Alapon

আফ্রিকা মহাদেশ কি আসলেই অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ?



যে মহাদেশে (মিশরে) পৃথিবীর প্রাচীনতম সমৃদ্ধ সভ্যতার জন্ম হয়েছে, সে আফ্রিকা মহাদেশ নাকি অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ! আফ্রিকা মহাদেশকে ' Dark Continent বা অন্ধকারময় মহাদেশ' নামে অভিহিত করা ইতিহাসের জঘন্যতম আইরনিক স্টেটমেন্ট।
এমনকি অলিম্পিক রিং সমূহের এর মধ্যে 'কালো রিং' দ্বারা এই আফ্রিকা মহাদেশকে বুঝানো হয়, যা এক ধরণের রেসিজমও বলা যেতে পারে।

যে ব্যক্তি পড়া-লেখা জানে, তাকে আমরা শিক্ষিত বা সভ্য মানুষ বলে থাকি। পড়া-লেখা করার অন্যতম উপকরণ কলম ও কাগজ। নীল নদের দুই ধারে জন্ম নেওয়া প্যাপিরাস নামক নলখাগড়া থেকে সভ্যতার অন্যতম উপকরণ পেপার বা কাগজের উৎপত্তি এই আফ্রিকা মহাদেশে।

যারা আফ্রিকা মহাদেশকে 'অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ' বলে অযৌক্তিক নামকরণ করেছে, তাদের ভূখন্ড ইউরোপে গ্রিক নামক প্রথম সভ্যতার উত্থান ঘটে মিশরীয় সভ্যতার প্রায় ২৫০০ বছর পর। আর ইতিহাসে গোটা আমেরিকা মহাদেশের নির্দিষ্ট ছোট একটি ভূখন্ডে (মেক্সিকো) মায়া ও এ্যাজটেক নামক দুটি সভ্যতার উল্লেখ পাওয়া যায়।
যে মহাদেশের মানুষকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দাস বানিয়ে, তাদের ভূগর্ভস্থ সম্পদ লুট করে আমি মডার্ণ ইউরোপ করেছি, তারপর আমি তাদের বলছি তোমরা গরীব মানুষ। হোয়্যাট এ মকারি!

মূলত, আমাদের অধিকাংশ চিন্তা এবং ডমিন্যান্ট ন্যারেটিভ সমূহ ওয়েস্টার্ন কর্তৃক আরোপিত। বিশেষ করে কলোনিয়াল রাষ্ট্র সমূহে এর প্রভাব ব্যাপক। যারা আমাদের ২০০ বছর শোষণ করেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে ১৯৭২ সালে প্রথম যে আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে তাহল ' ব্রিটিশ কমনওয়েলথ অব নেশনস'। পূর্বে তারা আমাদের ডিরেক্ট শোষণ করত, আর এখন মিউচুয়াল কোঅপারেশনের মাধ্যমে তাদের স্বার্থ হাসিল করে। শুধু ওয়েস্টার্ন প্রণীত থিওরী কিংবা ন্যারেটিভ আমাদের চিন্তার ফ্রেইমওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করছে না, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চয়েস তথা কালচারও তারা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। তার কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি।

সারা বিশ্বে 'ফাস্ট ফুড' নামে যে খাবার প্রচলিত আছে তার অর্থ Fast (দ্রুত) ঝটপট খাবার। খুব তাড়াতাড়ি তৈরি ও পরিবেশন করা যায় এবং দ্রুত সময়ে খাওয়া যায় বলে এর নাম 'ফাস্ট ফুড'। এই জন্য ফাস্ট ফুডের দোকানে সচারচর কোনো বসার স্থান থাকে না। যদিও বাংলাদেশের বেশিরভাগ ফাস্ট ফুডের দোকানে বসার স্থান রয়েছে। যে খাবারের প্রচলন হয়েছে সময় নষ্ট না করে দ্রুত খাওয়ার জন্য, নিজেদের এলিট প্রমাণের জন্য আমরা গুলশান-বনানীতে কেএফসিতে বসে ২ ঘন্টা সময় নষ্ট করে সেল্ফি তুলে এই খাবার খাই। এই এক মানসিক দৈন্যদশা কিংবা মানসিক দাসত্বের শৃঙ্খলে আমরা বন্দি।

শীতপ্রধান ইউরোপ মহাদেশের বারো মাসের উপযোগী পোশাক (কোট এবং টাই) আমাদের মত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের উপর ফরমাল ড্রেস কোড হিসেবে আরোপ করেছে, যা আমরা নিজেদের স্মার্ট কিংবা মডার্ণ হিসেবে প্রমাণের জন্য গরমকালেও এই ড্রেস পরিধান করে থাকি।
মেয়েদের 'হাই হিল' নামক যে উচু জুতা রয়েছে, অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ও অস্বস্থিকর হওয়া সত্ত্বেও মডার্ণিটি কিংবা এলিটিজম এর সিম্বল হিসেবে হরহামেশা আমাদের মেয়েরা পরিধান করছে। অথচ মানুষ জুতা পরিধান করার উদ্দেশ্য হল - স্মুথলি সামনের দিকে হেঁটে যাওয়া অথচ হাই হিল পরিধান করলে ভূতের মত অনেক পেছনে পড়ে যায়। এটি জুতার পরিধানের উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক উপকরণ।

সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত কিছু ঘটনাকে নিয়ে আমাদের দেশে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তার মূল কারণ হল পাশ্চাত্য কর্তৃক আমাদের উপর আরোপিত চিন্তা। দুর্ভাগ্যজনক সত্য হল, এই আরোপিত চিন্তা বা ন্যারেটিভকে আমরা স্ট্যান্ডার্ড ধরে নিয়েছি এবং সেই চিন্তার ফ্রেইমওয়ার্ক দিয়ে স্রষ্টার প্রণীত বিধানকেও জাস্টিফাই করার দু:সাহস দেখাচ্ছি।
প্রাইভেট এবং পাবলিক পেলেসের ড্রেসকোড, হিজাব,পর্দা ইত্যাদি বিতর্কে একজন মুসলিম এবং ইসলামিক ফেমেনিস্টদেরও দেখলাম, ইসলামকে ডেমোক্রেটিক কিংবা মডার্ণ লিবারিলজমের লেন্সে কাস্টমাইজড করে ফতোয়া দিচ্ছে।

এরা কি জানেনা, ইসলাম পরিপূর্ণ। এর মৌলিক বিধান সমুহ অপরিবর্তশীল। ডেমোক্রেটিক কিংবা লিবারেল ওয়েস্টার্ন কর্তৃক আরোপিত মতাদর্শ বা থিওরী দ্বারা ইসলামের মৌলিক বিধান সমূহ নিজের খেয়াল খুশিমত কাস্টমাইজড করার কোন সুযোগ ইসলামে নেই।
ইসলাম হল সূর্য, একে কেন্দ্র করে অন্যান্য সকল গ্রহ তথা থিওরী সমূহ রেগুলেইট করবে। ওয়েস্টার্ন কোন মতাদর্শ কিংবা ডমিন্যান্ট ন্যারেটিভ দ্বারা ইসলামকে কাস্টমাইজ করা যাবেনা। কারণ এটি আল্লাহর মনোনীত Complete Code of Life তথা পরিপূর্ণ জীবন বিধান।

[ Above all, these western imposed theories and narratives make us saffocated as well as subjugated and it creates hinderance to explore ourselves accroding to our own identity ]

পঠিত : ৩৯১ বার

মন্তব্য: ০