Alapon

আধুনিক খেলাধুলা ও শয়তানের চ্যালেঞ্জ !



আধুনিক যুগের খেলাধুলা আর বিনোদন ব্যবস্থাকে যদি কুরআনের ভাষায় এবং একবাক্যে ব্যক্ত করা লাগে, তবে এর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত শব্দটা হল লাহউন। লাহউন শাব্দিক অর্থে প্রমোদ, খেলা, অনর্থক অর্থ আসলেও কুরআনে ব্যবহৃত এর সাথে বিশেষ একটি বিশেষণ যুক্ত হয়েছে। সেটি হল আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করা, পথভ্রষ্ট করা। ( সুরা লুকমানের ৬ নং আয়াত দ্রষ্টব্য) আর বর্তমান যুগের খেলাধুলা আর বিনোদন সিস্টেমের সাথে এই বিশেষণটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

আধুনিক বিনোদন ব্যবস্থা আমাদেরকে আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত করে, আল্লাহর দ্বীন থেকে গাফেল করে রাখে এবং আমাদের জীবনের মহৎ উদ্দেশ্যকে জীবনাচার থেকে বেমালুম বা প্রচ্ছন্ন করে দেয়। দুঃখজনক এই বাস্তবতা বর্তমান যুগের প্রতিটি বিনোদন ও খেলাধুলার আয়োজনে সুস্পষ্টভাবেই পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজনের কথায় কল্পনা করুন। এই আয়োজনের সাথে এতই উন্মাদনা যুক্ত হয়েছে যে, এটিকে জাহিলিয়াতের একটি ফুল প্যাকেজ বলা যায়। কী নেই এই আয়োজনে? জুয়া, বেপর্দা, সময় ও অর্থের অপচয়, ঝগড়া- ফাসাদ, অনর্থক উন্মাদনা, দ্বীনের ব্যাপারে উদাসীনতা সহ কেবল বিনোদন নির্ভর একটি পঙ্গু সমাজ ও প্রজন্ম তৈরির সকল উপাদান এখানে বিদ্যমান।

এতো জঘন্য একটা আয়োজনের ব্যাপারে মুসলিম তরুণদের অবস্থা দেখে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিস কল্পনা করি। তিনি বলেছেন, মুমিন তাঁর গোনাহকে এভাবে দেখে যে, সে এক পাহাড়ের নিচে বসে আছে, যেই পাহাড় তার নিজের উপর পতিত হওয়ার ব্যাপারে সে আশংকা করছে। আর পাপাচারী ব্যক্তি তাঁর গোনাহকে সামান্য মাছির মত করে দেখে, যেন কোন মাছি তার নাকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করল। ( সহিহ বুখারি)
ব্যক্তির অন্তর থেকে গোনাহের প্রতি ঘৃণাবোধ ও গোনাহের ব্যাপারটি হালকা হয়ে যাওয়ার পর যেই পর্যায়টি আসে সেটি হল বেপরোয়াভাব। এই পর্যায়ে এসে গোনাহকারী নিজের গোনাহের ব্যাপারে কারো কথা ও নসীহতের পরোয়া করে না। তার কাছে তখন পাপের বিরুদ্ধে যেকোন বক্তব্যকে অসহ্য ও বাড়াবাড়ি মনে হতে থাকে। এমনকি সে তখন পাপ কাজকে প্রকাশ্যে উৎযাপন করতে শুরু করে। যা খুবই ভয়াবহ একটি পর্যায়। এই পর্যায়ের গোনাহ আল্লাহ তায়ালা এত সহজে ক্ষমা করেন না।

তাছাড়া এই পর্যায়ে এসে বান্দার ভিতর থেকে তাওবার প্রয়োজনীয়তা ও চিন্তাও হারিয়ে যায়। আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করে বলেন যে, আমি শুনেছি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের সকলকে ক্ষমা করে দেয়া হবে প্রকাশ্য পাপকারীদের ব্যতীত। আর প্রকাশ্য পাপকারী হল সেই ব্যক্তি, যে রাতের বেলা কোন পাপ কাজ করে, তারপর সকালে এই অবস্থায় উপনীত হয় যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর পাপকে গোপন রেখেছেন। অতঃপর সে লোকদেরকে বলে বেড়ায় , আমি গতরাতে এমন এমন করেছি। (সহিহ বুখারি)

