Alapon

পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে করণীয়


পর্ব: ০২

মা-বাবার দায়িত্ব:
সন্তানের লালন-পালন: মা-বাবা সন্তান কে লালন-পালন করে বড় করে তোলেন। সে কারণে ইসলাম পরিবারের বন্ধনকে সুদৃঢ় করার জন্য মা-বাবার প্রতি সন্তানের কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য নির্ধারণ করেছে। বাবা-মার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, তাদেরকে সম্মান করা এবং তাদের আনুগত্য করা সন্তানের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত না করতে ও মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ্’ বল না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; তাদের সঙ্গে সম্মান সূচক কথা বলো।’ (সুরা বনী ইসরাইল -২৩)। তবে মা-বাবা যদি অন্যায় কাজের আদেশ করে তাহলে সেক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করা যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমার মা-বাবা যদি তোমাকে পীড়াপীড়ি করে আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করতে যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তুমি তাদের কথা মানবে না। তবে পৃথিবীতে তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে বসবাস করবে।’ (সুরা লুকমান-১৫)।

আচার ব্যবহার শিক্ষা: সন্তানরা তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে আচার-আচরণ ও শ্রদ্ধাবোধ শেখে, যা তার পরবর্তী জীবনের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকে। এ কারণে সন্তানদের কাছ থেকে প্রাপ্য শ্রদ্ধা ও সম্মান পেতে হলে নিজেদের সদাচারী হতে হবে। যে পরিবারের সন্তানরা তার বাবা-মাকে শ্রদ্ধা করে না, সম্মানের আসনে সমাসীন করে না, সেই পরিবারে আর যাই হোক প্রকৃত সুখ আসে না। মূলত ওই সন্তানের বাবা-মা যদি তার দাদা-দাদি ও নানা-নানির প্রতি সদয় আচরণ করে, তাহলে পরিবারের শিশুরাও তা থেকে শেখে এবং ভবিষ্যতে তারাও বাবা-মায়ের প্রতি সদাচারী হয়। আর এভাবেই একটি পরিবারে সুখ ও শান্তির সুবাতাস প্রবহমান হতে থাকে।

গত কয়েক দশক ধরে বিশ্বজুড়েই বিয়ের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ও পারিবারিক জীবন ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। জায়গা করে নিয়েছে কিছু অনৈতিক আচরণ। যার কারণে পরিবার ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ভেঙে যাচ্ছে। ফলে বাবা-মা উভয়ের স্নেহ-মমতায় বেড়ে ওঠার সৌভাগ্য হচ্ছে না অনেক শিশুর। তাদের কারও শুধু বাবা আছে অথবা মা। যা ওই শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য কোনোভাবেই সহায়ক নয়। পরিবার ব্যবস্থার এমন পরিণতির পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ের পরিমাণ কমছে ও তালাকের পরিমাণ বাড়ছে।

ধর্মীয় শিক্ষা: ইসলাম ধর্ম ব্যক্তিস্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করার পক্ষে সর্বদা কথা বলে। তাই তো সমাজে কোনো কুপ্রথা ছড়িয়ে দেওয়ার অধিকার কোনো ব্যক্তির নেই বলে ঘোষণা করেছে ইসলাম। ইসলামের বিধানে, স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি দায়িত্ববোধ ও সহযোগিতার মধ্য দিয়েই দাম্পত্য জীবন সুখী ও সমৃদ্ধ হয়। ইসলাম স্বামীর ওপর স্ত্রী ও সন্তান-সন্তান সন্ততির ভরণপোষণের দায়িত্ব দিয়ে স্বামী-স্ত্রীকে তাদের পারস্পরিক অধিকার মেনে চলতে বলেছে। সেই সঙ্গে ইসলাম নারীর প্রতি সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দিয়ে তাকে পরিবারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মতো কঠিন দায়িত্বের বাইরে রেখেছে। এক কথায় ইসলাম, পরিবারের সব সদস্যকে একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীল হতে বলেছে। ইসলাম ব্যক্তিস্বার্থে নৈতিকতাসহ পরিবারের বৃহত্তর স্বার্থকে ক্ষুন্ন করার অধিকার কাউকে দেয়নি। এ জন্য প্রত্যেক বাবা মায়ের উচিৎ সন্তানদের শুরু থেকেই ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করা।

ইসলামে পরিবার ব্যবস্থায় পরিবারের এক সদস্যের সাফল্য-ব্যর্থতা ও উন্নতি-অবনতি অপর সদস্যের সাফল্য-ব্যর্থতা ও উন্নতি-অবনতি হিসেবে গণ্য হয়। এখানে ব্যক্তিগত আকাঙ্খা ও আনন্দ সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায় না। পরিবারের সব সদস্যের সার্বিক কল্যাণকে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়। এই পারিবারিক রূপ রেখায় পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের যেমন কিছু অধিকার রয়েছে, তেমনি কিছু দায়িত্বও রয়েছে। যে দায়িত্ববোধ মানুষের মনে সৃষ্টি করে সৃষ্টির আকাঙ্খা, জন্ম দেয় নৈতিকতা, যা একটি কাঙ্খিত সুখী পরিবারের মূল চালিকাশক্তি। এবং পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করে।

শেষ কথা: পরিশেষে বলবো যে, পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে স্বামী-স্ত্রীকে হতে হবে সর্বোচ্চ ত্যাগী ও বাবা-মায়েদের সাথে সন্তানদের সম্পর্ক থাকতে হবে নিবিড় ও গভীর। ছোট বেলা থেকেই সন্তানদের ধর্মীয় ও নৈতিকতা সম্পন্ন মূল্যবোধ শিক্ষা দিতে হবে। প্রতিটি পরিবারই হয়ে উঠবে আদর্শিক। সম্পর্কগুলো হবে মজবুত।

পঠিত : ২৩৮ বার

মন্তব্য: ০