে তৃতীয় পজিশনে এমবিএস। বাইডেন-ট্রাম্প-ওবামা আরও আরও আরও অনেক দূরে। আমেরিকাকে মধ্যপ্রাচ্যের টপ সারীতে আসতে হলে তাদের গতানুগতিক ধারা ফরেইন পলিসি বদলাতে হবে। নিজেকে সবার উপরে রেখে অপরকে লেকচার দেয়ার দিন আর এখন নাই। বিশ্ব এখন আর আমেরিকা আর রাশিয়া এই দুই চক্রে চলছে না। পশ্চিমা চক্র এক থাকলেও, চীন চলে নিজ অক্ষে। যেমন করে নিজ অক্ষে হাটছে তুরস্ক, সৌদি আরব আর আরব আমিরাত।
.
এরদোয়ান আর এমবিএস দুই জনই কিন্তু নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে মারাত্মক হুমকিতে আছে। তাদের হটাতে পারলে কিন্তু আমেরিকা ৫ নাম্বার থেকে একলাফে ১ নাম্বারে চলে আসার পথ সুগম করে ফেলবে।

- সাবিনা আহমেদ

পঠিত : ২৫২ বার

মন্তব্য: ০