বর্তমান প্রজন্মের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে আমরা এই হাদিসের বাস্তবতা দেখতে পাই। এই যে বিশ্বাকাপকে সামনে রেখে পতাকা, জার্সি, প্রজেক্টর, টাইমলাইনে প্রিয় দলের প্রতি উন্মাদনা- এসবই হল প্রকাশ্যপাপকারী কিংবা আরো পরিষ্কার ভাষায় বললে পাপকে সেলিব্রেটকারীর কাজ। তারা কেবল পাপ করছে না, পাপকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে উৎযাপন করছে। আবার তাদের অন্তরের অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে, এই ব্যাপারে কারো বক্তব্য কিংবা নসিহত শুনতেও তারা বিরক্তিবোধ করছে। তাদের কাছে এই সম্পর্কিত উপদেশ অসহ্য আর বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে। এটি আল্লাহর বিরুদ্ধে স্পর্ধা দেখানোর নামান্তর। এজন্যই সাধারণ পাপের চেয়ে এই ধরণের সেলিব্রেশনমূলক পাপের বিরুদ্ধে ইসলামে কঠোর হুশিয়ারি এসেছে।

সবশেষে মুসলিম ভাইবোনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবার লাহউন শব্দে ফিরে যাচ্ছি। সুরা লুকমানে লাহউন শব্দের পর তাদ্বলীল বা পথভ্রষ্টকরণের শব্দটি এসেছে। আমরা কি ভেবে দেখেছি, এই শব্দের সাথে শয়তানের সম্পর্ক আছে। শুধু সম্পর্কই না, আমাদের প্রতি একটি চ্যালেঞ্জের সম্পর্ক আছে। শয়তান আল্লাহর কাছে একটি চ্যালেঞ্জের কথা বলেছিল। সেই চ্যালেঞ্জের একটি শব্দ ছিল, ওয়ালাউদ্বিল্লান্নাহুম, অর্থাৎ আমি অবশ্যই তাদেরকে ( আল্লাহর বান্দাদেরকে) পথভ্রষ্ট করব। (সুরা নিসা, আয়াত ১১৯)

হে মুসলিম ভাইবোনেরা! আপনারা কি নিজেদেরকে একজন সাহসী আল্লাহর বান্দা বানাতে চাননা? দুনিয়া এবং আখেরাতে একমাত্র সাহসীদেরই স্থান আছে। ভীরুদের কোন স্থান নেই। মুমিনরা কখনো ভীরু হয় না। তাই সাহস নিয়ে কি আমরা শয়তানের এই চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে একটি দুঃসাহসিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারি না? আমরা কি কাপুরুষতার পরিচয় দিব? এটি কি আমাদের আত্মপরিচয় এবং আত্মমর্যাদার সাথে সাংঘর্ষিক নয়?

শয়তান তার চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হওয়ার জন্য তার সকল সৈন্যদলসহ অনেক কিছুই ব্যবহার করবে। মিডিয়া হাইপ তুলবে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো নানা ইভেন্ট করবে, পত্রিকাগুলো এই আয়োজন নিয়ে কভারেজে থাকবে নিয়মিত। সামাজিকভাবে পতাকার উড়াউড়ি, প্রজেক্টরের ব্যবস্থা সহ নানারকম ব্যবস্থাপনা থাকবে উত্তেজনা আর উন্মাদনা তৈরির জন্য।
এটা মুসলিম প্রজন্মের জন্য চ্যালেঞ্জ। শয়তান তার আশেপাশে সবরকম আয়োজন করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালাও তাদেরকে ঈমান আর তাকওয়ার শক্তি দিয়ে সাহসী বানিয়েছেন। আল্লাহর প্রতি ভয় শয়তানের এসব প্রচোরণার বিরুদ্ধে সাহসী করে তুলবে। তাই সাহসিকতার সহিত শয়তানের চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। তাদেরকে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবেই। কারণ মুমিনরাই বিজয়ী জাতি। শয়তানের সৈন্যরা মাঠে একে অপরের বিরুদ্ধে জিতের জন্য লড়বে। আর আমরা তাদের সেই লড়াইকে পরিপূর্ণ বর্জন করে শয়তানের চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে লড়ব এবং বিজয়ী হব ইনশাআল্লাহ।

পঠিত : ৩৯৩ বার

মন্তব্য: ০